কিশোরগঞ্জের দরিদ্র পরিবার ফেরত চায় তাদের মেয়েকে

টিকটক চক্রের ‘শোবিজ’ স্বপ্নের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কিশোরগঞ্জ শহরতলির দরিদ্র পরিবারের মেয়ের ভারতের বেঙ্গালুরুতে নির্যাতনের শিকারের ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। পরিবার এখন তাদের মেয়েকে ফেরত চান। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি চান।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের গাঙ্গাইল গ্রামে মেয়েটির বাবা শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় মেয়ের মা শাহিদা আক্তার ও চাচা লিটন মিয়ার (৩৫) সঙ্গে। এরা জানান, তাদের মেয়ের (২২) স্বামীর বাড়ি চাঁদপুরে থাকত। কবে কিভাবে কারা তাকে ভারতে নিয়ে গেল, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানতেন না। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে বাবা শাহজাহানকে পুলিশ গিয়ে মোবাইলে ভিডিওচিত্র দেখালে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাদের মেয়ে টিকটক চক্রের ফাঁদে পড়ে ভারতে পাচার হয়ে গেছে। এদিনই বাবা শাহজাহানকে বাদী করে পুলিশ হাতিরঝিল থানায় মামলা করায়।

শাহজাহান মিয়া রাজধানীর মগবাজার এলাকায় একটি বস্তির মতো ছোট্ট ঘর ভাড়া করে স্ত্রী শাহিদা, বড় সন্তান লিটন (২৫), ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন এবং ফুটপাতে শরবত বিক্রি করতেন। এখনও বিক্রি করেন। ছেলে লিটন ঢাকায় রিকশা চালায়। চাচা লিটন মিয়াও সেখানে শরবতের ব্যবসা করতেন। করোনা মহামারীর কারণে এক বছর আগে ছোট মেয়ে শান্তাকে নিয়ে শাহিদা এবং লিটন মিয়া কিশোরগঞ্জে চলে এসেছেন।

তারা জানান, শাহজাহানের বড় মেয়ের সঙ্গে চাঁদপুরের দিদার হোসেন নামে প্রাইভেটকার চালকের প্রায় ৭ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। দিদারও মগবাজার এলাকায় থাকতেন। পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল। তাদের দিয়া আক্তার মনি নামে ৪ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। কিন্তু প্রায় ৪ বছর আগে দিদার চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। তবে কোন দেশে গেছেন, তা তারা জানেন না। প্রথম কিছুদিন জেসমিন স্বামীর পাঠানো টাকায় মগবাজারেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। এক পর্যায়ে জেসমিন স্বামীর বাড়ি চাঁদপুরে চলে যায়। কিন্তু গত এক বছর জেসমিনের সঙ্গে বাবার পরিবারের কোন যোগাযোগ হয়নি। জেসমিনের বাবা এবং চাচার মোবাইল ফোন থাকলেও কেন যোগাযোগ হয়নি, তার কোন সদুত্তর তারা দিতে পারেননি। এমনকি জেসমিনের শ্বশুরবাড়ির কারও ফোন নম্বরও তাদের কাছে নেই বলে জানান। তারা বলেন, ‘টিকটক’ কি জিনিস, এ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই, কখনও নামও শোনেননি। মেয়ে পাচার হওয়ার পর তারা পুলিশের মাধ্যমে এবং টেলিভিশনে ঘটনা জানতে পান। মেয়ের মধ্যে কি করে নায়িকা হওয়ার বাসনা তৈরি হলো, কিভাবে চক্রটি ফাঁদে ফেললো, এটাও তারা বুঝতে পারছেন না। তবে তারা মেয়েকে দ্রুত ফেরত চান এবং যারা তাকে ফাঁদে ফেলেছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি চান। অবশ্য ইতোমধ্যে ভারতে রিফাতুল ইসলাম উরফে ‘টিকটক হৃদয়’ এবং সাগর নামে দুই মানব পাচারকারী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশিদের কাছে মোবাইল ফোনে জেসমিনের বাবা শাহজাহানের মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে জানান, মামলাটি মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা হয়েছে। তবে এ মামলায় এখনও ঢাকায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য ভারতীয় পুলিশ এবং ইন্টাপোলের সঙ্গেও এ বিষয়ে যোগাযোগ হচ্ছে বলে ওসি আবদুর রশিদ এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার, ০১ জুন ২০২১ , ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৯ শাওয়াল ১৪৪২

