ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন যশোরবাসী

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ ক্রমাবনতি হচ্ছে। যশোরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তে উদ্বিগ্ন যশোরবাসী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কৃষ্টিয়া, নওগাঁয়, দিনাজপুর, নাটোরে, সীমান্ত এলাকায় ভয়াবহভাবে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: যশোরে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে একের পর এক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলার বাসিন্দারা। এরইমধ্যে গত চব্বিশ ঘণ্টায় বেড়েছে সংক্রমণের হারও। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার দাবি তাদের। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, প্রচারণা বাড়ানোসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নেয়া হয়েছে সব ধরনের পদক্ষেপ।

গত সোমবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের পরীক্ষায় জেলার ৮ জনের নমুনায় করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের সবার বয়স ৫৬ বছরের নিচে। শনাক্তদের কারোরই ভারতে যাওয়ার কোন এর আগে ভারতফেরত আরও ৭ জনের নমুনায় ভারতীয় ধরন শনাক্ত করেছিল এ গবেষক দল। এ নিয়ে যশোরে মোট ১৫ জনের নমুনায় করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হলো।

যবিপ্রবি গবেষক দলের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ভারতীয় এ ধরণটি ৫০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের সক্ষমতা রাখে। ভ্যাকসিন পরবর্তী ‘সেরাম এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ এ ধরনকে কম শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে। সুতরাং মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অধিবাসীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় আনা জরুরি

তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে আগত সবাইকে করোনা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রেখে পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ায় সীমানা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনো কারণে চালক ও সহকারীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও পরীক্ষা করার প্রয়োজন।

শনাক্ত হওয়া ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডাবল মিউট্যান্ড না হলেও স্থানীয়দের মধ্যে এটা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া গেল মাসের তুলনায় এ মাসে করোনা সংক্রমণের হার নি¤œমুখী থাকলেও গত চব্বিশ ঘণ্টার হিসেবে সেটা আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ২২ শতাংশে। এদিন ২৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। চলতি সপ্তাহে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশের নিচে। গত এপ্রিল মাসে এই হার ছিল ২১ শতাংশ। চলতি মে মাসে সেটা ১৬ শতাংশে নেমেছে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, সংক্রমণ কম হলেও ভারতফেরত যাত্রীদের জন্য কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া আশপাশের জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। ফলে আমাদেরও এক্ষুনি সতর্ক হওয়া উচিত।

করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান টুকুন জানান, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেলেও জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে বড় ধরনের কোন উপসর্গ নেই। তাছাড়া সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মধ্যে সংক্রমণের হারের দিক বিবেচনায় যশোরে লকডাউনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

স্থানীয় মানুষের মধ্যে লডডাউন ঘোষণা নিয়ে রয়েছে পরস্পরবিরোধী প্রতিক্রিয়া। জনউদ্যোগ যশোরের সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তফা হুমায়ূন কবীর বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের চেয়ে ভ্যাকসিনের কার্যক্রম চালু করা দরকার। সীমান্ত জেলাগুলোতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করোনা টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার হোক।

কুষ্টিয়ায় ৪ দিনে করোনায় আক্রান্ত ১০২ জন

জেলা বার্তা পরিবেশক জানান, কুষ্টিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। গত ৪ দিনে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১০২ জন। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।

কুষ্টিয়ায় এ পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৯৭৮ জনের করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১১৩ জন। ভারত-সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলছে। এ অবস্থায় করোনার ভারতীয় ধরন ঠেকানো ও নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গতকাল জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

জেলার করোনা পরিস্থিতি বিষয়ে ভার্চুয়ালে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। সভায় যুক্ত ছিলেন কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার খাইরুল আলমসহ ৬ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা।

