ক্ষমতায় গেলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবে মায়ানমার ঐক্য সরকার

যত দিন গড়াচ্ছে মায়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হচ্ছে দেশটির জান্তাবিরোধীরা। সামরিক জান্তাকে উৎখাত করে ক্ষমতায় যেতে পারলে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সসম্মানে ফিরিয়ে নেয়া এবং তাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মায়ানমারের ঐক্য সরকার।

মায়ানমারে জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার তাদের সম্ভাব্য সংখ্যালঘুনীতি নিয়ে তিন পৃষ্ঠার এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে সামরিক জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রোহিঙ্গাদের সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে। পাশাপাশি, দেশটিতে বিদ্যমান ১৯৮২ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে মায়ানমারে জন্ম নেয়া বা বিশ্বের যে কোন স্থানে জন্ম নেয়া মায়ানমার নাগরিকদের সন্তানদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দানের অঙ্গীকার করেছে এনইউজি।

মায়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে সম্প্রতি দেশটির রাজনীতিবিদসহ বেসামরিক নাগরিকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে জাতীয় ঐক্য সরকার- এনইউজি। এর মধ্যে সু চির রাজনৈতিক দল এনএলডির সদস্যরাও রয়েছেন। তারা নিজেদের মায়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে দাবি করছে। একই সঙ্গে বিশ্বের দরবারে সমর্থন পাওয়ারও চেষ্টা করছে তারা। তবে একে সন্ত্রাসী দল অ্যাখা দিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার। এমনকি এই দলের সঙ্গে কেউ প্রকাশ্যে অথবা গোপনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। যদিও সামরিক সরকারের হুমকি উপেক্ষা করেই নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এনইউজি সরকার। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকাকালে সু চির গণতান্ত্রিক সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরাতে খুব একটা আন্তরিক ছিল না। কার্যত, তারা রোহিঙ্গা’শব্দটিই ব্যবহার করত না, এদের রাখাইনে বসবাসকারী মুসলিম বলে উল্লেখ করতেন সু চি সরকারের নেতারা। তবে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে চোখ খুলেছে ওই নেতাদের একাংশের।

এনইউজির বিবৃতিতে তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর গু-া সামরিক বাহিনীর সহিংসতা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গত কয়েক দশক ধরে রাখাইনে চলা সহিংসতায় লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হওয়ার বিষয়টি খুব ভালোভাবে বোঝে জাতীয় ঐক্য সরকার। আমরা এর জন্য গভীরভাব দুঃখিত।

আজ সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার শিকার মিয়ানমারের সকল মানুষ রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি সহানুভূতিশীল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইতিহাসজুড়ে রোহিঙ্গাসহ মায়ানমারের সব মানুষের ওপর সামরিক বাহিনী যেসব অপরাধ করেছে, আমরা তার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি চাইব। রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মায়ানমারে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ার প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয়ে রয়েছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ মায়ানমার সরকারকে চাপ দিলেও এ নিয়ে গড়িমসি করে আসছে দেশটি।

শনিবার, ০৫ জুন ২০২১ , ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৩ শাওয়াল ১৪৪২

ক্ষমতায় গেলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবে মায়ানমার ঐক্য সরকার

image

২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মায়ানমার ছাড়ছে রোহিঙ্গারা -এপি

যত দিন গড়াচ্ছে মায়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হচ্ছে দেশটির জান্তাবিরোধীরা। সামরিক জান্তাকে উৎখাত করে ক্ষমতায় যেতে পারলে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সসম্মানে ফিরিয়ে নেয়া এবং তাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মায়ানমারের ঐক্য সরকার।

মায়ানমারে জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার তাদের সম্ভাব্য সংখ্যালঘুনীতি নিয়ে তিন পৃষ্ঠার এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে সামরিক জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রোহিঙ্গাদের সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে। পাশাপাশি, দেশটিতে বিদ্যমান ১৯৮২ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে মায়ানমারে জন্ম নেয়া বা বিশ্বের যে কোন স্থানে জন্ম নেয়া মায়ানমার নাগরিকদের সন্তানদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দানের অঙ্গীকার করেছে এনইউজি।

মায়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে সম্প্রতি দেশটির রাজনীতিবিদসহ বেসামরিক নাগরিকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে জাতীয় ঐক্য সরকার- এনইউজি। এর মধ্যে সু চির রাজনৈতিক দল এনএলডির সদস্যরাও রয়েছেন। তারা নিজেদের মায়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে দাবি করছে। একই সঙ্গে বিশ্বের দরবারে সমর্থন পাওয়ারও চেষ্টা করছে তারা। তবে একে সন্ত্রাসী দল অ্যাখা দিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার। এমনকি এই দলের সঙ্গে কেউ প্রকাশ্যে অথবা গোপনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। যদিও সামরিক সরকারের হুমকি উপেক্ষা করেই নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এনইউজি সরকার। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকাকালে সু চির গণতান্ত্রিক সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরাতে খুব একটা আন্তরিক ছিল না। কার্যত, তারা রোহিঙ্গা’শব্দটিই ব্যবহার করত না, এদের রাখাইনে বসবাসকারী মুসলিম বলে উল্লেখ করতেন সু চি সরকারের নেতারা। তবে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে চোখ খুলেছে ওই নেতাদের একাংশের।

এনইউজির বিবৃতিতে তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর গু-া সামরিক বাহিনীর সহিংসতা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গত কয়েক দশক ধরে রাখাইনে চলা সহিংসতায় লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হওয়ার বিষয়টি খুব ভালোভাবে বোঝে জাতীয় ঐক্য সরকার। আমরা এর জন্য গভীরভাব দুঃখিত।

আজ সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার শিকার মিয়ানমারের সকল মানুষ রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি সহানুভূতিশীল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইতিহাসজুড়ে রোহিঙ্গাসহ মায়ানমারের সব মানুষের ওপর সামরিক বাহিনী যেসব অপরাধ করেছে, আমরা তার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি চাইব। রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মায়ানমারে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ার প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয়ে রয়েছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ মায়ানমার সরকারকে চাপ দিলেও এ নিয়ে গড়িমসি করে আসছে দেশটি।