জীবন-জীবিকার সমীকরণ মেলানোর চ্যালেঞ্জ অর্থমন্ত্রীর

আজ বাজেট

প্রায় দেড় বছর করোনায় বিপর্যস্ত পৃথিবী। তার প্রভাবে অর্থনীতিও বেসামাল। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। জীবন-জীবিকার দোটনায় শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা।

মহামারীর এই পরিস্থিতিতে দেশে বেড়েছে দারিদ্র্য। বহু মানুষ হয়েছে বেকার। মানুষের কমেছে আয়। বিনিয়োগের অবস্থা ভালো নয়। রাজস্ব আয়ের নেই সুখবর। রপ্তানিতে সম্প্রতি কিছুটা গতি ফিরে পেলেও সেখানে নেই কোন নিশ্চয়তা। একমাত্র সুখবর রেমিট্যান্সে, এই করোনাকালেও যা প্রতিদিনই বাড়ছে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেশ হৃষ্টপুষ্ট। এই পরিস্থিতিতেই আজ আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী যা চলতি বাজেটের থেকে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ বেশি। সেখানে তিনি সম্পদ কোথা থেকে জোগাড় করবেন এবং কোথায় ব্যয় করবেন, সেদিকে তাকিয়ে থাকবেন মানুষ।

অর্থমন্ত্রী বলছেন, ‘সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে মাথায় রেখে বাজেট করছি। এটা হবে মানুষের জীবন রক্ষার বাজেট। এটা হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি সবার বাজেট।’

তবে সব শ্রেণী পেশার মানুষের স্বার্থের টানাপোড়েন তিনি কীভাবে মেলাবেন সেই বড় প্রশ্ন।

করোনাকালের বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্যেও অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করতে হবে তাকে। নতুন দারিদ্র্যের জন্য কী ব্যবস্থা করেন, নতুন কী কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারবেন, এসবই বড় প্রশ্ন।

জীবন-জীবিকার সমীকরণ মেলানোর চ্যালেঞ্জে তার হাতে কী অস্ত্র আছে? তাকে কী করতে হবে?

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা যায় তার কিছু দিকনির্দেশনা থাকা দরকার বাজেটে। মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশকে যেন টিকা দেয়া যায় আর উন্নয়ন খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ানো ছাড়া এখনকার পরিস্থিতি সামাল দেয়ার অন্য কোন হাতিয়ারও নেই তার কাছে কিন্তু সেটা কীভাবে?

কারণ অর্থ জোগাড় করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল তার অর্ধেকও আহরণ করতে পারেনি গত ৮ মাসে। তাহলে বাকি চার মাসে পুরোটা আহরণ করার প্রশ্নই ওঠে না।

‘বাজেটের আকার মোটামুটি ঠিকই আছে। তবে আরেকটু বাড়লে ভালো হতো। করোনাকালীন বাজেট বড়ই হবে।’ বলছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

এছাড়াও খাতভিত্তিক বরাদ্দের বিষয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে টিকাদান কর্মসূচিতে। ১২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে দ্রুতই। তাই এই খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ রেখে বাজেট দিতে হবে আর সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে যেন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।’

একইভাবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানও বাজেট ঘাটতির দিকে না তাকিয়ে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এবারের বাজেটে প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে সরকারি ব্যয়কে অগ্রাধিকারভাবে বণ্টন করতে হবে। এতে ঘাটতি যদি সাড়ে ৬ বা ৭ শতাংশে নিতে হয় তা নিয়ে সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রয়োজন। সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’

এগুলোসহ অর্থনীতির আরও কিছু সূচক খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এসব সূচককে শক্তিশালী করতে হলে বাজেটে পরিকল্পিত বরাদ্দ প্রয়োজন।

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও সামাজিক সুরক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাকালে দেশে নতুন করে এক কোটি ৬৩ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। দেশে এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে চার কোটি ৮০ লাখ মানুষ।

অন্যদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় দারিদ্র্য ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এছাড়াও গত জুন মাসে পিপিআরসি ও বিআইজিডির যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে, দারিদ্র্য দ্বিগুণের বেশি হয়ে ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে।

এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে দেখা গেছে, করোনায় মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। করোনার আগে যাদের আয় ছিল প্রতিদিন ১০০ টাকা। করোনার কারণে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়।

এসব মানুষের আয় হ্রাস ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির (বিইএ) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার ঘোষিত ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির কারণে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছেন। এতে প্রায় ৫ কোটি ৫৫ লাখ বাংলাদেশির আর্থ-সামাজিক অবস্থানের অবনমন ঘটেছে।

