মিতু হত্যা

আদালতে জবানবন্দির পর নিরাপত্তা শঙ্কায় মুসার স্ত্রী

চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পর নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন পান্না আক্তার। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানায় জিডি করেন পান্না আক্তার। এর আগে সোমবার তিনি মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। মিতুকে খুনের নেতৃত্বদাতা হিসেবে অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম শিকদার। মুসার বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মধ্যম ঘাগড়া গ্রামে। তিনি সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের ‘সোর্স’ ছিলেন। বাবুল আক্তারের সোর্স নিখোঁজ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছার স্ত্রী পান্না সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সেখানে বাবুল আক্তারের সঙ্গে মুছার ঘনিষ্ঠতা ও মিতু হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড যে বাবুল আক্তারই তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হোসেন মো. রেজার আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুছা বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠ সোর্স ও তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াতকারী। মিতু খুনের কয়েক দিনের মধ্যেই তদন্ত সংস্থা ডিবি মুছার সম্পৃক্তাতা নিশ্চিত হয়ে মুসার ভিডিও ও ছবি বাবুলকে দেখায়। কিন্তু বাবুল আক্তার মুছাকে চেনার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। অথচ মুছা যে বাবুল আক্তারের সোর্স ও ঘনিষ্ঠ তাতে তদন্ত সংস্থা শতভাগ নিশ্চিত হয়।

এদিকে জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে পান্না আক্তার বলেন, ২০১৬ সালের খুনের পর আমার স্বামীকে যখন নিয়ে যাওয়া হয়, এরপর থেকে আমি অনেক হুমকি পেয়েছি। কে বা কারা হুমকি দিয়েছে, সেটা জানি না। গত সোমবার আমি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে আদালতে জবানবনন্দি দিয়েছি। এজন্য নিরাপত্তা আশঙ্কায় থানায় জিডি করেছি।

রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মাহবুব মিল্কি বলেন, উনি (পান্না) সোমবার চাঞ্চল্যকর একটি মামলায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এজন্য কেউ উনার ক্ষতি করতে পারে, এমন আশঙ্কা করে জিডি করেছেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

হত্যাকান্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার। গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। একইদিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ, হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া। ওই দিনই বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেননি বাবুল আক্তার।

বুধবার, ০২ জুন ২০২১ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২০ শাওয়াল ১৪৪২

মিতু হত্যা

আদালতে জবানবন্দির পর নিরাপত্তা শঙ্কায় মুসার স্ত্রী

চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পর নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন পান্না আক্তার। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানায় জিডি করেন পান্না আক্তার। এর আগে সোমবার তিনি মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। মিতুকে খুনের নেতৃত্বদাতা হিসেবে অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম শিকদার। মুসার বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মধ্যম ঘাগড়া গ্রামে। তিনি সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের ‘সোর্স’ ছিলেন। বাবুল আক্তারের সোর্স নিখোঁজ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছার স্ত্রী পান্না সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সেখানে বাবুল আক্তারের সঙ্গে মুছার ঘনিষ্ঠতা ও মিতু হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড যে বাবুল আক্তারই তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হোসেন মো. রেজার আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুছা বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠ সোর্স ও তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াতকারী। মিতু খুনের কয়েক দিনের মধ্যেই তদন্ত সংস্থা ডিবি মুছার সম্পৃক্তাতা নিশ্চিত হয়ে মুসার ভিডিও ও ছবি বাবুলকে দেখায়। কিন্তু বাবুল আক্তার মুছাকে চেনার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। অথচ মুছা যে বাবুল আক্তারের সোর্স ও ঘনিষ্ঠ তাতে তদন্ত সংস্থা শতভাগ নিশ্চিত হয়।

এদিকে জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে পান্না আক্তার বলেন, ২০১৬ সালের খুনের পর আমার স্বামীকে যখন নিয়ে যাওয়া হয়, এরপর থেকে আমি অনেক হুমকি পেয়েছি। কে বা কারা হুমকি দিয়েছে, সেটা জানি না। গত সোমবার আমি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে আদালতে জবানবনন্দি দিয়েছি। এজন্য নিরাপত্তা আশঙ্কায় থানায় জিডি করেছি।

রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মাহবুব মিল্কি বলেন, উনি (পান্না) সোমবার চাঞ্চল্যকর একটি মামলায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এজন্য কেউ উনার ক্ষতি করতে পারে, এমন আশঙ্কা করে জিডি করেছেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

হত্যাকান্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার। গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। একইদিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ, হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া। ওই দিনই বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেননি বাবুল আক্তার।