অপরিকল্পিত নগরায়ণে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা

টানা দুই দফায় ১১১ মিলিমিটারের বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাজধীর বিভিন্ন সড়ক। এছাড়া অনেক এলাকায় বাসা-বাড়ির নিচতলায় ও দোকানপাটের ভেতরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকার জলাধার ও সবুজ স্থান ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য ঢাকার পুকুর ও জলাধারগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে সবুজ স্থান তৈরি পরামর্শ নগর পরিকল্পনাবিদের।

গতকাল ঢাকায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এর মধ্যে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৫৫ মিলিমিটার এবং দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৯-১১ জুন সারাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়বিদরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক সংবাদকে বলেন, গতকাল দেশের মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে ফেনীতে। দেশে এখনও মৌসুমি বায়ু বয়ে যাওয়া শুরু হয়নি। হয়তো আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। ওই সময়ে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ৯-১১ জুন সারাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

গতকালের বৃষ্টিতে যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, ধানমন্ডি, রামপুরা, বাড্ডা, উত্তরা, মগবাজার, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন সড়কে প্রচ- যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। এ বিষয়ে সোহেল রানা নামের ঢাকার মীরহাজারিবাগের এক বাসিন্দা সংবাদকে বলেন, ‘শনিবার বৃষ্টিতে এলাকায় সব সড়ক ডুবে গেছে। অনেক এলাকায় বাসা-বাড়িতে পানিতে পানি ঢুকে গেছে। দুপুরের দিকে এক দফা বৃষ্টি হয়। আবার সন্ধ্যার দিকে আরেক দফা বৃষ্টি হয়। এতে অলি-গলি সব পানি জমে গেছে। এই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে সহজে পানি মানে না। সড়কে দুই-তিন দিন পানি জমে থাকে।’ পচা পানি মাড়িয়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে যেতে হয়। এতে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয় বলে জানান তিনি।

নগর পরিকল্পনাবিদের পরামর্শ

অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকার জলাধার ও সবুজ স্থান ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য ঢাকার পুকুর ও জলাধারগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে সবুজ স্থান তৈরির পরামর্শ নগর পরিকল্পনাবিদের।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ সংবাদকে বলেন, ঢাকা শহরের ধারণক্ষমতার বেশি নগরায়ণ করা হয়েছে। এজন্য ধ্বংস করা হয়েছে বিভিন্ন পুকুর ও জলাধার। এছাড়া খাল ও নদীগুলো দূষণ-দখলের শিকার। তাই অল্প বৃষ্টিতেও রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণত বৃষ্টি শুরুতেই পানি জলাধার ও সবুজ স্থানে নেমে যায়। কিন্তু ঢাকা জলাধার ও সবুজ স্থান না থাকার কারণে সড়কে পানি জমা হয়ে থাকে। এছাড়া ড্রেনগুলো পরিষ্কার না থাকার পানিগুলো দ্রুত নামতে পারে না। এজন্য ঢাকার পুকুর ও জলাধারগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে সবুজ স্থান তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।

জলাবদ্ধতা নিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বক্তব্য

ওয়াসা থেকে পাওয়া খালগুলো পরিষ্কার হয়ে গেলে আগামীতে আরও দ্রুত পানি সরে যাবে জানান ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ প্রদানের লক্ষ্যে ওয়াসা থেকে হস্তান্তরিত খাল ও স্টর্ম স্যুয়ারেজ লাইন পরিষ্কার করা হচ্ছে। করোনা মহামারীকালে স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পাশাপাশি খাল ও জলাশয় পরিষ্কার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘বিগত সময়ের জলজটের পরিমাণ ও স্থান সংখ্যার তুলনায় তা অনেকাংশেই কম। বিগত পাঁচ মাসে আমাদের গৃহীত কার্যক্রমে বৃষ্টির পানি দ্রুততার সঙ্গে নেমে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেটগুলো দ্রুত আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হোক। তা এখনও হয়নি। এছাড়া ডিএনডি বাঁধ, হাতিরঝিল প্রকল্প, মেট্রোরেলের কার্যক্রমের ফলে জলাবদ্ধতার সম্পূর্ণ সমাধান এখন পর্যন্ত দেয়া সম্ভব না হলেও অতীতের মতো ঢাকাবাসীকে কোথাও কোমর পানি বা গলা পানিতে নাজেহাল হতে হয়নি বলে জানান তিনি।

