‘শেষ পর্যন্ত বেশি দামে গ্যাজপ্রমকেই দেয়া হলো ভোলার কাজ

অবশেষে ভোলার তিনটি গ্যাসকূপ খননের কাজ বেশি দামে গ্যাজপ্রমকেই দেয়া হলো। টার্ন-কি পদ্ধতিতে রুশ প্রতিষ্ঠানটি ৬৪৮ কোটি ৩৯ লাখ ১১ হাজার ৮৫০ টাকায় কূপ তিনটি খনন করে দেবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় গত বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে বাপেক্সের এ সংক্রান্ত চুক্তি অনুমোদন দেয়া হয়। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এই কাজ করলে খরচ অর্ধেকের কম হতো।

জ্বালানি খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘গ্যাসকূপ খননে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের গড় খরচ ৮০ কোটি টাকা। এখন সেটা যদি সর্বোচ্চ একশ’ কোটি টাকাও হয়, তাহলে তিনটি কূপ খননে মোট খরচ হতো তিনশ’ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাপেক্স এই কাজ পেলে রাষ্ট্রের খরচ অর্ধেকের কম হতো।’ তারা বলছেন, ভোলা গ্যাসফিল্ড বাপেক্সের আবিষ্কার। এখানে কূপ খনন করে প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস উৎপাদন করছে। নতুন কূপ খননের সক্ষমতাও বাপেক্সের আছে। রাষ্ট্রীয় কোম্পানিকে বসিয়ে রেখে বেশি দামে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

চুক্তি অনুযায়ী, গ্যাজপ্রম শাহবাজপুরে (বোরহানউদ্দিন, ভোলা) দুটি অনুসন্ধান কূপ (টবগি-১ ও ইলিশা-১) এবং একটি কূপ (ভোলা নর্থ-২) মূল্যায়নসহ উন্নয়ন (‘এপ্রেইজাল কাম ডেভেলপমেন্ট) করবে গ্যাজপ্রম।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, ‘বেশি দামে কাজ দেয়ার চর্চা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বেশি দামে কাজ দিলে সেখান থেকে কমিশন বাণিজ্য থাকে। ঘুষ নিতে সুবিধা হয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বসিয়ে রেখে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে কাজ দেয়ার এটা প্রধান কারণ।

‘বাপেক্সের অভিজ্ঞতা কম। তাই ঝুঁকি না নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে’- সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্যের বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, গ্যাজপ্রম কূপ খনন করেছে, সেই কূপে পানি উঠেছে, পরে বাপেক্সকে সেই কূপ ঠিক (উন্নয়ন) করতে হয়েছে এমন রেকর্ডও আছে। বলা যায় না- এখানেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তখন আবার বাপেক্সই হয়তো প্রয়োজন হবে।’

‘উচ্চ মূল্যে কাজ দেয়ার এই চর্চা, আত্মঘাতী এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী’ উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এর ফলে গ্যাসের উৎপাদন খরচ বাড়বে। সরকার আবার গ্যাসের দাম বাড়াবে। বোঝাটা শেষ পর্যন্ত জনগণের ঘাড়ে এসে পড়বে।’

তবে বেশি দামে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেয়ার কারণ হিসেবে পেট্রোবাংলা’র একটি সূত্র বলেছে, ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ (রিজার্ভার প্রেসার) বেশি। সেখানে চাপ ৪৫০০ থেকে ৫০০০ পিএসআই (পাউন্ড/প্রতি বর্গইঞ্চি) থাকায় কূপ খনন করা ঝুঁকিপূর্ণ। এ খাতের আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমকে এ জন্য পছন্দের তালিকায় রাখা হয়েছে। এছাড়া, এই কাজের জন্য গ্যাজপ্রমকে ড্রিলিং কন্ট্রাক্টরসহ ৬টি ইঞ্জিনিয়ারিং সেবা (ডিএসটি, সিমেন্টিং, মাড লগিং, ওয়ারলাইন লগিং, টেস্টিং অ্যান্ড কমপ্লিশন) বিভিন্ন স্থান হতে সংগ্রহ করতে হবে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে সমুদ্র ও আকাশপথে চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় মালামাল ও জনবল আনা-নেয়ার ব্যয়ও কিছু বেশি হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, সম্প্রতি শ্রীকাইলে কোন বিদেশি পরামর্শক ছাড়াই নিজস্ব জনবল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলভাবে ঝুঁকিপূর্ণ (উচ্চচাপ) গ্যাসকূপ ওয়ার্কওভার করে যোগ্যতা ও দক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাপেক্স। ভোলায় কূপ খননে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণ সক্ষমতা আছে। এখানে বেশি দরে বিদেশি প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়া যৌক্তিক নয়। এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’

