শিবচরে ইমন হত্যা, প্রেমিকা লাবনীসহ ৩ জন গ্রেপ্তার

বিজিবি সদস্য কামরুল জড়িত, পলাতক

পরীক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন ইমন হত্যায় মো. কামরুজ্জামান কামরুল নামের এক বিজিবি সদস্য জড়িত বলে মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোস্তফা রাসেল নিশ্চিত করেছেন। কামরুল বর্তমানে তার ইউনিট থেকে পলাতক রয়েছে। কামরুল প্রেমিকা লাবনী চৌধুরীর বর্তমান প্রেমিক। কোল্ড ড্রিংকসে নেশাদ্রব্য খাইয়ে নদীর চরে নিয়ে অচেতন করে সাবেক প্রেমিক ইমনের গলায় প্রথম ছুরি চালায় প্রেমিকা লাবনী। পরে গলায় আরও দুই দফা ছুরি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে নতুন প্রেমিক বিজিবি সদস্য মো. কামরুজ্জামান কামরুল। পুলিশের চোখ ফাঁকি, গা শিউরে উঠার মতো কৌশল লাবনী চৌধুরী ও তার নতুন প্রেমিক বিজিবি সদস্য মো. কামরুজ্জামান কামরুল অবলম্বন করেছে বলে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় প্রেমিকা লাবনীসহ ৩ জন গ্রেপ্তার হলেও মাস্টারমাইন্ড বিজিবি সদস্য কামরুল পলাতক রয়েছে। পালানোর আগে সে ফেনীতে কর্মরত ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ঈদের দিন দেখা করার কথা বলে ডেকে আনা হয় ইমনকে। অন্তরঙ্গ ভিডিও ফেরত না দেয়ায় লাবনী নতুন প্রেমিক ও সহযোগীদের নিয়ে এ ঘটনা ঘটায় বলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানিয়েছে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মে মাদারীপুরের শিবচরের চর-বাঁচামারা গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয় বিসিএস পরীক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন ইমনের। ইমন শিবচর উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরকামার কান্দি গ্রামের সেকান কাজীর ছেলে। ১৪ মে ঈদের দিন শুক্রবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করলে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় জেলার গোয়েন্দা পুলিশ।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ২৫ মে মঙ্গলবার প্রেমিকা লাবনী আক্তার ও তার সহযোগি পাশের গ্রামের মেহেদী ফরাজীকে গ্রেপ্তার করে। বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ২৯ মে গ্রেপ্তার হয় সাজেদা মারিয়া নামের আরও এক নারী। সাজেদা বিজিবি সদস্য কামরুলের প্রাক্তন প্রেমিকা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, ঢাকায় পড়ুয়া ইসমাইল হোসেন ইমন ও শিবচরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের উত্তর তাজপুরের আলমগীর চৌধুরীর মেয়ে লাবনী আক্তার আত্মীয়তার সূত্রে বেয়াই বেয়াইন। সেই সূত্র ধরে এক বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের সমঝোতায় উভয়ের মাঝে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বেশকিছু ছবি ও ভিডিও ইমন তার মুঠোফোনে ধারণ করে রাখে। ৬ মাস আগে সম্পর্ক ছিন্ন হয়। সম্পর্ক ছিন্ন হলেও ইমন ঢাকা থেকে এলেই ওই ভিডিও ও ছবিগুলো ফেইসবুকে দেয়ার ভয় দেখিয়ে লাবনীর সঙ্গে মিলিত হতো।

এরই মাঝে পাশের গ্রামের বিজিবি সদস্য মো. কামরুজ্জামান কামরুল নামের আরেক যুবকের সঙ্গে লাবনীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও লাবনী ইমনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে বাধ্য হয়। হাজারো অনুনয় বিনয়েও থামানো যাচ্ছিল না ইমনকে। ঈদেও ইমন এলাকায় এসে আবারও লাবনীকে একই প্রস্তাব দেয়। লাবনী তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বিষয়টি এবার নতুন প্রেমিক মো. কামরুজ্জামান কামরুলকে জানায় লাবনী। কামরুল লাবনীকে ১৪ মে ঈদের দিন দুপুরে ইমনকে সময় দেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়। সেই মোতাবেক ইমনকে আসতে বলে লাবনী।

