রোগীদের করোনা টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি

টাকা দিলে পজেটিভ হয়ে যায় নেগেটিভ

রাজধানীতে মুমূর্ষু রোগীদের করোনা টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে ভয়াবহ জালিয়াতি হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে পজেটিভ রিপোর্টকে নেগেটিভ করে। ভুয়া নেগেটিভ রিপোর্ট দেখিয়ে এক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি ও অপারেশন করতে গেলে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান ও গলা বিভাগে এ ধরনের রিপোর্ট নিয়ে গেলে বিশেষজ্ঞরা রিপোর্টটি ভুয়া বলে শনাক্ত পকরেন। তথ্য সূত্র গোয়েন্দা পুলিশ।

ভুক্তভোগী রোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত রোববার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডস্থ চাঁনখারপুলের আল মেডিকেল ফার্মাতে অভিযান চালিয়ে দুই টেস্ট জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ভুয়া করোনা টেস্ট রিপোর্ট, রিপোর্ট তৈরির সরঞ্জাম জব্দ ও গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বংশাল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের কোতোয়ালি জোনের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, গ্রেপ্তারকৃত টেস্ট জালিয়াতরা হলো মনির হোসেন ও রফিকুল ইসলাম রুবেল। তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে নিজেরাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তিকৃত পমুমূর্ষু পরোগীদের অপারেশনের জন্য কোভিড-১৯ এর টেস্টের পজেটিভ পরিপোর্ট নেগেটিভ করত বলে স্বীকার করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ পহাসপাতালের পভর্তিকৃত রোগীদের যে কোন অপারেশনের জন্য পকরোনা নেগেটিভ রিপোর্ট দরকার হয়। এ রিপোর্ট দেখার পর রোগীর অপারেশন করা হয়। এ চক্র রোগীর স্বজনদের ফুঁসলিয়ে টাকার বিনিময়ে পজেটিভ রিপোর্টকে নেগেটিভ করে দেয়। তারা ক্যান্সার আক্রান্ত একজন রোগীর করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট তৈরি করে দেয়ার কথা বলে দুই হাজার টাকা করে নেয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান ও গলা বিভাগে ওই নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দেয়া হয়। কিন্তু নাক কান গলা বিভাগ কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ রিপোর্টটি দেখে ভুয়া বলে শনাক্ত করে।

ডিবির এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ জানান, এ চক্র দীর্ঘদিন ধরে টেস্ট জালিয়াতি করে আসছে। অভিযানের সময় তাদের আস্তানা থেকে জালিয়াতির ডিভাইস, একটি প্রিন্টার, একটি সিপিইউ, একটি কি বোর্ড ও পনকল টেস্ট রিপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।

হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, করোনা মহামারীর কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের যে কোন হাসপাতালে ভর্তিকৃত মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা ও অপারেশনের আগে করোনা টেস্ট করতে হয়। টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ হলে রোগীর কাছে গিয়ে চিকিৎসক রোগী দেখেন ও অপারেশন করেন। আর পজেটিভ হলে তার আগে করোনা চিকিৎসা করতে হয়। করোনা চিকিৎসায় নেগেটিভ হওয়ার পর তার অন্য রোগের (অসংক্রমণ) চিকিৎসা করানো হয়। কোন রোগী জালিয়াতি করলে হাসপাতালে রোগ ছড়ায়। ডাক্তার, নার্সসহ পুরো হাসপাতালে করোনা রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক সংবাদকে জানান, করোনা টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি করলে রোগ পছড়িয়ে পড়বে। আর অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে কেউ ভর্তি ও তার অপারেশন করতে গেলে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) থাকা সব ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ পুরো ওটিতে করোনো সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। এক ওটি থেকে আরেক ওটিতে রোগ ছড়াবে। ডাক্তার পরিবার আক্রান্ত হবে। এমনকি অপারেশনের টেবিলে থাকা রোগী মারাত্মক সমস্যায় পড়বেন। অপারেশনের সময় শ্বাসনালী ফুসফুস থেকে কোভিড-১৯ জীবাণু বের হলে রোগ ছড়াবে। এটা ভয়াবহ ও বিপজ্জনক।

এ সম্পর্কে মহাখালী রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে যারা জালিয়াতি করছে তাদের কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে সতর্ক ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। আর প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। অন্যথায় অসহায় গরিব রোগীদের ভোগান্তি বাড়বে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা টেস্ট নেগেটিভ করে দেয়ার কথা বলে বিকাশে ১০ হাজার টাকা থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। র‌্যাবের অভিযানে এই ধরনের একটি চক্র গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ধরনের প্রতারক চক্রকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে।

মঙ্গলবার, ০১ জুন ২০২১ , ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৯ শাওয়াল ১৪৪২

