কেরামত হুজুরের কেরামতির নামে ধর্ষণ, মামলা, গ্রেপ্তার

দুই বছরেই সুন্দর ব্যবহার আর আল্লাহভীরু ভাব দেখিয়ে এলাকার সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের গারট্র উত্তরপাড়া গ্রামের মসজিদের ইমাম কেরামত আলী (৬০) ওরফে কেরামত হুজুর। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি মসজিদের ভেতর গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রতিদিন সকালে কোরআন শিক্ষা দিতেন তিনি। এভাবেই পেরিয়ে যায় ইমামতির দুই বছর।

হঠাৎ করেই তিনি জানিয়ে দেন আর এ মসজিদে ইমামতি করবেন না। বিদায় নিয়ে চলে যান। সপ্তাহখানেক পর বেরিয়ে এলো ইমামতি ছাড়ার আসল কাহিনী। ইমাম কেরামত আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত শনিবার রাতে ঘাটাইল থানায় মামলা করেছেন গারট্র উত্তরপাড়া গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা এক কিশোরীর বাবা। রাতেই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ইমাম কেরামত আলীকে গ্রেপ্তার করে ঘাটাইল থানা পুলিশ।

মামলার বিবরণ ও স্থানীয়রা জানান, কেরামত আলীর বাড়ি জেলার ঘাটাইলের পাশের উপজেলা মধুপুরের আইনাতকারী বাসস্ট্যান্ডে। গারট্র উত্তরপাড়া গ্রামে মেয়ে বিয়ে দেয়ার সুবাদে সবার সঙ্গে আগে থেকেই একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। দুই বছর আগে মসজিদ কমিটি তাকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন। গত ২৮ মে ইমামতি আর করবেন না বলে কেরামত আলী বিদায় নিয়ে চলে যান।

এদিকে তিনদিন আগে এলাকার এক কিশোরী মেয়ের অস্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তার মাসহ অন্যরা। মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদে সব ঘটনা ওই মেয়ে খুলে বলে। অন্তঃসত্ত্বা ওই কিশোরী জানায়, পাঁচ মাস আগে একদিন সকালবেলা মক্তবের কোরআন পড়া শেষ হলে অন্যরা বাড়ি চলে যায়। এ সময় হুজুর তাকে মুখ বেঁধে মসজিদের বারান্দায় ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য তিনি বলেন। মেয়েটি আরও জানায়, হুজুর চলে যাওয়ার সময় বলে গেছেন তাকে হুজুরের বাড়ি নিয়ে যাবেন এবং জমি লিখে দিবেন।

ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা জানান, স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তার মেয়ে। করোনাভাইরাসের কারণে মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সকালে মসজিদে অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সেও কোরআন শিক্ষার জন্য যেত।

ইমাম কেরামত আলীর মেয়ের জামাইয়ের বড় ভাই আবু হানিফ বলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, এর আগেও তিনি ঢাকার একটি মসজিদে ইমাম থাকাকালীন একই ধরনের কাজ করেছিলেন। পরে সেখান থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। গ্রামের বাড়িতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের বোনকে হত্যা করেছিলেন, পরে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।

মসজিদ কমিটির সভাপতি ওয়াহেদ আলী বলেন, তার আচরণে কখনও এমন কিছু এর আগে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার উপপরিদর্শক মেমরাজুল ইসলাম রুবেল বলেন, অভিযুক্ত ইমাম কেরামত আলীকে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী থেকে রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কিশোরীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার, ০৭ জুন ২০২১ , ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৫ শাওয়াল ১৪৪২

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে

কেরামত হুজুরের কেরামতির নামে ধর্ষণ, মামলা, গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

দুই বছরেই সুন্দর ব্যবহার আর আল্লাহভীরু ভাব দেখিয়ে এলাকার সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের গারট্র উত্তরপাড়া গ্রামের মসজিদের ইমাম কেরামত আলী (৬০) ওরফে কেরামত হুজুর। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি মসজিদের ভেতর গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রতিদিন সকালে কোরআন শিক্ষা দিতেন তিনি। এভাবেই পেরিয়ে যায় ইমামতির দুই বছর।

হঠাৎ করেই তিনি জানিয়ে দেন আর এ মসজিদে ইমামতি করবেন না। বিদায় নিয়ে চলে যান। সপ্তাহখানেক পর বেরিয়ে এলো ইমামতি ছাড়ার আসল কাহিনী। ইমাম কেরামত আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত শনিবার রাতে ঘাটাইল থানায় মামলা করেছেন গারট্র উত্তরপাড়া গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা এক কিশোরীর বাবা। রাতেই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ইমাম কেরামত আলীকে গ্রেপ্তার করে ঘাটাইল থানা পুলিশ।

মামলার বিবরণ ও স্থানীয়রা জানান, কেরামত আলীর বাড়ি জেলার ঘাটাইলের পাশের উপজেলা মধুপুরের আইনাতকারী বাসস্ট্যান্ডে। গারট্র উত্তরপাড়া গ্রামে মেয়ে বিয়ে দেয়ার সুবাদে সবার সঙ্গে আগে থেকেই একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। দুই বছর আগে মসজিদ কমিটি তাকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন। গত ২৮ মে ইমামতি আর করবেন না বলে কেরামত আলী বিদায় নিয়ে চলে যান।

এদিকে তিনদিন আগে এলাকার এক কিশোরী মেয়ের অস্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তার মাসহ অন্যরা। মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদে সব ঘটনা ওই মেয়ে খুলে বলে। অন্তঃসত্ত্বা ওই কিশোরী জানায়, পাঁচ মাস আগে একদিন সকালবেলা মক্তবের কোরআন পড়া শেষ হলে অন্যরা বাড়ি চলে যায়। এ সময় হুজুর তাকে মুখ বেঁধে মসজিদের বারান্দায় ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য তিনি বলেন। মেয়েটি আরও জানায়, হুজুর চলে যাওয়ার সময় বলে গেছেন তাকে হুজুরের বাড়ি নিয়ে যাবেন এবং জমি লিখে দিবেন।

ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা জানান, স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তার মেয়ে। করোনাভাইরাসের কারণে মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সকালে মসজিদে অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সেও কোরআন শিক্ষার জন্য যেত।

ইমাম কেরামত আলীর মেয়ের জামাইয়ের বড় ভাই আবু হানিফ বলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, এর আগেও তিনি ঢাকার একটি মসজিদে ইমাম থাকাকালীন একই ধরনের কাজ করেছিলেন। পরে সেখান থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। গ্রামের বাড়িতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের বোনকে হত্যা করেছিলেন, পরে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।

মসজিদ কমিটির সভাপতি ওয়াহেদ আলী বলেন, তার আচরণে কখনও এমন কিছু এর আগে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার উপপরিদর্শক মেমরাজুল ইসলাম রুবেল বলেন, অভিযুক্ত ইমাম কেরামত আলীকে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী থেকে রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কিশোরীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।