বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কর প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর আরোপ করে যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা প্রত্যাহার করাসহ ছয় দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। ১০ জুনের মধ্যে করারোপ বাতিল না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির মুখপাত্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী শাহ রেজোয়ান।

তাদের দাবিগুলো হলো প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর বাতিল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় হিসাব ইউজিসিকে খতিয়ে দেখা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন টিউশন ফি নীতিমালা প্রণয়ন করা, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং করোনার সময়ে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নিশ্চিতে প্রণোদনা প্রদান করা।

সংবাদ সম্মেলনে রেজোয়ান বলেন, বিগত ২০১০ এবং ২০১৫ সালে দেখেছেন বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর সরকারের যে অযৌক্তিক কর চাপানোর চেষ্টা তার বিরুদ্ধে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ সরব ছিল এবং বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পণ্যে রূপান্তর করার যে অপচেষ্টা তা রুখে দিয়ে ২০১৫ সালে সরকারকে ভ্যাট প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিলাম। এবারও আগের মতোই আমরা বলতে চাই শুধু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, যেখানেই শিক্ষাকে পণ্যে রূপান্তর করার ন্যূনতম চেষ্টা চলবে সেখানেই ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হবে। যদি তাই হয় তবে কি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মালিক পক্ষ মুনাফা অর্জন করে? প্রশ্ন তুলেন রেজোয়ান।

তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী বলা চলে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মালিক পক্ষ যে মুনাফা অর্জন করছে তা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। গতকালের প্রস্তাবিত ১৫% করের মাধ্যমে সরকার ওই অবৈধ মুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দিচ্ছে এবং অবৈধ মুনাফাকে বৈধ করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ নামের সংগঠনটি। তিনি আরও বলেন, আমরা এই সংবাদ সম্মেলন থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যে কর আরোপের প্রস্তাবনা হয়েছে তা শিক্ষার্থীদের ওপর বর্তালে কোনভাবেই ছাত্র সমাজ মেনে না। এছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি শিক্ষা খাতে প্রস্তাবিত বাজেট বিগত বাজেটের মোট জিডিপির তুলনায় ০.০৩৬% কমেছে। এই বাজেট কোনভাবেই শিক্ষাবান্ধব বাজেট হতে পারে না। আমরা শিক্ষা খাতে মোট জিডিপির ৮ ভাগ দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শাওন বিশ্বাস, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শাহরিয়ার অপূর্ব, সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটির শাজাহান শান্ত, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির রাকিবুল হাসান শুভ এবং গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী প্রিতম ফকির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ওপর প্রস্তাবিত ১৫% কর বাতিলের দাবিতে ছাত্র সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। গতকাল বিকেল পৌনে পাঁচটায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করে সংগঠনটি। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, প্রস্তাবিত এ বাজেটকে ব্যবসায়ী আর পুঁজিবাদী সমাজ অভিনন্দন জানিয়েছে কিন্তু সাধারণ মানুষ এ বাজেট মেনে নেয়নি। কারণ তাদের জন্য বাজেটে কোন অংশ নেই। উল্টো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা এসেছে। এ বাজেটের মাধ্যমে ঋণ আর ঘাটতির বোঝা সাধারণ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার যে কথা ছিল তা না করে শিক্ষা খাতকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ১৫% করের প্রস্তাবনা দিয়েছে তা আমরা কখনোই মেনে নেব না। অতীতে ছাত্রসমাজ মেনে নেয়নি, এখনও তারা মেনে নিবে না। শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করার কোন পাঁয়তারা করা হলে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না বরং রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবি আদায় করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।

শনিবার, ০৫ জুন ২০২১ , ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৩ শাওয়াল ১৪৪২

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কর প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম

প্রতিনিধি, ঢাবি

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর আরোপ করে যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা প্রত্যাহার করাসহ ছয় দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। ১০ জুনের মধ্যে করারোপ বাতিল না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির মুখপাত্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী শাহ রেজোয়ান।

তাদের দাবিগুলো হলো প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর বাতিল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় হিসাব ইউজিসিকে খতিয়ে দেখা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন টিউশন ফি নীতিমালা প্রণয়ন করা, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং করোনার সময়ে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নিশ্চিতে প্রণোদনা প্রদান করা।

সংবাদ সম্মেলনে রেজোয়ান বলেন, বিগত ২০১০ এবং ২০১৫ সালে দেখেছেন বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর সরকারের যে অযৌক্তিক কর চাপানোর চেষ্টা তার বিরুদ্ধে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ সরব ছিল এবং বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পণ্যে রূপান্তর করার যে অপচেষ্টা তা রুখে দিয়ে ২০১৫ সালে সরকারকে ভ্যাট প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিলাম। এবারও আগের মতোই আমরা বলতে চাই শুধু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, যেখানেই শিক্ষাকে পণ্যে রূপান্তর করার ন্যূনতম চেষ্টা চলবে সেখানেই ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হবে। যদি তাই হয় তবে কি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মালিক পক্ষ মুনাফা অর্জন করে? প্রশ্ন তুলেন রেজোয়ান।

তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী বলা চলে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মালিক পক্ষ যে মুনাফা অর্জন করছে তা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। গতকালের প্রস্তাবিত ১৫% করের মাধ্যমে সরকার ওই অবৈধ মুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দিচ্ছে এবং অবৈধ মুনাফাকে বৈধ করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ নামের সংগঠনটি। তিনি আরও বলেন, আমরা এই সংবাদ সম্মেলন থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যে কর আরোপের প্রস্তাবনা হয়েছে তা শিক্ষার্থীদের ওপর বর্তালে কোনভাবেই ছাত্র সমাজ মেনে না। এছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি শিক্ষা খাতে প্রস্তাবিত বাজেট বিগত বাজেটের মোট জিডিপির তুলনায় ০.০৩৬% কমেছে। এই বাজেট কোনভাবেই শিক্ষাবান্ধব বাজেট হতে পারে না। আমরা শিক্ষা খাতে মোট জিডিপির ৮ ভাগ দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শাওন বিশ্বাস, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শাহরিয়ার অপূর্ব, সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটির শাজাহান শান্ত, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির রাকিবুল হাসান শুভ এবং গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী প্রিতম ফকির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ওপর প্রস্তাবিত ১৫% কর বাতিলের দাবিতে ছাত্র সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। গতকাল বিকেল পৌনে পাঁচটায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করে সংগঠনটি। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, প্রস্তাবিত এ বাজেটকে ব্যবসায়ী আর পুঁজিবাদী সমাজ অভিনন্দন জানিয়েছে কিন্তু সাধারণ মানুষ এ বাজেট মেনে নেয়নি। কারণ তাদের জন্য বাজেটে কোন অংশ নেই। উল্টো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা এসেছে। এ বাজেটের মাধ্যমে ঋণ আর ঘাটতির বোঝা সাধারণ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার যে কথা ছিল তা না করে শিক্ষা খাতকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ১৫% করের প্রস্তাবনা দিয়েছে তা আমরা কখনোই মেনে নেব না। অতীতে ছাত্রসমাজ মেনে নেয়নি, এখনও তারা মেনে নিবে না। শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করার কোন পাঁয়তারা করা হলে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না বরং রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবি আদায় করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।