কার স্বার্থে বারবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে

দেশে কালো টাকার পরিমাণ কত, বারবার সুবিধা দিয়ে মোট কালো টাকার কত অংশ অর্থনীতির মূলধারায় আনা গেছে- সেটা জানবার উপায় নেই। ২০১৮ সালের মে মাসে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত বলেছিলেন, ‘যতবার আমরা কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দিয়েছি, প্রতিবারই ফেল করেছি। খুবই কম পরিমাণ কালো টাকা সাদা করা সম্ভব হয়েছে।’

প্রতিবার ফেল করা সত্ত্বেও আগামী বাজেটেও অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কালো টাকাকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে এ সুযোগ রাখা হবে। তিনি আরো বলেছেন, অর্থনীতিতে যতদিন কালো টাকা থাকবে, সরকার ততদিন তা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখবে। অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, ‘দেশের কিছুক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কারণে অনেক সময় টাকা অপ্রদর্শিত থাকে। এসব অর্থ যদি প্রদর্শন করার সুযোগ দেয়া না হয়, অর্থনীতির মূলধারায় না আনা হয়, তাহলে অর্থনীতি ঠিকভাবে কাজ করবে না।’

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত বিভিন্ন সময় অনীহা দেখিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান অর্থমন্ত্রী কোন রাখঢাক না করে বলেছেন, অর্থনীতিতে যতদিন কালো টাকা থাকবে, সরকার ততদিন তা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি অনন্তকাল ধরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হবে। কাদের স্বার্থে বারবারই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয় সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থমন্ত্রী বলছেন, দেশের কিছুক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কারণে অনেক সময় টাকা অপ্রদর্শিত থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, পদ্ধতিগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হচ্ছে না কেন। পদ্ধতি বদলানোই তো সরকারের কাজ। দেশে এমন কোন পদ্ধতি থাকা সঙ্গত নয় যার ফলে কালো টাকা তৈরি হয়। ক্ষেত্রভেদে বৈধ আয়ের একজন মানুষকে সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। অথচ কালো টাকার মালিক মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়েই টাকা সাদা করার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার কালো টাকার মালিকদের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্নও তোলা যাবে না। বৈষম্যমূলক এ ব্যবস্থার ফলে সৎ ও বৈধপন্থায় আয় করা মানুষ নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এর বিপরীতে দুর্নীতিবাজরা অন্যায় উৎসাহ পাচ্ছেন। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা হবে কীভাবে- সেই প্রশ্ন উঠেছে।

‘যতদিন কালো টাকা থাকবে ততদিন সাদা করার সুযোগ’ দেয়ার নীতি সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। উক্ত নীতি বাস্তবায়ন হলে মূলধারার অর্থনীতি রুগ্ন হয়ে পড়বে বলে আমরা মনে করি। জাতীয় অর্থনীতির জন্য আখেরে মঙ্গল বয়ে আনবে না- এমন একটি ব্যবস্থা অনন্তকাল ধরে চলতে দেয়া যায় না।

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

কার স্বার্থে বারবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে

দেশে কালো টাকার পরিমাণ কত, বারবার সুবিধা দিয়ে মোট কালো টাকার কত অংশ অর্থনীতির মূলধারায় আনা গেছে- সেটা জানবার উপায় নেই। ২০১৮ সালের মে মাসে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত বলেছিলেন, ‘যতবার আমরা কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দিয়েছি, প্রতিবারই ফেল করেছি। খুবই কম পরিমাণ কালো টাকা সাদা করা সম্ভব হয়েছে।’

প্রতিবার ফেল করা সত্ত্বেও আগামী বাজেটেও অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কালো টাকাকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে এ সুযোগ রাখা হবে। তিনি আরো বলেছেন, অর্থনীতিতে যতদিন কালো টাকা থাকবে, সরকার ততদিন তা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখবে। অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, ‘দেশের কিছুক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কারণে অনেক সময় টাকা অপ্রদর্শিত থাকে। এসব অর্থ যদি প্রদর্শন করার সুযোগ দেয়া না হয়, অর্থনীতির মূলধারায় না আনা হয়, তাহলে অর্থনীতি ঠিকভাবে কাজ করবে না।’

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত বিভিন্ন সময় অনীহা দেখিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান অর্থমন্ত্রী কোন রাখঢাক না করে বলেছেন, অর্থনীতিতে যতদিন কালো টাকা থাকবে, সরকার ততদিন তা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি অনন্তকাল ধরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হবে। কাদের স্বার্থে বারবারই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয় সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থমন্ত্রী বলছেন, দেশের কিছুক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কারণে অনেক সময় টাকা অপ্রদর্শিত থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, পদ্ধতিগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হচ্ছে না কেন। পদ্ধতি বদলানোই তো সরকারের কাজ। দেশে এমন কোন পদ্ধতি থাকা সঙ্গত নয় যার ফলে কালো টাকা তৈরি হয়। ক্ষেত্রভেদে বৈধ আয়ের একজন মানুষকে সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। অথচ কালো টাকার মালিক মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়েই টাকা সাদা করার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার কালো টাকার মালিকদের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্নও তোলা যাবে না। বৈষম্যমূলক এ ব্যবস্থার ফলে সৎ ও বৈধপন্থায় আয় করা মানুষ নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এর বিপরীতে দুর্নীতিবাজরা অন্যায় উৎসাহ পাচ্ছেন। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা হবে কীভাবে- সেই প্রশ্ন উঠেছে।

‘যতদিন কালো টাকা থাকবে ততদিন সাদা করার সুযোগ’ দেয়ার নীতি সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। উক্ত নীতি বাস্তবায়ন হলে মূলধারার অর্থনীতি রুগ্ন হয়ে পড়বে বলে আমরা মনে করি। জাতীয় অর্থনীতির জন্য আখেরে মঙ্গল বয়ে আনবে না- এমন একটি ব্যবস্থা অনন্তকাল ধরে চলতে দেয়া যায় না।