যৌতুক পেয়েও গাড়ি থেকে ২ শিশু সন্তানসহ স্ত্রীকে ফেলে আহত : গ্রেপ্তার স্বামী

তিন দফায় ৫০ লাখ টাকা, ১৭ ভরি সোনার অলঙ্কারসহ প্রায় ৭০ লাখ টাকা যৌতুক দেবার পরেও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলুর ভাতিজি মাইশা মোজাহিদের কাছে আরও ২৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি তার স্বামী। না পেয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে দুই শিশু সন্তানসহ ফেলে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ।

অমানবিক ঘটনাটি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হাজিপাড়া এলাকায়। পাষন্ড স্বামী সুমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নির্যাতিতা নারী মায়িশা মোজাহিদ তন্নী বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটান কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছে। তবে পুলিশ অন্য আসামিদের এখনও গ্রেফতার করেনি। জানা গেছে, ২০১৬ সালে রংপুর নগরীর শালবন মহল্লার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলুর ছোট ভাই মোজাহেদ হোসেন ফুলুর মেয়ে মায়িশা মোজাহিদ তন্নীর সঙ্গে কাউনিয়া থানার হারাগাছ হাজিপাড়া এলাকার মাহমুদার রহমানের ছেলে মতিউল হাসান সুমনের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ছেলে ও তার স্বজনদের অনুরোধে মেয়ের সুখের জন্য নগদ দশ লাখ টাকা ১৭ ভড়ি সোনার গহনাসহ প্রায় ২৮ লাখ টাকার মালামাল ও অর্থ প্রদান করা হয়। বিয়ের কিছুদিন পর মায়িশা জানতে পারে তার স্বামী সুমন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় একটি বিয়ে করেছিল যৌতুক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সেই বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। এতকিছু জানার পরেও মায়িশা স্বামীর সঙ্গে ঘর সংসার করতে থাকে। এ সময় তাদের দুটি কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে। তাদের বয়স যথাক্রমে চার বছর ও দেড় বছর। এদিকে তার স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। প্রতিদিন মাদক সেবন করতে ৫-৭ হাজার টাকা লাগে। তার বাবা মা এ মাদক কেনার টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়। এরপরেই টাকার জন্য মায়িশার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। সে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করে। বিষয়টি মায়িশা তার বাবা মাকে জানালে তার বাবা মেয়ের সুখের কথা ভেবে আবারও দশ লাখ টাকা প্রদান করে। এ টাকা শেষ হয়ে গেলে আবারও ২৫ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে বাবার বাড়ি থেকে আনার জন্য এক মাস আগে মারধর করে বাসা থেকে দুই শিশু সন্তানসহ বের করে দেয়। মায়িশা বাবার বাড়িতে চলে আসে। এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবলু তার ছোট ভাইসহ স্বজনরা দুই শিশু সন্তানের কথা ভেবে সংসার করার জন্য আবারো ছেলে সুমন ও তার বাবা সহ স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে গত ২৪ মে বাসায় ডেকে আনে। সেখানে আলোচনা করার পর আবারো ছেলে সুমনকে ১২ লাখ টাকা প্রদান করে। তার পর মায়িশা তার দুই শিশু সন্তান ও স্বামী সুমন শ্বশুড় মাহমুদার রহমান প্রাইভেট কারে করে গাড়িতে তুলে দেয়। কিছুদুর যাবার পর যৌতুক লোভী সুমন কেন তার দাবি করা ২৫ লাখ দেয়া হলো না একথা বলে গাড়ির ভেতরেই আবারো মায়িশাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে গাড়ির ভেতরে ইলেকট্রিক তার গলায় পেচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তার আর্তচিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে চলন্ত গাড়ি থেকে সুমন তার স্ত্রী মায়িশা ও দুই শিশু সন্তানকে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় মায়িশাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে সুস্থ হবার পর মায়িশা নিজেই বাদী হয়ে মেট্রোপলিটান কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। মামলা করার পর তার স্বজনরা মামলা তুলে নেবার জন্য নানাভাবে হুমকি প্রদান করছে ফলে মায়িশা চরম নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এদিকে রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন ন্যায় বিচার দাবি করেন। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানান অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি এটা চরম অমানবিক ঘটনা।

