পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

উখিয়া ও টেকনাফে ধসে নিহত ২

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গারা আবারও পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ক্যাম্পে ফের পাহাড় ধসের শঙ্কায় রোহিঙ্গারা। নির্ঘুম রাত কাটছে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লাখো রোহিঙ্গার। এসব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বেশির ভাগই এখন ভয় ও শঙ্কার মধ্যে জীবনযাপন করছে। অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফাটল দেখা দিয়েছে। গেল বছরগুলোতে অর্ধশত ছোট-বড় পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল। তবে এসব তথ্য সংশ্লিষ্টদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে উখিয়ার কুতুপালংয়ের মধুরছড়া, বালুখালী, ময়নার ঘোনা, জামতলী, থাইংখালী ও টেকনাফের উংচিপ্রাংয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এসব ক্যাম্প যেসব পাহাড়ে গড়ে উঠেছে সেখানে ফাটল দেখা দিয়েছে। মধুরছড়া ১৭নং ক্যাম্পের দিল মোহাম্মদ, শফিকুর রহমান জানান, অল্প বৃষ্টিতে এখানকার রোহিঙ্গারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। বৃষ্টি চলতে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্ষায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গতকাল কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে। সকালে উখিয়ার বালুখালী ময়নার ঘোনা ও দুপুরে টেকনাফের চাকমারকুল ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেনÑ উখিয়ার বালুখালী ময়নার ঘোনা (ক্যাম্প-১২) ক্যাম্পের (জে-এ-৭ ব্লকের) রহিম উল্লাহ (৩৫) ও টেকনাফের চাকমারকুল (ক্যাম্প ২১) ক্যাম্পের এ-২ ব্লকের শাকের উল্লাহর স্ত্রী নুর হাসিনা (২০)।

ময়নার ঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. শিহাব কায়সার সংবাদকে জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পের এইচ ব্লকে মাটি কাটার সময় পাহাড় ধসে রহিম উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে আমর্ড পুলিশ সদস্যরা তার মরদেহ উদ্ধার করে ক্যাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে।

অন্যদিকে, দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্প নং-২১ (চাকমারকুল), ক্যাম্পের এ-২ ব্লকের শাকের উল্লাহর স্ত্রী নুর হাসিনার বসতঘরসংলগ্ন পাহাড় প্রচণ্ড বৃষ্টিতে হঠাৎ ধসে পড়ে। এ সময় নুর হাসিনা মাটিতে চাপা পড়ে। খবর পেয়ে ক্যাম্প অভ্যন্তরে টহলরত এপিবিএন অফিসার ও ফোর্স এবং আশপাশের লোকজন তাৎক্ষণিক উদ্ধার কাজ শুরু করে এবং তাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পের সেভ দ্য চিলড্রেন হাসপাতাল’ এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা দু’জন রোহিঙ্গা নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাহাড় ধসের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারপরও কীভাবে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো গড়ে ওঠার সময় পাহাড়ের উপর অত্যাচার সবচেয়ে বেশি হয়েছে। পাহাড়ের বনভূমি নির্বিচারে উজাড় করে নেয়ায় উঁচু পাহাড়গুলো এখন কেবল মাটি দেখা যায়। পাহাড় ও গাছ কেটে বসতি গড়ে ওঠায় এখন অনেকটাই আলগা হয়ে পড়েছে পাহাড়গুলো। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২৪-এর বাসিন্দা মার্জিনা জানান, এখানে ঘরগুলো নড়বড়ে, ঝড়বৃষ্টি হলেই ভেঙে পড়ে। বড় ধরনের ঝড় আঘাত হানলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। ১৭ নম্বর ক্যাম্পের জাহিদ হোসেন বলেন, ভারী বৃষ্টিতে টিনের চালার পানি গড়িয়ে মাটিতে পড়লে গর্ত হয়। পানির তোড়ে ঢাল বেয়ে নেমে যায় মাটি। পাহাড় আলগা হয়ে যায়। যে কোন সময় ধসের শঙ্কা নিয়ে এখানে বাস করছেন অন্তত ১৭ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টের পরে আসা প্রায় ৮ লাখসহ নতুন পুরনো মিলে কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফ বসবাস করছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা এসব এলাকার প্রায় ৬ হাজার একর বনভূমিজুড়ে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছে। এত বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসস্থল বানাতে গিয়ে উঁচু-নিচু পাহাড়, ছড়া, নালা-খাল কিছুই বাদ যায়নি। যে কারণে বিভিন্নস্থানে পানিতে চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও বন্যার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলায় ভারী বর্ষণ হলেই পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দেয় ক্যাম্পগুলোতে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আব্দুর রহিম জানান, অল্প বৃষ্টিতেই আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। এবারের বর্ষাকালে বাড়ি-ঘর নিয়ে খুব কষ্টে থাকতে হবে আমাদের। গাছ-বাঁশ সব পোকায় খেয়ে ফেলেছে। ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ব। বাতাসে ঘর ফেলে দেবে। খুব আতঙ্কে আছি।