সভায় সিভিল সার্জন বলেন, কুষ্টিয়ায় করোনা পরিস্থিতি একটু বাড়তির দিকে। করোনা পজেটিভ ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। সীমান্তে কঠোর তদারকির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক বলেন, যেসব এলাকায় শনাক্ত বেশি দেখা যাবে, সেসব এলাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সবার মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়াসহ জনসাধারণকে সচেতন করতে সব ধরনের সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে বলেন জেলা প্রশাসক।

এদিকে কুষ্টিয়ার সঙ্গে ভারতে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও এখানে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে সীমান্ত দিয়ে। দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে গোপনে চোরাপথে বাংলাদেশিদের যাতায়াতের ফলে সীমান্ত এলাকায় করোনা রোগী সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা বেড়েছে।

নওগাঁয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যু নওগাঁ জেলায় নতুন রেকর্ড গড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন এবং নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ জন। জেলায় ইতিপূর্বে একদিনে এত পরিমাণ আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মহাদেবপুর, নিয়ামতপুর এবং পোরশা উপজেলায় ১ জন করে মোট ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর এ মোর্শেদ সংবাদকে জানিয়েছেন, গত ১২ দিনে নওগাঁয় করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ছয় দিনে ৪৫০টি নমুনা পরীক্ষায় ১৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ গত ছয় দিনে করোনা শনাক্তের হার ৩৮ শতাংশ।

নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ সংবাদকে বলেন, নওগাঁতে করোনা শনাক্তের হার প্রতি দিনই বাড়ছে। এর মধ্যে শুধু গত বৃহস্পতিবার শতকরা ৫৭ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে যা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। এই অবস্থায় আমরা অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। মানুষকে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের উদ্যোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘নওগাঁর ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা পোরশা, সাপাহার, পতœীতলা এবং ধামইরহাট হলেও মূলত এখানে কোন স্থলবন্দর নেই। তবে পার্শ্ববর্তী ও সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহীর সঙ্গে প্রশাসনের সহযোগিতায় যোগাযোগ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নওগাঁয় আক্রান্তদের মধ্যে কারও দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়নি এবং ভারতফেরতদের সীমান্তে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন হোম কোরেন্টিনে রেখে তারপর ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।’

নাটোর করোনাভাইরাসের হট বেড!

নাটোর, প্রতিনিধি জানান, নাটোর এখন করোনাভাইরাসের হট বেড। নাটোরে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৩ মাসে সর্বোচ্চ শনাক্ত এ বছরের মে মাসে। গত বছরের ২২ মে নাটোরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৪১২২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭৬৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ১২.৩৪%। এদের মধ্যে মারা গেছেন ২৫ জন। মৃত্যু হার ১.৩৮ শতাংশ। চিকিৎসার জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ২৭ রোগী। নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮১ জন। গত সাতদিনে ২৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নাটোরে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১২৭ জন।

রোগী শনাক্তের হার ৪৪.০৯%। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ জন করোনা পজেটিভ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৫৩%। এ পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের মধ্যে নাটোরে আক্রান্ত এবং মৃতের হার কম থাকলেও সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী সীমান্ত জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং বগুড়া জেলায় ক্রমবর্ধমান আক্রান্তের হার ভাবিয়ে তুলছে নাটোরের সচেতন মহলকে। তারপরেও নাটোর শহরে মাস্ক পরিধানের প্রবণতা থাকলেও উপজেলা পর্যায়ের পৌর এলাকাসহ গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারে স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই মানা হচ্ছে না।

গতকাল দুপুরে জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় লকডাউন না দিয়ে কীভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনা যায় তার সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশে আমের আড়ত স্টেশন বাজার এলাকা থেকে সরিয়ে তেবারিয়া হাট এলাকায় নেয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহী এলাকা থেকে লোকজন যাতে অবাধে নাটোর শহরে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হবে কাঁচা সব্জির বাজার উন্মুক্ত জায়গায় বসানো এবং হোটেল রেস্তোরাঁয় প্যাকেট খাবার বিক্রি, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ নানা সুপারিশ করা হয়।

বুধবার, ০২ জুন ২০২১ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২০ শাওয়াল ১৪৪২