এ প্রসঙ্গে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে এক শতাংশ সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন দিতেই চলে যায়। তাহলে বাকি থাকে মাত্র এক শতাংশ। এই এক শতাংশ যথেষ্ট নয় আর করোনার কারণে অনেক মধ্যবিত্ত দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। এতে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এসব মানুষকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে হলে কমপক্ষে জিডিপির ৪ থেকে ৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে।’

তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হবে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দের আকার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে এবং ধীরে ধীরে অনেক মানুষকে এর আওতায় নিয়ে আসা হবে।

সরকারি হিসাবে যেসব ব্যয়কে সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় বলা হয় তা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। তারা বলছেন, পেনশন ও সঞ্চয়পত্র সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় নয় অথচ সরকার এগুলোকে সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয়ের মধ্যে হিসাব করে।

লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও যেতে পারছে না এনবিআর

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাই আগামী বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বেশি লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে না। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম আট মাস জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

সেই হিসাবে বাকি চার মাসে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। করোনা মহামারীর সময়ে লক্ষ্যমাত্রার কতটা রাজস্ব আহরণ সম্ভব তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

তাই আগামী বাজেটে এনবিআরকে এক টাকাও বেশি আহরণ করতে হবে না। চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে আগামী অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাজেটে ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত কিন্তু এর পাশাপাশি আয়ও বৃদ্ধি করতে হবে কিন্তু এনবিআর তা পারছে না। সেই হিসেবে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী মনে হয়েছে আমার কাছে।’

বিদেশি বিনিয়োগের অবস্থাও ভালো নয়

বর্তমানে সারাবিশ্ব করোনা মহামারীতে ভুগছে। এতে সারাবিশ্বেই বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে ২৫৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের।

আর নিট বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে ৯৪ কোটি ডলারে নেমেছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১০৩ কোটি ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় শিল্প মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। এসব আমদানি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে দেশের অর্থনীতির একটি সূচক ভালো নেই।

করোনার মধ্যে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে হলে দেশে বড় বড় প্রকল্প দরকার। এসব প্রকল্প চালু হলে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং অর্থের প্রবাহ বাড়বে কিন্তু একে তো করোনা সংক্রমণের কারণে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। এতে দেশে কর্মসংস্থানের ওপর বড় প্রভাব পড়েছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। বিষয়টি সরাসরি বাজেটের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে এগোলে ভালো হয়। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার জন্য বিডা কাজ করছে। জানিনা তারা কতটা তা করতে পারবে।’

লেনদেন ভারসাম্যের অবস্থা মোটামুটি

করোনার মধ্যে অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের অবস্থা নেতিবাচক থাকলেও বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের অবস্থা মোটামুটি ভালো রয়েছে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) উদ্বৃত্ত বাড়ছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে চলতি হিসাবে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল প্রায় ২৬৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।

রেমিট্যান্স ও রিজার্ভের অবস্থা খুবই ভালো

করোনায় যখন সারাবিশ্ব বিপর্যস্ত তখন বাংলাদেশের একটি সূচকের অবস্থা খুবই ভালো রয়েছে। তা হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আর এই রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে আরও একটি সূচক দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। সেই সূচকটি হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মোট ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ (২২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা।

আর এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ বিলিয়ন ডলারে। এমনকি এই রিজার্ভ থেকে শ্রীলংকাকে কিছু অর্থ ধারও দিচ্ছে বাংলাদেশ।

উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে রপ্তানি আয়

করোনার প্রথম ঢেউয়ে রপ্তানি আয়ে ধস নেমেছিল। তারপর এই ঢেউয়ের গতি কিছুটা কমতে শুরু করলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে কিন্তু এরপরই আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এতে আরেকবার মুখ থুবড়ে পড়ে রপ্তানি আয়। তবে আশার কথা হলো, সেই মুখ থুবড়ে পড়া রপ্তানি আয় ফের উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিলে পণ্য রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ছয় গুণ বেড়েছে। এপ্রিলে রপ্তানি আয় বেড়ে প্রায় তিন দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনীতির চাকা আবার চালু হওয়ায় এবং নতুন করে তারা পোশাক আমদানি শুরু করায় এটি সম্ভব হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনার ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি আমরা। তবে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি। তবে তৈরি পোশাকের দাম কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে কাঁচামাল ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাই রপ্তানিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া খুব সহজ হবে না।’

অন্যদিকে সারাবিশ্বের তৈরি পোশাকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পণ্যে বৈচিত্র্যকরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার কথা বলেন। রপ্তানি আয় যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে সেহেতু বাজেটে এই খাতটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১ , ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২১ শাওয়াল ১৪৪২