এই ৩/৪ দিন লাবনী ইমনের সঙ্গে পাশের বাড়ির এখলাস নামের অন্য একজনের মোবাইল থেকে যোগাযোগ করে। ঈদের দিন দুপুরে ইমন পার্শবর্তী জামালকে নিয়ে শিবচরের দত্তপাড়ায় সূর্য্যনগর বাজার এলাকায় দেখা করে লাবনীর সঙ্গে। আসতে বিলম্ব হওয়ায় লাবনী অপরিচিত এক ইজিবাইক চালকের মোবাইল থেকে ইমনকে ফোনও দেয়। ইমন, জামাল আসার পর লাবনী ব্যাগ থেকে বের করে কোল্ড ড্রিংকস খেতে দেয়। জামালকে সূর্য্যনগরে বসিয়ে রেখে ইমন ও লাবনী কথা বলার কথা বলে অন্যত্র চলে যায়। কোল্ড ড্রিংকসের কিছুটা অংশ খাওয়ার পর থেকেই জামালের মাথা ঘুরতে থাকায় সে আর ওদের বেশি লক্ষ্য রাখতে পারেনি।

এদিকে ইমনকে নিয়ে লাবনী একটি ইজিবাইকে চড়ে আড়িয়াল খা নদের হাজী শরিয়তউল্লাহ সেতু পার হয়ে সন্ন্যাসীরচরের পুরাতন ফেরি ঘাট এলাকায় চলে যায়। ওই ইজিবাইকে পরিচয় গোপন করে যাত্রী বেশে নতুন প্রেমিক কামরুল ও আরেক মেয়েও ছিল। যাত্রাপথে পুরাতন ফেরি ঘাট এলাকায় নেমে লাবনী ইমনকে ভিডিও ও ছবিগুলো মুছে ফেলতে অনুনয় বিনয় করতে থাকে। কিন্তু ইমন এতে রাজি না হয়ে উল্টো শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু অজান্তেই ইমন কোল্ড ড্রিংকসের চেতনানাশকের প্রভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে থাকলেও তার চাহিদা অনুযায়ী লাবনীকে চাপ দিতে থাকে। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে আসে। লাবনী ইমনকে কৌশলে আড়িয়াল খা তীরবর্তী নির্জন চরে নিয়ে যায়। পিছু পিছু তাদের অনুসরণ করছিল কামরুল ও আরেকটি মেয়ে।

নির্জন নদীর পাড়ে গিয়ে ইমন জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চাপ দেয়। রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিক নতুন প্রেমিক কামরুল সেখানে এসে উপস্থিত হয়। কামরুল ইমনের হাত চেপে ধরলে লাবনী ধারালো ছুড়ি দিয়ে ২ বার গলায় আঘাত করে। এরপর প্রায় একই স্থানে একই অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা। এরপর লাশ পাশেই নদীতে ফেলে দেয় তারা। পরদিন প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি উদ্ধার হলেও পরে স্বজনরা শনাক্ত করে।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ডিবি পুলিশকে সংযুক্ত করে পুলিশ সুপার। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়েও লাবনীর কৌশলের কাছে প্রথমে হিমশিম খায় পুলিশ। হত্যার ২দিন পরই লাবনীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলেও পরে জিম্মায় ছেড়ে দেয়। পরে পুলিশ দীর্ঘ অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয় লাবনী ও বিজিবি সদস্য কামরুল এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড।

লাবনী সন্দেহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সর্বশেষ কয়েকদিন পার্শবর্তী এখলাস নামের একজনের মোবাইল থেকে ইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। হত্যাকাণ্ডের দিনও সে বিচলিত না হয়ে বা অপরিচিত ইজিবাইক চালকের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ইমনকে দ্রুত আসতে তাগাদা দেয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণ দেখে শেষ পর্যন্ত ঘটনার আসল কারণ উম্মোচন করেন লাবনী আক্তার। ইমনকে সে প্লেবয় হিসেবে পুলিশের কাছে উপস্থাপন করে। অসংখ্য মেয়ের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেন।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার ঘোষ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে ৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রেমিকা লাবনী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। সে দাবি করছে মূলত অন্তরঙ্গ ভিডিও মুছে না ফেলায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পলাতক আসামি কামরুল ফেনী সেক্টরে কর্মরত ছিল।

ডিবির ওসি মো. আল মামুন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ আমরা উদ্ঘাটন করেছি। আসামি কামরুলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, মো. কামরুজ্জামান কামরুল একজন বিজিবি সদস্য। সে যে সেক্টরে কর্মরত ছিল সেই সেক্টর কমান্ডারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। কিন্তু সে সেখান থেকে আগেই ছুটি নিয়ে পালিয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। আশাকরি শীঘ্রই সে গ্রেপ্তার হয়ে যাবে।

বুধবার, ০৯ জুন ২০২১ , ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৭ শাওয়াল ১৪৪২

