সিএনজিচালক স্বামীকে হত্যা করে লাশ টুকরো করান স্ত্রী

রাজধানীর মহাখালী থেকে উদ্ধারকৃত হাত-পা কাটা মস্তকহীন লাশের পরিচয় মিলেছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে খ-িত হাত-পা ও মস্তক। আটক করা হয়েছে ঘাতক এক নারীকে। নিহত ব্যক্তির দুই স্ত্রী রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথম স্ত্রী শিল্পী হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী ও জড়িত বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী নাসরিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নিহত ব্যক্তি ময়না মিয়া (৩৮) পেশায় সিএনজিচালক ছিলেন। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পারায় স্ত্রী শিল্পীর পরিকল্পনায় ও সহায়তাতেই নৃশংস এ হত্যাকা- ও লাশ গুমের ঘটনা ঘটে। খ-িত দেহ ফেলে যাওয়া স্থানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজের সূত্র ধরে মিলেছে হত্যার ক্লু। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করা গেলেও তাদের ধরতে চলছে অভিযান।

এর আগে, গত রোববার রাতে মহাখালী আমতলী সড়ক থেকে ময়না মিয়ার মাথা, হাত, পা ছাড়া গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে বনানী থানা পুলিশ। পরে একইদিন রাতে মহাখালীর আমতলী এলাকা থেকে কাটা দুই হাত ও পা উদ্ধার করে পুলিশ। সর্বশেষ গতকাল বিকেলে মহাখালীর ওয়্যারলেস এলাকার টিএনটি মাঠসংলগ্ন ঝিল থেকে ময়না মিয়ার খ-িত মরদেহের মস্তক উদ্ধার করা হয়। সর্বমোট ৬ টুকরো ছিল ময়না মিয়ার পুরো শরীর। জানা গেছে, বৃষ্টির মধ্যে একটি অটোরিকশা থেকে ড্রামটি সেখানে ফেলে যায় দুই দুষ্কৃতিকারী। ভেতরে খ-িত দেহটি বিছানার চাদর দিয়ে মোড়ানো ছিল।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্রটি জানায়, ময়না মিয়ার গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকায়। দুটি বিয়ে করেছেন তিনি। প্রথম স্ত্রী ঘাতক শিল্পীকে নিয়ে বনানীর কড়াইল বস্তির একটি রুমে ভাড়া থাকতেন তিনি। আর দ্বিতীয় স্ত্রী নাসরিন কিশোরগঞ্জে তার বাবার বাড়িতে থাকেন। ময়না মিয়া মাঝে মধ্যেই তার প্রথম স্ত্রী শিল্পীকে অত্যাচার করতেন। যা নিয়ে শিল্পীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিছুতেই অত্যাচার না কমায় স্বামীকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেন। সে মোতাবেক লাশ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে আসা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

বনানী থানার ওসি নূরে আযম মিয়া বলেন, রোববার রাত ৯টার দিকে মহাখালী কাঁচাবাজারের কাছে মসজিদ গলি থেকে একটি ড্রাম পড়ে আছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে ড্রামটি থেকে দুই হাত, পা ও মাথা বিচ্ছিন্ন একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ওই রাতেই মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের এনা কাউন্টার সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় নিহতের চার হাত-পা কিন্তু ভোররাত পর্যন্ত সন্ধান করেও মাথার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্দেহভাজন এক আসামিকে আটকের পর গতকাল বিকেলে মস্তকেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, কারা কী কারণে তাকে হত্যা করেছে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাতে পারবে। আমাদের কাছে কোন ধরনের তথ্য নেই।

জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. আশিক হাসান বলেন, মৃতদেহের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ারের আঙ্গলের ছাপ মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, বিচ্ছিন্নভাবে উদ্ধার হওয়া হাত-পা ও মস্তক ওই দেহেরই অংশ। তবে ডিএনএ পরীক্ষা করলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, পারিবারিক বিরোধের জেরে এই হত্যাকা- ঘটেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে যে ময়না মিয়ার তথ্য পুলিশ পেয়েছে, তার দুই স্ত্রী বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার, ০১ জুন ২০২১ , ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৯ শাওয়াল ১৪৪২

মহাখালীতে খণ্ডিত লাশ

সিএনজিচালক স্বামীকে হত্যা করে লাশ টুকরো করান স্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রাজধানীর মহাখালী থেকে উদ্ধারকৃত হাত-পা কাটা মস্তকহীন লাশের পরিচয় মিলেছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে খ-িত হাত-পা ও মস্তক। আটক করা হয়েছে ঘাতক এক নারীকে। নিহত ব্যক্তির দুই স্ত্রী রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথম স্ত্রী শিল্পী হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী ও জড়িত বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী নাসরিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নিহত ব্যক্তি ময়না মিয়া (৩৮) পেশায় সিএনজিচালক ছিলেন। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পারায় স্ত্রী শিল্পীর পরিকল্পনায় ও সহায়তাতেই নৃশংস এ হত্যাকা- ও লাশ গুমের ঘটনা ঘটে। খ-িত দেহ ফেলে যাওয়া স্থানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজের সূত্র ধরে মিলেছে হত্যার ক্লু। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করা গেলেও তাদের ধরতে চলছে অভিযান।

এর আগে, গত রোববার রাতে মহাখালী আমতলী সড়ক থেকে ময়না মিয়ার মাথা, হাত, পা ছাড়া গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে বনানী থানা পুলিশ। পরে একইদিন রাতে মহাখালীর আমতলী এলাকা থেকে কাটা দুই হাত ও পা উদ্ধার করে পুলিশ। সর্বশেষ গতকাল বিকেলে মহাখালীর ওয়্যারলেস এলাকার টিএনটি মাঠসংলগ্ন ঝিল থেকে ময়না মিয়ার খ-িত মরদেহের মস্তক উদ্ধার করা হয়। সর্বমোট ৬ টুকরো ছিল ময়না মিয়ার পুরো শরীর। জানা গেছে, বৃষ্টির মধ্যে একটি অটোরিকশা থেকে ড্রামটি সেখানে ফেলে যায় দুই দুষ্কৃতিকারী। ভেতরে খ-িত দেহটি বিছানার চাদর দিয়ে মোড়ানো ছিল।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্রটি জানায়, ময়না মিয়ার গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকায়। দুটি বিয়ে করেছেন তিনি। প্রথম স্ত্রী ঘাতক শিল্পীকে নিয়ে বনানীর কড়াইল বস্তির একটি রুমে ভাড়া থাকতেন তিনি। আর দ্বিতীয় স্ত্রী নাসরিন কিশোরগঞ্জে তার বাবার বাড়িতে থাকেন। ময়না মিয়া মাঝে মধ্যেই তার প্রথম স্ত্রী শিল্পীকে অত্যাচার করতেন। যা নিয়ে শিল্পীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিছুতেই অত্যাচার না কমায় স্বামীকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেন। সে মোতাবেক লাশ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে আসা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

বনানী থানার ওসি নূরে আযম মিয়া বলেন, রোববার রাত ৯টার দিকে মহাখালী কাঁচাবাজারের কাছে মসজিদ গলি থেকে একটি ড্রাম পড়ে আছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে ড্রামটি থেকে দুই হাত, পা ও মাথা বিচ্ছিন্ন একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ওই রাতেই মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের এনা কাউন্টার সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় নিহতের চার হাত-পা কিন্তু ভোররাত পর্যন্ত সন্ধান করেও মাথার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্দেহভাজন এক আসামিকে আটকের পর গতকাল বিকেলে মস্তকেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, কারা কী কারণে তাকে হত্যা করেছে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাতে পারবে। আমাদের কাছে কোন ধরনের তথ্য নেই।

জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. আশিক হাসান বলেন, মৃতদেহের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ারের আঙ্গলের ছাপ মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, বিচ্ছিন্নভাবে উদ্ধার হওয়া হাত-পা ও মস্তক ওই দেহেরই অংশ। তবে ডিএনএ পরীক্ষা করলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, পারিবারিক বিরোধের জেরে এই হত্যাকা- ঘটেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে যে ময়না মিয়ার তথ্য পুলিশ পেয়েছে, তার দুই স্ত্রী বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।