জীবন-জীবিকার সমীকরণ মেলানোর চ্যালেঞ্জ অর্থমন্ত্রীর

আজ বাজেট

রেজাউল করিম

image

প্রায় দেড় বছর করোনায় বিপর্যস্ত পৃথিবী। তার প্রভাবে অর্থনীতিও বেসামাল। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। জীবন-জীবিকার দোটনায় শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা।

মহামারীর এই পরিস্থিতিতে দেশে বেড়েছে দারিদ্র্য। বহু মানুষ হয়েছে বেকার। মানুষের কমেছে আয়। বিনিয়োগের অবস্থা ভালো নয়। রাজস্ব আয়ের নেই সুখবর। রপ্তানিতে সম্প্রতি কিছুটা গতি ফিরে পেলেও সেখানে নেই কোন নিশ্চয়তা। একমাত্র সুখবর রেমিট্যান্সে, এই করোনাকালেও যা প্রতিদিনই বাড়ছে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেশ হৃষ্টপুষ্ট। এই পরিস্থিতিতেই আজ আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী যা চলতি বাজেটের থেকে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ বেশি। সেখানে তিনি সম্পদ কোথা থেকে জোগাড় করবেন এবং কোথায় ব্যয় করবেন, সেদিকে তাকিয়ে থাকবেন মানুষ।

অর্থমন্ত্রী বলছেন, ‘সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে মাথায় রেখে বাজেট করছি। এটা হবে মানুষের জীবন রক্ষার বাজেট। এটা হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি সবার বাজেট।’

তবে সব শ্রেণী পেশার মানুষের স্বার্থের টানাপোড়েন তিনি কীভাবে মেলাবেন সেই বড় প্রশ্ন।

করোনাকালের বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্যেও অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করতে হবে তাকে। নতুন দারিদ্র্যের জন্য কী ব্যবস্থা করেন, নতুন কী কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারবেন, এসবই বড় প্রশ্ন।

জীবন-জীবিকার সমীকরণ মেলানোর চ্যালেঞ্জে তার হাতে কী অস্ত্র আছে? তাকে কী করতে হবে?

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা যায় তার কিছু দিকনির্দেশনা থাকা দরকার বাজেটে। মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশকে যেন টিকা দেয়া যায় আর উন্নয়ন খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ানো ছাড়া এখনকার পরিস্থিতি সামাল দেয়ার অন্য কোন হাতিয়ারও নেই তার কাছে কিন্তু সেটা কীভাবে?

কারণ অর্থ জোগাড় করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল তার অর্ধেকও আহরণ করতে পারেনি গত ৮ মাসে। তাহলে বাকি চার মাসে পুরোটা আহরণ করার প্রশ্নই ওঠে না।

‘বাজেটের আকার মোটামুটি ঠিকই আছে। তবে আরেকটু বাড়লে ভালো হতো। করোনাকালীন বাজেট বড়ই হবে।’ বলছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

এছাড়াও খাতভিত্তিক বরাদ্দের বিষয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে টিকাদান কর্মসূচিতে। ১২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে দ্রুতই। তাই এই খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ রেখে বাজেট দিতে হবে আর সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে যেন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।’

একইভাবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানও বাজেট ঘাটতির দিকে না তাকিয়ে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এবারের বাজেটে প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে সরকারি ব্যয়কে অগ্রাধিকারভাবে বণ্টন করতে হবে। এতে ঘাটতি যদি সাড়ে ৬ বা ৭ শতাংশে নিতে হয় তা নিয়ে সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রয়োজন। সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’

এগুলোসহ অর্থনীতির আরও কিছু সূচক খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এসব সূচককে শক্তিশালী করতে হলে বাজেটে পরিকল্পিত বরাদ্দ প্রয়োজন।

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও সামাজিক সুরক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাকালে দেশে নতুন করে এক কোটি ৬৩ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। দেশে এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে চার কোটি ৮০ লাখ মানুষ।

অন্যদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় দারিদ্র্য ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এছাড়াও গত জুন মাসে পিপিআরসি ও বিআইজিডির যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে, দারিদ্র্য দ্বিগুণের বেশি হয়ে ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে।

এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে দেখা গেছে, করোনায় মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। করোনার আগে যাদের আয় ছিল প্রতিদিন ১০০ টাকা। করোনার কারণে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়।

এসব মানুষের আয় হ্রাস ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির (বিইএ) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার ঘোষিত ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির কারণে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছেন। এতে প্রায় ৫ কোটি ৫৫ লাখ বাংলাদেশির আর্থ-সামাজিক অবস্থানের অবনমন ঘটেছে।

