কালো টাকা সাদা করার সুযোগ, অর্থমন্ত্রীর ইঙ্গিতে ক্ষোভ টিআইবির

অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ‘এক মাস দেখে সিদ্ধান্ত’ এ ঘোষণায় ক্ষোভ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক এই সুযোগ বাতিলের আহ্বান জানায়।

এর আগে বাজেটে কালো টাকা সাদা করা নিয়ে কোন ঘোষণা না থাকাকে টিআইবি সরকারের বোধোদয় হয়েছে বলে মনে করেছিল এবং সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছিল উল্লেখ করে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, বাজেট অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দিকনির্দেশনায় তৈরি একটি সমন্বিত চিন্তার আর্থিক দলিল। কিন্তু সেটি সংসদে উপস্থাপনের পরদিনই তারই একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সংশয় এবং বাস্তবে ইউ-টার্ন সত্যিই অবাক করার মতো।

তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ‘যতদিন অপ্রদর্শিত আয়, ততদিন ঘোষণার সুযোগ’ মর্মে দেয়া বক্তব্য তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সমর্থিত ছিল না বলে অর্থমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা সংবাদ সম্মেলনে হাজির করেছেন সেটি তার মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে সত্যিই আশাপ্রদ নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম দশমাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বৈধ করার ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর একটি প্রচেষ্টা শুরু থেকেই ছিল, শঙ্কা হচ্ছে তিনি অন্যায় এই সুবিধার পক্ষে সেই ঢালটি এখন ব্যবহার করতে চাইছেন যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না অথচ এর মাধ্যমে সত্যিকারভাবে সরকার কতটা রাজস্ব ক্ষতির শিকার হলো সেটি কোনভাবেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। যেটিকে সৎ ও বৈধপন্থায় উপার্জনকারী করদাতাদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় খেলাপির সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পাঁয়তারা বলে মনে করা মোটেই বাহুল্য হবে না বলে জানিয়েছেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক।

তিনি আরও বলেন, কোন কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন ছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধই করছে না বরং দুর্নীতিবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। ড. জামান বলেন, আয়কর অধ্যাদেশের আইনি মারপ্যাঁচে থাকা অপ্রদর্শিত আয়ের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার অন্যান্য সুযোগও বাতিল করার এখনই সময়। অপ্রদর্শিত অর্থ আর কালো টাকার মধ্যে পার্থক্য যে অতি ক্ষীণ তা কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। কোন না কোন কৌশলে দুর্নীতিবাজদের তোষণের নীতি থেকে বেরিয়ে এসে সরকার দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে সাংবিধানিক অঙ্গীকার রক্ষায় এগিয়ে আসবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, সবধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং স্বার্থান্বেষী অনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ না দিতে সরকারের প্রতি আবারও উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় যত দ্রুত হবে, দেশের অর্থনীতির কাক্সিক্ষত সুশাসনও তত ত্বরান্বিত হবে।

রবিবার, ০৬ জুন ২০২১ , ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৪ শাওয়াল ১৪৪২

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ, অর্থমন্ত্রীর ইঙ্গিতে ক্ষোভ টিআইবির

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ‘এক মাস দেখে সিদ্ধান্ত’ এ ঘোষণায় ক্ষোভ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক এই সুযোগ বাতিলের আহ্বান জানায়।

এর আগে বাজেটে কালো টাকা সাদা করা নিয়ে কোন ঘোষণা না থাকাকে টিআইবি সরকারের বোধোদয় হয়েছে বলে মনে করেছিল এবং সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছিল উল্লেখ করে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, বাজেট অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দিকনির্দেশনায় তৈরি একটি সমন্বিত চিন্তার আর্থিক দলিল। কিন্তু সেটি সংসদে উপস্থাপনের পরদিনই তারই একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সংশয় এবং বাস্তবে ইউ-টার্ন সত্যিই অবাক করার মতো।

তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ‘যতদিন অপ্রদর্শিত আয়, ততদিন ঘোষণার সুযোগ’ মর্মে দেয়া বক্তব্য তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সমর্থিত ছিল না বলে অর্থমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা সংবাদ সম্মেলনে হাজির করেছেন সেটি তার মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে সত্যিই আশাপ্রদ নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম দশমাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বৈধ করার ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর একটি প্রচেষ্টা শুরু থেকেই ছিল, শঙ্কা হচ্ছে তিনি অন্যায় এই সুবিধার পক্ষে সেই ঢালটি এখন ব্যবহার করতে চাইছেন যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না অথচ এর মাধ্যমে সত্যিকারভাবে সরকার কতটা রাজস্ব ক্ষতির শিকার হলো সেটি কোনভাবেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। যেটিকে সৎ ও বৈধপন্থায় উপার্জনকারী করদাতাদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় খেলাপির সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পাঁয়তারা বলে মনে করা মোটেই বাহুল্য হবে না বলে জানিয়েছেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক।

তিনি আরও বলেন, কোন কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন ছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধই করছে না বরং দুর্নীতিবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। ড. জামান বলেন, আয়কর অধ্যাদেশের আইনি মারপ্যাঁচে থাকা অপ্রদর্শিত আয়ের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার অন্যান্য সুযোগও বাতিল করার এখনই সময়। অপ্রদর্শিত অর্থ আর কালো টাকার মধ্যে পার্থক্য যে অতি ক্ষীণ তা কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। কোন না কোন কৌশলে দুর্নীতিবাজদের তোষণের নীতি থেকে বেরিয়ে এসে সরকার দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে সাংবিধানিক অঙ্গীকার রক্ষায় এগিয়ে আসবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, সবধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং স্বার্থান্বেষী অনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ না দিতে সরকারের প্রতি আবারও উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় যত দ্রুত হবে, দেশের অর্থনীতির কাক্সিক্ষত সুশাসনও তত ত্বরান্বিত হবে।