করোনাকালীন ৮৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা
করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে ‘লেখালেখির অপরাধে’ ৮৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। আর ২০২০ সালে তথ্য প্রকাশে হয়রানি, নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছেন ২৪৭ জন সাংবাদিক। করোনাকালে সরকার দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে যতখানি তৎপর ছিল তার চেয়ে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে শতগুণে বেশি তৎপর ছিল বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা : কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ সময় কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশকে কৌশলগত ঘাটতি থাকায় এবং ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রভাব ও রাজনৈতিক বিবেচনায় টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে একক উৎসের ওপর নির্ভর করায়, চলমান টিকা কার্যক্রমে আকস্মিক স্থবিরতা নেমে এসেছে উল্লেখ করে সংস্থাটি। সংকট মোকাবিলা ও সুশাসনের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের লক্ষে ১৯ দফা সুপারিশ প্রদান করে টিআইবি।
টিআইবি জানায়, সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি, নতুন নতুন ধরনের অনুপ্রবেশ, সংক্রমণ রোধের সক্ষমতা ও টিকা কার্যক্রম বন্ধ হওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ অতিমারী উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে অতিদ্রুত উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের সুযোগ প্রদান করার পাশাপাশি ক্রয়বিধি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির অনুমতি দেয়া প্রয়োজন বলে দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মনজুর-ই-আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে টিআইবি ইতোপূর্বে দুটি গবেষণা পরিচালনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় টিকা ব্যবস্থাপনাসহ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সুশাসনের আলোকে পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়কালের তথ্য সংগ্রহ করে টিআইবি তৃতীয় দফার এই গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছে। এই গবেষণায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সারাদেশের ৪৩টি জেলার ৫৯টি টিকা কেন্দ্র দৈবচয়নের ভিত্তিতে বাছাই করে ১ হাজার ৩ শত ৮৭ জন টিকা গ্রহণকারীর সাক্ষাৎকার নেয়। এছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ১২ ধরনের টিকা গ্রহণে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ৩ শত ১৭টি প্রতিষ্ঠান ও দপ্তর থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ দশমিক ৮ কোটি মানুষকে (জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ) টিকার আওতায় নিয়ে আসা ও সে অনুযায়ী টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে। টিকার বাফার স্টক সংরক্ষণে দূরদর্শিতার ঘাটতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৩ লাখের বেশি টিকাগ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আবার অনলাইনভিত্তিক নিবন্ধন হওয়ার ফলে ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ টিকাগ্রহীতাকে অন্যের সহায়তায় নিবন্ধন নিতে হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ টিকাগ্রহীতা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন যাদের তাদের প্রায় ৭৮ শতাংশকে নিবন্ধন করতে ৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে। অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা সত্ত্বেও কিছু পেশা/জনগোষ্ঠীর মানুষের বয়স ৪০ বছর না হওয়ার কারণে তারা নিবন্ধন করতে পারেনি। আবার পেশা/জনগোষ্ঠী যাচাইয়ের সুযোগ না থাকায় অগ্রাধিকার তালিকার বাইরে থেকে অনেকে টিকা গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, বিভিন্ন হাসপাতালের কোভিড মোকাবিলায় বরাদ্দ ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত ছিল। যেমন পাঁচটি হাসপাতালে ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগ ও কোয়ারেন্টিন বাবদ ৬২ দশমিক ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ কোটি টাকার দুর্নীতি; ক্রয়বিধি লঙ্ঘন করে এক লাখ কিট ক্রয়; বিধি লঙ্ঘন করে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে ক্রয়াদেশ প্রদানের ঘটনা দেখা গেছে। করোনাকালে কারিগরি জনবলের ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগে জনপ্রতি ১৫-২০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। উপযোগিতা যাচাই না করে হাসপাতাল নির্মাণ এবং তার যথাযথ ব্যবহার না করে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় ৩১ কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের ক্রয়ে সংঘটিত দুর্নীতির কারণে বারবার পরিচালক পরিবর্তন, ধীরগতির তদন্ত কার্যক্রমের প্রভাবে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা গেছে। দুর্নীতিতে জড়িত কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।
সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন ধরনের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সময় ইউপি নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে উদ্যোগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী পরিচালক বলেন, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময় জনগণের উদ্বেগের বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিয়ে জনস্বার্থবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেই যাচ্ছে। এখন নির্বাচনের সময় না। তাই আমরা আশা করবো কমিশন অবিলম্বে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সবার আগে মানুষের কল্যাণ বিবেচেনা করবেন এবং এই এখতিয়ার কমিশনের আছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সুশাসনের ঘাটতি নিরসনে টিকা কার্যক্রম সম্পর্কিত ১১টি এবং অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কিত ৮টিসহ মোট ১৯ দফা সুপারিশ প্রদান করে টিআইবি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে কীভাবে, কত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় আনা হবে তার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করা; উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের সুযোগ প্রদান করা; সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির অনুমতি প্রদান করা; রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ব্যতীত টিকা ক্রয় চুক্তি সম্পর্কিত সব তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করা; টিকা কেন্দ্রে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা এবং অভিযোগের ভিত্তিতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কিত সুপারিশের মধ্যে কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত ও সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা; স্টোরে ফেলে রাখা আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অতি দ্রুততার সঙ্গে ব্যবহারযোগ্য করা; সব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার স্থাপন করা; কোভিড-১৯ চিকিৎসার খরচ সর্বসাধারণের আয়ত্তের মধ্যে রাখতে চিকিৎসা ফির সীমা নির্ধারণ করা এবং স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবন-জীবিকার সংস্থান করে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক ‘লকডাউন’ দেয়া এবং সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাসহ নিষেধাজ্ঞার আওতা নির্ধারণ করা উল্লেখযোগ্য।