শিবচরে ইমন হত্যা, প্রেমিকা লাবনীসহ ৩ জন গ্রেপ্তার

বিজিবি সদস্য কামরুল জড়িত, পলাতক

প্রতিনিধি, শিবচর (মাদারীপুর)

image

পরীক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন ইমন হত্যায় মো. কামরুজ্জামান কামরুল নামের এক বিজিবি সদস্য জড়িত বলে মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোস্তফা রাসেল নিশ্চিত করেছেন। কামরুল বর্তমানে তার ইউনিট থেকে পলাতক রয়েছে। কামরুল প্রেমিকা লাবনী চৌধুরীর বর্তমান প্রেমিক। কোল্ড ড্রিংকসে নেশাদ্রব্য খাইয়ে নদীর চরে নিয়ে অচেতন করে সাবেক প্রেমিক ইমনের গলায় প্রথম ছুরি চালায় প্রেমিকা লাবনী। পরে গলায় আরও দুই দফা ছুরি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে নতুন প্রেমিক বিজিবি সদস্য মো. কামরুজ্জামান কামরুল। পুলিশের চোখ ফাঁকি, গা শিউরে উঠার মতো কৌশল লাবনী চৌধুরী ও তার নতুন প্রেমিক বিজিবি সদস্য মো. কামরুজ্জামান কামরুল অবলম্বন করেছে বলে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় প্রেমিকা লাবনীসহ ৩ জন গ্রেপ্তার হলেও মাস্টারমাইন্ড বিজিবি সদস্য কামরুল পলাতক রয়েছে। পালানোর আগে সে ফেনীতে কর্মরত ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ঈদের দিন দেখা করার কথা বলে ডেকে আনা হয় ইমনকে। অন্তরঙ্গ ভিডিও ফেরত না দেয়ায় লাবনী নতুন প্রেমিক ও সহযোগীদের নিয়ে এ ঘটনা ঘটায় বলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানিয়েছে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মে মাদারীপুরের শিবচরের চর-বাঁচামারা গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয় বিসিএস পরীক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন ইমনের। ইমন শিবচর উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরকামার কান্দি গ্রামের সেকান কাজীর ছেলে। ১৪ মে ঈদের দিন শুক্রবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করলে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় জেলার গোয়েন্দা পুলিশ।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ২৫ মে মঙ্গলবার প্রেমিকা লাবনী আক্তার ও তার সহযোগি পাশের গ্রামের মেহেদী ফরাজীকে গ্রেপ্তার করে। বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ২৯ মে গ্রেপ্তার হয় সাজেদা মারিয়া নামের আরও এক নারী। সাজেদা বিজিবি সদস্য কামরুলের প্রাক্তন প্রেমিকা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, ঢাকায় পড়ুয়া ইসমাইল হোসেন ইমন ও শিবচরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের উত্তর তাজপুরের আলমগীর চৌধুরীর মেয়ে লাবনী আক্তার আত্মীয়তার সূত্রে বেয়াই বেয়াইন। সেই সূত্র ধরে এক বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের সমঝোতায় উভয়ের মাঝে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বেশকিছু ছবি ও ভিডিও ইমন তার মুঠোফোনে ধারণ করে রাখে। ৬ মাস আগে সম্পর্ক ছিন্ন হয়। সম্পর্ক ছিন্ন হলেও ইমন ঢাকা থেকে এলেই ওই ভিডিও ও ছবিগুলো ফেইসবুকে দেয়ার ভয় দেখিয়ে লাবনীর সঙ্গে মিলিত হতো।

এরই মাঝে পাশের গ্রামের বিজিবি সদস্য মো. কামরুজ্জামান কামরুল নামের আরেক যুবকের সঙ্গে লাবনীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও লাবনী ইমনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে বাধ্য হয়। হাজারো অনুনয় বিনয়েও থামানো যাচ্ছিল না ইমনকে। ঈদেও ইমন এলাকায় এসে আবারও লাবনীকে একই প্রস্তাব দেয়। লাবনী তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বিষয়টি এবার নতুন প্রেমিক মো. কামরুজ্জামান কামরুলকে জানায় লাবনী। কামরুল লাবনীকে ১৪ মে ঈদের দিন দুপুরে ইমনকে সময় দেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়। সেই মোতাবেক ইমনকে আসতে বলে লাবনী।