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১ , ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২১ শাওয়াল ১৪৪২

যৌতুক পেয়েও গাড়ি থেকে ২ শিশু সন্তানসহ স্ত্রীকে ফেলে আহত : গ্রেপ্তার স্বামী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

তিন দফায় ৫০ লাখ টাকা, ১৭ ভরি সোনার অলঙ্কারসহ প্রায় ৭০ লাখ টাকা যৌতুক দেবার পরেও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলুর ভাতিজি মাইশা মোজাহিদের কাছে আরও ২৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি তার স্বামী। না পেয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে দুই শিশু সন্তানসহ ফেলে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ।

অমানবিক ঘটনাটি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হাজিপাড়া এলাকায়। পাষন্ড স্বামী সুমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নির্যাতিতা নারী মায়িশা মোজাহিদ তন্নী বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটান কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছে। তবে পুলিশ অন্য আসামিদের এখনও গ্রেফতার করেনি। জানা গেছে, ২০১৬ সালে রংপুর নগরীর শালবন মহল্লার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলুর ছোট ভাই মোজাহেদ হোসেন ফুলুর মেয়ে মায়িশা মোজাহিদ তন্নীর সঙ্গে কাউনিয়া থানার হারাগাছ হাজিপাড়া এলাকার মাহমুদার রহমানের ছেলে মতিউল হাসান সুমনের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ছেলে ও তার স্বজনদের অনুরোধে মেয়ের সুখের জন্য নগদ দশ লাখ টাকা ১৭ ভড়ি সোনার গহনাসহ প্রায় ২৮ লাখ টাকার মালামাল ও অর্থ প্রদান করা হয়। বিয়ের কিছুদিন পর মায়িশা জানতে পারে তার স্বামী সুমন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় একটি বিয়ে করেছিল যৌতুক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সেই বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। এতকিছু জানার পরেও মায়িশা স্বামীর সঙ্গে ঘর সংসার করতে থাকে। এ সময় তাদের দুটি কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে। তাদের বয়স যথাক্রমে চার বছর ও দেড় বছর। এদিকে তার স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। প্রতিদিন মাদক সেবন করতে ৫-৭ হাজার টাকা লাগে। তার বাবা মা এ মাদক কেনার টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়। এরপরেই টাকার জন্য মায়িশার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। সে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করে। বিষয়টি মায়িশা তার বাবা মাকে জানালে তার বাবা মেয়ের সুখের কথা ভেবে আবারও দশ লাখ টাকা প্রদান করে। এ টাকা শেষ হয়ে গেলে আবারও ২৫ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে বাবার বাড়ি থেকে আনার জন্য এক মাস আগে মারধর করে বাসা থেকে দুই শিশু সন্তানসহ বের করে দেয়। মায়িশা বাবার বাড়িতে চলে আসে। এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবলু তার ছোট ভাইসহ স্বজনরা দুই শিশু সন্তানের কথা ভেবে সংসার করার জন্য আবারো ছেলে সুমন ও তার বাবা সহ স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে গত ২৪ মে বাসায় ডেকে আনে। সেখানে আলোচনা করার পর আবারো ছেলে সুমনকে ১২ লাখ টাকা প্রদান করে। তার পর মায়িশা তার দুই শিশু সন্তান ও স্বামী সুমন শ্বশুড় মাহমুদার রহমান প্রাইভেট কারে করে গাড়িতে তুলে দেয়। কিছুদুর যাবার পর যৌতুক লোভী সুমন কেন তার দাবি করা ২৫ লাখ দেয়া হলো না একথা বলে গাড়ির ভেতরেই আবারো মায়িশাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে গাড়ির ভেতরে ইলেকট্রিক তার গলায় পেচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তার আর্তচিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে চলন্ত গাড়ি থেকে সুমন তার স্ত্রী মায়িশা ও দুই শিশু সন্তানকে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় মায়িশাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে সুস্থ হবার পর মায়িশা নিজেই বাদী হয়ে মেট্রোপলিটান কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। মামলা করার পর তার স্বজনরা মামলা তুলে নেবার জন্য নানাভাবে হুমকি প্রদান করছে ফলে মায়িশা চরম নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এদিকে রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন ন্যায় বিচার দাবি করেন। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানান অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি এটা চরম অমানবিক ঘটনা।