বর্তমানে চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির আমবাগানের চাষ শুরু করেছেন। আর সে গাছের তুলনায় ফজলি আম গাছের বাড়ন্ত বেশি। সেই সঙ্গে গাছগুলো অতিরিক্ত জমি দখল করে নেয়। দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জনকারী ও আমের রাজধানী রাজশাহীর ঐতিহ্য ফজলি আমের বাগান ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এছাড়া বিভিন্ন রোগাক্রান্তের পাশাপাশি ফজলি আমের ফলনও বিগত দিনের চেয়ে অনেক কম। ফলে আম চাষিরা পুরোনো ফজলি বাগানগুলো কেটে নতুন করে বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির আমের চারা রোপণ করছেন। মূলত এই কারণে এই অঞ্চলে কমে যাচ্ছে ফজলি আমের চাষ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সর্বমোট ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এরমধ্যে ফজলি আম বাগান রয়েছে ২ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে। যা গত ১০ বছর আগেও ফজলি আম বাগান ছিল ৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে। চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভূইয়া বলেন, জেলার সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া উপজেলায়। বর্তমানে স্থানীয় চাষিরা সঠিক পরিচর্যায় অল্প জমিতে বেশি উৎপাদনশীল ও বিভিন্ন উন্নত জাতের আম বাগান রোপণ করছেন। এতে করে চাষিরা লাভের পরিমাণটা অনেক বেশি পাচ্ছেন। আর পুরোনো বাগানগুলোতে আশানুরূপ আম উৎপাদন কমে যাওয়ায় অনেকেই সে গাছগুলো কেটে নতুন করে চারা রোপণ করছেন। চারঘাট-বালাদিয়াড় এলাকার আম চাষি হোসেন আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে ৮-১০টি ফজলি আম গাছ লাগানো যায়। আর বেশিরভাগ ফজলি গাছগুলোতে এক বছর বাদ দিয়ে আম আসে। এতে যে ফলন আসে তা খরচ বাদ দিলে বাগান মালিকদের তেমন লাভ হয় না। অথচ বর্তমানে ওই জমিতেই বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির আম বাগান করলে প্রতিবছর আম আসে দ্বিগুণ। অপর চাষি পুঠিয়া-বানেশ্বর এলাকার জামাল উদ্দীন বলেন, গত কয়েকবছর থেকে ফজলি গাছে বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। এতে করে গাছের ডালপালা মরে যাচ্ছে। অপরদিকে এর প্রভাব দেখা দিচ্ছে আমেও। দফায় দফায় বিভিন্ন প্রকার রোগ প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক ব্যবহার করেও ভালো সুফল আসে না। যার কারণে ফজলি গাছ গুলো কেটে সেখানে নতুন করে অন্য জাতের আমের গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেলার সর্ববৃহৎ আমের বাজার পুঠিয়া-বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, এই বাজারে ফজলি আমের আমদানি প্রতিবছর কমে যাচ্ছে। বিগত দিনে প্রায় মাসব্যাপী ফজলি আম ধুম কেনা-বেচা হতো। আর এখন কয়েকবছর থেকে দু’সপ্তাহর মধ্যে প্রায় সব আম শেষ হয়ে যায়। এরপর তেমন একটা নজরে পড়ে না। আর আড়তগুলোতে আসা অধিকাংশ ফজলি আম রোগাক্রান্তের শিকার। যার কারণে চাষিরাও লাভবান কম হচ্ছেন। রাজশাহী জেলা ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জিএমএম বারী বলেন, ফজলি আম রাজশাহীর একটি ঐতিহ্য ও ইতিহাস। যার সুনাম শুধু সারাদেশ নয়, বিদেশেও বিস্তীর্ণ হয়ে আছে। আমাদের অঞ্চলে বর্তমানে ফজলির পরিবর্তে চাষিরা খিরসাপাত, ল্যাংড়া, লকনা, আম্রপলি জাতের চারা বেশি রোপণ করছেন। আবার অনেকই বারী জাতের বাগানের দিকে ঝুঁকছেন।
রবিবার, ০৬ জুন ২০২১ , ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৪ শাওয়াল ১৪৪২
