যাদের এলটিভি (দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা) রয়েছে তারাই ভারতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ করে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছেন বৈধ কাগজপত্র হাতে নিয়েই কিন্তু সে দেশে আর ফেরত যেতে না চেয়ে সরকারের কাছে এলটিভি চেয়ে আবেদন করেন, আসামে এমন কেউ আছেন কিনা সেটা এই মুহূর্তে নিঃসন্দেহে এক তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৮ মে এলটিভির ভিত্তিতে নাগরিকত্বসংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করার পর থেকে আসামে এই নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। ঐ প্রজ্ঞাপনে দেশের ৫টি রাজ্যের ১৩টি জেলার অমুসলিম বৈধ অভিবাসীদের যাদের হাতে এলটিভি আছে বা যারা এলটিভির জন্য আবেদন করেছেন তাদের নাগরিকত্ব মর্যদা দেয়ার কর্তৃত্ব অর্পণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা শাসকদের হাতে। এর আগে ৭ রাজ্যের ১৬ জেলার ক্ষেত্রে একই বিধান দিয়ে নোটিফিকেশন জারি করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে ঘুরপথে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ক্যা-রূপায়ণ বলেই মনে করছেন আসামসহ দেশের দল ও অন্যান্য সংগঠন। তাদের বক্তব্য, এভাবে এলটিভির ভিত্তিতে নাগরিকত্ব মর্যাদা দিয়ে সেটাই রূপায়ণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। ক্যা-র বিধি তৈরি না হলেও ঘুরিয়ে সেই আইন বলবৎ করার চেষ্টা হচ্ছে, এটাই কংগ্রেস এবং জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোর মূল বক্তব্য। তাদের প্রশ্ন এলটিভি পাওয়ার জন্য ভারতে যে আইন-বিধি রয়েছে তার সুবাদে আসামে কতজন এই সুবিধা পেয়েছে বা পাওয়ার যোগ্য ?
এ বছরের ১৯ মার্চ রাজ্যের জেলা শাসক, পুলিশ সুপার এবং এফাআরওদের বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা বৈধ অভিবাসীদের ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইনের ৫ ও ৬ ধারায় নাগরিকত্ব মঞ্জুরিসংক্রান্ত বিষয়টি প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছে আসাম রাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগ। এই বিধানের বিষয়টি জেলা শাসক, পুলিশ সুপার ও এফাআরওদের ওয়েবসাইটে তুলে ধরতেও বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র বিভাগের উপ-সচিব পারিজাত ভূঁইয়ার চিঠিতে কিন্তু যতটা জানা গেছে, সেই বিধি-নিয়মের প্রচারে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এমনকি রাজ্যের কেউ এখন পর্যন্ত এলটিভি পেয়েছেন কিনা সেই তথ্যও নেই আসাম রাজ্য সরকারের হাতে। তবে এই বিভাগের জনৈক আধিকারক বলেছেন, বিয়ের সূত্রে আসামে আছেন এমন হাতে গোনা কয়েক বাংলাদেশি মহিলা তাদের বৈধ নথিপত্র দিয়ে এলটিভির জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু তাদের মধ্যে কারা এলটিভি পেয়েছেন সেই তথ্য নেই। জানা গেছে, শিলচর এবং হাইলাকান্দির কয়েকজন এলটিভির জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্তু ক’জন সেটা পেয়েছেন তার কোন তথ্য জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত: ২০১৯-এর ১৬ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যনন্দ রাই লোকসভায় জানিয়ে ছিলেন, ২০১৫-র ৭ সেপ্টেম্বর নোটিফিকেশন জারি করে প্রতিবেশী তিন দেশ থেকে ভারতে আসা অমুসলিম ৬টি সম্প্রদায়ের লোকদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট (অ্যান্ড ইন্টু ইন্ডিয়া) রুলস ১৯৫০ এবং ফরেনার্স অর্ডার ১৯৪৮-এর কড়া বিধানকে শিথিল করা হয়েছিল।
