সাতক্ষীরা, নোয়াখালী পৌরসভা ও ৬ ইউনিয়নে লকডাউন

রাজশাহী-দিনাজপুরে পরিস্থিতির অবনতি

করোনার ভারতীয় সংক্রমণে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে ক্রমেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে বাড়ছেই করোনা রোগী। একদিনে সেখানে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর হারে দেশে দিনাজপুরে সর্বোচ্চ। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আতঙ্কিত পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরা ও নোয়াখালী পৌরসভাসহ ৬ ইউনিয়নে আজ থেকে সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধিদের পাঠানোর খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে জেলাব্যাপী কঠোর লকডাউন। লকডাউন বাস্তবায়নে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রশাসন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ২ নারী। করোনা সন্দেহে মারা গেছেন আরও ২ জন। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, জেলায় করোনা সংক্রমণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ৪ জুন মধ্যরাত থেকে ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত জেলাব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

বিধিনিষেধ চলাকালে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য বহনকারী ট্রাক এবং জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। ওষুধের দোকান ব্যতীত সব ধরনের দোকানপাট, শপিংমল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সাপ্তাহিক হাট ও গরুর হাট।

কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় (মুদিখানা) পণ্যের দোকানপাট, খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে কেউ খেতে পারবেন না।

সাতক্ষীরায় আমের এখন ভরা মৌসুম। শত শত ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম আমের আড়তসহ হাট-বাজার ও আমবাগান। আমের বিষয়ে কিছু ছাড় দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, আমের আড়ত/বাজার পৃথক জায়গায় ছড়িয়ে আড়তদারদের মাধ্যমে বিক্রি করা যাবে। বাগান থেকে আম ট্রাকে করে প্রেরণ করা যাবে। এছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পরিবহন চালু থাকবে।

তিনি আরও বলেন, শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি, বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

মসজিদে নামাজ পড়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, জাতীয় ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমার নামাজসহ প্রতি ওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সমসংখ্যক ব্যক্তি উপাসনা করতে পারবেন।

ভোমরা স্থলবন্দরের সব দোকান বন্ধ থাকবে। তবে ভোমরা স্থলবন্দরের কার্যক্রম সকাল ৮টা হতে বেলা-২টা পর্যন্ত চালু থাকবে। এছাড়া শহর ও গ্রামে সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

নোয়াখালী : নোয়াখালীর সদর উপজেলায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নোয়াখালী পৌরসভাসহ ৬ ইউনিয়নে লকডাউন ঘোষণা।

এলাকাগুলো হলোÑ নোয়াখালীর সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও নোয়াখালী পৌরসভার সব ওয়ার্ড। ইউনিয়নগুলো হলোÑ ৩নং নোয়ান্নই, ৪নং কাদির হানিফ, ৫নং বিনোদপুর, ৬নং নোয়াখালী, ১০নং অশ্বদিয়া ও ১১নং নেয়াজপুর।

গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইফতেখার হোসেন। তিনি আরও জানান, আজ বিকেল ৪টায় জেলা করোনা কমিটির সভা শেষে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনুষ্ঠানে লকডাউন ঘোষণা করেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খান। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন (৫ জুন) ভোর ৬টা থেকে (১১ জুন) রাত ১২টা পর্যন্ত লকডাউন থাকবে।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে ভার্চুয়ালে উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালী পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নের প্রবেশ পথে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস যাতে বিস্তার না করে সেই জন্য কাউকে প্রবেশ বা বের হতে নিষেধ করে মাইকিং করা হবে।

উল্লেখ্য, জেলার সদর উপজেলায় করোনা আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলা করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৪০ জন। বর্তমান পরিস্থিতিতে শনাক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউন করার কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।

রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনা রোগী ও করোনা উপসর্গের রোগী। হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৫ জন, রাজশাহীর ১৩ জন, নওগাঁর ৩ জন ও নাটোরের ১ জন রয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত ভর্তি আছেন ২২৫ জন রোগী।

হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, হাসপাতালে করোনা ইউনিটে মোট বিছানা ২৩২টি। এর মধ্যে গতকাল সকাল ১০টার মধ্যেই ২২৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। যে কোন সময় বাকি সিটগুলো ফুরিয়ে যাবে। ফলে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম, অবস্থা খারাপ, তাদেরই হাসপাতালে ভর্তি নেয়া হচ্ছে আর যাদের সামান্য উপসর্গ আছে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কমছেই না। এ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। করোনা উপসর্গে মারা গেছেন ছয়জন। এই মৃত্যু প্রায় দেড় বছরের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ।

হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে আর উপসর্গে মারা গেছেন ছয়জন। এই ১৬ জনের মধ্যে করোনার ‘হটস্পট’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯ জন, রাজশাহীর ৬ জন, নওগাঁর ১ জন রয়েছেন।

দিনাজপুর : দিনাজপুরের জনসাধারণ মানছে না সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরলেও কেউ কেউ তা নামিয়ে রাখছেন থুতনিতে আর শারীরিক দূরত্ব নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় দিন দিন বাড়ছে শনাক্তের হার।

শনাক্তের হার বাড়লেও কমেছে সুস্থতার হার। এজন্য জনগণের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন সিভিল সার্জন ও স্থানীয়রা আর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণের এ হার উদ্বেগজনক। দিনাজপুরে কোভিড-১৯ সংক্রমণসংক্রান্ত নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে আরও ২ জন। এদের মধ্যে ১ জন সদর উপজেলার, অপরজন চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩১ জনে আর গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৪০টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন আরও ৩২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫ হাজার ৯২৫ জনে।

শনাক্ত হওয়া ৩২ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ জন, বিরল উপজেলায় ১ জন, বিরামপুর উপজেলায় ১ জন, বোচাগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, চিরিরবন্দর উপজেলায় ২ জন ও পার্বতীপুর উপজেলায় ১ জন। গতকাল শনাক্তের হার দেখানো হয় ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮ জন। জেলায় করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৫০২ জন।

শনিবার, ০৫ জুন ২০২১ , ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৩ শাওয়াল ১৪৪২

সাতক্ষীরা, নোয়াখালী পৌরসভা ও ৬ ইউনিয়নে লকডাউন

রাজশাহী-দিনাজপুরে পরিস্থিতির অবনতি

সংবাদ ডেস্ক

image

করোনার ভারতীয় সংক্রমণে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে ক্রমেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে বাড়ছেই করোনা রোগী। একদিনে সেখানে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর হারে দেশে দিনাজপুরে সর্বোচ্চ। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আতঙ্কিত পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরা ও নোয়াখালী পৌরসভাসহ ৬ ইউনিয়নে আজ থেকে সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধিদের পাঠানোর খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে জেলাব্যাপী কঠোর লকডাউন। লকডাউন বাস্তবায়নে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রশাসন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ২ নারী। করোনা সন্দেহে মারা গেছেন আরও ২ জন। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, জেলায় করোনা সংক্রমণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ৪ জুন মধ্যরাত থেকে ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত জেলাব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

বিধিনিষেধ চলাকালে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য বহনকারী ট্রাক এবং জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। ওষুধের দোকান ব্যতীত সব ধরনের দোকানপাট, শপিংমল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সাপ্তাহিক হাট ও গরুর হাট।

কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় (মুদিখানা) পণ্যের দোকানপাট, খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে কেউ খেতে পারবেন না।

সাতক্ষীরায় আমের এখন ভরা মৌসুম। শত শত ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম আমের আড়তসহ হাট-বাজার ও আমবাগান। আমের বিষয়ে কিছু ছাড় দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, আমের আড়ত/বাজার পৃথক জায়গায় ছড়িয়ে আড়তদারদের মাধ্যমে বিক্রি করা যাবে। বাগান থেকে আম ট্রাকে করে প্রেরণ করা যাবে। এছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পরিবহন চালু থাকবে।

তিনি আরও বলেন, শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি, বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

মসজিদে নামাজ পড়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, জাতীয় ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমার নামাজসহ প্রতি ওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সমসংখ্যক ব্যক্তি উপাসনা করতে পারবেন।