রোগীদের করোনা টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি

টাকা দিলে পজেটিভ হয়ে যায় নেগেটিভ

বাকী বিল্লাহ

image

করোনা আক্রান্ত রোগীকে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য আনা হয় -সংবাদ

রাজধানীতে মুমূর্ষু রোগীদের করোনা টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে ভয়াবহ জালিয়াতি হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে পজেটিভ রিপোর্টকে নেগেটিভ করে। ভুয়া নেগেটিভ রিপোর্ট দেখিয়ে এক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি ও অপারেশন করতে গেলে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান ও গলা বিভাগে এ ধরনের রিপোর্ট নিয়ে গেলে বিশেষজ্ঞরা রিপোর্টটি ভুয়া বলে শনাক্ত পকরেন। তথ্য সূত্র গোয়েন্দা পুলিশ।

ভুক্তভোগী রোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত রোববার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডস্থ চাঁনখারপুলের আল মেডিকেল ফার্মাতে অভিযান চালিয়ে দুই টেস্ট জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ভুয়া করোনা টেস্ট রিপোর্ট, রিপোর্ট তৈরির সরঞ্জাম জব্দ ও গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বংশাল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের কোতোয়ালি জোনের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, গ্রেপ্তারকৃত টেস্ট জালিয়াতরা হলো মনির হোসেন ও রফিকুল ইসলাম রুবেল। তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে নিজেরাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তিকৃত পমুমূর্ষু পরোগীদের অপারেশনের জন্য কোভিড-১৯ এর টেস্টের পজেটিভ পরিপোর্ট নেগেটিভ করত বলে স্বীকার করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ পহাসপাতালের পভর্তিকৃত রোগীদের যে কোন অপারেশনের জন্য পকরোনা নেগেটিভ রিপোর্ট দরকার হয়। এ রিপোর্ট দেখার পর রোগীর অপারেশন করা হয়। এ চক্র রোগীর স্বজনদের ফুঁসলিয়ে টাকার বিনিময়ে পজেটিভ রিপোর্টকে নেগেটিভ করে দেয়। তারা ক্যান্সার আক্রান্ত একজন রোগীর করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট তৈরি করে দেয়ার কথা বলে দুই হাজার টাকা করে নেয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান ও গলা বিভাগে ওই নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দেয়া হয়। কিন্তু নাক কান গলা বিভাগ কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ রিপোর্টটি দেখে ভুয়া বলে শনাক্ত করে।

ডিবির এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ জানান, এ চক্র দীর্ঘদিন ধরে টেস্ট জালিয়াতি করে আসছে। অভিযানের সময় তাদের আস্তানা থেকে জালিয়াতির ডিভাইস, একটি প্রিন্টার, একটি সিপিইউ, একটি কি বোর্ড ও পনকল টেস্ট রিপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।

হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, করোনা মহামারীর কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের যে কোন হাসপাতালে ভর্তিকৃত মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা ও অপারেশনের আগে করোনা টেস্ট করতে হয়। টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ হলে রোগীর কাছে গিয়ে চিকিৎসক রোগী দেখেন ও অপারেশন করেন। আর পজেটিভ হলে তার আগে করোনা চিকিৎসা করতে হয়। করোনা চিকিৎসায় নেগেটিভ হওয়ার পর তার অন্য রোগের (অসংক্রমণ) চিকিৎসা করানো হয়। কোন রোগী জালিয়াতি করলে হাসপাতালে রোগ ছড়ায়। ডাক্তার, নার্সসহ পুরো হাসপাতালে করোনা রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক সংবাদকে জানান, করোনা টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি করলে রোগ পছড়িয়ে পড়বে। আর অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে কেউ ভর্তি ও তার অপারেশন করতে গেলে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) থাকা সব ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ পুরো ওটিতে করোনো সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। এক ওটি থেকে আরেক ওটিতে রোগ ছড়াবে। ডাক্তার পরিবার আক্রান্ত হবে। এমনকি অপারেশনের টেবিলে থাকা রোগী মারাত্মক সমস্যায় পড়বেন। অপারেশনের সময় শ্বাসনালী ফুসফুস থেকে কোভিড-১৯ জীবাণু বের হলে রোগ ছড়াবে। এটা ভয়াবহ ও বিপজ্জনক।

এ সম্পর্কে মহাখালী রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে যারা জালিয়াতি করছে তাদের কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে সতর্ক ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। আর প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। অন্যথায় অসহায় গরিব রোগীদের ভোগান্তি বাড়বে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা টেস্ট নেগেটিভ করে দেয়ার কথা বলে বিকাশে ১০ হাজার টাকা থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। র‌্যাবের অভিযানে এই ধরনের একটি চক্র গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ধরনের প্রতারক চক্রকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে।