এলএসডি সেবনে মানুষ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায়

এলএসডি সেবনে নিজের ওপর নিজের কোন নিয়ন্ত্রণই থাকে না। এ মাদক সেবনে স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চোখ বন্ধ করে নিজের কল্পনা শক্তির মাধ্যমে স্বপ্নভ্রষ্ট হয়ে যায়। ১৯৩৮ সালে সুইচ রসায়নবিদ আলবাট হোফম্যান সর্বপ্রথম এ মাদক আবিষ্কার করেন ওষুধ হিসেবে।

প্রায় ৮৩ বছর পর এ মাদক এখন আধুনিককালের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়াবহ ড্রাগে পরিণত হয়েছে। এ ড্রাগ জগতে ঢুকতে এক গ্রাম মাদকের এক মিলিয়ন ভাগের একভাগ যথেষ্ট। এটা খেলে রাস্তায় দৌড়ানো মহিষের মতো ছুটাছুটি করতে হয়। ওই সময়ের চিন্তা-ভাবনা ও স্মৃতি-বিস্তৃতি যেন কাল্পনিক সিনেমার পর্দা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চিফ কেমিক্যাল পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা সংবাদকে জানান, এলএসডি বা লাইসার্জিক অ্যাসিড ড্রাই ইথ্যালামাইড-এর দুটি মামলার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কাফরুল থানায় ২০১৯ সালে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলার নম্বর ২১। তারিখ-১৫-৭-২০১৯।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেছে। ওই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গিয়ে এলএসডি নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্তে নেমে এলএসডি মাদকের ভয়াবহ কাহিনী উদ্ঘাটন করেছে।

এ বিশেষজ্ঞের মতে, বিশ্বব্যাপী কোথাও ২০১৫ সালের আগে এলএসডি মাদক আটকের কোন তথ্য জানা নেই। আজেন্টিনায় ২০১৫ সালে একটি বড় চালান আটক করার উৎস ছিল ভারত। একই বছর নিউজিল্যান্ডে আরেকটি চালান আটক করা হয়। যার উৎস নেদারল্যান্ডস।

চিলি ও উরুগুয়েতে ৬৯ পেজ ব্ল্যাটিং পেপারযুক্ত এলএসডি আটক করা হয়। ২০১৯ সালে যার উৎস কানাডা। ২০১৮ সাল থেকে এ ড্রাগের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত ২৮০টির বেশি এলএসডি আটকের তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্বের মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপে এ মাদক সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। আটকের তালিকায় নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আটক হয়েছে।

আটকের তালিকায় অন্য দেশ হলো বেলজিয়াম, জার্মান, চেকোসেøাভাকিয়া, স্পেন, লাটভিয়া, নরওয়ে, রাশিয়া এবং বাংলাদেশে। এখন ডার্কনেটের মাধ্যমে এলএসডি মাদক কেনাবেচা হয়। আর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি হয়।

মাদক বিশেষজ্ঞদের মতে, এলএসডি খেলে স্বাভাবিক মেমোরি লস হয়। চোখ বন্ধ করে নিজের কল্পনা শক্তির মাধ্যমে স্বপ্নভ্রষ্ট হয়ে যায়। ১৯৩৮ সালে সুইচ কেমিস্ট আলবাট হোফম্যান এরগট এক ধরনের প্যারাসাইট ফাঙ্গাস নিয়ে ওষুধ হিসেবে এদের কার্যকারিতা কেমন তা জানার জন্য এদের বৈশিষ্ট ও স্থায়িত্ব নিয়ে কাজ করছিলেন। মূলত তিনি লো পেসার, মস্তিস্কের কার্যকারিতার উন্নতির জন্য লাইসার্জিক অ্যাসিড নিয়ে কাজ করছিলেন। তখন হঠাৎ করে নিজের অজান্তে এলএসডি নামক আধুনিককালের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়াবহ এ ড্রাগ লাইসার্জিক অ্যাসিড ড্রাইথালামাইড আবিষ্কার করেন।

প্রথমে এ নিয়ে কেউ পাত্তা না দিলেও পরে তিনি নিজেই ২৫ মাইক্রো গ্রাম নিজের জিভে স্পর্শ করলেন। এরপরই তিনি চলে গেলেন এক বিস্ময়কর জগতে। সেবনের পর বিচিত্র বর্ণচ্ছটার অবিরল স্রো খেলা করতে লাগলো তার সামনে। রাস্তায় দৌড়ানো মোহিষের মতো ছোটাছুটি করছে। আর চিন্তা-ভাবনা, স্মৃতি-বিমস্মৃতি যেন কাল্পনিক সিনোমার পর্দা।

পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তার গত এক বছর ধরেই এলএসডি সেবনের পাশাপাশি বিক্রির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন বেসরাকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই তাদের কাস্টমার। প্রচুর দাম হওয়ার কারণে এ মাদক সবাই সেবন করতে পারে না। তারা বিদেশ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস, অন্য মালামালের মধ্যে করে এলএসডি আনতো। অনলাইনে তারা এসব মাদক সরবরাহকারী বিদেশি ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। অনলাইনে অর্ডার দেয়ার পরই এগুলো আসত।

শনিবার, ০৫ জুন ২০২১ , ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৩ শাওয়াল ১৪৪২

