চিঠিপত্র : শিশুদের মোবাইল আসক্তি

শিশুদের মোবাইল আসক্তি

করোনার কারণে গত বছর মার্চ মাস থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে দেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই পাল্টে গেছে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিনের কাজের ধরন। সকালবেলা স্কুল ড্রেস পরে বইখাতা, কলম ভর্তি ব্যাগ নিয়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য আর চোখে পরে না এখন। মার্চের লকডাউনের পর থেকেই অনেকটা গৃহবন্দি হয়ে আছে এসব শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারীর কারণে খুব বেশি ঘরের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়ালেখাও মনোযোগ নেই, নেই বিনোদনের ব্যবস্থা। তাই সময় কাটানোর জন্য এসব স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছে মোবাইল ফোন। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার দরুণ এসব বাচ্চারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও অনলাইন গেমস এ সময় কাটাচ্ছে। অনেকে পুরোপুরি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে এসবের প্রতি। শিশু-কিশোররা দিনে ৬-১০ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি মোবাইলে সময় দিচ্ছে। মোবাইলের প্রতি অতি আসক্তির কারণে তৈরি হচ্ছে বিষণ্নতা, ক্ষুধামন্দা, অবসাদ, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পরছে। স্মার্টফোনের আসক্তি মাদকাসক্তির মতো বিপজ্জনক। দুই মিনিট স্থায়ী একটি মোবাইল কল শিশুদের মস্তিষ্কের হাইপার অ্যাক্টিভিটি সৃষ্টি করে। হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়, ব্যবহারকারীর স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, রক্তের চাপ বেড়ে যায়, ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। সম্প্রতি ভারতের চার্টার বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি গবেষণায় দেখিয়েছে, স্মার্টফোনের অধিক ব্যবহার চোখের রেটিনা, কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

করোনা মহামারী শেষে শিশুদের স্বাভাবিক জীবনের কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে মোবাইলের প্রতি অতি আসক্তি হতে পারে প্রধান অন্তরায়। মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করতে অভিভাবকদের রাখতে হবে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা। সন্তানদের সময় দেয়া, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করা ইত্যাদির মাধ্যমে মোবাইলের আসক্তি কমিয়ে আনা সম্ভব।

কেএম মাসুম বিল্লাহ

ব্যাংক কর্মকর্তা

বেসরকারি শিক্ষকদের কথা ভাবতে হবে

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই নন-এমপিও ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীর অভাব-অনটনে দিন কাটছে। কর্তৃপক্ষের যুক্তি, তাদের আয়ের একমাত্র উৎস শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি। সেই অর্থ সংগ্রহ করতে না পারায় তারা শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না। অনলাইন পাঠদান চললেও অভিভাবকদের কাছ থেকে মাসিক বেতন বকেয়া আদায় করা যাচ্ছে না। কেননা অভিভাবকরাও এমন পরিস্থিতিতে অভাবের মধ্যে আছেন।

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। এই পেশায় নিযুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা সাধারণত খুব সামান্য বেতন পান। চাকরির পাশাপাশি তাদের প্রাইভেট টিউশনিও করতে হয় সংসার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে। এখন স্কুল বন্ধ থাকায় এবং শিশুরা বেশিরভাগ বাধ্যতামূলকভাবে বাড়িতেই থাকায় তাদের উপার্জনের দুটি পথই বন্ধ হয়ে আছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন বন্ধ আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত বেতন। আবার লক্ষ্য করা যায়, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে মূল বেতনের অর্ধেক বেতন দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরীক্ষা না হওয়ার কারণে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোনো পরিবার টিউশনিও পড়াচ্ছেন না। কিন্তু সমাজের জন্য কাজ করা মহান ব্যক্তির সংসারের কথা কে চিন্তা করে? বাসা ভাড়া সংসার খরচ চালাতে না পেরে কিছু কিছু শিক্ষকের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তারা বাধ্য হয়েই ইতোমধ্যে পরিবর্তন এনেছেন পেশায়।’ এই শিক্ষকদের কথা ভাবতে হবে। তাদের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

লোকমান হাফিজ

আরও খবর

মঙ্গলবার, ০১ জুন ২০২১ , ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৯ শাওয়াল ১৪৪২

