স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে ‘হল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দাও আন্দোলন’ আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হল খুলে দেয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি মার্কেট, শপিংমল, দোকানপাট, গণপরিবহন চলতে পারে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও অবশ্যই চলতে পারবে। তাদের চেয়ে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি সচেতন। সবকিছু খোলা রেখে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোন মানে হয় না, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা অতি দ্রুত ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ, সেশনজট না বাড়িয়ে অবিলম্বে ক্লাসে ফেরার ব্যবস্থা করুন।

ফারসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে আর একটি দেশও পাবেন না যেখানে ছাত্ররা ক্লাস করতে চায়। আমাদের দেশের ছাত্ররা এজন্য সংগ্রাম করছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে শুধু নোটিশ দেয়া, নতুন নতুন তারিখ ঘোষণা করা। ঈদের সময় লাখ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে যাওয়া-আসা করেছে, সীমান্ত দিয়ে এখনও মানুষ আসছে। সব চলছে, এরপর শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার কোন যুক্তি নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, গার্মেন্টস খোলা আছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা আছে, গণপরিবহন চালু আছে, শপিংমল খোলা আছে, সবই খোলা আছে। উৎসব হচ্ছে, আয়োজন হচ্ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ কেন। অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

হল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দাও আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, দীর্ঘ একবছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় সেশনজটে পড়ে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর চাকরি ও টিউশনি নেই। অন্যদিকে একটি দৈনিক পত্রিকার জরিপে দেখা গেছে, গত পাঁচ মাসে প্রায় ৩৯ জন ঢাবি শিক্ষার্থী নিজ এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন। ৮০ জন শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ ঢাবি ক্যাম্পাসেই ঢাবি ছাত্র হাফিজুর রহমানের অস্বাভাবিক ও নির্মম মৃত্যু আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসবের জন্য দায়ী।

তিনি আরও বলেন, আমরা সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে স্মারকলিপি নিয়ে গেলে তিনি আমাদের ‘বিকারগ্রস্ত’ বলেন। আমরা আজকের এই সমাবেশ থেকে ঘোষণা করছি, ক্যাম্পাস খোলা না পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। যতদিন না হল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরে তারা সেখানে প্রতিবাদী গান ও কবিতা পাঠ করে।