করোনা মহামারীর সময় অনেক মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে নেমে এসেছে। এতে নিম্নবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু নতুন দরিদ্র হওয়া এসব জনগোষ্ঠীর জন্য করণীয় সম্পর্কে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু বলা হয়নি। এমনকি দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি বলেও মনে করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। গতকাল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ : পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কি আছে?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ের এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মূল উপস্থাপনা প্রদান করেন। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সম্মানিত কোর গ্রুপ সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সিপিডিসহ বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ন্যূনতম দারিদ্র্যসীমা ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে যা ৩৫ থেকে ৪৩ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর কোন ধরনের স্বীকৃতি, অনুধাবন কিংবা প্রতিফলন প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। আমরা দেখতে পাই, নতুন করে যারা দরিদ্র হলো তাদের বিষয়ে বাজেটে কোন ধরনের হিসাব রাখা হয়নি। যেহেতু পরিসংখ্যান পর্যায়ে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই, সেহেতু নীতিগতভাবে কিছু রয়েছে বলে মনে করি না। তাহলে প্রশ্ন জাগে, প্রস্তাবিত বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনে কতটুকু অর্থ বরাদ্দ দিল?’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারে যে ব্যয় করবে তা জিডিপির ১০.৫ শতাংশ যা আগের অর্থবছরে ছিল ১০ শতাংশ। তবে আমাদের পর্যালোচনা বলছে, দারিদ্র্য বিমোচনে প্রকৃত অর্থ সরকারের ব্যয় বাড়বে না। তাহলে কীভাবে নতুন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখলাম? দারিদ্র্য বিমোচনের এক হিসাবে স্বাস্থ্য খাত, শ্রম মন্ত্রণালয়, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু অধিদপ্তর, সরকারের সেতু বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যয়কেও দারিদ্র্য বিমোচনের অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। সরকারকে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে কীভাবে এসব খাতের ব্যয় প্রত্যক্ষ দারিদ্র্য বিমোচনের আওতায় আসবে। এ বিষয়ে স্বচ্ছতা জরুরি।’
কর্মসংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ যুবক। তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে বাজেটে স্বচ্ছ ধারণা নেই। একটি জায়গায় বলেছেন, প্রযুক্তি খাতে ১০ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি না, এ তথ্য কোথা পেলেন? উৎস সম্পর্কে বাজেটে বলা নেই। আবার সরকারের প্রণোদনা ও কর অবকাশ সুবিধার কথা বলা হলেও মজুরি শ্রমের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এর কোন যথাযথ পরিসংখ্যান আমরা দেখতে পাই না বাজেটে। গতানুগতিকভাবে যুবকদের প্রশিক্ষণ, আত্ম-কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়গুলো ঘুরেফিরে বলা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে কোন শ্রমজরিপ হয়নি। ফলে পরিসংখ্যানগত অনেক অসামঞ্জস্যতা রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমাদের শ্রমজরিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এক্ষেত্রে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান এসব ক্ষেত্রে শ্রমজরিপ খুবই প্রয়োজন। এখন কিভাবে তথ্য-উপাত্ত আসছে, বোধগম্য নয়। সেক্ষেত্রে আমরা তথ্যের নৈরাজ্য চলছে বলতে পারি।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিতে হলে সবার আগে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত জরুরি যা বাজেটে আমরা পাইনি। যদি আমরা পরিমাপ করতেই না পারি তাহলে বাস্তবায়ন কী করে করব? সরকারকে যদি এ খাতে ভালো করতে হয়, তাহলে সবার আগে তথ্যের
যথাযথ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।’ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাজেটে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য যেসব ছাড়ের বিষয়ে বলা হয়েছে, তা প্রয়োজনীয় তবে তা যথেষ্ট নয়।’
সোমবার, ০৭ জুন ২০২১ , ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৫ শাওয়াল ১৪৪২
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
করোনা মহামারীর সময় অনেক মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে নেমে এসেছে। এতে নিম্নবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু নতুন দরিদ্র হওয়া এসব জনগোষ্ঠীর জন্য করণীয় সম্পর্কে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু বলা হয়নি। এমনকি দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি বলেও মনে করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। গতকাল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ : পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কি আছে?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ের এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মূল উপস্থাপনা প্রদান করেন। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সম্মানিত কোর গ্রুপ সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সিপিডিসহ বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ন্যূনতম দারিদ্র্যসীমা ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে যা ৩৫ থেকে ৪৩ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর কোন ধরনের স্বীকৃতি, অনুধাবন কিংবা প্রতিফলন প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। আমরা দেখতে পাই, নতুন করে যারা দরিদ্র হলো তাদের বিষয়ে বাজেটে কোন ধরনের হিসাব রাখা হয়নি। যেহেতু পরিসংখ্যান পর্যায়ে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই, সেহেতু নীতিগতভাবে কিছু রয়েছে বলে মনে করি না। তাহলে প্রশ্ন জাগে, প্রস্তাবিত বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনে কতটুকু অর্থ বরাদ্দ দিল?’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারে যে ব্যয় করবে তা জিডিপির ১০.৫ শতাংশ যা আগের অর্থবছরে ছিল ১০ শতাংশ। তবে আমাদের পর্যালোচনা বলছে, দারিদ্র্য বিমোচনে প্রকৃত অর্থ সরকারের ব্যয় বাড়বে না। তাহলে কীভাবে নতুন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখলাম? দারিদ্র্য বিমোচনের এক হিসাবে স্বাস্থ্য খাত, শ্রম মন্ত্রণালয়, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু অধিদপ্তর, সরকারের সেতু বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যয়কেও দারিদ্র্য বিমোচনের অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। সরকারকে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে কীভাবে এসব খাতের ব্যয় প্রত্যক্ষ দারিদ্র্য বিমোচনের আওতায় আসবে। এ বিষয়ে স্বচ্ছতা জরুরি।’
কর্মসংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ যুবক। তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে বাজেটে স্বচ্ছ ধারণা নেই। একটি জায়গায় বলেছেন, প্রযুক্তি খাতে ১০ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি না, এ তথ্য কোথা পেলেন? উৎস সম্পর্কে বাজেটে বলা নেই। আবার সরকারের প্রণোদনা ও কর অবকাশ সুবিধার কথা বলা হলেও মজুরি শ্রমের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এর কোন যথাযথ পরিসংখ্যান আমরা দেখতে পাই না বাজেটে। গতানুগতিকভাবে যুবকদের প্রশিক্ষণ, আত্ম-কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়গুলো ঘুরেফিরে বলা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে কোন শ্রমজরিপ হয়নি। ফলে পরিসংখ্যানগত অনেক অসামঞ্জস্যতা রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমাদের শ্রমজরিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এক্ষেত্রে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান এসব ক্ষেত্রে শ্রমজরিপ খুবই প্রয়োজন। এখন কিভাবে তথ্য-উপাত্ত আসছে, বোধগম্য নয়। সেক্ষেত্রে আমরা তথ্যের নৈরাজ্য চলছে বলতে পারি।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিতে হলে সবার আগে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত জরুরি যা বাজেটে আমরা পাইনি। যদি আমরা পরিমাপ করতেই না পারি তাহলে বাস্তবায়ন কী করে করব? সরকারকে যদি এ খাতে ভালো করতে হয়, তাহলে সবার আগে তথ্যের
যথাযথ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।’ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাজেটে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য যেসব ছাড়ের বিষয়ে বলা হয়েছে, তা প্রয়োজনীয় তবে তা যথেষ্ট নয়।’