ড. বদরুল ইমাম আরও বলেন, ‘গ্যাজপ্রমের সহযোগিতা আমাদের দরকার সমুদ্রবক্ষে অনুসন্ধানে, গভীর কূপ খননে, চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলে। বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে, বিশেষ করে ভোলায় বাপেক্সকে কাজ না দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ায় আমি হতাশ।’ তিনি বলেন, ‘বাপেক্সকে বাঁচাতে হলে তাদের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খনন ও উত্তোলনের কাজ তাদেরই দিতে হবে।’

বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ১৯৮৯ সালে বাপেক্স প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সংস্থাটি এ পর্যন্ত ১২টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে ৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও কূপ খননে বাপেক্সের সাফল্যের অনুপাত ২:১। আন্তর্জাতিকভাবে পাঁচটি কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পেলে সেটিকে সাফল্য বলে মনে করা হয়। দেশে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরন এখন পর্যন্ত প্রতি চারটি কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পেয়েছে।

পেট্রোবাংলার সূত্র অনুযায়ী, শাহবাজপুর (বোরহানউদ্দিন, ভোলা) গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডে (বাপেক্স)। ১৯৯৪ সালে এখানে প্রথম অনুসন্ধান কূপ খননের পর আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়। ২০০৯ সালের ১১ মে থেকে ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। বর্তমানে এখান থেকে চারটি কূপের মাধ্যমে গড়ে দৈনিক ৫০ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে।

বাপেক্সের একটি সূত্র জানায়, ভোলায় দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করায় কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, রিগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবল বাপেক্সের আছে। প্রতিটি কূপ খনন করতে বাপেক্সের সম্ভাব্য ব্যয় হবে (রিগ ভাড়া, জনবলের পেছনে ব্যয়, থার্ড পার্টির সেবাসমূহের ব্যয় প্রভৃতিসহ) ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার। কূপ খননের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি নেয়াসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বাপেক্স করে রেখেছে।

এখন গ্যাজপ্রম বাপেক্সের দেয়া ভূ-তাত্ত্বিক কারিগরি নির্দেশনা (জিওলজিক্যাল টেকনিক্যাল অর্ডার বা জিটিও) অনুসরণ করে এবং বাপেক্সের নির্ধারণ করে দেয়া স্থানেই (লোকেশন) কূপ খনন করবে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর (এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে) অনুমোদনের জন্য এই ৩টি কূপ খনন প্রস্তাবের যে সার-সংক্ষেপ পাঠায় তার ৫নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় যে, গ্যাজপ্রম ‘হ্রাসকৃত মূল্যে’ এই তিনটি কূপ খনন করবে। প্রধানমন্ত্রী (এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে) সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেন কিন্তু এখন ৩টি কূপের যে চুক্তিমূল্য চূড়ান্ত করা হয়েছে, তা গ্যাজপ্রমের আগে খনন করা কূপের দরের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) অধীনে তিনটি ব্লকে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত আমেরিকান কোম্পানি শেভরনের প্রতিটি কূপ খননে গড় ব্যয় প্রায় ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গ্যাজপ্রম এর আগে একাধিক চুক্তির আওতায় মোট ১৭টি কূপ খনন করেছে। এর মধ্যে প্রথম ১০টির চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় ১৯৩ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিটি কূপের চুক্তিমূল্য ছিল ১৯ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এরপর সর্বশেষ যে কূপগুলো গ্যাজপ্রম খনন করেছে, তার প্রতিটির চুক্তিমূল্য ছিল ১৬ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাপেক্সের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বেশি দামে কাজ দিতে পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা বিভাগের অতি উৎসাহের কারণে বাপেক্স কাজ হারাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১১ সালে গ্যাজপ্রমকে ১০টি কূপ খননের কাজ দেয়ার সময়, বাপেক্সকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নানা পরিকল্পনায় ব্যস্ত দেখানো হয়। এসব পরিপ্রেক্ষিতে বাপেক্সের কর্মকর্তাদের (উদীয়মান প্রকৌশলীদের) মধ্যে দিন দিন হতাশা তৈরি হচ্ছে। জ্যেষ্ঠদের পাশপাশি নবীন প্রকৌশলীরাও হয় বহুজাতিক কোম্পানিতে যোগ দিচ্ছেন, নয়তো বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।

