ওয়াসার প্রকল্পে অনিয়ম

পানির কষ্টে খুলনাবাসী

খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়মের কারণে নগরের বাসিন্দারা পানির কষ্টে ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছে খুলনা সুপেয় পানি আন্দোলন কমিটি। খুলনায় পানি নিয়ে কাজ করে, এমন বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক নেতাদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটি বলছে, ফিজিবিলিটি স্টাডিতে যেখান থেকে পানি নিয়ে শোধন করে নগরে সরবরাহ করা হয়, সেখানে লবণাক্ততার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু প্রকল্পে লবণাক্ত শোধনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রকল্পে অনিয়মের কারণেই ওয়াসার পানি লবণাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত।

এ বিষয়ে জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের আহ্বায়ক নাজমুল আযম ডেভিড রোববার বলেন, বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া ও মধুমতী নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ওয়াসা নগরবাসীকে মানসম্মত পানি সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ভৈরব-মধুমতীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়ে, দিন দিন আরও বাড়বে, সেটা অনুমিত কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়নি।

তিনি বলেন, ২০১১ সালের মার্চে জাইকার ফিজিবিলিটি স্টাডিতে উল্লেখ করা হয়, যে এলাকায় ওই স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে, সেখানের পানিতে ক্লোরাইডের উচ্চমাত্রার উপস্থিতি রয়েছে। প্রথাগত শোধনের মাধ্যমে পানিতে বিদ্যমান ভারীধাতু অপসারণ করা যাবে না। তারপরও প্রকল্পে পরিশোধন কেন্দ্রে নদীর পানির ময়লা-দুর্গন্ধ, রোগ-জীবাণু পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকলেও রাখা হয়নি লবণাক্ততা শোধনের কোন ব্যবস্থা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, খুলনা অঞ্চলের মানুষ সাধারণত দুই ডিএস মিটার (ডেসি সিমেন পার মিটার) লবণাক্ততা পর্যন্ত পানি খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করেন। কিন্তু গত ১৫-১৬ বছর ধরেই শুষ্ক মৌসুমে মধুমতী নদীর পানির লবণাক্ততা সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি রয়েছে। নাজমুল আযম ডেভিড আরও বলেন, ৪৬ বর্গকিলোমিটারের খুলনা নগরে ১৮ লাখ মানুষের বাস। গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির সংকট দেখা দেয় নগরজুড়ে। খুলনাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়।

২০১৩ সালে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকায় খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প নামে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে ওয়াসা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুমতী নদীর পানি সংগ্রহের পর পরিশোধনের মাধ্যমে নগরে সরবরাহ করা হচ্ছে।

নগরে ওয়াসার প্রায় ৩৮ হাজার গ্রাহক রয়েছে। প্রতিদিনের পানির চাহিদা রয়েছে ২৪ কোটি লিটার।

ওয়াসার চারটি জোনের ৮৫টি গভীর নলকূপ থেকে নগরের ৩১টি ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে এই পানি নোনা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়। প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দিয়ে ১১ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করা সম্ভব কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৩ কোটি ৪৯ লাখ লিটার।

খুলনা সুজনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, আমরা বিশুদ্ধ পানি চাই কিন্তু যে পানি দেয়া হচ্ছে, সেটি খুব বেশি হলেও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে ওয়াসার শত শত কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প এখন প্রশ্নবিদ্ধ। লবণাক্ত পানি সরবরাহ করেই বিল নিচ্ছে ওয়াসা।

এ বিষয়ে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ ফিজিবিলিটি স্টাডির পর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যেভাবে পরামর্শ দিয়েছে, সেভাবেই প্রকল্প করা হয়েছে দাবি করে বলেন, লবণাক্ততা বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী বড় আকারের একটি রিজার্ভার করা হয়। এবছর কয়েক মাস বৃষ্টি না হওয়ায় লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, রিজার্ভের পানীয় ফুরিয়েছে। এসব কারণে বেশি লবণাক্ত পানি যাচ্ছে। তবে একটু বৃষ্টি হলে ওই সমস্যা আর থাকবে না।