রবিবার, ০৬ জুন ২০২১ , ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৪ শাওয়াল ১৪৪২

অপরিকল্পিত নগরায়ণে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

টানা দুই দফায় ১১১ মিলিমিটারের বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাজধীর বিভিন্ন সড়ক। এছাড়া অনেক এলাকায় বাসা-বাড়ির নিচতলায় ও দোকানপাটের ভেতরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকার জলাধার ও সবুজ স্থান ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য ঢাকার পুকুর ও জলাধারগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে সবুজ স্থান তৈরি পরামর্শ নগর পরিকল্পনাবিদের।

গতকাল ঢাকায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এর মধ্যে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৫৫ মিলিমিটার এবং দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৯-১১ জুন সারাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়বিদরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক সংবাদকে বলেন, গতকাল দেশের মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে ফেনীতে। দেশে এখনও মৌসুমি বায়ু বয়ে যাওয়া শুরু হয়নি। হয়তো আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। ওই সময়ে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ৯-১১ জুন সারাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

গতকালের বৃষ্টিতে যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, ধানমন্ডি, রামপুরা, বাড্ডা, উত্তরা, মগবাজার, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন সড়কে প্রচ- যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। এ বিষয়ে সোহেল রানা নামের ঢাকার মীরহাজারিবাগের এক বাসিন্দা সংবাদকে বলেন, ‘শনিবার বৃষ্টিতে এলাকায় সব সড়ক ডুবে গেছে। অনেক এলাকায় বাসা-বাড়িতে পানিতে পানি ঢুকে গেছে। দুপুরের দিকে এক দফা বৃষ্টি হয়। আবার সন্ধ্যার দিকে আরেক দফা বৃষ্টি হয়। এতে অলি-গলি সব পানি জমে গেছে। এই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে সহজে পানি মানে না। সড়কে দুই-তিন দিন পানি জমে থাকে।’ পচা পানি মাড়িয়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে যেতে হয়। এতে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয় বলে জানান তিনি।

নগর পরিকল্পনাবিদের পরামর্শ

অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকার জলাধার ও সবুজ স্থান ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য ঢাকার পুকুর ও জলাধারগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে সবুজ স্থান তৈরির পরামর্শ নগর পরিকল্পনাবিদের।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ সংবাদকে বলেন, ঢাকা শহরের ধারণক্ষমতার বেশি নগরায়ণ করা হয়েছে। এজন্য ধ্বংস করা হয়েছে বিভিন্ন পুকুর ও জলাধার। এছাড়া খাল ও নদীগুলো দূষণ-দখলের শিকার। তাই অল্প বৃষ্টিতেও রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণত বৃষ্টি শুরুতেই পানি জলাধার ও সবুজ স্থানে নেমে যায়। কিন্তু ঢাকা জলাধার ও সবুজ স্থান না থাকার কারণে সড়কে পানি জমা হয়ে থাকে। এছাড়া ড্রেনগুলো পরিষ্কার না থাকার পানিগুলো দ্রুত নামতে পারে না। এজন্য ঢাকার পুকুর ও জলাধারগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে সবুজ স্থান তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।

জলাবদ্ধতা নিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বক্তব্য

ওয়াসা থেকে পাওয়া খালগুলো পরিষ্কার হয়ে গেলে আগামীতে আরও দ্রুত পানি সরে যাবে জানান ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ প্রদানের লক্ষ্যে ওয়াসা থেকে হস্তান্তরিত খাল ও স্টর্ম স্যুয়ারেজ লাইন পরিষ্কার করা হচ্ছে। করোনা মহামারীকালে স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পাশাপাশি খাল ও জলাশয় পরিষ্কার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘বিগত সময়ের জলজটের পরিমাণ ও স্থান সংখ্যার তুলনায় তা অনেকাংশেই কম। বিগত পাঁচ মাসে আমাদের গৃহীত কার্যক্রমে বৃষ্টির পানি দ্রুততার সঙ্গে নেমে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেটগুলো দ্রুত আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হোক। তা এখনও হয়নি। এছাড়া ডিএনডি বাঁধ, হাতিরঝিল প্রকল্প, মেট্রোরেলের কার্যক্রমের ফলে জলাবদ্ধতার সম্পূর্ণ সমাধান এখন পর্যন্ত দেয়া সম্ভব না হলেও অতীতের মতো ঢাকাবাসীকে কোথাও কোমর পানি বা গলা পানিতে নাজেহাল হতে হয়নি বলে জানান তিনি।