বাপেক্সের দক্ষতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের অভিমত

গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন ও গ্যাস উত্তোলনে বাপেক্সের যোগ্যতা সম্পর্কে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলার বক্তব্য ইতিবাচক। ২০২০ সালের প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টরা বাপেক্সের দক্ষতা ও সফলতার প্রশংসা করেছেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্সের সাফল্য মোটামুটিভাবে সন্তোষজনক। কূপ খননে সাফল্যের হারও ভাল। বাপেক্স ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নিজস্ব দক্ষ জনবল ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতোমধ্যে সফলভাবে শ্রীকাইল ইস্ট-১ কূপ খনন করে একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, কোভিড-১৯ উপেক্ষা করে বাপেক্স সম্প্রতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রীকাইল-৩ কূপটিতে কোন ধরনের বিদেশি পরামর্শক ছাড়াই নিজস্ব জনবল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলভাবে ওয়ার্কওভার করে যোগ্যতা ও দক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে বাপেক্স নরসিংদী-১ ও তিতাস-৭ কূপের ওয়ার্কওভার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে, যেগুলো থেকে দৈনিক ৪০-৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এ বি এম আবদুল ফাত্তাহ্্ বলেছেন, বাপেক্স ইতোমধ্যেই গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার এবং গ্যাস উৎপাদন কার্যক্রমের মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছে। বাপেক্স নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পেট্রোবাংলা’র আওতাধীন বিজিএফসিএল ও এসজিএফএলের মালিকানাধীন বিভিন্ন কূপের খনন ও ওয়ার্কওভার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাপেক্স অচিরেই একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে।

উল্লেখ্য, বাপেক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লি. (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি. (এসজিএফএল), আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) এবং বাপেক্সের নিজস্ব ব্লক ও বরাদ্দকৃত অন্যান্য এলাকায় ৪৬টি কূপ (৩০টি উন্নয়ন এবং ১৬টি অনুসন্ধান কূপ) খনন করেছে। রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটি ১৬টি অনুসন্ধান কূপ খননের মাধ্যমে ৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। এছাড়া ৪০টি কূপে সফলতার সঙ্গে ওয়ার্কওভার সম্পন্ন করেছে। বাপেক্স বর্তমানে সালদানদী, ফেঞ্চুগঞ্জ, শাহবাজপুর, সেমুতাং, শ্রীকাইল, বেগমগঞ্জ ও শাহজাদপুর-সুন্দলপুর ৭টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গড়ে দৈনিক প্রায় ১০৩ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উৎপাদন করছে।

শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু শাহবাজপুর নয়, পুরো ভোলাতেই গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের ধারণা, সিলেট অঞ্চলের পর উপকূলীয় এ অঞ্চলে গ্যাসের সবচেয়ে বড় রিজার্ভ রয়েছে।