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

ওয়াসার প্রকল্পে অনিয়ম

পানির কষ্টে খুলনাবাসী

শুভ্র শচীন, খুলনা

image

খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়মের কারণে নগরের বাসিন্দারা পানির কষ্টে ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছে খুলনা সুপেয় পানি আন্দোলন কমিটি। খুলনায় পানি নিয়ে কাজ করে, এমন বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক নেতাদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটি বলছে, ফিজিবিলিটি স্টাডিতে যেখান থেকে পানি নিয়ে শোধন করে নগরে সরবরাহ করা হয়, সেখানে লবণাক্ততার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু প্রকল্পে লবণাক্ত শোধনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রকল্পে অনিয়মের কারণেই ওয়াসার পানি লবণাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত।

এ বিষয়ে জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের আহ্বায়ক নাজমুল আযম ডেভিড রোববার বলেন, বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া ও মধুমতী নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ওয়াসা নগরবাসীকে মানসম্মত পানি সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ভৈরব-মধুমতীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়ে, দিন দিন আরও বাড়বে, সেটা অনুমিত কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়নি।

তিনি বলেন, ২০১১ সালের মার্চে জাইকার ফিজিবিলিটি স্টাডিতে উল্লেখ করা হয়, যে এলাকায় ওই স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে, সেখানের পানিতে ক্লোরাইডের উচ্চমাত্রার উপস্থিতি রয়েছে। প্রথাগত শোধনের মাধ্যমে পানিতে বিদ্যমান ভারীধাতু অপসারণ করা যাবে না। তারপরও প্রকল্পে পরিশোধন কেন্দ্রে নদীর পানির ময়লা-দুর্গন্ধ, রোগ-জীবাণু পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকলেও রাখা হয়নি লবণাক্ততা শোধনের কোন ব্যবস্থা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, খুলনা অঞ্চলের মানুষ সাধারণত দুই ডিএস মিটার (ডেসি সিমেন পার মিটার) লবণাক্ততা পর্যন্ত পানি খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করেন। কিন্তু গত ১৫-১৬ বছর ধরেই শুষ্ক মৌসুমে মধুমতী নদীর পানির লবণাক্ততা সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি রয়েছে। নাজমুল আযম ডেভিড আরও বলেন, ৪৬ বর্গকিলোমিটারের খুলনা নগরে ১৮ লাখ মানুষের বাস। গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির সংকট দেখা দেয় নগরজুড়ে। খুলনাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়।

২০১৩ সালে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকায় খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প নামে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে ওয়াসা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুমতী নদীর পানি সংগ্রহের পর পরিশোধনের মাধ্যমে নগরে সরবরাহ করা হচ্ছে।

নগরে ওয়াসার প্রায় ৩৮ হাজার গ্রাহক রয়েছে। প্রতিদিনের পানির চাহিদা রয়েছে ২৪ কোটি লিটার।

ওয়াসার চারটি জোনের ৮৫টি গভীর নলকূপ থেকে নগরের ৩১টি ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে এই পানি নোনা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়। প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দিয়ে ১১ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করা সম্ভব কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৩ কোটি ৪৯ লাখ লিটার।

খুলনা সুজনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, আমরা বিশুদ্ধ পানি চাই কিন্তু যে পানি দেয়া হচ্ছে, সেটি খুব বেশি হলেও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে ওয়াসার শত শত কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প এখন প্রশ্নবিদ্ধ। লবণাক্ত পানি সরবরাহ করেই বিল নিচ্ছে ওয়াসা।

এ বিষয়ে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ ফিজিবিলিটি স্টাডির পর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যেভাবে পরামর্শ দিয়েছে, সেভাবেই প্রকল্প করা হয়েছে দাবি করে বলেন, লবণাক্ততা বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী বড় আকারের একটি রিজার্ভার করা হয়। এবছর কয়েক মাস বৃষ্টি না হওয়ায় লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, রিজার্ভের পানীয় ফুরিয়েছে। এসব কারণে বেশি লবণাক্ত পানি যাচ্ছে। তবে একটু বৃষ্টি হলে ওই সমস্যা আর থাকবে না।