এই ৩/৪ দিন লাবনী ইমনের সঙ্গে পাশের বাড়ির এখলাস নামের অন্য একজনের মোবাইল থেকে যোগাযোগ করে। ঈদের দিন দুপুরে ইমন পার্শবর্তী জামালকে নিয়ে শিবচরের দত্তপাড়ায় সূর্য্যনগর বাজার এলাকায় দেখা করে লাবনীর সঙ্গে। আসতে বিলম্ব হওয়ায় লাবনী অপরিচিত এক ইজিবাইক চালকের মোবাইল থেকে ইমনকে ফোনও দেয়। ইমন, জামাল আসার পর লাবনী ব্যাগ থেকে বের করে কোল্ড ড্রিংকস খেতে দেয়। জামালকে সূর্য্যনগরে বসিয়ে রেখে ইমন ও লাবনী কথা বলার কথা বলে অন্যত্র চলে যায়। কোল্ড ড্রিংকসের কিছুটা অংশ খাওয়ার পর থেকেই জামালের মাথা ঘুরতে থাকায় সে আর ওদের বেশি লক্ষ্য রাখতে পারেনি।

এদিকে ইমনকে নিয়ে লাবনী একটি ইজিবাইকে চড়ে আড়িয়াল খা নদের হাজী শরিয়তউল্লাহ সেতু পার হয়ে সন্ন্যাসীরচরের পুরাতন ফেরি ঘাট এলাকায় চলে যায়। ওই ইজিবাইকে পরিচয় গোপন করে যাত্রী বেশে নতুন প্রেমিক কামরুল ও আরেক মেয়েও ছিল। যাত্রাপথে পুরাতন ফেরি ঘাট এলাকায় নেমে লাবনী ইমনকে ভিডিও ও ছবিগুলো মুছে ফেলতে অনুনয় বিনয় করতে থাকে। কিন্তু ইমন এতে রাজি না হয়ে উল্টো শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু অজান্তেই ইমন কোল্ড ড্রিংকসের চেতনানাশকের প্রভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে থাকলেও তার চাহিদা অনুযায়ী লাবনীকে চাপ দিতে থাকে। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে আসে। লাবনী ইমনকে কৌশলে আড়িয়াল খা তীরবর্তী নির্জন চরে নিয়ে যায়। পিছু পিছু তাদের অনুসরণ করছিল কামরুল ও আরেকটি মেয়ে।

নির্জন নদীর পাড়ে গিয়ে ইমন জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চাপ দেয়। রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিক নতুন প্রেমিক কামরুল সেখানে এসে উপস্থিত হয়। কামরুল ইমনের হাত চেপে ধরলে লাবনী ধারালো ছুড়ি দিয়ে ২ বার গলায় আঘাত করে। এরপর প্রায় একই স্থানে একই অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা। এরপর লাশ পাশেই নদীতে ফেলে দেয় তারা। পরদিন প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি উদ্ধার হলেও পরে স্বজনরা শনাক্ত করে।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ডিবি পুলিশকে সংযুক্ত করে পুলিশ সুপার। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়েও লাবনীর কৌশলের কাছে প্রথমে হিমশিম খায় পুলিশ। হত্যার ২দিন পরই লাবনীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলেও পরে জিম্মায় ছেড়ে দেয়। পরে পুলিশ দীর্ঘ অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয় লাবনী ও বিজিবি সদস্য কামরুল এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড।

লাবনী সন্দেহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সর্বশেষ কয়েকদিন পার্শবর্তী এখলাস নামের একজনের মোবাইল থেকে ইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। হত্যাকাণ্ডের দিনও সে বিচলিত না হয়ে বা অপরিচিত ইজিবাইক চালকের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ইমনকে দ্রুত আসতে তাগাদা দেয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণ দেখে শেষ পর্যন্ত ঘটনার আসল কারণ উম্মোচন করেন লাবনী আক্তার। ইমনকে সে প্লেবয় হিসেবে পুলিশের কাছে উপস্থাপন করে। অসংখ্য মেয়ের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেন।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার ঘোষ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে ৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রেমিকা লাবনী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। সে দাবি করছে মূলত অন্তরঙ্গ ভিডিও মুছে না ফেলায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পলাতক আসামি কামরুল ফেনী সেক্টরে কর্মরত ছিল।

ডিবির ওসি মো. আল মামুন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ আমরা উদ্ঘাটন করেছি। আসামি কামরুলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, মো. কামরুজ্জামান কামরুল একজন বিজিবি সদস্য। সে যে সেক্টরে কর্মরত ছিল সেই সেক্টর কমান্ডারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। কিন্তু সে সেখান থেকে আগেই ছুটি নিয়ে পালিয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। আশাকরি শীঘ্রই সে গ্রেপ্তার হয়ে যাবে।