মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতির কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি

রাজধানীতে লাইসার্জিস এসিড ডাইথ্যালমাইড বা (এলএসডি) নামক মাদকের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে বেশ কয়েকটি চক্র। যাদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিদেশ থেকে কুরিয়ার পার্সেল অথবা অন্য পণ্যের সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে এলএসডি। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অভিযানে খিলগাঁও এবং ভাটারা এলাকা থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে গ্রেপ্তারে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওই ছাত্র এলএসডি সেবন করত আর এলএসডি সেবনের প্রভাবে ওই ছাত্র আত্মহত্যা করে।

রাজধানীতে এলএসডি মাদকের বিস্তারের খবরটি উদ্বেগজনক। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শুধু এলএসডিই নয়, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের বিস্তার লক্ষ্য করা গেছে। তরুণদের একটি বড় অংশ এই আত্মঘাতী আসক্তির শিকার। এক্ষেত্রে এলাকাও সীমাবদ্ধ নেই-রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত গোটা দেশেই মাদকাসক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ২০১৮ সালের ৪ মে। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে শতাধিক সন্দেহভাজন মাদক কারবারি মারা যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এরপরও দেশ থেকে মাদক নির্মূল হয়নি। কেন এখনও হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়, সেটা একটা প্রশ্ন। এই ব্যর্থতার কারণ বহুমাত্রিক। প্রথমত, দেশগুলো মাদকাসক্তির কারণগুলো খতিয়ে না দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বলপ্রয়োগ করে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মাদক সমস্যার মূল উৎস এবং সরবরাহ চেইন ধ্বংস না করে বিপণন ও বিতরণ পর্যায়ে অভিযান চালানো হয়েছে। ফলে মাঠপর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা মাদকসেবীরা বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে, কিন্তু মাদক ব্যবসার রাঘব-বোয়ালরা পার পেয়ে গেছে।

মাদক নির্মূল করতে হলে সত্যিকার অর্থেই জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন দরকার। মাদক ব্যবসার সঙ্গে কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা গডফাদার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদকাসক্তি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতার কারণ। সীমান্তপথে মাদক চোরাচালান ও দেশের ভেতরে মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিজিবি, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। মাদকাসক্তি দূর করার জন্য সামাজিক ও পারিবারিক প্রচেষ্টাও দরকার। প্রতিটি পরিবারের সন্তানদের দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন; খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১ , ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২১ শাওয়াল ১৪৪২

মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতির কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি

রাজধানীতে লাইসার্জিস এসিড ডাইথ্যালমাইড বা (এলএসডি) নামক মাদকের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে বেশ কয়েকটি চক্র। যাদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিদেশ থেকে কুরিয়ার পার্সেল অথবা অন্য পণ্যের সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে এলএসডি। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অভিযানে খিলগাঁও এবং ভাটারা এলাকা থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে গ্রেপ্তারে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওই ছাত্র এলএসডি সেবন করত আর এলএসডি সেবনের প্রভাবে ওই ছাত্র আত্মহত্যা করে।

রাজধানীতে এলএসডি মাদকের বিস্তারের খবরটি উদ্বেগজনক। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শুধু এলএসডিই নয়, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের বিস্তার লক্ষ্য করা গেছে। তরুণদের একটি বড় অংশ এই আত্মঘাতী আসক্তির শিকার। এক্ষেত্রে এলাকাও সীমাবদ্ধ নেই-রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত গোটা দেশেই মাদকাসক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ২০১৮ সালের ৪ মে। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে শতাধিক সন্দেহভাজন মাদক কারবারি মারা যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এরপরও দেশ থেকে মাদক নির্মূল হয়নি। কেন এখনও হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়, সেটা একটা প্রশ্ন। এই ব্যর্থতার কারণ বহুমাত্রিক। প্রথমত, দেশগুলো মাদকাসক্তির কারণগুলো খতিয়ে না দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বলপ্রয়োগ করে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মাদক সমস্যার মূল উৎস এবং সরবরাহ চেইন ধ্বংস না করে বিপণন ও বিতরণ পর্যায়ে অভিযান চালানো হয়েছে। ফলে মাঠপর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা মাদকসেবীরা বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে, কিন্তু মাদক ব্যবসার রাঘব-বোয়ালরা পার পেয়ে গেছে।

মাদক নির্মূল করতে হলে সত্যিকার অর্থেই জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন দরকার। মাদক ব্যবসার সঙ্গে কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা গডফাদার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদকাসক্তি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতার কারণ। সীমান্তপথে মাদক চোরাচালান ও দেশের ভেতরে মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিজিবি, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। মাদকাসক্তি দূর করার জন্য সামাজিক ও পারিবারিক প্রচেষ্টাও দরকার। প্রতিটি পরিবারের সন্তানদের দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন; খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।