সুব্রত দাস, রাজশাহী
বর্তমানে চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির আমবাগানের চাষ শুরু করেছেন। আর সে গাছের তুলনায় ফজলি আম গাছের বাড়ন্ত বেশি। সেই সঙ্গে গাছগুলো অতিরিক্ত জমি দখল করে নেয়। দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জনকারী ও আমের রাজধানী রাজশাহীর ঐতিহ্য ফজলি আমের বাগান ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এছাড়া বিভিন্ন রোগাক্রান্তের পাশাপাশি ফজলি আমের ফলনও বিগত দিনের চেয়ে অনেক কম। ফলে আম চাষিরা পুরোনো ফজলি বাগানগুলো কেটে নতুন করে বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির আমের চারা রোপণ করছেন। মূলত এই কারণে এই অঞ্চলে কমে যাচ্ছে ফজলি আমের চাষ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সর্বমোট ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এরমধ্যে ফজলি আম বাগান রয়েছে ২ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে। যা গত ১০ বছর আগেও ফজলি আম বাগান ছিল ৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে। চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভূইয়া বলেন, জেলার সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া উপজেলায়। বর্তমানে স্থানীয় চাষিরা সঠিক পরিচর্যায় অল্প জমিতে বেশি উৎপাদনশীল ও বিভিন্ন উন্নত জাতের আম বাগান রোপণ করছেন। এতে করে চাষিরা লাভের পরিমাণটা অনেক বেশি পাচ্ছেন। আর পুরোনো বাগানগুলোতে আশানুরূপ আম উৎপাদন কমে যাওয়ায় অনেকেই সে গাছগুলো কেটে নতুন করে চারা রোপণ করছেন। চারঘাট-বালাদিয়াড় এলাকার আম চাষি হোসেন আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে ৮-১০টি ফজলি আম গাছ লাগানো যায়। আর বেশিরভাগ ফজলি গাছগুলোতে এক বছর বাদ দিয়ে আম আসে। এতে যে ফলন আসে তা খরচ বাদ দিলে বাগান মালিকদের তেমন লাভ হয় না। অথচ বর্তমানে ওই জমিতেই বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির আম বাগান করলে প্রতিবছর আম আসে দ্বিগুণ। অপর চাষি পুঠিয়া-বানেশ্বর এলাকার জামাল উদ্দীন বলেন, গত কয়েকবছর থেকে ফজলি গাছে বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। এতে করে গাছের ডালপালা মরে যাচ্ছে। অপরদিকে এর প্রভাব দেখা দিচ্ছে আমেও। দফায় দফায় বিভিন্ন প্রকার রোগ প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক ব্যবহার করেও ভালো সুফল আসে না। যার কারণে ফজলি গাছ গুলো কেটে সেখানে নতুন করে অন্য জাতের আমের গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেলার সর্ববৃহৎ আমের বাজার পুঠিয়া-বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, এই বাজারে ফজলি আমের আমদানি প্রতিবছর কমে যাচ্ছে। বিগত দিনে প্রায় মাসব্যাপী ফজলি আম ধুম কেনা-বেচা হতো। আর এখন কয়েকবছর থেকে দু’সপ্তাহর মধ্যে প্রায় সব আম শেষ হয়ে যায়। এরপর তেমন একটা নজরে পড়ে না। আর আড়তগুলোতে আসা অধিকাংশ ফজলি আম রোগাক্রান্তের শিকার। যার কারণে চাষিরাও লাভবান কম হচ্ছেন। রাজশাহী জেলা ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জিএমএম বারী বলেন, ফজলি আম রাজশাহীর একটি ঐতিহ্য ও ইতিহাস। যার সুনাম শুধু সারাদেশ নয়, বিদেশেও বিস্তীর্ণ হয়ে আছে। আমাদের অঞ্চলে বর্তমানে ফজলির পরিবর্তে চাষিরা খিরসাপাত, ল্যাংড়া, লকনা, আম্রপলি জাতের চারা বেশি রোপণ করছেন। আবার অনেকই বারী জাতের বাগানের দিকে ঝুঁকছেন।