কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এক গ্যাংয়ের সদস্য আরেক গ্যাংয়ের সদস্যকে তুই বলে সম্বোধন করায় হত্যা করা হয়েছে। আবার গ্যাংগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানা কারণে গ্যাংয়ের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকে। ২০১৭ সালে রাজধানীর উত্তরায় আদনান হত্যাকাণ্ডের পরপর কিশোর গ্যাংয়ে সহিংসতার খবর বেরিয়ে আসে। ওই ঘটনায় র্যাব অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে। এভাবে একে একে ৪টি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য খোদ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে। গ্যাং চালাতে তারা চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ সবই করছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের একের পর এক অপরাধের কাহিনী বেরিয়ে আসার পর র্যাবের পক্ষ থেকে গ্যাংয়ের সদস্যদের আটক করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আরও তথ্য উদ্ঘাটনে র্যাবের গোয়েন্দা দল কাজ করছে।
র্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদকে জানান, ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে ১৭ নম্বর রোডের ওপর আদনান কবিরকে (১৪) সংঘবদ্ধ গ্যাং নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
র্যাবের তদন্তে তিনটি গ্যাংয়ের মধ্যে (ডিসকো বয়েস, বিগবস্ ও নাইন স্টার গ্রুপ) অভ্যান্তরীণ কোন্দল ছিল। তখন ডিসকো বয়েস গ্যাং ও বিগবস্ গ্যাংয়ের সদস্যরা নাইন স্টার গ্যাং লিডারকে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করে। পরবর্তীতে নাইন স্টার গ্রুপের সদস্যরা বিগবস গ্যাংয়ের লিডারকে আক্রমণ করে। এরই জের ধরে ডিসকো ও বিগবস গ্যাংয়ের সদস্যরা আদনান কবিরকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব সদস্যরা উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি ডিসকো বয়েস গ্যাংয়ের দলনেতাসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এরপর মূল আসামি তালাচাবি রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্কুলছাত্র হৃদয় হত্যা
২০১৯ সালে ২১ মার্চ রাজধানীর উত্তরখান এলাকার রাজবাড়ী বাহরেরটেক এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে কামরুল হাসান হৃদয় (২০) নিহত হয়।
র্যাবের তদন্তে জানা গেছে, উত্তরখান এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কিশোর গাংয়ের বিগবস, ছোটন গ্রুপ ও কাম্মীরী) মধ্যে সংঘর্ষে কামরুল হাসান হৃদয়কে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। নিহত কামরুল হাসান বিগবস ও ছোটন গ্যাংয়ের সদস্য।
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ র্যাব-১ রাজধানীর অদূরে জয়দেবপুরে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মুরাদ হোসেন ওরফে টেলি রাবিক্ষকে গ্রেপ্তার করেছে।
স্কুলছাত্র শুভ আহমেদ হত্যা
২০১৯ সালের ৭ জুলাই টঙ্গীতে স্কুলছাত্র শুভ আহমেদকে (১৬) বুকে পিঠে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। তদন্তে জানা গেছে, টঙ্গী বিসিক ফকির মার্কেট পাড়ার মদিনাপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শুভ আহমেদকে হত্যা করে। সে স্কুলছাত্র ছিল।
নূরুল ইসলাম নুরু হত্যা
২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে গাজীপুর সদরের রাজ দীঘিরপাড় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে সংঘর্ষে নুরুল ইসলাম নুরু ছুরিকাঘাতে মারা যায়।
হত্যাকাণ্ডের কারণ : দিঘিরপাড় গ্যাং ও ভাই ব্রাদাস গ্যাংয়ের সিনিয়র সদস্যকে তুই বলে সম্বোধন করে। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর ভাই ব্রাদাস গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। ঘটনার দিন ভাই বাদ্রাস গ্যাংয়ের ১০ থেকে ১২ সদস্য মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দীঘিরপাড় গ্যাংয়ের ওপর হঠাৎ করে চড়াও হয়। নুরুল তাদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য পাশে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন অন্যরা পালিয়ে যায়। এরপর ভাই ব্রাদাস গ্যাংয়ের সদস্যরা তাকে পুকুর থেকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর র্যাব-১ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এভাবে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করেছে। তার রহস্য উদ্ঘাটনে র্যাব কাজ করছে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আধিপত্য বিস্তার ও এলাকায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য সংঘবদ্ধভাবে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে এলাকার জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। রাজধানীর খিলগাঁও ও শাহজাহানপুর এলাকা থেকে এ ধরনের ১৩ জনকে আটক করে। পরে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রত্যেকের ৫শ’ টাকা জরিমানা করে।
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজধানীর খিলগাঁও, তালতলা, শাহজাহানপুর, সূত্রাপুর, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, শেরেবাংলা নগর, কলেজগেট, শ্যামলী শিশুমেলা ও মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে ৫৭ জনকে আটক করা হয়েছিল। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগে ৬টি কিশোর গ্যাংয়ের ১৭৮ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
বুধবার, ০৯ জুন ২০২১ , ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৭ শাওয়াল ১৪৪২
