বান্দরবানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা, লক্ষাধিক মানুষকে সরে যেতে মাইকিং

বান্দরবানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। জেলার সাতটি উপজেলা ও ২টি পৌরসভা এবং ৩৩টি ইউনিয়নে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই পাহাড় কেটে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে ঝুঁকিতে বাস করেছে এসব মানুষ। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং বৃক্ষনিধনের কারণে পাহাড় ধসে ঘটছে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা।

এসবের পরও বন্ধ হচ্ছে না বান্দরবানে পাহাড় কাটাসহ অবৈধ বসতি স্থাপন। গত ১০ বছরে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষণ ও ভূমি ধসে বিভিন্ন বয়সী নারী-শিশুসহ প্রায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় এবং দুইটি পৌর এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে (পাদদেশে) বসবাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক পরিবার। যার মধ্যে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি পরিবার অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, বর্ষার শুরুতে প্রতিদিনই মাইকিং করা হচ্ছে তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে। বান্দরবানের বেশিরভাগ এলাকা পাহাড়বেষ্টিত আর তাই পাহাড় কেটে অথবা পাহাড়ের আশপাশে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে অসংখ্য নতুন নতুন স্থাপনা। তবে পাহাড় কর্র্তন আর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসত রোধে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড় ধসের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। আর পাহাড় ধসে হতাহতের দুর্ঘটনা এড়াতে এবং পাহাড়ের ঝূঁকিতে থাকা মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে প্রশাসন নিয়েছে নানা উদ্যোগ।

ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের মতে, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা প্রায় শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ এবং যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের মধ্যে হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যাই বেশি। জীবিকার তাগিদে পাহাড়ের ঢালুতে পাহাড় কেটে তৈরি করা আবাসস্থলগুলোতে কম ভাড়ায় বসবাস করা যায়। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হলেই মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য অন্যত্র আবাসনের ব্যবস্থা না করায় নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে চান না তারা। তারা মনে করে, তাদের সরকারিভাবে স্থায়ী পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন।

বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম বলেন, পাহাড় ধস তাৎক্ষণিক ঘটনা মনে হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার ফসল। ভূমিক্ষয়ে পাহাড়ে ফাঁটল তৈরি হয় এবং ধস নামে। পাহাড় ধসের অন্যতম কারণ হচ্ছে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন না করে পাহাড়ে চাষাবাদ করা। পাহাড় ধস বন্ধে বৃক্ষনিধন এবং পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে প্রতিনিয়ত প্রাণহানির ঘটনা আরও বাড়বে।

এ ব্যাপারে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজী বলেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সভা হয়েছে এবং পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাসরতদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে এবং উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যমান কমিটি থেকে পাদদেশের এসব মানুষকে সরে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা সদরে একটি সাইক্লোন সেন্টারকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বান্দরবানের সাত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দ্রুত পরিষ্কার ও শুকনা খাবার মজুদ ও সহায়তাকারীদের প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

image

সামনে প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা, ঝুঁকি নিয়ে বসবাস বান্দরবান পাহাড়ে, মাইকিং করে সরে যেতে বলছে প্রশাসন -সংবাদ

আরও খবর
ভারতে নাগরিকত্ব প্রশ্নে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা, দ্বন্দ্বে আসাম সরকার
৬ দফার মাধ্যমেই বাঙালির স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী
গণতন্ত্রে বিশ্বাস নেই বলে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেছে ওবায়দুল কাদের
ছয় দফা দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস
সংসদে বিরোধী দলের তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
করোনা টিকার মজুদ আছে এক লাখ ৫৬ হাজার
যশোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সংঘর্ষ, আহত ৩
কাউন্টারে রেলের টিকিট বিক্রি শুরু
১০০ কিশোর গ্যাং শনাক্ত করেছে র‌্যাব
চার্জশিট থেকে বাদপড়া দুই হত্যাকারীকে ধরল পিবিআই
সহযোগীসহ টিকটক-লাইকি দুই তরুণী আটক

মঙ্গলবার, ০৮ জুন ২০২১ , ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৬ শাওয়াল ১৪৪২

বান্দরবানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা, লক্ষাধিক মানুষকে সরে যেতে মাইকিং

প্রতিনিধি, বান্দরবান

image

সামনে প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা, ঝুঁকি নিয়ে বসবাস বান্দরবান পাহাড়ে, মাইকিং করে সরে যেতে বলছে প্রশাসন -সংবাদ

বান্দরবানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। জেলার সাতটি উপজেলা ও ২টি পৌরসভা এবং ৩৩টি ইউনিয়নে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই পাহাড় কেটে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে ঝুঁকিতে বাস করেছে এসব মানুষ। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং বৃক্ষনিধনের কারণে পাহাড় ধসে ঘটছে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা।

এসবের পরও বন্ধ হচ্ছে না বান্দরবানে পাহাড় কাটাসহ অবৈধ বসতি স্থাপন। গত ১০ বছরে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষণ ও ভূমি ধসে বিভিন্ন বয়সী নারী-শিশুসহ প্রায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় এবং দুইটি পৌর এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে (পাদদেশে) বসবাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক পরিবার। যার মধ্যে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি পরিবার অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, বর্ষার শুরুতে প্রতিদিনই মাইকিং করা হচ্ছে তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে। বান্দরবানের বেশিরভাগ এলাকা পাহাড়বেষ্টিত আর তাই পাহাড় কেটে অথবা পাহাড়ের আশপাশে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে অসংখ্য নতুন নতুন স্থাপনা। তবে পাহাড় কর্র্তন আর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসত রোধে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড় ধসের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। আর পাহাড় ধসে হতাহতের দুর্ঘটনা এড়াতে এবং পাহাড়ের ঝূঁকিতে থাকা মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে প্রশাসন নিয়েছে নানা উদ্যোগ।

ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের মতে, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা প্রায় শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ এবং যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের মধ্যে হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যাই বেশি। জীবিকার তাগিদে পাহাড়ের ঢালুতে পাহাড় কেটে তৈরি করা আবাসস্থলগুলোতে কম ভাড়ায় বসবাস করা যায়। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হলেই মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য অন্যত্র আবাসনের ব্যবস্থা না করায় নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে চান না তারা। তারা মনে করে, তাদের সরকারিভাবে স্থায়ী পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন।

বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম বলেন, পাহাড় ধস তাৎক্ষণিক ঘটনা মনে হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার ফসল। ভূমিক্ষয়ে পাহাড়ে ফাঁটল তৈরি হয় এবং ধস নামে। পাহাড় ধসের অন্যতম কারণ হচ্ছে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন না করে পাহাড়ে চাষাবাদ করা। পাহাড় ধস বন্ধে বৃক্ষনিধন এবং পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে প্রতিনিয়ত প্রাণহানির ঘটনা আরও বাড়বে।

এ ব্যাপারে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজী বলেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সভা হয়েছে এবং পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাসরতদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে এবং উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যমান কমিটি থেকে পাদদেশের এসব মানুষকে সরে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা সদরে একটি সাইক্লোন সেন্টারকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বান্দরবানের সাত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দ্রুত পরিষ্কার ও শুকনা খাবার মজুদ ও সহায়তাকারীদের প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।