কিশোরগঞ্জ শহরের ডাস্টবিনে খাবারের খোঁজে গরুর পাল

জনস্বাস্থ্য-পরিবেশ হুমকিতে

কিশোরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু উন্মুক্ত ডাস্টবিন রয়েছে। সেখানে পরিত্যক্ত খাবার, বাসাবাড়ির শাকসবজি আর ফলমূলের উচ্ছিষ্টাংশসহ পঁচনশীল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু গরুর পাল ঘুরে বেড়ায়।

শহরের ভেতর তো আর ঘাস নেই। ফলে এরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট খেয়ে মনিবের বাড়ি ফিরে যায়। যেন ডাস্টবিনগুলো গরুর পালের হোটেল! অথচ এসব ডাস্টবিনের বর্জ্যে মিশে থাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ বিভিন্ন পোশাক বাহক দ্বারা সংক্রমণকারী নানা রকম জীবাণু।

অনেক জীবাণু গরুর দুধে মিশে যায়। অনেক জীবাণু গরুর মাংস, ফুসফুস কলিজাসহ নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে মিশে যায়। ফলে এসব গরুর দুধ আর জবাই করার পর পুরো গরুটাই জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি গবাদি পশু সুরক্ষিত ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে লালন-পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কেউ যেন এভাবে গরুর পাল বেওয়ারিশ ছেড়ে না দেন, সে ব্যাপারে সচেতন হবার আহ্বান জানিয়েছেন।

শহরের সরকারি মহিলা কলেজের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে চলে গেছে পুরাতন কোর্ট রোড। আর এই প্রাচীরের পাশেই রোডের ধারে উন্মুক্ত জায়গায় ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ির যতসব পঁচনশীল বর্জ্য। এখানে কোন দেয়াল ঘেরা সুরক্ষিত ডাস্টবিন নেই। ফলে এসব পঁচা বর্জ্য রাস্তায়ও ছড়িয়ে থাকে।

আর দুঃসহ দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো কলেজে। এমনকি পাশের পুরাতন কোর্ট এলাকায় গেজেটেড অফিসার্স ডরমেটরি, জেলা তথ্য অফিস, মহিলা অধিদপ্তর, শিশু একাডেমি, রেকর্ড রুমসহ বেশ কিছু সরকারি দপ্তর রয়েছে। রয়েছে আবাসিক এলাকা। ফলে সবাইকেই প্রতিনিয়ত এই দুর্গন্ধ সইতে হচ্ছে। এমনকি, এই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেবাগ্রহিতা, এলাকার বাসিন্দা, পথচারী বা যানবাহন যাবার সময় সবাইকে নাকে রুমাল চেপে যেতে হয়।

বাসাবাড়ির শাকবসজির বর্জ্য আর বাসি ভাতসহ বিভিন্ন ফলমূলের উচ্ছিষ্টাংশের লোভে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো গরুর পাল ছুটে যায় এই উন্মুক্ত ডাস্টবিনে। বর্জ্যবাহী ভ্যান আসতেই যেন গরুর পালের উৎসব লেগে যায়। ভ্যান ঘিরে চলতে থাকে তাদের ভোজন। শহরের খরমপট্টি, কলেজ রোড, ফিসারি রোডসহ বেশকিছু এলাকায় এ রকম ডাস্টবিন রয়েছে। বছরখানেক ধরে পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলররা যার যার ওয়ার্ডে ময়লাবাহী ভ্যানসহ কর্মী ঠিক করে দিয়েছেন।

তারা প্রত্যেক বাসা থেকে মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পঁচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এসব বর্জ্য তারা বিভিন্ন উন্মুক্ত জায়গায় নিয়ে ডাম্পিং করেন। আর সেখানেই গরুর পাল গিয়ে দূষিত পঁচা বর্জ্য খেয়ে আসে। অথচ এসব বর্জ্যরে সঙ্গে বাসাবাড়ির বিভিন্ন চিকিৎসা বর্জ্যও থাকে। এমনকি পরিত্যক্ত মাস্কও থাকে। ফলে এই ডাস্টবিনগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বুধবার, ০২ জুন ২০২১ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২০ শাওয়াল ১৪৪২