ভারতে টিকটক চক্রের ফাঁদে নির্যাতন

কিশোরগঞ্জের দরিদ্র পরিবার ফেরত চায় তাদের মেয়েকে

মোস্তফা কামাল, কিশোরগঞ্জ

টিকটক চক্রের ‘শোবিজ’ স্বপ্নের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কিশোরগঞ্জ শহরতলির দরিদ্র পরিবারের মেয়ের ভারতের বেঙ্গালুরুতে নির্যাতনের শিকারের ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। পরিবার এখন তাদের মেয়েকে ফেরত চান। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি চান।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের গাঙ্গাইল গ্রামে মেয়েটির বাবা শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় মেয়ের মা শাহিদা আক্তার ও চাচা লিটন মিয়ার (৩৫) সঙ্গে। এরা জানান, তাদের মেয়ের (২২) স্বামীর বাড়ি চাঁদপুরে থাকত। কবে কিভাবে কারা তাকে ভারতে নিয়ে গেল, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানতেন না। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে বাবা শাহজাহানকে পুলিশ গিয়ে মোবাইলে ভিডিওচিত্র দেখালে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাদের মেয়ে টিকটক চক্রের ফাঁদে পড়ে ভারতে পাচার হয়ে গেছে। এদিনই বাবা শাহজাহানকে বাদী করে পুলিশ হাতিরঝিল থানায় মামলা করায়।

শাহজাহান মিয়া রাজধানীর মগবাজার এলাকায় একটি বস্তির মতো ছোট্ট ঘর ভাড়া করে স্ত্রী শাহিদা, বড় সন্তান লিটন (২৫), ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন এবং ফুটপাতে শরবত বিক্রি করতেন। এখনও বিক্রি করেন। ছেলে লিটন ঢাকায় রিকশা চালায়। চাচা লিটন মিয়াও সেখানে শরবতের ব্যবসা করতেন। করোনা মহামারীর কারণে এক বছর আগে ছোট মেয়ে শান্তাকে নিয়ে শাহিদা এবং লিটন মিয়া কিশোরগঞ্জে চলে এসেছেন।

তারা জানান, শাহজাহানের বড় মেয়ের সঙ্গে চাঁদপুরের দিদার হোসেন নামে প্রাইভেটকার চালকের প্রায় ৭ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। দিদারও মগবাজার এলাকায় থাকতেন। পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল। তাদের দিয়া আক্তার মনি নামে ৪ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। কিন্তু প্রায় ৪ বছর আগে দিদার চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। তবে কোন দেশে গেছেন, তা তারা জানেন না। প্রথম কিছুদিন জেসমিন স্বামীর পাঠানো টাকায় মগবাজারেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। এক পর্যায়ে জেসমিন স্বামীর বাড়ি চাঁদপুরে চলে যায়। কিন্তু গত এক বছর জেসমিনের সঙ্গে বাবার পরিবারের কোন যোগাযোগ হয়নি। জেসমিনের বাবা এবং চাচার মোবাইল ফোন থাকলেও কেন যোগাযোগ হয়নি, তার কোন সদুত্তর তারা দিতে পারেননি। এমনকি জেসমিনের শ্বশুরবাড়ির কারও ফোন নম্বরও তাদের কাছে নেই বলে জানান। তারা বলেন, ‘টিকটক’ কি জিনিস, এ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই, কখনও নামও শোনেননি। মেয়ে পাচার হওয়ার পর তারা পুলিশের মাধ্যমে এবং টেলিভিশনে ঘটনা জানতে পান। মেয়ের মধ্যে কি করে নায়িকা হওয়ার বাসনা তৈরি হলো, কিভাবে চক্রটি ফাঁদে ফেললো, এটাও তারা বুঝতে পারছেন না। তবে তারা মেয়েকে দ্রুত ফেরত চান এবং যারা তাকে ফাঁদে ফেলেছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি চান। অবশ্য ইতোমধ্যে ভারতে রিফাতুল ইসলাম উরফে ‘টিকটক হৃদয়’ এবং সাগর নামে দুই মানব পাচারকারী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশিদের কাছে মোবাইল ফোনে জেসমিনের বাবা শাহজাহানের মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে জানান, মামলাটি মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা হয়েছে। তবে এ মামলায় এখনও ঢাকায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য ভারতীয় পুলিশ এবং ইন্টাপোলের সঙ্গেও এ বিষয়ে যোগাযোগ হচ্ছে বলে ওসি আবদুর রশিদ এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।