চিঠিপত্র : শিশুদের মোবাইল আসক্তি

শিশুদের মোবাইল আসক্তি

করোনার কারণে গত বছর মার্চ মাস থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে দেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই পাল্টে গেছে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিনের কাজের ধরন। সকালবেলা স্কুল ড্রেস পরে বইখাতা, কলম ভর্তি ব্যাগ নিয়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য আর চোখে পরে না এখন। মার্চের লকডাউনের পর থেকেই অনেকটা গৃহবন্দি হয়ে আছে এসব শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারীর কারণে খুব বেশি ঘরের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়ালেখাও মনোযোগ নেই, নেই বিনোদনের ব্যবস্থা। তাই সময় কাটানোর জন্য এসব স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছে মোবাইল ফোন। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার দরুণ এসব বাচ্চারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও অনলাইন গেমস এ সময় কাটাচ্ছে। অনেকে পুরোপুরি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে এসবের প্রতি। শিশু-কিশোররা দিনে ৬-১০ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি মোবাইলে সময় দিচ্ছে। মোবাইলের প্রতি অতি আসক্তির কারণে তৈরি হচ্ছে বিষণ্নতা, ক্ষুধামন্দা, অবসাদ, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পরছে। স্মার্টফোনের আসক্তি মাদকাসক্তির মতো বিপজ্জনক। দুই মিনিট স্থায়ী একটি মোবাইল কল শিশুদের মস্তিষ্কের হাইপার অ্যাক্টিভিটি সৃষ্টি করে। হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়, ব্যবহারকারীর স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, রক্তের চাপ বেড়ে যায়, ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। সম্প্রতি ভারতের চার্টার বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি গবেষণায় দেখিয়েছে, স্মার্টফোনের অধিক ব্যবহার চোখের রেটিনা, কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

করোনা মহামারী শেষে শিশুদের স্বাভাবিক জীবনের কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে মোবাইলের প্রতি অতি আসক্তি হতে পারে প্রধান অন্তরায়। মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করতে অভিভাবকদের রাখতে হবে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা। সন্তানদের সময় দেয়া, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করা ইত্যাদির মাধ্যমে মোবাইলের আসক্তি কমিয়ে আনা সম্ভব।

কেএম মাসুম বিল্লাহ

ব্যাংক কর্মকর্তা

বেসরকারি শিক্ষকদের কথা ভাবতে হবে

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই নন-এমপিও ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীর অভাব-অনটনে দিন কাটছে। কর্তৃপক্ষের যুক্তি, তাদের আয়ের একমাত্র উৎস শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি। সেই অর্থ সংগ্রহ করতে না পারায় তারা শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না। অনলাইন পাঠদান চললেও অভিভাবকদের কাছ থেকে মাসিক বেতন বকেয়া আদায় করা যাচ্ছে না। কেননা অভিভাবকরাও এমন পরিস্থিতিতে অভাবের মধ্যে আছেন।

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। এই পেশায় নিযুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা সাধারণত খুব সামান্য বেতন পান। চাকরির পাশাপাশি তাদের প্রাইভেট টিউশনিও করতে হয় সংসার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে। এখন স্কুল বন্ধ থাকায় এবং শিশুরা বেশিরভাগ বাধ্যতামূলকভাবে বাড়িতেই থাকায় তাদের উপার্জনের দুটি পথই বন্ধ হয়ে আছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন বন্ধ আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত বেতন। আবার লক্ষ্য করা যায়, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে মূল বেতনের অর্ধেক বেতন দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরীক্ষা না হওয়ার কারণে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোনো পরিবার টিউশনিও পড়াচ্ছেন না। কিন্তু সমাজের জন্য কাজ করা মহান ব্যক্তির সংসারের কথা কে চিন্তা করে? বাসা ভাড়া সংসার খরচ চালাতে না পেরে কিছু কিছু শিক্ষকের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তারা বাধ্য হয়েই ইতোমধ্যে পরিবর্তন এনেছেন পেশায়।’ এই শিক্ষকদের কথা ভাবতে হবে। তাদের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

লোকমান হাফিজ