৯০ মিটার সেতুর অভাবে দুর্ভোগে দুই উপজেলার শত শত কৃষক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ইসলামপুরগঞ্জ বিল কুজোইন ঘাট এলাকার একটি ৯০ মিটার সেতুর কারণে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান ঘরে তুলতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে ওই এলাকার কৃষকদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ওই এলাকার কৃষকগণ রমেশ্বপুর মৌজার বড় রমেশ্বর, কালিগুয়াল, গুমরোল ও জওবাড়িসহ আরও পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের আংশিক জমির ধান বিলকুজাইন ঘাট দিয়ে বহন করে নিয়ে আসতে হয় কৃষকদের। এ বাঁশ ও কাঠের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো তৈরি করে ট্রাকটরে ধান পরিবহন করতে হচ্ছে কৃষকের। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুরগঞ্জ মৌজায় ২০২১ সালে ১৮১০ হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়েছে। ওই এলাকার ইসলামপুরগঞ্জের কৃষক সোলাইমান বলেন, আমার রমেশ্বর মৌজায় ৩০ বিঘা জমি রয়েছে সেই জমির ধান আনতে আমাকে অনেক বেগ পোহাতে হয়। তৎকালীন এলাকার পর পর ২ জন সংসদ সদস্য থাকার পরেও তাদের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হয়নি।

২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিলকুজাইন ঘাট পরিদর্শন করে এলাকার কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ছোট একটি সেতু করার জন্য আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যায়নি। তাই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ওই এলাকার শত শত ভুক্তভোগী কৃষকরা। আরো রোকনপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের একজন কৃষক মঞ্জুর হোসেন বলেন, এই মৌজার তার ৭ বিঘা জমি রয়েছে বছরে একবার মাত্র আবাদ হয়।

কিন্তু এই ধান ঘরে তুলতে আমাদের খুব বেগ পোহাতে হয়। শুধুমাত্র একটি সেতুর কারণে। এই ধান উঠার মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টি হলে তখন রাস্তাঘাট কাঁদা হয়ে গেলে কোন যানবাহন পাওয়া যায় না। তখন অনেক কষ্ট করে ধান মাড়াই করে কৃষকদের মাথায় করে ঘরে নিয়ে আসতে হয় এবং ওই কাঠের তৈরি সাঁকো ডুবে যায়?। এতে দুর্দশা চরমে উঠে। অপর কৃষক সফর আলী বলেন, এই মৌজার কালিগুয়াল ও গুমরোল এলাকায় তার ২৫ বিঘা জমি চাষ করেন। তিনি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলেন ‘কত সরকার এলো গেলো ? কিন্তু এই এলাকার কৃষকদের দুঃখের কথা কেউ শুনল না? কতজন আশ্বাস দিল কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি পোল পর্যন্ত স্থাপন করতে পারল না।

আমাদের জমির ধান আনতে এত কষ্ট হয় যে পারি না আমরা জমির ধান জমিতে ফেলে রেখে পালিয়ে আসি। কিন্তু কি করার আছে পেটে খেতে হবে তাই আমরা বহু কষ্ট করে জমির ধান ঘরে নিয়ে আসি।’ এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, ছোট সেতুটি নির্মাণের জন্য এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করে ডিও লেটার প্রদান করা হয়েছে। তাদের একটি প্রতিনিধিদল আসার কথা ছিল কিন্তু করোনাকালীন সময় হওয়ায় তারা আসতে পারেনি। তবে দ্রুত তারা জায়গাটি পরিদর্শন করে সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করবেন। গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওই এলাকাটি আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে এলজিডি’র সঙ্গে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে আমরা লিখব বলে জানান।

অপরদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ওই মৌজাটি যেহেতু ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। তাছাড়া সীমান্তের ৪ কিলোমিটারের ভেতরে কোন স্থাপনা তৈরি করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। এমন জটিলতার কারণে ইতোপূর্বে সেখানে সেতু নির্মাণের জন্য মাপযোগ করে সেতু নির্মাণ এর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু কোন স্থাপনা তৈরি করতে কিন্তু সীমান্ত এলাকার ৪ কিলোমিটার এর ভেতরে কোনো স্থাপনা তৈরি করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। সেই কারণে সেতু নির্মাণ করা যায়নি।

তাই অনুমতি পেলে আমরা সেতু নির্মাণ করব। রাধানগর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, সেতু নির্মাণ এর জন্য ইতোপূর্বে এর এলজিইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মাপ যোগ করে পাঠানো হলে। সংযোগ সড়ক না থাকার কারণে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