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

‘শেষ পর্যন্ত বেশি দামে গ্যাজপ্রমকেই দেয়া হলো ভোলার কাজ

ফয়েজ আহমেদ তুষার

অবশেষে ভোলার তিনটি গ্যাসকূপ খননের কাজ বেশি দামে গ্যাজপ্রমকেই দেয়া হলো। টার্ন-কি পদ্ধতিতে রুশ প্রতিষ্ঠানটি ৬৪৮ কোটি ৩৯ লাখ ১১ হাজার ৮৫০ টাকায় কূপ তিনটি খনন করে দেবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় গত বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে বাপেক্সের এ সংক্রান্ত চুক্তি অনুমোদন দেয়া হয়। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এই কাজ করলে খরচ অর্ধেকের কম হতো।

জ্বালানি খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘গ্যাসকূপ খননে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের গড় খরচ ৮০ কোটি টাকা। এখন সেটা যদি সর্বোচ্চ একশ’ কোটি টাকাও হয়, তাহলে তিনটি কূপ খননে মোট খরচ হতো তিনশ’ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাপেক্স এই কাজ পেলে রাষ্ট্রের খরচ অর্ধেকের কম হতো।’ তারা বলছেন, ভোলা গ্যাসফিল্ড বাপেক্সের আবিষ্কার। এখানে কূপ খনন করে প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস উৎপাদন করছে। নতুন কূপ খননের সক্ষমতাও বাপেক্সের আছে। রাষ্ট্রীয় কোম্পানিকে বসিয়ে রেখে বেশি দামে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

চুক্তি অনুযায়ী, গ্যাজপ্রম শাহবাজপুরে (বোরহানউদ্দিন, ভোলা) দুটি অনুসন্ধান কূপ (টবগি-১ ও ইলিশা-১) এবং একটি কূপ (ভোলা নর্থ-২) মূল্যায়নসহ উন্নয়ন (‘এপ্রেইজাল কাম ডেভেলপমেন্ট) করবে গ্যাজপ্রম।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, ‘বেশি দামে কাজ দেয়ার চর্চা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বেশি দামে কাজ দিলে সেখান থেকে কমিশন বাণিজ্য থাকে। ঘুষ নিতে সুবিধা হয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বসিয়ে রেখে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে কাজ দেয়ার এটা প্রধান কারণ।

‘বাপেক্সের অভিজ্ঞতা কম। তাই ঝুঁকি না নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে’- সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্যের বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, গ্যাজপ্রম কূপ খনন করেছে, সেই কূপে পানি উঠেছে, পরে বাপেক্সকে সেই কূপ ঠিক (উন্নয়ন) করতে হয়েছে এমন রেকর্ডও আছে। বলা যায় না- এখানেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তখন আবার বাপেক্সই হয়তো প্রয়োজন হবে।’

‘উচ্চ মূল্যে কাজ দেয়ার এই চর্চা, আত্মঘাতী এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী’ উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এর ফলে গ্যাসের উৎপাদন খরচ বাড়বে। সরকার আবার গ্যাসের দাম বাড়াবে। বোঝাটা শেষ পর্যন্ত জনগণের ঘাড়ে এসে পড়বে।’

তবে বেশি দামে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেয়ার কারণ হিসেবে পেট্রোবাংলা’র একটি সূত্র বলেছে, ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ (রিজার্ভার প্রেসার) বেশি। সেখানে চাপ ৪৫০০ থেকে ৫০০০ পিএসআই (পাউন্ড/প্রতি বর্গইঞ্চি) থাকায় কূপ খনন করা ঝুঁকিপূর্ণ। এ খাতের আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমকে এ জন্য পছন্দের তালিকায় রাখা হয়েছে। এছাড়া, এই কাজের জন্য গ্যাজপ্রমকে ড্রিলিং কন্ট্রাক্টরসহ ৬টি ইঞ্জিনিয়ারিং সেবা (ডিএসটি, সিমেন্টিং, মাড লগিং, ওয়ারলাইন লগিং, টেস্টিং অ্যান্ড কমপ্লিশন) বিভিন্ন স্থান হতে সংগ্রহ করতে হবে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে সমুদ্র ও আকাশপথে চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় মালামাল ও জনবল আনা-নেয়ার ব্যয়ও কিছু বেশি হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, সম্প্রতি শ্রীকাইলে কোন বিদেশি পরামর্শক ছাড়াই নিজস্ব জনবল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলভাবে ঝুঁকিপূর্ণ (উচ্চচাপ) গ্যাসকূপ ওয়ার্কওভার করে যোগ্যতা ও দক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাপেক্স। ভোলায় কূপ খননে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণ সক্ষমতা আছে। এখানে বেশি দরে বিদেশি প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়া যৌক্তিক নয়। এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’

