বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস

অরূপরতন চৌধুরী

১৯৮৭ সাল থেকে প্রতি বছর ৩১ মে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং এর সহযোগী সংস্থাসমূহ তামাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি তুলে ধরে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালন করে আসছে।

এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘Commit to Quit‘আসুন আমরা শপথ করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি’। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে যত মানুষ তামাক ব্যবহার করে তার অন্তত অর্ধেক জনগণ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশ্বের সর্বোচ্চ তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারী দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। পৃথিবীর ১১০ কোটি ধূমপায়ীর শতকরা ৮০% ভাগ বাস করেন মধ্য ও নিম্নআয়ের দেশে।

বিপুল জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবের কারণে বিশ্বের সর্বোচ্চ তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারী দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

ধূমপান মাদক সেবনের প্রবেশ পথ

তামাক সেবনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম মাদকের দিকে ধাবিত হয়ে পরিবার ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, যারা কিশোর বয়সে ধূমপানে আসক্ত হয়, তাদের অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুণ বেশি, গাঁজায় (মারিজুয়ানা) আটগুণ এবং কোকেইনের ক্ষেত্রে ২২ গুণ বেশি। অর্থাৎ তামাক শুধু একটি আসক্তিই নয়, এটি তরুণদের আরো অনেক বিধ্বংসী আসক্তির পথে পরিচালিত করে। এছাড়াও অল্পবয়সে তামাকের ব্যবহার শরীরের কর্মক্ষমতা এবং উদ্দীপনা কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮% ধূমপায়ী এবং ৫০% বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

করোনাভাইরাস ও ধূমপানে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি

ধূমপান করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি ১৪ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে, ধূমপায়ী বা তামাক সেবনকারীরা নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যাসহ জটিল ও কঠিন রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে বিধায় কোভিড-১৯-এ বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং প্রাণহানির ঝুঁকিতে শীর্ষে অবস্থান করছে। কারণ হিসেবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে- সিগারেট সেবনের কারণে হাতের আঙুলগুলো ঠোঁটের সংস্পর্শে আসে এবং এর ফলে হাতে বা সিগারেটের ফিল্টারে লেগে থাকা ভাইরাস মুখে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এছাড়া ধূমপায়ীদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায় ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি; যা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তদুপরি ধূমপান শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে বিধায়, সহজেই ক্ষতিকর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে- অধূমপায়ীদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি ধূমপায়ী জটিল অবস্থায় ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। তাদের কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হয়েছে এবং এরপর তাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন। এছাড়া ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের (বিএমজে) এক গবেষণা বলছে- দিনে একটি সিগারেট খেলেও হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। স্ট্রোক বা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও বাড়ে ৩০ শতাংশ। নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরো বেশি- অনেকাংশে ৫৭ শতাংশের মতো।

তামাক চাষ

তামাক চাষের কারণে দেশে খাদ্য উৎপাদনের জমি কমে যাচ্ছে। তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে গাছ ব্যবহারের কারণে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দরিদ্র অভিভাবকরা যদি তামাকের জন্য ব্যয়িত অর্থের ৬৯% খাদ্যের জন্য ব্যয় করেন, তবে দেশে অপুষ্টিজনিত শিশুমৃত্যু অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব।

ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট

ইলেকট্রনিক সিগারেটের ভেতরে থাকে নিকোটিনের দ্রবণ; যা ব্যাটারির মাধ্যমে গরম হয়। এর ফলে ধোঁয়া তৈরি হয়। এটি মস্তিষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতির সৃষ্টি করে। গত কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বে ইলেকট্রনিক সিগারেটের প্রচলন বেড়েছে। তবে ইউরোপসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে এ সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, যারা ই-সিগারেট সেবন করছেন তাদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

সব তামাকপণ্যের কর ও দাম বৃদ্ধি

তামাকজনিত রোগব্যাধির চিকিৎসা ও অকাল মৃত্যুর কারণে প্রতি বছর ৩০,৫৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু একই অর্থবছরে সরকার তামাক খাত থেকে রাজস্ব পায় অনেক কম (২২,৮১০ কোটি টাকা)। অর্থাৎ সরকারের নেট ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি এবং করোনা মোকাবেলায় অতিরিক্ত ৩% সারচার্জ আরোপ করা হলে সরকার অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব পেতে পারে। এ টাকা করোনা মহামারী মোকাবিলায় কাজে লাগানো যেতে পারে।

বাংলাদেশে ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের ফলে ফুসফুস ক্যান্সার, মুখগহ্বরের ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ (সিওপিডি), ডায়বেটিস, যক্ষ্মা, হাঁপানি, বার্জাজ, ডিজিজ ইত্যাদি রোগে ১২ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়। তাই আমাদের দেশে এখনই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সেই সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মৃত্যু ও ৩,৮২,০০০ জনকে পঙ্গুত্ব থেকে বাঁচানো যাবে এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে বছরে ২৬০০ কোটি টাকার লোকসান থেকে বাঁচানো যাবে। তামাক ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে আনার বিভিন্ন পন্থার মধ্যে অন্যতম একটি যথোপযুক্ত উপায় হলো তামাকজাত সামগ্রীর ওপর অধিক হারে কর আরোপ করা। সুতরাং সব ধরনের তামাক পণ্যের ওপর সিগারেটের সমপরিমাণ কর আরোপ করা, সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিল রেখে তামাকের মূল্যের বাৎসরিক সমন্বয় সাধন করা আজকের দিনে সবার দাবি।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানস (মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা]

