জলাবদ্ধতা থেকে রাজধানীবাসীর মুক্তি মিলবে কবে

রাজধানীতে চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে গত মঙ্গলবার। সেদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৫ মিলিমিটার। এর আগে ২০১৭ সালের ১২ জুন ১৩৩ মিমি. বৃষ্টিপাত হয়েছিল। যে রাজধানী সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে তার কী অবস্থা হয়েছে সেটা সহজেই অনুমেয়। জলাবদ্ধ মহানগরীর দুরবস্থার চিত্র দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। জলাবদ্ধতায় নাগরিক দুর্ভোগের ছবিতে সয়লাব হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কই তলিয়ে যায়। মিরপুর, ধানমন্ডি, রাজারবাগসহ অনেক এলাকার সড়ক পানির জন্য যান চলালের অনুপুযুক্ত হয়ে পড়ে। কোন কোন সড়কে গাড়ি নষ্ট হয়ে আটকে ছিল। এটা শুধু এ বছরের নয়, প্রতি বছরেরই সাধারণ চিত্র।

বর্ষা মৌসুম এখনও শুরু হয়নি। এখনই বৃষ্টির পানিতে রাজধানী তলিয়ে যাচ্ছে। বর্ষায় যদি বৃষ্টি বাড়ে তাহলে অবধারিতভাবে নাগরিক-দুর্ভোগ যে বাড়বে তা বলার প্রতীক্ষা রাখে না। জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট নাগরিক-দুর্ভোগ দূর করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন ভাবনা আছে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।

রাজধানীর খালগুলোর বেশিরভাগই দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না। জলাশয়গুলো ভরাট করে ঘরবাড়ি, আবাসন প্রকল্প, অফিস ভবন অথবা শপিংমল তৈরি করা হয়েছে। নগরায়ণের ফলে রাজধানীতে পানির প্রবাহ মাটির নিচে যেতে পারছে না। এখানে বৃষ্টির পানি যাচ্ছে নর্দমা ও প্রাকৃতিক খালে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দূষণ ও দখলে ধুঁকছে।

পরিকল্পিত একটি রাজধানীতে যে পরিমাণ জলাশয় থাকা জরুরি তা ঢাকায় নেই। ড্যাপ-এ জলাশয় রাখার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ার কুফল রাজধানীবাসী দেখতে পাচ্ছে। গোটা রাজধানী এখন জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।

জলাবদ্ধতার কারণ কারোরই অজানা নয়। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের পরিকল্পনাও সরকারের আছে। তবে পরিকল্পনা করাই জরুরি নয়, এর বাস্ততায়ন জরুরি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তরিক হলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হবে না। অতীতে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। এ প্রতিষ্ঠানের উপর্যুপরি ব্যর্থতার পর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওপর এ দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে। দায়িত্ব বদলালেও নাগরিকদের দুর্ভোগ দূর হয়নি। দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পর গত কয়েক মাসে তারা কিছু কিছু কাজ করছে। তবে তা জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনি। জলাবদ্ধতা থেকে রাজধানীবাসীকে মুক্তি দিতে দুই সিটি করপোরেশন কী করে সেটা দেখার বিষয়। আমরা চাইব না যে, ওয়াসার মতো তারাও ব্যর্থ হোক।

শুক্রবার, ০৪ জুন ২০২১ , ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২২ শাওয়াল ১৪৪২

জলাবদ্ধতা থেকে রাজধানীবাসীর মুক্তি মিলবে কবে

রাজধানীতে চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে গত মঙ্গলবার। সেদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৫ মিলিমিটার। এর আগে ২০১৭ সালের ১২ জুন ১৩৩ মিমি. বৃষ্টিপাত হয়েছিল। যে রাজধানী সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে তার কী অবস্থা হয়েছে সেটা সহজেই অনুমেয়। জলাবদ্ধ মহানগরীর দুরবস্থার চিত্র দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। জলাবদ্ধতায় নাগরিক দুর্ভোগের ছবিতে সয়লাব হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কই তলিয়ে যায়। মিরপুর, ধানমন্ডি, রাজারবাগসহ অনেক এলাকার সড়ক পানির জন্য যান চলালের অনুপুযুক্ত হয়ে পড়ে। কোন কোন সড়কে গাড়ি নষ্ট হয়ে আটকে ছিল। এটা শুধু এ বছরের নয়, প্রতি বছরেরই সাধারণ চিত্র।

বর্ষা মৌসুম এখনও শুরু হয়নি। এখনই বৃষ্টির পানিতে রাজধানী তলিয়ে যাচ্ছে। বর্ষায় যদি বৃষ্টি বাড়ে তাহলে অবধারিতভাবে নাগরিক-দুর্ভোগ যে বাড়বে তা বলার প্রতীক্ষা রাখে না। জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট নাগরিক-দুর্ভোগ দূর করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন ভাবনা আছে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।

রাজধানীর খালগুলোর বেশিরভাগই দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না। জলাশয়গুলো ভরাট করে ঘরবাড়ি, আবাসন প্রকল্প, অফিস ভবন অথবা শপিংমল তৈরি করা হয়েছে। নগরায়ণের ফলে রাজধানীতে পানির প্রবাহ মাটির নিচে যেতে পারছে না। এখানে বৃষ্টির পানি যাচ্ছে নর্দমা ও প্রাকৃতিক খালে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দূষণ ও দখলে ধুঁকছে।

পরিকল্পিত একটি রাজধানীতে যে পরিমাণ জলাশয় থাকা জরুরি তা ঢাকায় নেই। ড্যাপ-এ জলাশয় রাখার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ার কুফল রাজধানীবাসী দেখতে পাচ্ছে। গোটা রাজধানী এখন জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।

জলাবদ্ধতার কারণ কারোরই অজানা নয়। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের পরিকল্পনাও সরকারের আছে। তবে পরিকল্পনা করাই জরুরি নয়, এর বাস্ততায়ন জরুরি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তরিক হলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হবে না। অতীতে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। এ প্রতিষ্ঠানের উপর্যুপরি ব্যর্থতার পর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওপর এ দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে। দায়িত্ব বদলালেও নাগরিকদের দুর্ভোগ দূর হয়নি। দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পর গত কয়েক মাসে তারা কিছু কিছু কাজ করছে। তবে তা জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনি। জলাবদ্ধতা থেকে রাজধানীবাসীকে মুক্তি দিতে দুই সিটি করপোরেশন কী করে সেটা দেখার বিষয়। আমরা চাইব না যে, ওয়াসার মতো তারাও ব্যর্থ হোক।