একই এলাকার রশিদ আহম্মদ বলেন, বর্ষাকালে সমস্যায় পড়ব তা এখন থেকে বোঝা যাচ্ছে। ছাউনি দুর্বল, ঘর জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। টয়লেট নিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি। ৫ জুন সকালে সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় নিচু এলাকার অনেক ঘর পানিতে ডুবে গেছে। পাহাড় ধসে ২ জন মারা গেছে।

রোহিঙ্গা নেতা আবদুল্লাহ জানান, উঁচু পাহাড়ে যারা আছে তাদের পাহাড় ধসের আতঙ্ক আর আমরা যারা নিচে আছি, তাদের বন্যার ভয়। ঘরগুলো নিচে হওয়াতে খুব কষ্টে আছি। এখন আর ঘরে থাকতে ইচ্ছে করে না। তিনি আরও জানান, প্রচণ্ড বাতাস হলে আতঙ্কে থাকি। ত্রিপলের বেড়া, ত্রিপলের ছাউনি কখন বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায় বলা যায় না। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ আবদুর রহিম বলেন, ৫ জুন ভোরে হঠাৎ বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকায় বেশকিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট কাদাময় হওয়াতে চলাচলে বিশেষ করে প্রাকৃতিক কাজ সারতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা সংবাদকে জানান, অনেক বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকেছে বলে সিআইসিরা জানিয়েছেন। এত বিশাল এলাকাজুড়ে ক্যাম্পে ছোটখাটো কিছু সমস্যা তো তৈরি হবেই। এখানে আমাদের কারও হাত নেই। পাহাড় ধসসহ বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত পাহাড় ধসে কতজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন তা জানতে চাইলে তিনি জানান, এ হিসাব আমাদের কাছে নেই। তবে সিআইসিদের রিপোর্ট করতে বলেছি। এ বিষয়ে আপনাদের পরে জানানো হবে।

রবিবার, ০৬ জুন ২০২১ , ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৪ শাওয়াল ১৪৪২

পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

উখিয়া ও টেকনাফে ধসে নিহত ২

প্রতিনিধি, কক্সবাজার

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গারা আবারও পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ক্যাম্পে ফের পাহাড় ধসের শঙ্কায় রোহিঙ্গারা। নির্ঘুম রাত কাটছে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লাখো রোহিঙ্গার। এসব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বেশির ভাগই এখন ভয় ও শঙ্কার মধ্যে জীবনযাপন করছে। অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফাটল দেখা দিয়েছে। গেল বছরগুলোতে অর্ধশত ছোট-বড় পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল। তবে এসব তথ্য সংশ্লিষ্টদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে উখিয়ার কুতুপালংয়ের মধুরছড়া, বালুখালী, ময়নার ঘোনা, জামতলী, থাইংখালী ও টেকনাফের উংচিপ্রাংয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এসব ক্যাম্প যেসব পাহাড়ে গড়ে উঠেছে সেখানে ফাটল দেখা দিয়েছে। মধুরছড়া ১৭নং ক্যাম্পের দিল মোহাম্মদ, শফিকুর রহমান জানান, অল্প বৃষ্টিতে এখানকার রোহিঙ্গারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। বৃষ্টি চলতে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্ষায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গতকাল কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে। সকালে উখিয়ার বালুখালী ময়নার ঘোনা ও দুপুরে টেকনাফের চাকমারকুল ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেনÑ উখিয়ার বালুখালী ময়নার ঘোনা (ক্যাম্প-১২) ক্যাম্পের (জে-এ-৭ ব্লকের) রহিম উল্লাহ (৩৫) ও টেকনাফের চাকমারকুল (ক্যাম্প ২১) ক্যাম্পের এ-২ ব্লকের শাকের উল্লাহর স্ত্রী নুর হাসিনা (২০)।

ময়নার ঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. শিহাব কায়সার সংবাদকে জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পের এইচ ব্লকে মাটি কাটার সময় পাহাড় ধসে রহিম উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে আমর্ড পুলিশ সদস্যরা তার মরদেহ উদ্ধার করে ক্যাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে।