এলএসডি সেবনে মানুষ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায়

বাকী বিল্লাহ

এলএসডি সেবনে নিজের ওপর নিজের কোন নিয়ন্ত্রণই থাকে না। এ মাদক সেবনে স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চোখ বন্ধ করে নিজের কল্পনা শক্তির মাধ্যমে স্বপ্নভ্রষ্ট হয়ে যায়। ১৯৩৮ সালে সুইচ রসায়নবিদ আলবাট হোফম্যান সর্বপ্রথম এ মাদক আবিষ্কার করেন ওষুধ হিসেবে।

প্রায় ৮৩ বছর পর এ মাদক এখন আধুনিককালের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়াবহ ড্রাগে পরিণত হয়েছে। এ ড্রাগ জগতে ঢুকতে এক গ্রাম মাদকের এক মিলিয়ন ভাগের একভাগ যথেষ্ট। এটা খেলে রাস্তায় দৌড়ানো মহিষের মতো ছুটাছুটি করতে হয়। ওই সময়ের চিন্তা-ভাবনা ও স্মৃতি-বিস্তৃতি যেন কাল্পনিক সিনেমার পর্দা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চিফ কেমিক্যাল পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা সংবাদকে জানান, এলএসডি বা লাইসার্জিক অ্যাসিড ড্রাই ইথ্যালামাইড-এর দুটি মামলার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কাফরুল থানায় ২০১৯ সালে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলার নম্বর ২১। তারিখ-১৫-৭-২০১৯।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেছে। ওই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গিয়ে এলএসডি নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্তে নেমে এলএসডি মাদকের ভয়াবহ কাহিনী উদ্ঘাটন করেছে।

এ বিশেষজ্ঞের মতে, বিশ্বব্যাপী কোথাও ২০১৫ সালের আগে এলএসডি মাদক আটকের কোন তথ্য জানা নেই। আজেন্টিনায় ২০১৫ সালে একটি বড় চালান আটক করার উৎস ছিল ভারত। একই বছর নিউজিল্যান্ডে আরেকটি চালান আটক করা হয়। যার উৎস নেদারল্যান্ডস।

চিলি ও উরুগুয়েতে ৬৯ পেজ ব্ল্যাটিং পেপারযুক্ত এলএসডি আটক করা হয়। ২০১৯ সালে যার উৎস কানাডা। ২০১৮ সাল থেকে এ ড্রাগের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত ২৮০টির বেশি এলএসডি আটকের তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্বের মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপে এ মাদক সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। আটকের তালিকায় নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আটক হয়েছে।

আটকের তালিকায় অন্য দেশ হলো বেলজিয়াম, জার্মান, চেকোসেøাভাকিয়া, স্পেন, লাটভিয়া, নরওয়ে, রাশিয়া এবং বাংলাদেশে। এখন ডার্কনেটের মাধ্যমে এলএসডি মাদক কেনাবেচা হয়। আর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি হয়।

মাদক বিশেষজ্ঞদের মতে, এলএসডি খেলে স্বাভাবিক মেমোরি লস হয়। চোখ বন্ধ করে নিজের কল্পনা শক্তির মাধ্যমে স্বপ্নভ্রষ্ট হয়ে যায়। ১৯৩৮ সালে সুইচ কেমিস্ট আলবাট হোফম্যান এরগট এক ধরনের প্যারাসাইট ফাঙ্গাস নিয়ে ওষুধ হিসেবে এদের কার্যকারিতা কেমন তা জানার জন্য এদের বৈশিষ্ট ও স্থায়িত্ব নিয়ে কাজ করছিলেন। মূলত তিনি লো পেসার, মস্তিস্কের কার্যকারিতার উন্নতির জন্য লাইসার্জিক অ্যাসিড নিয়ে কাজ করছিলেন। তখন হঠাৎ করে নিজের অজান্তে এলএসডি নামক আধুনিককালের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়াবহ এ ড্রাগ লাইসার্জিক অ্যাসিড ড্রাইথালামাইড আবিষ্কার করেন।

প্রথমে এ নিয়ে কেউ পাত্তা না দিলেও পরে তিনি নিজেই ২৫ মাইক্রো গ্রাম নিজের জিভে স্পর্শ করলেন। এরপরই তিনি চলে গেলেন এক বিস্ময়কর জগতে। সেবনের পর বিচিত্র বর্ণচ্ছটার অবিরল স্রো খেলা করতে লাগলো তার সামনে। রাস্তায় দৌড়ানো মোহিষের মতো ছোটাছুটি করছে। আর চিন্তা-ভাবনা, স্মৃতি-বিমস্মৃতি যেন কাল্পনিক সিনোমার পর্দা।

পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তার গত এক বছর ধরেই এলএসডি সেবনের পাশাপাশি বিক্রির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন বেসরাকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই তাদের কাস্টমার। প্রচুর দাম হওয়ার কারণে এ মাদক সবাই সেবন করতে পারে না। তারা বিদেশ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস, অন্য মালামালের মধ্যে করে এলএসডি আনতো। অনলাইনে তারা এসব মাদক সরবরাহকারী বিদেশি ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। অনলাইনে অর্ডার দেয়ার পরই এগুলো আসত।