৯০ মিটার সেতুর অভাবে দুর্ভোগে দুই উপজেলার শত শত কৃষক

প্রতিনিধি, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

image

গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : সেতু না থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ -সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ইসলামপুরগঞ্জ বিল কুজোইন ঘাট এলাকার একটি ৯০ মিটার সেতুর কারণে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান ঘরে তুলতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে ওই এলাকার কৃষকদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ওই এলাকার কৃষকগণ রমেশ্বপুর মৌজার বড় রমেশ্বর, কালিগুয়াল, গুমরোল ও জওবাড়িসহ আরও পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের আংশিক জমির ধান বিলকুজাইন ঘাট দিয়ে বহন করে নিয়ে আসতে হয় কৃষকদের। এ বাঁশ ও কাঠের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো তৈরি করে ট্রাকটরে ধান পরিবহন করতে হচ্ছে কৃষকের। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুরগঞ্জ মৌজায় ২০২১ সালে ১৮১০ হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়েছে। ওই এলাকার ইসলামপুরগঞ্জের কৃষক সোলাইমান বলেন, আমার রমেশ্বর মৌজায় ৩০ বিঘা জমি রয়েছে সেই জমির ধান আনতে আমাকে অনেক বেগ পোহাতে হয়। তৎকালীন এলাকার পর পর ২ জন সংসদ সদস্য থাকার পরেও তাদের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হয়নি।

২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিলকুজাইন ঘাট পরিদর্শন করে এলাকার কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ছোট একটি সেতু করার জন্য আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যায়নি। তাই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ওই এলাকার শত শত ভুক্তভোগী কৃষকরা। আরো রোকনপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের একজন কৃষক মঞ্জুর হোসেন বলেন, এই মৌজার তার ৭ বিঘা জমি রয়েছে বছরে একবার মাত্র আবাদ হয়।

কিন্তু এই ধান ঘরে তুলতে আমাদের খুব বেগ পোহাতে হয়। শুধুমাত্র একটি সেতুর কারণে। এই ধান উঠার মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টি হলে তখন রাস্তাঘাট কাঁদা হয়ে গেলে কোন যানবাহন পাওয়া যায় না। তখন অনেক কষ্ট করে ধান মাড়াই করে কৃষকদের মাথায় করে ঘরে নিয়ে আসতে হয় এবং ওই কাঠের তৈরি সাঁকো ডুবে যায়?। এতে দুর্দশা চরমে উঠে। অপর কৃষক সফর আলী বলেন, এই মৌজার কালিগুয়াল ও গুমরোল এলাকায় তার ২৫ বিঘা জমি চাষ করেন। তিনি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলেন ‘কত সরকার এলো গেলো ? কিন্তু এই এলাকার কৃষকদের দুঃখের কথা কেউ শুনল না? কতজন আশ্বাস দিল কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি পোল পর্যন্ত স্থাপন করতে পারল না।

আমাদের জমির ধান আনতে এত কষ্ট হয় যে পারি না আমরা জমির ধান জমিতে ফেলে রেখে পালিয়ে আসি। কিন্তু কি করার আছে পেটে খেতে হবে তাই আমরা বহু কষ্ট করে জমির ধান ঘরে নিয়ে আসি।’ এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, ছোট সেতুটি নির্মাণের জন্য এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করে ডিও লেটার প্রদান করা হয়েছে। তাদের একটি প্রতিনিধিদল আসার কথা ছিল কিন্তু করোনাকালীন সময় হওয়ায় তারা আসতে পারেনি। তবে দ্রুত তারা জায়গাটি পরিদর্শন করে সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করবেন। গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওই এলাকাটি আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে এলজিডি’র সঙ্গে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে আমরা লিখব বলে জানান।

অপরদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ওই মৌজাটি যেহেতু ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। তাছাড়া সীমান্তের ৪ কিলোমিটারের ভেতরে কোন স্থাপনা তৈরি করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। এমন জটিলতার কারণে ইতোপূর্বে সেখানে সেতু নির্মাণের জন্য মাপযোগ করে সেতু নির্মাণ এর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু কোন স্থাপনা তৈরি করতে কিন্তু সীমান্ত এলাকার ৪ কিলোমিটার এর ভেতরে কোনো স্থাপনা তৈরি করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। সেই কারণে সেতু নির্মাণ করা যায়নি।

তাই অনুমতি পেলে আমরা সেতু নির্মাণ করব। রাধানগর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, সেতু নির্মাণ এর জন্য ইতোপূর্বে এর এলজিইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মাপ যোগ করে পাঠানো হলে। সংযোগ সড়ক না থাকার কারণে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।