ড. বদরুল ইমাম আরও বলেন, ‘গ্যাজপ্রমের সহযোগিতা আমাদের দরকার সমুদ্রবক্ষে অনুসন্ধানে, গভীর কূপ খননে, চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলে। বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে, বিশেষ করে ভোলায় বাপেক্সকে কাজ না দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ায় আমি হতাশ।’ তিনি বলেন, ‘বাপেক্সকে বাঁচাতে হলে তাদের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খনন ও উত্তোলনের কাজ তাদেরই দিতে হবে।’

বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ১৯৮৯ সালে বাপেক্স প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সংস্থাটি এ পর্যন্ত ১২টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে ৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও কূপ খননে বাপেক্সের সাফল্যের অনুপাত ২:১। আন্তর্জাতিকভাবে পাঁচটি কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পেলে সেটিকে সাফল্য বলে মনে করা হয়। দেশে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরন এখন পর্যন্ত প্রতি চারটি কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পেয়েছে।

পেট্রোবাংলার সূত্র অনুযায়ী, শাহবাজপুর (বোরহানউদ্দিন, ভোলা) গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডে (বাপেক্স)। ১৯৯৪ সালে এখানে প্রথম অনুসন্ধান কূপ খননের পর আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়। ২০০৯ সালের ১১ মে থেকে ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। বর্তমানে এখান থেকে চারটি কূপের মাধ্যমে গড়ে দৈনিক ৫০ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে।

বাপেক্সের একটি সূত্র জানায়, ভোলায় দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করায় কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, রিগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবল বাপেক্সের আছে। প্রতিটি কূপ খনন করতে বাপেক্সের সম্ভাব্য ব্যয় হবে (রিগ ভাড়া, জনবলের পেছনে ব্যয়, থার্ড পার্টির সেবাসমূহের ব্যয় প্রভৃতিসহ) ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার। কূপ খননের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি নেয়াসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বাপেক্স করে রেখেছে।

এখন গ্যাজপ্রম বাপেক্সের দেয়া ভূ-তাত্ত্বিক কারিগরি নির্দেশনা (জিওলজিক্যাল টেকনিক্যাল অর্ডার বা জিটিও) অনুসরণ করে এবং বাপেক্সের নির্ধারণ করে দেয়া স্থানেই (লোকেশন) কূপ খনন করবে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর (এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে) অনুমোদনের জন্য এই ৩টি কূপ খনন প্রস্তাবের যে সার-সংক্ষেপ পাঠায় তার ৫নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় যে, গ্যাজপ্রম ‘হ্রাসকৃত মূল্যে’ এই তিনটি কূপ খনন করবে। প্রধানমন্ত্রী (এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে) সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেন কিন্তু এখন ৩টি কূপের যে চুক্তিমূল্য চূড়ান্ত করা হয়েছে, তা গ্যাজপ্রমের আগে খনন করা কূপের দরের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) অধীনে তিনটি ব্লকে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত আমেরিকান কোম্পানি শেভরনের প্রতিটি কূপ খননে গড় ব্যয় প্রায় ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গ্যাজপ্রম এর আগে একাধিক চুক্তির আওতায় মোট ১৭টি কূপ খনন করেছে। এর মধ্যে প্রথম ১০টির চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় ১৯৩ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিটি কূপের চুক্তিমূল্য ছিল ১৯ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এরপর সর্বশেষ যে কূপগুলো গ্যাজপ্রম খনন করেছে, তার প্রতিটির চুক্তিমূল্য ছিল ১৬ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাপেক্সের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বেশি দামে কাজ দিতে পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা বিভাগের অতি উৎসাহের কারণে বাপেক্স কাজ হারাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১১ সালে গ্যাজপ্রমকে ১০টি কূপ খননের কাজ দেয়ার সময়, বাপেক্সকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নানা পরিকল্পনায় ব্যস্ত দেখানো হয়। এসব পরিপ্রেক্ষিতে বাপেক্সের কর্মকর্তাদের (উদীয়মান প্রকৌশলীদের) মধ্যে দিন দিন হতাশা তৈরি হচ্ছে। জ্যেষ্ঠদের পাশপাশি নবীন প্রকৌশলীরাও হয় বহুজাতিক কোম্পানিতে যোগ দিচ্ছেন, নয়তো বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।

