অগ্নিকাণ্ডের শিকার ৯ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার পাচ্ছে নতুন ঘর

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা আশ্রিত ৯ হাজার রোহিঙ্গা পাচ্ছে নতুন ঘর। গত ২২ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালির রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৮ ও ৯ তে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ক্ষতিগ্রস্ত ৯ হাজার পরিবারকে নতুনভাবে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে রেড ক্রিসেন্ট। ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অফিস ও রেড ক্রিসেন্ট যৌথভাবে ৮০০ পরিবারের জন্য তাঁবু স্থাপনসহ ৭০০টি অস্থায়ী আশ্রয়ণ নির্মাণ করে। রেড ক্রিসেন্টের পপুলেশন মুভমেন্ট অপারেশনের আওতায় কাতার রেড ক্রিসেন্টের অর্থায়নে ৭৫টি ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসের অর্থায়নে ৯২৫টিসহ মোট ১ হাজার পরিবারের জন্য অপেক্ষাকৃত অধিক শক্তিশালী আশ্রয়ণ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঁশ, লোহা, কাঠ ও অন্য সামগ্রীর সমন্বয়ে, শেল্টার সেক্টর, সাইট ডেভেলপমেন্ট ও আরআরআরসি এর অনুমোদিত নকশায় নির্মিত এ আশ্রয়ণগুলো আগের আশ্রয়ণ অপেক্ষা অধিক টেকসই ও দুর্যোগ সহনশীল।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজারের হেড অফ অপারেশন এম এ হালিম বলেন, কক্সবাজারে নিয়োজিত মানবিক সংস্থা সমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খুব অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ প্রদানে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে ১ হাজার আশ্রয়ণ নির্মাণের কাজ চলছে। সামনের দুর্যোগ ও বর্ষার মৌসুমের কথা মাথায় রেখে এসব আশ্রয়ণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও ক্যাম্প জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা কিছুটা হলেও নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এই প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে বাস্তবে রূপ নেবে।

তিনি বলেন, আরআরআরসি ও সাইট ম্যানেজমেন্ট এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। অধিকতর দুর্যোগ প্রবণ এলাকা হিসেবে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বর্ষণ ও ভূমি ধ্বসের প্রবণতা রয়েছে। এর ফলে প্রতিবছর এই মৌসুমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আশা করছি এই দুর্যোগে সহনশীল আশ্রয়ণ এবং ক্ষতির পরিমাণ ও দুর্ভোগ হ্রাস করতে সহায়তা করবে।

এদিকে, গত ২২ মার্চ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী-৯, বালুখালী-৮ ইস্ট ও বালুখালী-৮ ওয়েস্ট ক্যাম্পের ১০ হাজার ১৬৫টি ঘর পুড়ে যায়। আগুনে নিহত হয় ১১ রোহিঙ্গা। ঘটনার পর অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামছুদ্দৌজা নয়ন বলেন, তদন্ত কমিটির দেয়া ১৩ দফা সুপারিশের ভিত্তিতে ধ্বংসস্তূপের ওপর গুচ্ছাকারে শরণার্থীদের ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে হস্তান্তর করা হচ্ছে। আসন্ন বর্ষার আগে নতুন ঘরে ঠাঁই হবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার রোহিঙ্গার।

ধ্বংসস্তূপের ওপর ৫০ বাই ৪০ ফুটের নতুন ঘরগুলো তৈরি হচ্ছে বাঁশের বেড়া, কাঠ ও লোহার খুঁটি দিয়ে। আগে ঝুপড়িতে ছাউনি ছিল ত্রিপলের, বেড়াও ত্রিপলের। নতুন ঘরে ছাউনি হিসেবে বাঁশের বেড়ার ভেতরে দেয়া হচ্ছে মোটা ত্রিপল। যেন ঝোড়ো হাওয়ায় উপড়ে না পড়ে। এক ঘর থেকে আরেক ঘরের দূরত্ব ১০ থেকে ১২ ফুট। তাই আগুন কিংবা পাহাড়ধ্বসের ঝুঁকি কমবে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা ছিল, প্রতিটি শেল্টারে ঘরগুলো গুচ্ছাকারে নির্মাণ এবং নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করা, এক শিবির থেকে অন্য শিবিরের নিরাপদ দূরত্ব রাখা, ঘর নির্মাণে অগ্নিনিরোধক উপকরণের ব্যবহার, রান্নার একক ব্যবস্থা না রেখে চার থেকে আটটি পরিবারের জন্য একটি কমিউনিটি কিচেন চালু, অগ্নিকাণ্ডের সময় জরুরি প্রস্থানের জন্য গমনপথ স্থাপন ইত্যাদি।

