সীমান্তে ৭ জেলায় ‘কঠোর লকডাউনের’ সুপারিশ

একদিনে শনাক্তের হার ১০.১১%

সারাদেশের চেয়ে করোনা সংক্রমণের হার বেশি হওয়ায় সীমান্তবর্তী সাত জেলা ‘কঠোর লকডাউন’র সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ‘পরামর্শক কমিটি’। এর আগে এ কমিটি শুধু ‘লকডাউন’র সুপারিশ করেছিল। ওইসব জেলায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও (ধরন) শনাক্ত হয়েছে। ভারতে যাননি- এমন লোকজনের দেহেও ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে।

গতকাল একদিনে সারাদেশে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।

আর সীমান্তবর্তী সাত জেলায় সংক্রমণের হার ১১ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশের ওপরে। সাত জেলা হলো- খুলনা, নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া। করোনার ভারতীয় ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের (গোষ্ঠীগত সম্প্রদায়) প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৪ মে থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘লকডাউন’র বিধিনিষেধ জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

এ ব্যাপারে ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সভাপতি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ গতকাল রাতে সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের সুপারিশ ছিল উচ্চ সংক্রমণশীল এলাকাগুলোতে লকডাউন দেয়া হোক। এখন দেখা যাচ্ছে, সীমান্ত এলাকাগুলোতে খুব খারাপ অবস্থা। এসব জেলার কোনটিতে সংক্রমণের হার ৫৫ শতাংশের ওপরে, কোনটিতে ৩০ শতাংশের বেশি, কোনটিতে ২০ শতাংশের ওপরে। এজন্য আমরা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে শুধু লকডাউন নয়, কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করেছি। আজও আমরা সভা করেছি। খুব শীঘ্রই আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা সরকারকে জানিয়ে দেব।’

জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রমণ :

সংবাদের নওগাঁ প্রতিনিধি গতকাল জানিয়েছেন, জেলায় বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ। গত ১০ দিনে নওগাঁয় করোনা শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত চারদিনে ১১৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ চারদিনে করোনা শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪০ ব্যক্তি।

নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ সংবাদকে বলেন, ‘নওগাঁতে ঈদুল ফিতরের পর সংক্রমণ বেড়ে গেছে। করোনা শনাক্তের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত বৃহস্পতিবার শতকরা ৫৭ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন যা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।’ সিভিল সার্জন আরও জানান, নওগাঁর পার্শ্ববর্তী বেশকিছু ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা রয়েছে। তারপরও এখন পর্যন্ত নওগাঁয় কারও দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়নি।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতরের পর থেকে কুষ্টিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলছে।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ দিন আগে করোনা নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্তের হার ছিল ১০ থেকে ১৬ শতাংশ। ওই সময় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৩ জন। আর গত ১৮ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮ জনে।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এএইচএম আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ২২ মে থেকে ভারত থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় কুষ্টিয়ায় ফিরেছেন ১৪৭ জন মানুষ। ভারত ফেরতদের মধ্যে ৩ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কারও শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়নি।

সংবাদের রাজশাহী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলারই ৭ জন। বাকি ২ জন রাজশাহীর, ২ জন নওগাঁ জেলার ও একজন নাটোর জেলার বাসিন্দা।

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস সংবাদকে জানান, মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ৮ জন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাকি ৪ জন উপসর্গ নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এদের মধ্যে আইসিইউতে মারা গেছেন ৩ জন। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেলে আক্রান্ত ২০৯ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে প্রায় ১০০ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে ছয়শ’ জনের মতো করোনা শনাক্ত হয়েছে। ঈদের আগে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ১৪ শতাংশ, এরপর ২৬ মে সংক্রমণের হার ৫৫ শতাংশ এবং পরবর্তীতে ৬২ শতাংশে ওঠে। ‘লকডাউন’র পর থেকে সংক্রমণ কমছে।

সর্বশেষ গত শনিবার রাত পর্যন্ত জেলা সির্ভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তাতে ৬২১টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬১ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বর্তমানে ৫৭৬ জন করোনা রোগী আছেন। এর মধ্যে জেলার তিন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২২ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ পর্যন্ত করোনায় ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন গত ১৩ মে থেকে। গত ২৮ মে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। পরদিন আরেকজনের মৃত্যু হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরনটি পাওয়া গেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের জানান, যারা কখনও প্রতিবেশী ওই দেশটিতে যাননি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল প্রেস বিফ্রিংয়ে যুক্ত হয়ে জানান, দেশে এ পর্যন্ত ২৬৩টি ‘সিকোয়েন্স’ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৭টি ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, ৮৫টি সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, পাঁচটি নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট এবং ২৩টি ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। বি.১.৬.৭ এটি ভারতফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে এটি পাওয়া গেছে।