বাপেক্সের দক্ষতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের অভিমত

গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন ও গ্যাস উত্তোলনে বাপেক্সের যোগ্যতা সম্পর্কে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলার বক্তব্য ইতিবাচক। ২০২০ সালের প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টরা বাপেক্সের দক্ষতা ও সফলতার প্রশংসা করেছেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্সের সাফল্য মোটামুটিভাবে সন্তোষজনক। কূপ খননে সাফল্যের হারও ভাল। বাপেক্স ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নিজস্ব দক্ষ জনবল ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতোমধ্যে সফলভাবে শ্রীকাইল ইস্ট-১ কূপ খনন করে একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, কোভিড-১৯ উপেক্ষা করে বাপেক্স সম্প্রতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রীকাইল-৩ কূপটিতে কোন ধরনের বিদেশি পরামর্শক ছাড়াই নিজস্ব জনবল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলভাবে ওয়ার্কওভার করে যোগ্যতা ও দক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে বাপেক্স নরসিংদী-১ ও তিতাস-৭ কূপের ওয়ার্কওভার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে, যেগুলো থেকে দৈনিক ৪০-৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এ বি এম আবদুল ফাত্তাহ্্ বলেছেন, বাপেক্স ইতোমধ্যেই গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার এবং গ্যাস উৎপাদন কার্যক্রমের মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছে। বাপেক্স নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পেট্রোবাংলা’র আওতাধীন বিজিএফসিএল ও এসজিএফএলের মালিকানাধীন বিভিন্ন কূপের খনন ও ওয়ার্কওভার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাপেক্স অচিরেই একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে।

উল্লেখ্য, বাপেক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লি. (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি. (এসজিএফএল), আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) এবং বাপেক্সের নিজস্ব ব্লক ও বরাদ্দকৃত অন্যান্য এলাকায় ৪৬টি কূপ (৩০টি উন্নয়ন এবং ১৬টি অনুসন্ধান কূপ) খনন করেছে। রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটি ১৬টি অনুসন্ধান কূপ খননের মাধ্যমে ৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। এছাড়া ৪০টি কূপে সফলতার সঙ্গে ওয়ার্কওভার সম্পন্ন করেছে। বাপেক্স বর্তমানে সালদানদী, ফেঞ্চুগঞ্জ, শাহবাজপুর, সেমুতাং, শ্রীকাইল, বেগমগঞ্জ ও শাহজাদপুর-সুন্দলপুর ৭টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গড়ে দৈনিক প্রায় ১০৩ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উৎপাদন করছে।

শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু শাহবাজপুর নয়, পুরো ভোলাতেই গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের ধারণা, সিলেট অঞ্চলের পর উপকূলীয় এ অঞ্চলে গ্যাসের সবচেয়ে বড় রিজার্ভ রয়েছে।