শনিবার, ০৫ জুন ২০২১ , ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৩ শাওয়াল ১৪৪২

অগ্নিকাণ্ডের শিকার ৯ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার পাচ্ছে নতুন ঘর

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা আশ্রিত ৯ হাজার রোহিঙ্গা পাচ্ছে নতুন ঘর। গত ২২ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালির রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৮ ও ৯ তে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ক্ষতিগ্রস্ত ৯ হাজার পরিবারকে নতুনভাবে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে রেড ক্রিসেন্ট। ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অফিস ও রেড ক্রিসেন্ট যৌথভাবে ৮০০ পরিবারের জন্য তাঁবু স্থাপনসহ ৭০০টি অস্থায়ী আশ্রয়ণ নির্মাণ করে। রেড ক্রিসেন্টের পপুলেশন মুভমেন্ট অপারেশনের আওতায় কাতার রেড ক্রিসেন্টের অর্থায়নে ৭৫টি ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসের অর্থায়নে ৯২৫টিসহ মোট ১ হাজার পরিবারের জন্য অপেক্ষাকৃত অধিক শক্তিশালী আশ্রয়ণ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঁশ, লোহা, কাঠ ও অন্য সামগ্রীর সমন্বয়ে, শেল্টার সেক্টর, সাইট ডেভেলপমেন্ট ও আরআরআরসি এর অনুমোদিত নকশায় নির্মিত এ আশ্রয়ণগুলো আগের আশ্রয়ণ অপেক্ষা অধিক টেকসই ও দুর্যোগ সহনশীল।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজারের হেড অফ অপারেশন এম এ হালিম বলেন, কক্সবাজারে নিয়োজিত মানবিক সংস্থা সমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খুব অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ প্রদানে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে ১ হাজার আশ্রয়ণ নির্মাণের কাজ চলছে। সামনের দুর্যোগ ও বর্ষার মৌসুমের কথা মাথায় রেখে এসব আশ্রয়ণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও ক্যাম্প জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা কিছুটা হলেও নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এই প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে বাস্তবে রূপ নেবে।

তিনি বলেন, আরআরআরসি ও সাইট ম্যানেজমেন্ট এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। অধিকতর দুর্যোগ প্রবণ এলাকা হিসেবে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বর্ষণ ও ভূমি ধ্বসের প্রবণতা রয়েছে। এর ফলে প্রতিবছর এই মৌসুমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আশা করছি এই দুর্যোগে সহনশীল আশ্রয়ণ এবং ক্ষতির পরিমাণ ও দুর্ভোগ হ্রাস করতে সহায়তা করবে।

এদিকে, গত ২২ মার্চ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী-৯, বালুখালী-৮ ইস্ট ও বালুখালী-৮ ওয়েস্ট ক্যাম্পের ১০ হাজার ১৬৫টি ঘর পুড়ে যায়। আগুনে নিহত হয় ১১ রোহিঙ্গা। ঘটনার পর অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামছুদ্দৌজা নয়ন বলেন, তদন্ত কমিটির দেয়া ১৩ দফা সুপারিশের ভিত্তিতে ধ্বংসস্তূপের ওপর গুচ্ছাকারে শরণার্থীদের ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে হস্তান্তর করা হচ্ছে। আসন্ন বর্ষার আগে নতুন ঘরে ঠাঁই হবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার রোহিঙ্গার।

ধ্বংসস্তূপের ওপর ৫০ বাই ৪০ ফুটের নতুন ঘরগুলো তৈরি হচ্ছে বাঁশের বেড়া, কাঠ ও লোহার খুঁটি দিয়ে। আগে ঝুপড়িতে ছাউনি ছিল ত্রিপলের, বেড়াও ত্রিপলের। নতুন ঘরে ছাউনি হিসেবে বাঁশের বেড়ার ভেতরে দেয়া হচ্ছে মোটা ত্রিপল। যেন ঝোড়ো হাওয়ায় উপড়ে না পড়ে। এক ঘর থেকে আরেক ঘরের দূরত্ব ১০ থেকে ১২ ফুট। তাই আগুন কিংবা পাহাড়ধ্বসের ঝুঁকি কমবে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা ছিল, প্রতিটি শেল্টারে ঘরগুলো গুচ্ছাকারে নির্মাণ এবং নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করা, এক শিবির থেকে অন্য শিবিরের নিরাপদ দূরত্ব রাখা, ঘর নির্মাণে অগ্নিনিরোধক উপকরণের ব্যবহার, রান্নার একক ব্যবস্থা না রেখে চার থেকে আটটি পরিবারের জন্য একটি কমিউনিটি কিচেন চালু, অগ্নিকাণ্ডের সময় জরুরি প্রস্থানের জন্য গমনপথ স্থাপন ইত্যাদি।