২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে যারা ভারতে এসেছেন তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে এই নোটিফিকেশন। এই অভিবাসীদের জন্য এলটিভি মঞ্জুরির সুবিধা দেয়া হয়েছিল যার এসপিও জারি হয় ২০১৬ সালে। এলটিভি পেতে পারেন তারাই যাদের হাতে ট্রাভেল ডকুমেন্ট আছে কিন্তু যাদের হাতে কোন নথি নেই আর থাকলেও সেটা তামাদি হয়ে গেছে। সেই শ্রেণীর লোকদের ২০১৫-র নোটিফিকেশনের আধারে বৈধ অভিবাসী করা হয়েছিল এবং তারাই ক্যা-এর অধীনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর থেকেই পরিষ্কার এলটিভির আধারে ভারতীয় নাগরিকত্বের সঙ্গে ক্যা-এর কোন রকম সম্পর্ক নেই অথচ তা সত্ত্বেও কেন্দ্রের ২৮ মে-র নোটিফিকেশনের সঙ্গে ক্যা-কে গুলিয়ে দিয়ে ঘুরপথে নাগরিকত্ব দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন আসাম রাজ্যের বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা। কেন্দ্রে বিধি মেনে এলটিভি পেয়ে গেলে প্রতিবেশী তিন রাষ্ট্র থেকে আসার বৈধ নথি থাকতে হবে। সেই নথির মধ্যে আছে বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা।
সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, বাংলাদেশি বা পাকিস্তানি যে সব মহিলা ভারতীয়দের বিয়ে করে ভারতে বসবাস করছেন এবং ভারতের নাগরিকত্বের উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে থাকতে চান তারাও এলটিভির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এখানেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রশ্নÑ এ রাজ্যে এমন শ্রেণীর মানুষ কতজন আছেন যারা এলটিভির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। আসাম রাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন তথ্য জানা যায়নি। এর পরেও যদি বলা হয় ঘুরপথে ক্যা-র রূপায়ণ করে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে কেন্দ্র, তাহলে এর পেছনে যুক্তি কতটা সেই নিয়ে অবশ্যই সন্দেহের অবকাশ থাকে।
নাগরিকত্ব দেয়া নিয়ে আইনজারী আর নোটিফিকেশনের ঘাপলায় আসাম রাজ্যে থাকা অভিবাসীদের কি আদৌ নাগরিকত্ব দেয়া হবে না এনআরসি (নাগরিক পঞ্জি)-র নামে হিমন্ত সরকার ফের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাবে, এই নিয়ে নানা ধরনের ভিতর মধ্যে আছেন বিশেষ করে বাঙালি অভিবাসীরা। কেননা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ক্ষমতায় এসে আসামে এনআরসি পুনরায় খতিয়ে দেখার জন্য যে সোয়াল করেছেন এবং এর প্রভাব দেখা গেছে এনআরসির সমন্বয়কের কাজ-কর্মে।
মঙ্গলবার, ০৮ জুন ২০২১ , ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৬ শাওয়াল ১৪৪২
দীপক মুখার্জী, কলকাতা
যাদের এলটিভি (দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা) রয়েছে তারাই ভারতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ করে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছেন বৈধ কাগজপত্র হাতে নিয়েই কিন্তু সে দেশে আর ফেরত যেতে না চেয়ে সরকারের কাছে এলটিভি চেয়ে আবেদন করেন, আসামে এমন কেউ আছেন কিনা সেটা এই মুহূর্তে নিঃসন্দেহে এক তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৮ মে এলটিভির ভিত্তিতে নাগরিকত্বসংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করার পর থেকে আসামে এই নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। ঐ প্রজ্ঞাপনে দেশের ৫টি রাজ্যের ১৩টি জেলার অমুসলিম বৈধ অভিবাসীদের যাদের হাতে এলটিভি আছে বা যারা এলটিভির জন্য আবেদন করেছেন তাদের নাগরিকত্ব মর্যদা দেয়ার কর্তৃত্ব অর্পণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা শাসকদের হাতে। এর আগে ৭ রাজ্যের ১৬ জেলার ক্ষেত্রে একই বিধান দিয়ে নোটিফিকেশন জারি করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে ঘুরপথে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ক্যা-রূপায়ণ বলেই মনে করছেন আসামসহ দেশের দল ও অন্যান্য সংগঠন। তাদের বক্তব্য, এভাবে এলটিভির ভিত্তিতে নাগরিকত্ব মর্যাদা দিয়ে সেটাই রূপায়ণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। ক্যা-র বিধি তৈরি না হলেও ঘুরিয়ে সেই আইন বলবৎ করার চেষ্টা হচ্ছে, এটাই কংগ্রেস এবং জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোর মূল বক্তব্য। তাদের প্রশ্ন এলটিভি পাওয়ার জন্য ভারতে যে আইন-বিধি রয়েছে তার সুবাদে আসামে কতজন এই সুবিধা পেয়েছে বা পাওয়ার যোগ্য ?
