ভূমিকম্প : দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

আর কে চৌধুরী

গত শনিবার সিলেটের জৈন্তাপুরে এবং জগন্নাথপুরে ছোটমাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এক ঘণ্টার মধ্যে চার দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে সিলেটজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। সাম্প্রতিককালে বড়মাত্রার ভূমিকম্প হয়নি মানে এই নয় যে, এখানে আর বড় ভূমিকম্প হবে না। তাই এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

আমাদের এখন যে প্রস্তুতি আছে এ সময় মাঝারি ও বড় ভূমিকম্প হলে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মূল কারণ, আমাদের ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাস করার মূল অস্ত্র হচ্ছে বিল্ডিং কোড মেনে চলা। কিন্তু কেবল বিল্ডিং কোড থাকলেই হবে না, প্রয়োজন এর সফল ও সঠিক প্রয়োগ। ২০০৬ সালের বিল্ডিং কোডের সঠিক প্রয়োগ দেশে হয়নি। বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মিত হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য তেমন কোনো কর্তৃপক্ষ ছিল না। প্রতিবার বিল্ডিং কোডের নতুন সংস্করণ বের করতে অনেক সময় চলে যাচ্ছে।

ভূতত্ত্ববিদ ও সিসমোলজিস্টদের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে যে কোনো সময় মাঝারি কিংবা বড়মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এজন্য আমাদের কাঠামোগত এবং অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এখনই বাড়ানো দরকার। এ ধরনের প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে ভূমিকম্প দুর্যোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের না আছে সচেতনতা, না আছে প্রস্তুতি। বাড়িঘর তৈরিতে কোনো নিয়ম-নীতি মানা হয় না। এমন অনেক বহুতল ভবন তৈরি হয়, যেগুলো ভূমিকম্প ছাড়াই হেলে বা ধসে পড়ে। ভূমিকম্প হলে এসব ভবনের অবস্থা কী হবে, তা ভাবতেও কষ্ট হয়। ডোবা-নালা ভরাট করে প্রয়োজনীয় ভিত্তি ছাড়াই ভবন তৈরি করা হয়। ভূমিকম্পের মতো বড় বিপর্যয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই বললেই চলে। বড় বড় শহরে অপরিকল্পিতভাবে এমন সব গলি-ঘুপচিতে বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে, যেখানে উদ্ধারকারী যন্ত্রপাতি পৌঁছানো যাবে না। যাদের এসব তদারকি করার কথা ছিল তারা কিছুই করে না। তার ওপর রয়েছে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ এবং মাথার ওপর বিদ্যুতের জঞ্জাল। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বড় কোনো শহরে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ভবন ধসে যত মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন থেকে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে। তারপরও আমাদের নগর সম্প্রসারণে সঠিক পরিকল্পনা নেই।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার যে মানচিত্র রয়েছে তাতে সিলেট ও চট্টগ্রাম উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল। ডাউকি ফল্ট লাইনে থাকা সিলেট অঞ্চলে এর আগে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৯৭ সালে। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ওপরে থাকা সেই ভূমিকম্পে সিলেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। কাজেই সিলেট অঞ্চলে নগর পরিকল্পনায় অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে সব ভবনের ভূমিকম্প-প্রতিরোধী সার্টিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি শক্তিশালী করতে হবে।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

আরও খবর

বুধবার, ০২ জুন ২০২১ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২০ শাওয়াল ১৪৪২

ভূমিকম্প : দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

আর কে চৌধুরী

গত শনিবার সিলেটের জৈন্তাপুরে এবং জগন্নাথপুরে ছোটমাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এক ঘণ্টার মধ্যে চার দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে সিলেটজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। সাম্প্রতিককালে বড়মাত্রার ভূমিকম্প হয়নি মানে এই নয় যে, এখানে আর বড় ভূমিকম্প হবে না। তাই এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

আমাদের এখন যে প্রস্তুতি আছে এ সময় মাঝারি ও বড় ভূমিকম্প হলে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মূল কারণ, আমাদের ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাস করার মূল অস্ত্র হচ্ছে বিল্ডিং কোড মেনে চলা। কিন্তু কেবল বিল্ডিং কোড থাকলেই হবে না, প্রয়োজন এর সফল ও সঠিক প্রয়োগ। ২০০৬ সালের বিল্ডিং কোডের সঠিক প্রয়োগ দেশে হয়নি। বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মিত হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য তেমন কোনো কর্তৃপক্ষ ছিল না। প্রতিবার বিল্ডিং কোডের নতুন সংস্করণ বের করতে অনেক সময় চলে যাচ্ছে।

ভূতত্ত্ববিদ ও সিসমোলজিস্টদের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে যে কোনো সময় মাঝারি কিংবা বড়মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এজন্য আমাদের কাঠামোগত এবং অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এখনই বাড়ানো দরকার। এ ধরনের প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে ভূমিকম্প দুর্যোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের না আছে সচেতনতা, না আছে প্রস্তুতি। বাড়িঘর তৈরিতে কোনো নিয়ম-নীতি মানা হয় না। এমন অনেক বহুতল ভবন তৈরি হয়, যেগুলো ভূমিকম্প ছাড়াই হেলে বা ধসে পড়ে। ভূমিকম্প হলে এসব ভবনের অবস্থা কী হবে, তা ভাবতেও কষ্ট হয়। ডোবা-নালা ভরাট করে প্রয়োজনীয় ভিত্তি ছাড়াই ভবন তৈরি করা হয়। ভূমিকম্পের মতো বড় বিপর্যয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই বললেই চলে। বড় বড় শহরে অপরিকল্পিতভাবে এমন সব গলি-ঘুপচিতে বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে, যেখানে উদ্ধারকারী যন্ত্রপাতি পৌঁছানো যাবে না। যাদের এসব তদারকি করার কথা ছিল তারা কিছুই করে না। তার ওপর রয়েছে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ এবং মাথার ওপর বিদ্যুতের জঞ্জাল। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বড় কোনো শহরে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ভবন ধসে যত মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন থেকে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে। তারপরও আমাদের নগর সম্প্রসারণে সঠিক পরিকল্পনা নেই।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার যে মানচিত্র রয়েছে তাতে সিলেট ও চট্টগ্রাম উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল। ডাউকি ফল্ট লাইনে থাকা সিলেট অঞ্চলে এর আগে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৯৭ সালে। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ওপরে থাকা সেই ভূমিকম্পে সিলেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। কাজেই সিলেট অঞ্চলে নগর পরিকল্পনায় অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে সব ভবনের ভূমিকম্প-প্রতিরোধী সার্টিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি শক্তিশালী করতে হবে।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]