ভোমরা স্থলবন্দরের সব দোকান বন্ধ থাকবে। তবে ভোমরা স্থলবন্দরের কার্যক্রম সকাল ৮টা হতে বেলা-২টা পর্যন্ত চালু থাকবে। এছাড়া শহর ও গ্রামে সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

নোয়াখালী : নোয়াখালীর সদর উপজেলায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নোয়াখালী পৌরসভাসহ ৬ ইউনিয়নে লকডাউন ঘোষণা।

এলাকাগুলো হলোÑ নোয়াখালীর সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও নোয়াখালী পৌরসভার সব ওয়ার্ড। ইউনিয়নগুলো হলোÑ ৩নং নোয়ান্নই, ৪নং কাদির হানিফ, ৫নং বিনোদপুর, ৬নং নোয়াখালী, ১০নং অশ্বদিয়া ও ১১নং নেয়াজপুর।

গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইফতেখার হোসেন। তিনি আরও জানান, আজ বিকেল ৪টায় জেলা করোনা কমিটির সভা শেষে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনুষ্ঠানে লকডাউন ঘোষণা করেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খান। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন (৫ জুন) ভোর ৬টা থেকে (১১ জুন) রাত ১২টা পর্যন্ত লকডাউন থাকবে।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে ভার্চুয়ালে উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালী পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নের প্রবেশ পথে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস যাতে বিস্তার না করে সেই জন্য কাউকে প্রবেশ বা বের হতে নিষেধ করে মাইকিং করা হবে।

উল্লেখ্য, জেলার সদর উপজেলায় করোনা আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলা করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৪০ জন। বর্তমান পরিস্থিতিতে শনাক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউন করার কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।

রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনা রোগী ও করোনা উপসর্গের রোগী। হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৫ জন, রাজশাহীর ১৩ জন, নওগাঁর ৩ জন ও নাটোরের ১ জন রয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত ভর্তি আছেন ২২৫ জন রোগী।

হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, হাসপাতালে করোনা ইউনিটে মোট বিছানা ২৩২টি। এর মধ্যে গতকাল সকাল ১০টার মধ্যেই ২২৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। যে কোন সময় বাকি সিটগুলো ফুরিয়ে যাবে। ফলে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম, অবস্থা খারাপ, তাদেরই হাসপাতালে ভর্তি নেয়া হচ্ছে আর যাদের সামান্য উপসর্গ আছে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কমছেই না। এ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। করোনা উপসর্গে মারা গেছেন ছয়জন। এই মৃত্যু প্রায় দেড় বছরের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ।

হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে আর উপসর্গে মারা গেছেন ছয়জন। এই ১৬ জনের মধ্যে করোনার ‘হটস্পট’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯ জন, রাজশাহীর ৬ জন, নওগাঁর ১ জন রয়েছেন।

দিনাজপুর : দিনাজপুরের জনসাধারণ মানছে না সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরলেও কেউ কেউ তা নামিয়ে রাখছেন থুতনিতে আর শারীরিক দূরত্ব নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় দিন দিন বাড়ছে শনাক্তের হার।

শনাক্তের হার বাড়লেও কমেছে সুস্থতার হার। এজন্য জনগণের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন সিভিল সার্জন ও স্থানীয়রা আর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণের এ হার উদ্বেগজনক। দিনাজপুরে কোভিড-১৯ সংক্রমণসংক্রান্ত নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে আরও ২ জন। এদের মধ্যে ১ জন সদর উপজেলার, অপরজন চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩১ জনে আর গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৪০টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন আরও ৩২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫ হাজার ৯২৫ জনে।

শনাক্ত হওয়া ৩২ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ জন, বিরল উপজেলায় ১ জন, বিরামপুর উপজেলায় ১ জন, বোচাগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, চিরিরবন্দর উপজেলায় ২ জন ও পার্বতীপুর উপজেলায় ১ জন। গতকাল শনাক্তের হার দেখানো হয় ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮ জন। জেলায় করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৫০২ জন।