যাত্রী বেশে ভাড়া, পথে মাইক্রোবাস ছিনতাই করত তারা

বিদেশ থেকে আত্মীয় আসবে, তাই তাকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করতে গাড়ি লাগবে-এমন কৌশলে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করতো একটি গাড়ি ছিনতাই চক্র। ভাড়া নেয়া প্রাইভেটকার সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে চালকের হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতো চক্রটি। দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও অবশেষে গোয়েন্দার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে চক্রের ৬ জন। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবি’র অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মীর মিজান মিয়া, মো. হাবিব মিয়া, মো. ফারুক, কামাল মিয়া, মো. আল-আমিন ও মোবারক। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে ডিবি।

একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, উত্তরা পূর্ব থানায় ডাকাতির মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে একটি চক্র আছে যারা কৌশলে প্রাইভেটকার ভাগিয়ে নিয়ে অল্প দামে বিদেশ থেকে দেশে কয়েক মাসের জন্য ঘুরতে আসা প্রবাসীদের কাছে ওই সব গাড়ি বিক্রি করত। চক্রের সদস্য হাবীব মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার নরসিংদী ও কুমিল্লা জেলার একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গত ২১ এপ্রিল গ্রেপ্তার হাবিব তার বিদেশফেরত এক আত্মীয়কে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আনার কথা বলে কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি হায়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করে। পরদিন সন্ধ্যায় মাইক্রোবাসচালক মো. আবুল বাশার হাবিবের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী করিমগঞ্জ থানা এলাকা থেকে চারজন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ওই দিন রাত ১১টায় তাদের বহন করা মাইক্রোবাসটি ঢাকার আবদুল্লাহপুরে পৌঁছলে অজ্ঞাতনামা যাত্রীবেশে গ্রেপ্তারকৃতরা লুঙ্গি, গামছা ও দঁড়ি দিয়ে চালকের হাত-পা বেঁধে মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণ তারা নিয়ে নেয়। এরপর গ্রেপ্তার ফারুক মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ নিয়ে যায়। সেখানে চালক আবুল বাশারকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে গ্রেপ্তার হাবিব গাড়িটি চালিয়ে কুমিল্লার চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে সেখানে অবস্থানরত গ্রেপ্তার মিজানের কাছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। মিজান ভুয়া নম্বর প্লেট ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে কুমিল্লায় ভাড়ার বিনিময়ে ওই গাড়িটি চালাতো।

তিনি বলেন, এই চক্রটি এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ গাড়ি চুরি করেছে তার তদন্ত চলছে। তবে তারা জানিয়েছেন, তাদের ছিনতাইকৃত প্রাইভেটকারগুলো সিলেটে বেশি বিক্রি করেছে। কারণ সিলেটে অনেক প্রবাসী আসেন কয়েক মাসের জন্য। ওই প্রবাসীরা কয়েক মাসের জন্য অল্প দামে গাড়ি কিনতে চান। আর এ চক্রটিও ওই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছিল। তবে প্রবাসীরা গাড়ি কেনার সময় বুঝতে পারেন না গাড়ি চুরি করা কিনা। যদিও পরবর্তীতে ফেঁসে যাচ্ছেন তারাই। তাই গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই বিআরটিএর অনুমোদন আছে কিনা এবং গাড়িটির মূল মালিক কে সেগুলো যাছাই-বাছাই করার অনুরোধ জানান তিনি।

রবিবার, ০৬ জুন ২০২১ , ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৪ শাওয়াল ১৪৪২

যাত্রী বেশে ভাড়া, পথে মাইক্রোবাস ছিনতাই করত তারা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিদেশ থেকে আত্মীয় আসবে, তাই তাকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করতে গাড়ি লাগবে-এমন কৌশলে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করতো একটি গাড়ি ছিনতাই চক্র। ভাড়া নেয়া প্রাইভেটকার সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে চালকের হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতো চক্রটি। দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও অবশেষে গোয়েন্দার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে চক্রের ৬ জন। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবি’র অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মীর মিজান মিয়া, মো. হাবিব মিয়া, মো. ফারুক, কামাল মিয়া, মো. আল-আমিন ও মোবারক। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে ডিবি।

একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, উত্তরা পূর্ব থানায় ডাকাতির মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে একটি চক্র আছে যারা কৌশলে প্রাইভেটকার ভাগিয়ে নিয়ে অল্প দামে বিদেশ থেকে দেশে কয়েক মাসের জন্য ঘুরতে আসা প্রবাসীদের কাছে ওই সব গাড়ি বিক্রি করত। চক্রের সদস্য হাবীব মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার নরসিংদী ও কুমিল্লা জেলার একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গত ২১ এপ্রিল গ্রেপ্তার হাবিব তার বিদেশফেরত এক আত্মীয়কে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আনার কথা বলে কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি হায়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করে। পরদিন সন্ধ্যায় মাইক্রোবাসচালক মো. আবুল বাশার হাবিবের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী করিমগঞ্জ থানা এলাকা থেকে চারজন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ওই দিন রাত ১১টায় তাদের বহন করা মাইক্রোবাসটি ঢাকার আবদুল্লাহপুরে পৌঁছলে অজ্ঞাতনামা যাত্রীবেশে গ্রেপ্তারকৃতরা লুঙ্গি, গামছা ও দঁড়ি দিয়ে চালকের হাত-পা বেঁধে মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণ তারা নিয়ে নেয়। এরপর গ্রেপ্তার ফারুক মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ নিয়ে যায়। সেখানে চালক আবুল বাশারকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে গ্রেপ্তার হাবিব গাড়িটি চালিয়ে কুমিল্লার চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে সেখানে অবস্থানরত গ্রেপ্তার মিজানের কাছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। মিজান ভুয়া নম্বর প্লেট ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে কুমিল্লায় ভাড়ার বিনিময়ে ওই গাড়িটি চালাতো।

তিনি বলেন, এই চক্রটি এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ গাড়ি চুরি করেছে তার তদন্ত চলছে। তবে তারা জানিয়েছেন, তাদের ছিনতাইকৃত প্রাইভেটকারগুলো সিলেটে বেশি বিক্রি করেছে। কারণ সিলেটে অনেক প্রবাসী আসেন কয়েক মাসের জন্য। ওই প্রবাসীরা কয়েক মাসের জন্য অল্প দামে গাড়ি কিনতে চান। আর এ চক্রটিও ওই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছিল। তবে প্রবাসীরা গাড়ি কেনার সময় বুঝতে পারেন না গাড়ি চুরি করা কিনা। যদিও পরবর্তীতে ফেঁসে যাচ্ছেন তারাই। তাই গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই বিআরটিএর অনুমোদন আছে কিনা এবং গাড়িটির মূল মালিক কে সেগুলো যাছাই-বাছাই করার অনুরোধ জানান তিনি।