এ প্রসঙ্গে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে এক শতাংশ সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন দিতেই চলে যায়। তাহলে বাকি থাকে মাত্র এক শতাংশ। এই এক শতাংশ যথেষ্ট নয় আর করোনার কারণে অনেক মধ্যবিত্ত দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। এতে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এসব মানুষকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে হলে কমপক্ষে জিডিপির ৪ থেকে ৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে।’

তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হবে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দের আকার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে এবং ধীরে ধীরে অনেক মানুষকে এর আওতায় নিয়ে আসা হবে।

সরকারি হিসাবে যেসব ব্যয়কে সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় বলা হয় তা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। তারা বলছেন, পেনশন ও সঞ্চয়পত্র সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় নয় অথচ সরকার এগুলোকে সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয়ের মধ্যে হিসাব করে।

লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও যেতে পারছে না এনবিআর

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাই আগামী বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বেশি লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে না। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম আট মাস জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

সেই হিসাবে বাকি চার মাসে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। করোনা মহামারীর সময়ে লক্ষ্যমাত্রার কতটা রাজস্ব আহরণ সম্ভব তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

তাই আগামী বাজেটে এনবিআরকে এক টাকাও বেশি আহরণ করতে হবে না। চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে আগামী অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাজেটে ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত কিন্তু এর পাশাপাশি আয়ও বৃদ্ধি করতে হবে কিন্তু এনবিআর তা পারছে না। সেই হিসেবে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী মনে হয়েছে আমার কাছে।’

বিদেশি বিনিয়োগের অবস্থাও ভালো নয়

বর্তমানে সারাবিশ্ব করোনা মহামারীতে ভুগছে। এতে সারাবিশ্বেই বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে ২৫৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের।

আর নিট বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে ৯৪ কোটি ডলারে নেমেছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১০৩ কোটি ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় শিল্প মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। এসব আমদানি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে দেশের অর্থনীতির একটি সূচক ভালো নেই।

করোনার মধ্যে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে হলে দেশে বড় বড় প্রকল্প দরকার। এসব প্রকল্প চালু হলে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং অর্থের প্রবাহ বাড়বে কিন্তু একে তো করোনা সংক্রমণের কারণে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। এতে দেশে কর্মসংস্থানের ওপর বড় প্রভাব পড়েছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। বিষয়টি সরাসরি বাজেটের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে এগোলে ভালো হয়। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার জন্য বিডা কাজ করছে। জানিনা তারা কতটা তা করতে পারবে।’

লেনদেন ভারসাম্যের অবস্থা মোটামুটি

করোনার মধ্যে অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের অবস্থা নেতিবাচক থাকলেও বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের অবস্থা মোটামুটি ভালো রয়েছে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) উদ্বৃত্ত বাড়ছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে চলতি হিসাবে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল প্রায় ২৬৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।

রেমিট্যান্স ও রিজার্ভের অবস্থা খুবই ভালো

করোনায় যখন সারাবিশ্ব বিপর্যস্ত তখন বাংলাদেশের একটি সূচকের অবস্থা খুবই ভালো রয়েছে। তা হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আর এই রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে আরও একটি সূচক দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। সেই সূচকটি হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মোট ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ (২২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা।

আর এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ বিলিয়ন ডলারে। এমনকি এই রিজার্ভ থেকে শ্রীলংকাকে কিছু অর্থ ধারও দিচ্ছে বাংলাদেশ।

উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে রপ্তানি আয়

করোনার প্রথম ঢেউয়ে রপ্তানি আয়ে ধস নেমেছিল। তারপর এই ঢেউয়ের গতি কিছুটা কমতে শুরু করলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে কিন্তু এরপরই আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এতে আরেকবার মুখ থুবড়ে পড়ে রপ্তানি আয়। তবে আশার কথা হলো, সেই মুখ থুবড়ে পড়া রপ্তানি আয় ফের উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিলে পণ্য রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ছয় গুণ বেড়েছে। এপ্রিলে রপ্তানি আয় বেড়ে প্রায় তিন দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনীতির চাকা আবার চালু হওয়ায় এবং নতুন করে তারা পোশাক আমদানি শুরু করায় এটি সম্ভব হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনার ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি আমরা। তবে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি। তবে তৈরি পোশাকের দাম কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে কাঁচামাল ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাই রপ্তানিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া খুব সহজ হবে না।’

অন্যদিকে সারাবিশ্বের তৈরি পোশাকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পণ্যে বৈচিত্র্যকরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার কথা বলেন। রপ্তানি আয় যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে সেহেতু বাজেটে এই খাতটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।