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন যশোরবাসী

সংবাদ ডেস্ক

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ ক্রমাবনতি হচ্ছে। যশোরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তে উদ্বিগ্ন যশোরবাসী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কৃষ্টিয়া, নওগাঁয়, দিনাজপুর, নাটোরে, সীমান্ত এলাকায় ভয়াবহভাবে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: যশোরে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে একের পর এক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলার বাসিন্দারা। এরইমধ্যে গত চব্বিশ ঘণ্টায় বেড়েছে সংক্রমণের হারও। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার দাবি তাদের। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, প্রচারণা বাড়ানোসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নেয়া হয়েছে সব ধরনের পদক্ষেপ।

গত সোমবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের পরীক্ষায় জেলার ৮ জনের নমুনায় করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের সবার বয়স ৫৬ বছরের নিচে। শনাক্তদের কারোরই ভারতে যাওয়ার কোন এর আগে ভারতফেরত আরও ৭ জনের নমুনায় ভারতীয় ধরন শনাক্ত করেছিল এ গবেষক দল। এ নিয়ে যশোরে মোট ১৫ জনের নমুনায় করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হলো।

যবিপ্রবি গবেষক দলের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ভারতীয় এ ধরণটি ৫০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের সক্ষমতা রাখে। ভ্যাকসিন পরবর্তী ‘সেরাম এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ এ ধরনকে কম শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে। সুতরাং মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অধিবাসীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় আনা জরুরি

তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে আগত সবাইকে করোনা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রেখে পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ায় সীমানা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনো কারণে চালক ও সহকারীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও পরীক্ষা করার প্রয়োজন।

শনাক্ত হওয়া ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডাবল মিউট্যান্ড না হলেও স্থানীয়দের মধ্যে এটা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া গেল মাসের তুলনায় এ মাসে করোনা সংক্রমণের হার নি¤œমুখী থাকলেও গত চব্বিশ ঘণ্টার হিসেবে সেটা আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ২২ শতাংশে। এদিন ২৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। চলতি সপ্তাহে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশের নিচে। গত এপ্রিল মাসে এই হার ছিল ২১ শতাংশ। চলতি মে মাসে সেটা ১৬ শতাংশে নেমেছে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, সংক্রমণ কম হলেও ভারতফেরত যাত্রীদের জন্য কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া আশপাশের জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। ফলে আমাদেরও এক্ষুনি সতর্ক হওয়া উচিত।

করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান টুকুন জানান, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেলেও জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে বড় ধরনের কোন উপসর্গ নেই। তাছাড়া সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মধ্যে সংক্রমণের হারের দিক বিবেচনায় যশোরে লকডাউনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

স্থানীয় মানুষের মধ্যে লডডাউন ঘোষণা নিয়ে রয়েছে পরস্পরবিরোধী প্রতিক্রিয়া। জনউদ্যোগ যশোরের সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তফা হুমায়ূন কবীর বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের চেয়ে ভ্যাকসিনের কার্যক্রম চালু করা দরকার। সীমান্ত জেলাগুলোতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করোনা টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার হোক।

কুষ্টিয়ায় ৪ দিনে করোনায় আক্রান্ত ১০২ জন

জেলা বার্তা পরিবেশক জানান, কুষ্টিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। গত ৪ দিনে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১০২ জন। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।

কুষ্টিয়ায় এ পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৯৭৮ জনের করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১১৩ জন। ভারত-সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলছে। এ অবস্থায় করোনার ভারতীয় ধরন ঠেকানো ও নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গতকাল জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

জেলার করোনা পরিস্থিতি বিষয়ে ভার্চুয়ালে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। সভায় যুক্ত ছিলেন কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার খাইরুল আলমসহ ৬ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা।

