যত দিন গড়াচ্ছে রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর দূষণ ততোই বাড়ছে। নদী দূষণ পরিমাপের অন্যতম মাপকাঠি হলো পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের মান। মানসম্পন্ন প্রতি লিটার পানিতে ন্যূনতম ৫ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) থাকতে হয়। এ বছরের মার্চে মিরপুরে বুড়িগঙ্গা সেতুর কাছে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ০.৩২ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১.৮৮ শতাংশ কম। গত বছর ৩.২ শতাংশ ডিও থাকা তুরাগের পানির মানও নেমেছে অর্ধেকে। শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ফলে দুই দশক ধরে রাজধানীর নদী দখল ও দূষণ ঘটেছে ব্যাপক হারে।
২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্টে দেয়া এক আদেশে নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ বলা হয়েছে। আদালত বলা হয়েছে, মানুষ বা প্রাণী যেমন কিছু আইনি অধিকার পায় তেমনি নদ-নদীও যেন অধিকার পায়। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো এখন দূষণ আর দখলে বিপর্যস্ত হয়ে মৃত প্রায়। নদীর অভ্যন্তরে প্রাণের অস্তিত্ব মেলে না। এর উপরিভাগে মানুষের চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। রাজধানীর সদরঘাট থেকে গাবতলীতে বিআইডাব্লিউটিসির চলাচল করা ১২টি ওয়াটার বাসের মধ্যে ১০টি বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, নদীর পানির দুর্গন্ধে ওয়াটার বাসে যাত্রী মেলে না।
শিল্পবর্জ্য, পয়োবর্জ্য, দুই সিটির কঠিন বর্জ্য এবং নৌযানের বর্জ্য-এ চারটি বড় উৎসকে নদী দূষণের কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। নদী দূষণের উৎস যেমন একাধিক তেমনি দূষণ রোধ ও তদারকী করার কর্তৃপক্ষও একাধিক। পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে ঢাকা ওয়াসা, শিল্প কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশ অধিদপ্তর, কঠিন বর্জ্য অপসারণ ও পরিশোধন করার দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের আর নৌযানের বর্জ্য অপসারণ ও নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব বিআইডাব্লিউটিএ’র। সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষই যথাযথ দায়িত্ব পালন করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা একে অপরের ওপর দায় চাপায়। তাদের দায়িত্ব কী সেটা যখন স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তখন তারা লোকবল সংকটসহ নানান সংকটের কথা বলে দায় সারেন।
আমরা জানতে চাই লোকবল এবং সামর্থ্য যতটুক আছে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার কী কর্তৃপক্ষ করছে? নদী দূষণ প্রশ্নে দায় চাপানোর এ খেলা বন্ধ করতে হবে। দখল ও দূষণ বন্ধে যার যা দায়িত্ব আছে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই পালন করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
নদী দূষণ বন্ধে একাধিক প্রকল্পের কথা শোনা যায়। কিন্তু এসব কবে বাস্তবায়ন হবে আর কবে দূষণ বন্ধ হবে, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা পাবে সেটা একটা প্রশ্ন। অতীতের অনেক মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে যার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। আমরা বলতে চাই, নদী দূষণ রোধে নেয়া প্রকল্পগুলোর কাজের গতি তরান্বিত করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নদী দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করাও জরুরি।
মঙ্গলবার, ০৮ জুন ২০২১ , ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৬ শাওয়াল ১৪৪২
যত দিন গড়াচ্ছে রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর দূষণ ততোই বাড়ছে। নদী দূষণ পরিমাপের অন্যতম মাপকাঠি হলো পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের মান। মানসম্পন্ন প্রতি লিটার পানিতে ন্যূনতম ৫ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) থাকতে হয়। এ বছরের মার্চে মিরপুরে বুড়িগঙ্গা সেতুর কাছে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ০.৩২ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১.৮৮ শতাংশ কম। গত বছর ৩.২ শতাংশ ডিও থাকা তুরাগের পানির মানও নেমেছে অর্ধেকে। শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ফলে দুই দশক ধরে রাজধানীর নদী দখল ও দূষণ ঘটেছে ব্যাপক হারে।
২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্টে দেয়া এক আদেশে নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ বলা হয়েছে। আদালত বলা হয়েছে, মানুষ বা প্রাণী যেমন কিছু আইনি অধিকার পায় তেমনি নদ-নদীও যেন অধিকার পায়। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো এখন দূষণ আর দখলে বিপর্যস্ত হয়ে মৃত প্রায়। নদীর অভ্যন্তরে প্রাণের অস্তিত্ব মেলে না। এর উপরিভাগে মানুষের চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। রাজধানীর সদরঘাট থেকে গাবতলীতে বিআইডাব্লিউটিসির চলাচল করা ১২টি ওয়াটার বাসের মধ্যে ১০টি বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, নদীর পানির দুর্গন্ধে ওয়াটার বাসে যাত্রী মেলে না।
শিল্পবর্জ্য, পয়োবর্জ্য, দুই সিটির কঠিন বর্জ্য এবং নৌযানের বর্জ্য-এ চারটি বড় উৎসকে নদী দূষণের কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। নদী দূষণের উৎস যেমন একাধিক তেমনি দূষণ রোধ ও তদারকী করার কর্তৃপক্ষও একাধিক। পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে ঢাকা ওয়াসা, শিল্প কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশ অধিদপ্তর, কঠিন বর্জ্য অপসারণ ও পরিশোধন করার দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের আর নৌযানের বর্জ্য অপসারণ ও নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব বিআইডাব্লিউটিএ’র। সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষই যথাযথ দায়িত্ব পালন করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা একে অপরের ওপর দায় চাপায়। তাদের দায়িত্ব কী সেটা যখন স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তখন তারা লোকবল সংকটসহ নানান সংকটের কথা বলে দায় সারেন।
আমরা জানতে চাই লোকবল এবং সামর্থ্য যতটুক আছে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার কী কর্তৃপক্ষ করছে? নদী দূষণ প্রশ্নে দায় চাপানোর এ খেলা বন্ধ করতে হবে। দখল ও দূষণ বন্ধে যার যা দায়িত্ব আছে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই পালন করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
নদী দূষণ বন্ধে একাধিক প্রকল্পের কথা শোনা যায়। কিন্তু এসব কবে বাস্তবায়ন হবে আর কবে দূষণ বন্ধ হবে, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা পাবে সেটা একটা প্রশ্ন। অতীতের অনেক মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে যার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। আমরা বলতে চাই, নদী দূষণ রোধে নেয়া প্রকল্পগুলোর কাজের গতি তরান্বিত করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নদী দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করাও জরুরি।