এ বছরের ১৯ মার্চ রাজ্যের জেলা শাসক, পুলিশ সুপার এবং এফাআরওদের বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা বৈধ অভিবাসীদের ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইনের ৫ ও ৬ ধারায় নাগরিকত্ব মঞ্জুরিসংক্রান্ত বিষয়টি প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছে আসাম রাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগ। এই বিধানের বিষয়টি জেলা শাসক, পুলিশ সুপার ও এফাআরওদের ওয়েবসাইটে তুলে ধরতেও বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র বিভাগের উপ-সচিব পারিজাত ভূঁইয়ার চিঠিতে কিন্তু যতটা জানা গেছে, সেই বিধি-নিয়মের প্রচারে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এমনকি রাজ্যের কেউ এখন পর্যন্ত এলটিভি পেয়েছেন কিনা সেই তথ্যও নেই আসাম রাজ্য সরকারের হাতে। তবে এই বিভাগের জনৈক আধিকারক বলেছেন, বিয়ের সূত্রে আসামে আছেন এমন হাতে গোনা কয়েক বাংলাদেশি মহিলা তাদের বৈধ নথিপত্র দিয়ে এলটিভির জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু তাদের মধ্যে কারা এলটিভি পেয়েছেন সেই তথ্য নেই। জানা গেছে, শিলচর এবং হাইলাকান্দির কয়েকজন এলটিভির জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্তু ক’জন সেটা পেয়েছেন তার কোন তথ্য জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত: ২০১৯-এর ১৬ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যনন্দ রাই লোকসভায় জানিয়ে ছিলেন, ২০১৫-র ৭ সেপ্টেম্বর নোটিফিকেশন জারি করে প্রতিবেশী তিন দেশ থেকে ভারতে আসা অমুসলিম ৬টি সম্প্রদায়ের লোকদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট (অ্যান্ড ইন্টু ইন্ডিয়া) রুলস ১৯৫০ এবং ফরেনার্স অর্ডার ১৯৪৮-এর কড়া বিধানকে শিথিল করা হয়েছিল।
২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে যারা ভারতে এসেছেন তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে এই নোটিফিকেশন। এই অভিবাসীদের জন্য এলটিভি মঞ্জুরির সুবিধা দেয়া হয়েছিল যার এসপিও জারি হয় ২০১৬ সালে। এলটিভি পেতে পারেন তারাই যাদের হাতে ট্রাভেল ডকুমেন্ট আছে কিন্তু যাদের হাতে কোন নথি নেই আর থাকলেও সেটা তামাদি হয়ে গেছে। সেই শ্রেণীর লোকদের ২০১৫-র নোটিফিকেশনের আধারে বৈধ অভিবাসী করা হয়েছিল এবং তারাই ক্যা-এর অধীনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর থেকেই পরিষ্কার এলটিভির আধারে ভারতীয় নাগরিকত্বের সঙ্গে ক্যা-এর কোন রকম সম্পর্ক নেই অথচ তা সত্ত্বেও কেন্দ্রের ২৮ মে-র নোটিফিকেশনের সঙ্গে ক্যা-কে গুলিয়ে দিয়ে ঘুরপথে নাগরিকত্ব দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন আসাম রাজ্যের বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা। কেন্দ্রে বিধি মেনে এলটিভি পেয়ে গেলে প্রতিবেশী তিন রাষ্ট্র থেকে আসার বৈধ নথি থাকতে হবে। সেই নথির মধ্যে আছে বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা।
সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, বাংলাদেশি বা পাকিস্তানি যে সব মহিলা ভারতীয়দের বিয়ে করে ভারতে বসবাস করছেন এবং ভারতের নাগরিকত্বের উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে থাকতে চান তারাও এলটিভির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এখানেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রশ্নÑ এ রাজ্যে এমন শ্রেণীর মানুষ কতজন আছেন যারা এলটিভির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। আসাম রাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন তথ্য জানা যায়নি। এর পরেও যদি বলা হয় ঘুরপথে ক্যা-র রূপায়ণ করে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে কেন্দ্র, তাহলে এর পেছনে যুক্তি কতটা সেই নিয়ে অবশ্যই সন্দেহের অবকাশ থাকে।
নাগরিকত্ব দেয়া নিয়ে আইনজারী আর নোটিফিকেশনের ঘাপলায় আসাম রাজ্যে থাকা অভিবাসীদের কি আদৌ নাগরিকত্ব দেয়া হবে না এনআরসি (নাগরিক পঞ্জি)-র নামে হিমন্ত সরকার ফের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাবে, এই নিয়ে নানা ধরনের ভিতর মধ্যে আছেন বিশেষ করে বাঙালি অভিবাসীরা। কেননা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ক্ষমতায় এসে আসামে এনআরসি পুনরায় খতিয়ে দেখার জন্য যে সোয়াল করেছেন এবং এর প্রভাব দেখা গেছে এনআরসির সমন্বয়কের কাজ-কর্মে।