কিশোরগঞ্জ শহরের ডাস্টবিনে খাবারের খোঁজে গরুর পাল

জনস্বাস্থ্য-পরিবেশ হুমকিতে

মোস্তফা কামাল, কিশোরগঞ্জ

image

কিশোরগঞ্জ : পুরাতন কোর্ট এলাকায় ভ্যান থেকে বর্জ্য ফেলতেই ঘিরে ধরেছে গরুর পাল -সংবাদ

কিশোরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু উন্মুক্ত ডাস্টবিন রয়েছে। সেখানে পরিত্যক্ত খাবার, বাসাবাড়ির শাকসবজি আর ফলমূলের উচ্ছিষ্টাংশসহ পঁচনশীল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু গরুর পাল ঘুরে বেড়ায়।

শহরের ভেতর তো আর ঘাস নেই। ফলে এরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট খেয়ে মনিবের বাড়ি ফিরে যায়। যেন ডাস্টবিনগুলো গরুর পালের হোটেল! অথচ এসব ডাস্টবিনের বর্জ্যে মিশে থাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ বিভিন্ন পোশাক বাহক দ্বারা সংক্রমণকারী নানা রকম জীবাণু।

অনেক জীবাণু গরুর দুধে মিশে যায়। অনেক জীবাণু গরুর মাংস, ফুসফুস কলিজাসহ নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে মিশে যায়। ফলে এসব গরুর দুধ আর জবাই করার পর পুরো গরুটাই জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি গবাদি পশু সুরক্ষিত ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে লালন-পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কেউ যেন এভাবে গরুর পাল বেওয়ারিশ ছেড়ে না দেন, সে ব্যাপারে সচেতন হবার আহ্বান জানিয়েছেন।

শহরের সরকারি মহিলা কলেজের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে চলে গেছে পুরাতন কোর্ট রোড। আর এই প্রাচীরের পাশেই রোডের ধারে উন্মুক্ত জায়গায় ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ির যতসব পঁচনশীল বর্জ্য। এখানে কোন দেয়াল ঘেরা সুরক্ষিত ডাস্টবিন নেই। ফলে এসব পঁচা বর্জ্য রাস্তায়ও ছড়িয়ে থাকে।

আর দুঃসহ দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো কলেজে। এমনকি পাশের পুরাতন কোর্ট এলাকায় গেজেটেড অফিসার্স ডরমেটরি, জেলা তথ্য অফিস, মহিলা অধিদপ্তর, শিশু একাডেমি, রেকর্ড রুমসহ বেশ কিছু সরকারি দপ্তর রয়েছে। রয়েছে আবাসিক এলাকা। ফলে সবাইকেই প্রতিনিয়ত এই দুর্গন্ধ সইতে হচ্ছে। এমনকি, এই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেবাগ্রহিতা, এলাকার বাসিন্দা, পথচারী বা যানবাহন যাবার সময় সবাইকে নাকে রুমাল চেপে যেতে হয়।

বাসাবাড়ির শাকবসজির বর্জ্য আর বাসি ভাতসহ বিভিন্ন ফলমূলের উচ্ছিষ্টাংশের লোভে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো গরুর পাল ছুটে যায় এই উন্মুক্ত ডাস্টবিনে। বর্জ্যবাহী ভ্যান আসতেই যেন গরুর পালের উৎসব লেগে যায়। ভ্যান ঘিরে চলতে থাকে তাদের ভোজন। শহরের খরমপট্টি, কলেজ রোড, ফিসারি রোডসহ বেশকিছু এলাকায় এ রকম ডাস্টবিন রয়েছে। বছরখানেক ধরে পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলররা যার যার ওয়ার্ডে ময়লাবাহী ভ্যানসহ কর্মী ঠিক করে দিয়েছেন।

তারা প্রত্যেক বাসা থেকে মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পঁচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এসব বর্জ্য তারা বিভিন্ন উন্মুক্ত জায়গায় নিয়ে ডাম্পিং করেন। আর সেখানেই গরুর পাল গিয়ে দূষিত পঁচা বর্জ্য খেয়ে আসে। অথচ এসব বর্জ্যরে সঙ্গে বাসাবাড়ির বিভিন্ন চিকিৎসা বর্জ্যও থাকে। এমনকি পরিত্যক্ত মাস্কও থাকে। ফলে এই ডাস্টবিনগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।