এই ভ্যারিয়েন্ট নতুন কোন বিষয় নয়- দাবি করে ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘যত রোগী শনাক্ত হবে, সংক্রমণ হবে, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে। সুতরাং ভ্যারিয়েন্ট যাই হোক না কেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যার যখন সময় আসবে, তাকে টিকা নিতে হবে। এভাবে আমরা সংক্রমণ কমাতে পারব।’

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তবর্তী আরও সাত জেলা ‘লকডাউন’ ঘোষণার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। ২৯ মে অনুষ্ঠিত এই সুপারিশ করা হয়।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ওপর আমরা বিশেষ নজর রেখেছি, যদি সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ওই জায়গাগুলোতে চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারব। বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ৮ মে প্রথম জানায়, ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশির দেহে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত ২৩ জনের শরীরে করোনার এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে।

সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর ও নাটোরের বিষয়টিও ‘গুরুত্ব সহকারে’ দেখা হচ্ছে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাইব যে জায়গাটিতে স্পেসিফিক্যালি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, সে জায়গাটি শনাক্ত করতে। এমনও হতে পারে যে, পুরো সাতক্ষীরা নয়, যে স্থানটিতে বেশি সংক্রমণ সেই জায়গাগুলোতে হয়ত (লকডাউন) করার চেষ্টা হবে, যাতে মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’

২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক হাজার ৪৪৪ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো সাত লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জনে। এই ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ, আগের দিন যা ছিল ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

গত একদিনে করোনায় দেশে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মারা গেলেন ১২ হাজার ৪৮৩ জন। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৩৯৭ জন। তাদের নিয়ে করোনা থেকে মোট সুস্থ হলেন সাত লাখ ৩৮ হাজার ৮০৫ জন। মোট সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

গত একদিনে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ২৭৭টি। দেশে এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৯ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৫টি। দেশে বর্তমানে ৫০২টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন ও নারী ১১ জন। করোনায় মৃত্যু হওয়া মোট লোকজনের মধ্যে পুরুষ মারা গেছেন নয় হাজার ৮৮ জন এবং নারী তিন হাজার ৪৯৫ জন।

গত একদিনে মারা যাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আটজন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১২ জন, রাজশাহী বিভাগের তিনজন, খুলনা বিভাগের ছয়জন, সিলেট ও রংপুর বিভাগের দুইজন করে আর বরিশাল বিভাগের আছেন একজন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ২১ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১০ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন তিনজন।

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

সীমান্তে ৭ জেলায় ‘কঠোর লকডাউনের’ সুপারিশ

একদিনে শনাক্তের হার ১০.১১%

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সারাদেশের চেয়ে করোনা সংক্রমণের হার বেশি হওয়ায় সীমান্তবর্তী সাত জেলা ‘কঠোর লকডাউন’র সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ‘পরামর্শক কমিটি’। এর আগে এ কমিটি শুধু ‘লকডাউন’র সুপারিশ করেছিল। ওইসব জেলায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও (ধরন) শনাক্ত হয়েছে। ভারতে যাননি- এমন লোকজনের দেহেও ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে।

গতকাল একদিনে সারাদেশে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।

আর সীমান্তবর্তী সাত জেলায় সংক্রমণের হার ১১ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশের ওপরে। সাত জেলা হলো- খুলনা, নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া। করোনার ভারতীয় ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের (গোষ্ঠীগত সম্প্রদায়) প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৪ মে থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘লকডাউন’র বিধিনিষেধ জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

এ ব্যাপারে ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সভাপতি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ গতকাল রাতে সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের সুপারিশ ছিল উচ্চ সংক্রমণশীল এলাকাগুলোতে লকডাউন দেয়া হোক। এখন দেখা যাচ্ছে, সীমান্ত এলাকাগুলোতে খুব খারাপ অবস্থা। এসব জেলার কোনটিতে সংক্রমণের হার ৫৫ শতাংশের ওপরে, কোনটিতে ৩০ শতাংশের বেশি, কোনটিতে ২০ শতাংশের ওপরে। এজন্য আমরা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে শুধু লকডাউন নয়, কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করেছি। আজও আমরা সভা করেছি। খুব শীঘ্রই আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা সরকারকে জানিয়ে দেব।’

জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রমণ :

সংবাদের নওগাঁ প্রতিনিধি গতকাল জানিয়েছেন, জেলায় বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ। গত ১০ দিনে নওগাঁয় করোনা শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত চারদিনে ১১৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ চারদিনে করোনা শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪০ ব্যক্তি।

নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ সংবাদকে বলেন, ‘নওগাঁতে ঈদুল ফিতরের পর সংক্রমণ বেড়ে গেছে। করোনা শনাক্তের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত বৃহস্পতিবার শতকরা ৫৭ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন যা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।’ সিভিল সার্জন আরও জানান, নওগাঁর পার্শ্ববর্তী বেশকিছু ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা রয়েছে। তারপরও এখন পর্যন্ত নওগাঁয় কারও দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়নি।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতরের পর থেকে কুষ্টিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলছে।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ দিন আগে করোনা নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্তের হার ছিল ১০ থেকে ১৬ শতাংশ। ওই সময় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৩ জন। আর গত ১৮ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮ জনে।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এএইচএম আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ২২ মে থেকে ভারত থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় কুষ্টিয়ায় ফিরেছেন ১৪৭ জন মানুষ। ভারত ফেরতদের মধ্যে ৩ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কারও শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়নি।

সংবাদের রাজশাহী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলারই ৭ জন। বাকি ২ জন রাজশাহীর, ২ জন নওগাঁ জেলার ও একজন নাটোর জেলার বাসিন্দা।

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস সংবাদকে জানান, মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ৮ জন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাকি ৪ জন উপসর্গ নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এদের মধ্যে আইসিইউতে মারা গেছেন ৩ জন। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেলে আক্রান্ত ২০৯ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে প্রায় ১০০ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে ছয়শ’ জনের মতো করোনা শনাক্ত হয়েছে। ঈদের আগে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ১৪ শতাংশ, এরপর ২৬ মে সংক্রমণের হার ৫৫ শতাংশ এবং পরবর্তীতে ৬২ শতাংশে ওঠে। ‘লকডাউন’র পর থেকে সংক্রমণ কমছে।

সর্বশেষ গত শনিবার রাত পর্যন্ত জেলা সির্ভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তাতে ৬২১টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬১ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বর্তমানে ৫৭৬ জন করোনা রোগী আছেন। এর মধ্যে জেলার তিন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২২ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ পর্যন্ত করোনায় ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন গত ১৩ মে থেকে। গত ২৮ মে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। পরদিন আরেকজনের মৃত্যু হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরনটি পাওয়া গেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের জানান, যারা কখনও প্রতিবেশী ওই দেশটিতে যাননি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল প্রেস বিফ্রিংয়ে যুক্ত হয়ে জানান, দেশে এ পর্যন্ত ২৬৩টি ‘সিকোয়েন্স’ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৭টি ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, ৮৫টি সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, পাঁচটি নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট এবং ২৩টি ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। বি.১.৬.৭ এটি ভারতফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে এটি পাওয়া গেছে।

এই ভ্যারিয়েন্ট নতুন কোন বিষয় নয়- দাবি করে ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘যত রোগী শনাক্ত হবে, সংক্রমণ হবে, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে। সুতরাং ভ্যারিয়েন্ট যাই হোক না কেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যার যখন সময় আসবে, তাকে টিকা নিতে হবে। এভাবে আমরা সংক্রমণ কমাতে পারব।’

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তবর্তী আরও সাত জেলা ‘লকডাউন’ ঘোষণার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। ২৯ মে অনুষ্ঠিত এই সুপারিশ করা হয়।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ওপর আমরা বিশেষ নজর রেখেছি, যদি সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ওই জায়গাগুলোতে চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারব। বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ৮ মে প্রথম জানায়, ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশির দেহে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত ২৩ জনের শরীরে করোনার এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে।

সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর ও নাটোরের বিষয়টিও ‘গুরুত্ব সহকারে’ দেখা হচ্ছে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাইব যে জায়গাটিতে স্পেসিফিক্যালি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, সে জায়গাটি শনাক্ত করতে। এমনও হতে পারে যে, পুরো সাতক্ষীরা নয়, যে স্থানটিতে বেশি সংক্রমণ সেই জায়গাগুলোতে হয়ত (লকডাউন) করার চেষ্টা হবে, যাতে মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’

২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক হাজার ৪৪৪ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো সাত লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জনে। এই ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ, আগের দিন যা ছিল ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

গত একদিনে করোনায় দেশে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মারা গেলেন ১২ হাজার ৪৮৩ জন। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৩৯৭ জন। তাদের নিয়ে করোনা থেকে মোট সুস্থ হলেন সাত লাখ ৩৮ হাজার ৮০৫ জন। মোট সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

গত একদিনে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ২৭৭টি। দেশে এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৯ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৫টি। দেশে বর্তমানে ৫০২টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন ও নারী ১১ জন। করোনায় মৃত্যু হওয়া মোট লোকজনের মধ্যে পুরুষ মারা গেছেন নয় হাজার ৮৮ জন এবং নারী তিন হাজার ৪৯৫ জন।

গত একদিনে মারা যাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আটজন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১২ জন, রাজশাহী বিভাগের তিনজন, খুলনা বিভাগের ছয়জন, সিলেট ও রংপুর বিভাগের দুইজন করে আর বরিশাল বিভাগের আছেন একজন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ২১ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১০ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন তিনজন।