অন্যদিকে, দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্প নং-২১ (চাকমারকুল), ক্যাম্পের এ-২ ব্লকের শাকের উল্লাহর স্ত্রী নুর হাসিনার বসতঘরসংলগ্ন পাহাড় প্রচণ্ড বৃষ্টিতে হঠাৎ ধসে পড়ে। এ সময় নুর হাসিনা মাটিতে চাপা পড়ে। খবর পেয়ে ক্যাম্প অভ্যন্তরে টহলরত এপিবিএন অফিসার ও ফোর্স এবং আশপাশের লোকজন তাৎক্ষণিক উদ্ধার কাজ শুরু করে এবং তাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পের সেভ দ্য চিলড্রেন হাসপাতাল’ এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা দু’জন রোহিঙ্গা নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাহাড় ধসের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারপরও কীভাবে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো গড়ে ওঠার সময় পাহাড়ের উপর অত্যাচার সবচেয়ে বেশি হয়েছে। পাহাড়ের বনভূমি নির্বিচারে উজাড় করে নেয়ায় উঁচু পাহাড়গুলো এখন কেবল মাটি দেখা যায়। পাহাড় ও গাছ কেটে বসতি গড়ে ওঠায় এখন অনেকটাই আলগা হয়ে পড়েছে পাহাড়গুলো। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২৪-এর বাসিন্দা মার্জিনা জানান, এখানে ঘরগুলো নড়বড়ে, ঝড়বৃষ্টি হলেই ভেঙে পড়ে। বড় ধরনের ঝড় আঘাত হানলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। ১৭ নম্বর ক্যাম্পের জাহিদ হোসেন বলেন, ভারী বৃষ্টিতে টিনের চালার পানি গড়িয়ে মাটিতে পড়লে গর্ত হয়। পানির তোড়ে ঢাল বেয়ে নেমে যায় মাটি। পাহাড় আলগা হয়ে যায়। যে কোন সময় ধসের শঙ্কা নিয়ে এখানে বাস করছেন অন্তত ১৭ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টের পরে আসা প্রায় ৮ লাখসহ নতুন পুরনো মিলে কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফ বসবাস করছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা এসব এলাকার প্রায় ৬ হাজার একর বনভূমিজুড়ে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছে। এত বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসস্থল বানাতে গিয়ে উঁচু-নিচু পাহাড়, ছড়া, নালা-খাল কিছুই বাদ যায়নি। যে কারণে বিভিন্নস্থানে পানিতে চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও বন্যার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলায় ভারী বর্ষণ হলেই পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দেয় ক্যাম্পগুলোতে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আব্দুর রহিম জানান, অল্প বৃষ্টিতেই আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। এবারের বর্ষাকালে বাড়ি-ঘর নিয়ে খুব কষ্টে থাকতে হবে আমাদের। গাছ-বাঁশ সব পোকায় খেয়ে ফেলেছে। ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ব। বাতাসে ঘর ফেলে দেবে। খুব আতঙ্কে আছি।

একই এলাকার রশিদ আহম্মদ বলেন, বর্ষাকালে সমস্যায় পড়ব তা এখন থেকে বোঝা যাচ্ছে। ছাউনি দুর্বল, ঘর জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। টয়লেট নিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি। ৫ জুন সকালে সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় নিচু এলাকার অনেক ঘর পানিতে ডুবে গেছে। পাহাড় ধসে ২ জন মারা গেছে।

রোহিঙ্গা নেতা আবদুল্লাহ জানান, উঁচু পাহাড়ে যারা আছে তাদের পাহাড় ধসের আতঙ্ক আর আমরা যারা নিচে আছি, তাদের বন্যার ভয়। ঘরগুলো নিচে হওয়াতে খুব কষ্টে আছি। এখন আর ঘরে থাকতে ইচ্ছে করে না। তিনি আরও জানান, প্রচণ্ড বাতাস হলে আতঙ্কে থাকি। ত্রিপলের বেড়া, ত্রিপলের ছাউনি কখন বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায় বলা যায় না। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ আবদুর রহিম বলেন, ৫ জুন ভোরে হঠাৎ বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকায় বেশকিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট কাদাময় হওয়াতে চলাচলে বিশেষ করে প্রাকৃতিক কাজ সারতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা সংবাদকে জানান, অনেক বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকেছে বলে সিআইসিরা জানিয়েছেন। এত বিশাল এলাকাজুড়ে ক্যাম্পে ছোটখাটো কিছু সমস্যা তো তৈরি হবেই। এখানে আমাদের কারও হাত নেই। পাহাড় ধসসহ বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত পাহাড় ধসে কতজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন তা জানতে চাইলে তিনি জানান, এ হিসাব আমাদের কাছে নেই। তবে সিআইসিদের রিপোর্ট করতে বলেছি। এ বিষয়ে আপনাদের পরে জানানো হবে।