সভায় সিভিল সার্জন বলেন, কুষ্টিয়ায় করোনা পরিস্থিতি একটু বাড়তির দিকে। করোনা পজেটিভ ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। সীমান্তে কঠোর তদারকির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক বলেন, যেসব এলাকায় শনাক্ত বেশি দেখা যাবে, সেসব এলাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সবার মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়াসহ জনসাধারণকে সচেতন করতে সব ধরনের সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে বলেন জেলা প্রশাসক।

এদিকে কুষ্টিয়ার সঙ্গে ভারতে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও এখানে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে সীমান্ত দিয়ে। দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে গোপনে চোরাপথে বাংলাদেশিদের যাতায়াতের ফলে সীমান্ত এলাকায় করোনা রোগী সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা বেড়েছে।

নওগাঁয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যু নওগাঁ জেলায় নতুন রেকর্ড গড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন এবং নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ জন। জেলায় ইতিপূর্বে একদিনে এত পরিমাণ আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মহাদেবপুর, নিয়ামতপুর এবং পোরশা উপজেলায় ১ জন করে মোট ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর এ মোর্শেদ সংবাদকে জানিয়েছেন, গত ১২ দিনে নওগাঁয় করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ছয় দিনে ৪৫০টি নমুনা পরীক্ষায় ১৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ গত ছয় দিনে করোনা শনাক্তের হার ৩৮ শতাংশ।

নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ সংবাদকে বলেন, নওগাঁতে করোনা শনাক্তের হার প্রতি দিনই বাড়ছে। এর মধ্যে শুধু গত বৃহস্পতিবার শতকরা ৫৭ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে যা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। এই অবস্থায় আমরা অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। মানুষকে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের উদ্যোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘নওগাঁর ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা পোরশা, সাপাহার, পতœীতলা এবং ধামইরহাট হলেও মূলত এখানে কোন স্থলবন্দর নেই। তবে পার্শ্ববর্তী ও সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহীর সঙ্গে প্রশাসনের সহযোগিতায় যোগাযোগ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নওগাঁয় আক্রান্তদের মধ্যে কারও দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়নি এবং ভারতফেরতদের সীমান্তে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন হোম কোরেন্টিনে রেখে তারপর ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।’

নাটোর করোনাভাইরাসের হট বেড!

নাটোর, প্রতিনিধি জানান, নাটোর এখন করোনাভাইরাসের হট বেড। নাটোরে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৩ মাসে সর্বোচ্চ শনাক্ত এ বছরের মে মাসে। গত বছরের ২২ মে নাটোরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৪১২২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭৬৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ১২.৩৪%। এদের মধ্যে মারা গেছেন ২৫ জন। মৃত্যু হার ১.৩৮ শতাংশ। চিকিৎসার জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ২৭ রোগী। নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮১ জন। গত সাতদিনে ২৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নাটোরে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১২৭ জন।

রোগী শনাক্তের হার ৪৪.০৯%। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ জন করোনা পজেটিভ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৫৩%। এ পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের মধ্যে নাটোরে আক্রান্ত এবং মৃতের হার কম থাকলেও সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী সীমান্ত জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং বগুড়া জেলায় ক্রমবর্ধমান আক্রান্তের হার ভাবিয়ে তুলছে নাটোরের সচেতন মহলকে। তারপরেও নাটোর শহরে মাস্ক পরিধানের প্রবণতা থাকলেও উপজেলা পর্যায়ের পৌর এলাকাসহ গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারে স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই মানা হচ্ছে না।

গতকাল দুপুরে জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় লকডাউন না দিয়ে কীভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনা যায় তার সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশে আমের আড়ত স্টেশন বাজার এলাকা থেকে সরিয়ে তেবারিয়া হাট এলাকায় নেয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহী এলাকা থেকে লোকজন যাতে অবাধে নাটোর শহরে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হবে কাঁচা সব্জির বাজার উন্মুক্ত জায়গায় বসানো এবং হোটেল রেস্তোরাঁয় প্যাকেট খাবার বিক্রি, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ নানা সুপারিশ করা হয়।