বাকী বিল্লাহ
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এক গ্যাংয়ের সদস্য আরেক গ্যাংয়ের সদস্যকে তুই বলে সম্বোধন করায় হত্যা করা হয়েছে। আবার গ্যাংগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানা কারণে গ্যাংয়ের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকে। ২০১৭ সালে রাজধানীর উত্তরায় আদনান হত্যাকাণ্ডের পরপর কিশোর গ্যাংয়ে সহিংসতার খবর বেরিয়ে আসে। ওই ঘটনায় র্যাব অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে। এভাবে একে একে ৪টি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য খোদ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে। গ্যাং চালাতে তারা চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ সবই করছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের একের পর এক অপরাধের কাহিনী বেরিয়ে আসার পর র্যাবের পক্ষ থেকে গ্যাংয়ের সদস্যদের আটক করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আরও তথ্য উদ্ঘাটনে র্যাবের গোয়েন্দা দল কাজ করছে।
র্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদকে জানান, ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে ১৭ নম্বর রোডের ওপর আদনান কবিরকে (১৪) সংঘবদ্ধ গ্যাং নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
র্যাবের তদন্তে তিনটি গ্যাংয়ের মধ্যে (ডিসকো বয়েস, বিগবস্ ও নাইন স্টার গ্রুপ) অভ্যান্তরীণ কোন্দল ছিল। তখন ডিসকো বয়েস গ্যাং ও বিগবস্ গ্যাংয়ের সদস্যরা নাইন স্টার গ্যাং লিডারকে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করে। পরবর্তীতে নাইন স্টার গ্রুপের সদস্যরা বিগবস গ্যাংয়ের লিডারকে আক্রমণ করে। এরই জের ধরে ডিসকো ও বিগবস গ্যাংয়ের সদস্যরা আদনান কবিরকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব সদস্যরা উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি ডিসকো বয়েস গ্যাংয়ের দলনেতাসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এরপর মূল আসামি তালাচাবি রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্কুলছাত্র হৃদয় হত্যা
২০১৯ সালে ২১ মার্চ রাজধানীর উত্তরখান এলাকার রাজবাড়ী বাহরেরটেক এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে কামরুল হাসান হৃদয় (২০) নিহত হয়।
র্যাবের তদন্তে জানা গেছে, উত্তরখান এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কিশোর গাংয়ের বিগবস, ছোটন গ্রুপ ও কাম্মীরী) মধ্যে সংঘর্ষে কামরুল হাসান হৃদয়কে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। নিহত কামরুল হাসান বিগবস ও ছোটন গ্যাংয়ের সদস্য।
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ র্যাব-১ রাজধানীর অদূরে জয়দেবপুরে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মুরাদ হোসেন ওরফে টেলি রাবিক্ষকে গ্রেপ্তার করেছে।
স্কুলছাত্র শুভ আহমেদ হত্যা
২০১৯ সালের ৭ জুলাই টঙ্গীতে স্কুলছাত্র শুভ আহমেদকে (১৬) বুকে পিঠে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। তদন্তে জানা গেছে, টঙ্গী বিসিক ফকির মার্কেট পাড়ার মদিনাপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শুভ আহমেদকে হত্যা করে। সে স্কুলছাত্র ছিল।
নূরুল ইসলাম নুরু হত্যা
২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে গাজীপুর সদরের রাজ দীঘিরপাড় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে সংঘর্ষে নুরুল ইসলাম নুরু ছুরিকাঘাতে মারা যায়।
হত্যাকাণ্ডের কারণ : দিঘিরপাড় গ্যাং ও ভাই ব্রাদাস গ্যাংয়ের সিনিয়র সদস্যকে তুই বলে সম্বোধন করে। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর ভাই ব্রাদাস গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। ঘটনার দিন ভাই বাদ্রাস গ্যাংয়ের ১০ থেকে ১২ সদস্য মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দীঘিরপাড় গ্যাংয়ের ওপর হঠাৎ করে চড়াও হয়। নুরুল তাদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য পাশে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন অন্যরা পালিয়ে যায়। এরপর ভাই ব্রাদাস গ্যাংয়ের সদস্যরা তাকে পুকুর থেকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর র্যাব-১ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এভাবে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করেছে। তার রহস্য উদ্ঘাটনে র্যাব কাজ করছে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আধিপত্য বিস্তার ও এলাকায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য সংঘবদ্ধভাবে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে এলাকার জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। রাজধানীর খিলগাঁও ও শাহজাহানপুর এলাকা থেকে এ ধরনের ১৩ জনকে আটক করে। পরে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রত্যেকের ৫শ’ টাকা জরিমানা করে।
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজধানীর খিলগাঁও, তালতলা, শাহজাহানপুর, সূত্রাপুর, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, শেরেবাংলা নগর, কলেজগেট, শ্যামলী শিশুমেলা ও মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে ৫৭ জনকে আটক করা হয়েছিল। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগে ৬টি কিশোর গ্যাংয়ের ১৭৮ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।