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস

অরূপরতন চৌধুরী

১৯৮৭ সাল থেকে প্রতি বছর ৩১ মে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং এর সহযোগী সংস্থাসমূহ তামাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি তুলে ধরে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালন করে আসছে।

এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘Commit to Quit‘আসুন আমরা শপথ করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি’। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে যত মানুষ তামাক ব্যবহার করে তার অন্তত অর্ধেক জনগণ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশ্বের সর্বোচ্চ তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারী দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। পৃথিবীর ১১০ কোটি ধূমপায়ীর শতকরা ৮০% ভাগ বাস করেন মধ্য ও নিম্নআয়ের দেশে।

বিপুল জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবের কারণে বিশ্বের সর্বোচ্চ তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারী দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

ধূমপান মাদক সেবনের প্রবেশ পথ

তামাক সেবনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম মাদকের দিকে ধাবিত হয়ে পরিবার ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, যারা কিশোর বয়সে ধূমপানে আসক্ত হয়, তাদের অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুণ বেশি, গাঁজায় (মারিজুয়ানা) আটগুণ এবং কোকেইনের ক্ষেত্রে ২২ গুণ বেশি। অর্থাৎ তামাক শুধু একটি আসক্তিই নয়, এটি তরুণদের আরো অনেক বিধ্বংসী আসক্তির পথে পরিচালিত করে। এছাড়াও অল্পবয়সে তামাকের ব্যবহার শরীরের কর্মক্ষমতা এবং উদ্দীপনা কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮% ধূমপায়ী এবং ৫০% বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

করোনাভাইরাস ও ধূমপানে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি

ধূমপান করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি ১৪ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে, ধূমপায়ী বা তামাক সেবনকারীরা নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যাসহ জটিল ও কঠিন রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে বিধায় কোভিড-১৯-এ বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং প্রাণহানির ঝুঁকিতে শীর্ষে অবস্থান করছে। কারণ হিসেবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে- সিগারেট সেবনের কারণে হাতের আঙুলগুলো ঠোঁটের সংস্পর্শে আসে এবং এর ফলে হাতে বা সিগারেটের ফিল্টারে লেগে থাকা ভাইরাস মুখে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এছাড়া ধূমপায়ীদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায় ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি; যা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তদুপরি ধূমপান শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে বিধায়, সহজেই ক্ষতিকর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে- অধূমপায়ীদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি ধূমপায়ী জটিল অবস্থায় ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। তাদের কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হয়েছে এবং এরপর তাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন। এছাড়া ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের (বিএমজে) এক গবেষণা বলছে- দিনে একটি সিগারেট খেলেও হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। স্ট্রোক বা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও বাড়ে ৩০ শতাংশ। নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরো বেশি- অনেকাংশে ৫৭ শতাংশের মতো।

তামাক চাষ

তামাক চাষের কারণে দেশে খাদ্য উৎপাদনের জমি কমে যাচ্ছে। তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে গাছ ব্যবহারের কারণে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দরিদ্র অভিভাবকরা যদি তামাকের জন্য ব্যয়িত অর্থের ৬৯% খাদ্যের জন্য ব্যয় করেন, তবে দেশে অপুষ্টিজনিত শিশুমৃত্যু অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব।

ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট

ইলেকট্রনিক সিগারেটের ভেতরে থাকে নিকোটিনের দ্রবণ; যা ব্যাটারির মাধ্যমে গরম হয়। এর ফলে ধোঁয়া তৈরি হয়। এটি মস্তিষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতির সৃষ্টি করে। গত কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বে ইলেকট্রনিক সিগারেটের প্রচলন বেড়েছে। তবে ইউরোপসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে এ সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, যারা ই-সিগারেট সেবন করছেন তাদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

সব তামাকপণ্যের কর ও দাম বৃদ্ধি

তামাকজনিত রোগব্যাধির চিকিৎসা ও অকাল মৃত্যুর কারণে প্রতি বছর ৩০,৫৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু একই অর্থবছরে সরকার তামাক খাত থেকে রাজস্ব পায় অনেক কম (২২,৮১০ কোটি টাকা)। অর্থাৎ সরকারের নেট ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি এবং করোনা মোকাবেলায় অতিরিক্ত ৩% সারচার্জ আরোপ করা হলে সরকার অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব পেতে পারে। এ টাকা করোনা মহামারী মোকাবিলায় কাজে লাগানো যেতে পারে।

বাংলাদেশে ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের ফলে ফুসফুস ক্যান্সার, মুখগহ্বরের ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ (সিওপিডি), ডায়বেটিস, যক্ষ্মা, হাঁপানি, বার্জাজ, ডিজিজ ইত্যাদি রোগে ১২ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়। তাই আমাদের দেশে এখনই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সেই সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মৃত্যু ও ৩,৮২,০০০ জনকে পঙ্গুত্ব থেকে বাঁচানো যাবে এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে বছরে ২৬০০ কোটি টাকার লোকসান থেকে বাঁচানো যাবে। তামাক ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে আনার বিভিন্ন পন্থার মধ্যে অন্যতম একটি যথোপযুক্ত উপায় হলো তামাকজাত সামগ্রীর ওপর অধিক হারে কর আরোপ করা। সুতরাং সব ধরনের তামাক পণ্যের ওপর সিগারেটের সমপরিমাণ কর আরোপ করা, সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিল রেখে তামাকের মূল্যের বাৎসরিক সমন্বয় সাধন করা আজকের দিনে সবার দাবি।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানস (মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা]