৯ দিনের ব্যবধানে সিলেটে ফের দু’দফা ভূমিকম্প

সিলেট নগরীতে নয়দিনের ব্যবধানে আবারও দু’দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার দিকে দু’দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ফলে আবারও নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। সন্ধ্যা ৬টা ২৭ ও ৬টা ২৯ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে নগরী। সঙ্গে সঙ্গে বাসা ও অফিসে থাকা মানুষজন ঘর ছেড়ে আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, ‘ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৮ ও এর উৎপত্তিস্থল সিলেট জোন।’ ‘তবে, একটা মাত্র কেন্দ্রে অনুভূত হওয়ায় ভূমিকম্পের মূল কেন্দ্র ও গভীরতা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি,’ যোগ করেন তিনি।

এর আগে গত ২৯ মে সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটার মধ্যে সিলেটে অন্তত পাঁচটি ভূকম্পন অনুভূত হয়। পরদিন ভোরে আবার ভূমিকম্প হয়। যার সব কেন্দ্রস্থল ছিল সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায়। ২৯ মে ভূমিকম্পের পর থেকেই সিলেটজুড়ে ভূমিকম্প আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, বড় ধরনের ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন ছোট ছোট ভূকম্পন অনুভূত হয়। ফলে ভূমিকম্পের ডেঞ্জারজোন হিসেবে পরিচিত সিলেটে বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২৯ মে ভূমিকম্পের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ৭টি বহুতল বিপণিবিতান ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নগরের বহুতল ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কিনা তা জরিপ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ২০১৬ সালে সর্বশেষ সিলেটের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ব্যাপারে জরিপ চালানো হয়েছিল। এতে ৩২টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত ২৯ মের ভূমিকম্পের পর এই ভবনগুলোর মধ্যে ৭টি বাণিজ্যিক ভবন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সিলেটে প্রায় ৭০ হাজার হোল্ডিং আছে। এর মধ্যে সাততলার ওপরে ভবন আছে অন্তত ৪শ’টি। তবে সিটি করপোরেশনের হিসাবের বাইরেও অনেক বহুতল ভবন আছে। এখন আবার বহুতল ভবনগুলোর ব্যাপারে জরিপ চালানো উচিত।

নুর আজিজ বলেন, নগরের বহুতল ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা দ্রুতই সে উদ্যোগ নেবো। সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আমাদের পক্ষে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। তবে যে ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় নয় সেগুলোর সামনে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানিয়ে দেবো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেটে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নগরীর সব ভবনকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক করা। এজন্য নতুন ভবন নির্মাণের আগে মাটি পরীক্ষা করতে হবে। মাটির ধরনের উপর নির্ভর করে ভবনকে একতলা বা বহুতল করতে হবে। জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। ভূমিকম্প প্রতিরোধী ডিজাইনে এবং মানসম্পন্ন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে দালান তৈরি করতে হবে আর পুরনো দুর্বল ভবনগুলোকে সংস্কার করে শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। সম্ভব না হলে ভেঙে ফেলতে হবে। বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে কোন অবস্থাতেই ভবন নির্মাণ করা যাবে না।

মঙ্গলবার, ০৮ জুন ২০২১ , ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৬ শাওয়াল ১৪৪২

৯ দিনের ব্যবধানে সিলেটে ফের দু’দফা ভূমিকম্প

প্রতিনিধি, সিলেট

সিলেট নগরীতে নয়দিনের ব্যবধানে আবারও দু’দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার দিকে দু’দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ফলে আবারও নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। সন্ধ্যা ৬টা ২৭ ও ৬টা ২৯ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে নগরী। সঙ্গে সঙ্গে বাসা ও অফিসে থাকা মানুষজন ঘর ছেড়ে আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, ‘ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৮ ও এর উৎপত্তিস্থল সিলেট জোন।’ ‘তবে, একটা মাত্র কেন্দ্রে অনুভূত হওয়ায় ভূমিকম্পের মূল কেন্দ্র ও গভীরতা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি,’ যোগ করেন তিনি।

এর আগে গত ২৯ মে সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটার মধ্যে সিলেটে অন্তত পাঁচটি ভূকম্পন অনুভূত হয়। পরদিন ভোরে আবার ভূমিকম্প হয়। যার সব কেন্দ্রস্থল ছিল সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায়। ২৯ মে ভূমিকম্পের পর থেকেই সিলেটজুড়ে ভূমিকম্প আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, বড় ধরনের ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন ছোট ছোট ভূকম্পন অনুভূত হয়। ফলে ভূমিকম্পের ডেঞ্জারজোন হিসেবে পরিচিত সিলেটে বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২৯ মে ভূমিকম্পের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ৭টি বহুতল বিপণিবিতান ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নগরের বহুতল ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কিনা তা জরিপ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ২০১৬ সালে সর্বশেষ সিলেটের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ব্যাপারে জরিপ চালানো হয়েছিল। এতে ৩২টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত ২৯ মের ভূমিকম্পের পর এই ভবনগুলোর মধ্যে ৭টি বাণিজ্যিক ভবন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সিলেটে প্রায় ৭০ হাজার হোল্ডিং আছে। এর মধ্যে সাততলার ওপরে ভবন আছে অন্তত ৪শ’টি। তবে সিটি করপোরেশনের হিসাবের বাইরেও অনেক বহুতল ভবন আছে। এখন আবার বহুতল ভবনগুলোর ব্যাপারে জরিপ চালানো উচিত।

নুর আজিজ বলেন, নগরের বহুতল ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা দ্রুতই সে উদ্যোগ নেবো। সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আমাদের পক্ষে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। তবে যে ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় নয় সেগুলোর সামনে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানিয়ে দেবো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেটে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নগরীর সব ভবনকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক করা। এজন্য নতুন ভবন নির্মাণের আগে মাটি পরীক্ষা করতে হবে। মাটির ধরনের উপর নির্ভর করে ভবনকে একতলা বা বহুতল করতে হবে। জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। ভূমিকম্প প্রতিরোধী ডিজাইনে এবং মানসম্পন্ন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে দালান তৈরি করতে হবে আর পুরনো দুর্বল ভবনগুলোকে সংস্কার করে শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। সম্ভব না হলে ভেঙে ফেলতে হবে। বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে কোন অবস্থাতেই ভবন নির্মাণ করা যাবে না।