করোনায় সারা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে থাকলেও সুবাতাস বইছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আহরণে। গত মাসে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে। মে মাসে ২০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ২ দশমিক শূন্য ৭৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৫৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ২২ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার। গত বছর জুলাই থেকে মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত মাসের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স আয় হয়েছে ২.০৭ বিলিয়ন ডলার, যা গেল বছরের একই মাসের চেয়ে ৫২ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। অর্থাৎ কোন প্রবাসী এক লাখ টাকা দেশে পাঠালে এর সঙ্গে আরও দুই হাজার টাকা যোগ করে মোট এক লাখ দুই হাজার টাকা পাচ্ছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরও এক শতাংশ অর্থ অফার দিচ্ছে। এতে করে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সম্মানীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আসলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বৃদ্ধির কারণে খাতা কলমে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনা মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।’
এছাড়া রমজান ঈদুল ফিতর এবং আসছে ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ এমনিতেই বেশি থাকে। চলতি মাসসহ আগামী মাসেও উচ্চ প্রবৃদ্ধি থাকবে। জুন শেষে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় ২৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁতে পারে বলে তার ধারণা। তবে ঈদুল আযহার পর থেকে রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি কমে আসবে বলে তার ধারণা। প্রবৃদ্ধি কমে আসলেও গতি ধরে রাখতে, বিদেশে কর্মী প্রেরণ বাড়ানো, অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনা এবং ২ শতাংশ প্রণোদনার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখার পরামর্শ তার।
উচ্চ রেমিট্যান্সের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণও বেড়ে চলেছে। রিজার্ভ আবারও ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই করছে। ৩০ মে দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪.৯৬ বিলিয়ন ডলার। এর আগে গেল ৩ মে এক দিনের জন্য প্রথমবারের মত রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছিল। আমদানি ব্যয় পরিশোধের চাপ থাকায় পর দিনই রিজার্ভ আবার ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়।
বর্তমানে যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তা দিয়ে বাংলাদেশ আট মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মিটানোর সক্ষমতা রাখে। সাধারণত কোন দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকতে হয়। রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী অবস্থানে যাওয়ার কথা থাকলেও বাজার থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছে সরকার। সম্প্রতি শ্রীলংকাকে রিজার্ভ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ধার দেয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন করেছে।
বুধবার, ০২ জুন ২০২১ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২০ শাওয়াল ১৪৪২
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
করোনায় সারা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে থাকলেও সুবাতাস বইছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আহরণে। গত মাসে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে। মে মাসে ২০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ২ দশমিক শূন্য ৭৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৫৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ২২ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার। গত বছর জুলাই থেকে মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত মাসের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স আয় হয়েছে ২.০৭ বিলিয়ন ডলার, যা গেল বছরের একই মাসের চেয়ে ৫২ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। অর্থাৎ কোন প্রবাসী এক লাখ টাকা দেশে পাঠালে এর সঙ্গে আরও দুই হাজার টাকা যোগ করে মোট এক লাখ দুই হাজার টাকা পাচ্ছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরও এক শতাংশ অর্থ অফার দিচ্ছে। এতে করে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সম্মানীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আসলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বৃদ্ধির কারণে খাতা কলমে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনা মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।’
এছাড়া রমজান ঈদুল ফিতর এবং আসছে ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ এমনিতেই বেশি থাকে। চলতি মাসসহ আগামী মাসেও উচ্চ প্রবৃদ্ধি থাকবে। জুন শেষে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় ২৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁতে পারে বলে তার ধারণা। তবে ঈদুল আযহার পর থেকে রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি কমে আসবে বলে তার ধারণা। প্রবৃদ্ধি কমে আসলেও গতি ধরে রাখতে, বিদেশে কর্মী প্রেরণ বাড়ানো, অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনা এবং ২ শতাংশ প্রণোদনার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখার পরামর্শ তার।
উচ্চ রেমিট্যান্সের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণও বেড়ে চলেছে। রিজার্ভ আবারও ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই করছে। ৩০ মে দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪.৯৬ বিলিয়ন ডলার। এর আগে গেল ৩ মে এক দিনের জন্য প্রথমবারের মত রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছিল। আমদানি ব্যয় পরিশোধের চাপ থাকায় পর দিনই রিজার্ভ আবার ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়।
বর্তমানে যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তা দিয়ে বাংলাদেশ আট মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মিটানোর সক্ষমতা রাখে। সাধারণত কোন দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকতে হয়। রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী অবস্থানে যাওয়ার কথা থাকলেও বাজার থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছে সরকার। সম্প্রতি শ্রীলংকাকে রিজার্ভ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ধার দেয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন করেছে।