বুধবার, ০৯ জুন ২০২১ , ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৭ শাওয়াল ১৪৪২
করোনাকালীন ৮৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে ‘লেখালেখির অপরাধে’ ৮৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। আর ২০২০ সালে তথ্য প্রকাশে হয়রানি, নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছেন ২৪৭ জন সাংবাদিক। করোনাকালে সরকার দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে যতখানি তৎপর ছিল তার চেয়ে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে শতগুণে বেশি তৎপর ছিল বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা : কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ সময় কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশকে কৌশলগত ঘাটতি থাকায় এবং ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রভাব ও রাজনৈতিক বিবেচনায় টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে একক উৎসের ওপর নির্ভর করায়, চলমান টিকা কার্যক্রমে আকস্মিক স্থবিরতা নেমে এসেছে উল্লেখ করে সংস্থাটি। সংকট মোকাবিলা ও সুশাসনের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের লক্ষে ১৯ দফা সুপারিশ প্রদান করে টিআইবি।
টিআইবি জানায়, সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি, নতুন নতুন ধরনের অনুপ্রবেশ, সংক্রমণ রোধের সক্ষমতা ও টিকা কার্যক্রম বন্ধ হওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ অতিমারী উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে অতিদ্রুত উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের সুযোগ প্রদান করার পাশাপাশি ক্রয়বিধি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির অনুমতি দেয়া প্রয়োজন বলে দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মনজুর-ই-আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে টিআইবি ইতোপূর্বে দুটি গবেষণা পরিচালনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় টিকা ব্যবস্থাপনাসহ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সুশাসনের আলোকে পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়কালের তথ্য সংগ্রহ করে টিআইবি তৃতীয় দফার এই গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছে। এই গবেষণায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সারাদেশের ৪৩টি জেলার ৫৯টি টিকা কেন্দ্র দৈবচয়নের ভিত্তিতে বাছাই করে ১ হাজার ৩ শত ৮৭ জন টিকা গ্রহণকারীর সাক্ষাৎকার নেয়। এছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ১২ ধরনের টিকা গ্রহণে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ৩ শত ১৭টি প্রতিষ্ঠান ও দপ্তর থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ দশমিক ৮ কোটি মানুষকে (জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ) টিকার আওতায় নিয়ে আসা ও সে অনুযায়ী টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে। টিকার বাফার স্টক সংরক্ষণে দূরদর্শিতার ঘাটতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৩ লাখের বেশি টিকাগ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আবার অনলাইনভিত্তিক নিবন্ধন হওয়ার ফলে ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ টিকাগ্রহীতাকে অন্যের সহায়তায় নিবন্ধন নিতে হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ টিকাগ্রহীতা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন যাদের তাদের প্রায় ৭৮ শতাংশকে নিবন্ধন করতে ৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে। অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা সত্ত্বেও কিছু পেশা/জনগোষ্ঠীর মানুষের বয়স ৪০ বছর না হওয়ার কারণে তারা নিবন্ধন করতে পারেনি। আবার পেশা/জনগোষ্ঠী যাচাইয়ের সুযোগ না থাকায় অগ্রাধিকার তালিকার বাইরে থেকে অনেকে টিকা গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, বিভিন্ন হাসপাতালের কোভিড মোকাবিলায় বরাদ্দ ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত ছিল। যেমন পাঁচটি হাসপাতালে ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগ ও কোয়ারেন্টিন বাবদ ৬২ দশমিক ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ কোটি টাকার দুর্নীতি; ক্রয়বিধি লঙ্ঘন করে এক লাখ কিট ক্রয়; বিধি লঙ্ঘন করে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে ক্রয়াদেশ প্রদানের ঘটনা দেখা গেছে। করোনাকালে কারিগরি জনবলের ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগে জনপ্রতি ১৫-২০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। উপযোগিতা যাচাই না করে হাসপাতাল নির্মাণ এবং তার যথাযথ ব্যবহার না করে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় ৩১ কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের ক্রয়ে সংঘটিত দুর্নীতির কারণে বারবার পরিচালক পরিবর্তন, ধীরগতির তদন্ত কার্যক্রমের প্রভাবে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা গেছে। দুর্নীতিতে জড়িত কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।
সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন ধরনের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সময় ইউপি নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে উদ্যোগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী পরিচালক বলেন, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময় জনগণের উদ্বেগের বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিয়ে জনস্বার্থবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেই যাচ্ছে। এখন নির্বাচনের সময় না। তাই আমরা আশা করবো কমিশন অবিলম্বে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সবার আগে মানুষের কল্যাণ বিবেচেনা করবেন এবং এই এখতিয়ার কমিশনের আছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সুশাসনের ঘাটতি নিরসনে টিকা কার্যক্রম সম্পর্কিত ১১টি এবং অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কিত ৮টিসহ মোট ১৯ দফা সুপারিশ প্রদান করে টিআইবি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে কীভাবে, কত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় আনা হবে তার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করা; উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের সুযোগ প্রদান করা; সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির অনুমতি প্রদান করা; রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ব্যতীত টিকা ক্রয় চুক্তি সম্পর্কিত সব তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করা; টিকা কেন্দ্রে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা এবং অভিযোগের ভিত্তিতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কিত সুপারিশের মধ্যে কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত ও সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা; স্টোরে ফেলে রাখা আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অতি দ্রুততার সঙ্গে ব্যবহারযোগ্য করা; সব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার স্থাপন করা; কোভিড-১৯ চিকিৎসার খরচ সর্বসাধারণের আয়ত্তের মধ্যে রাখতে চিকিৎসা ফির সীমা নির্ধারণ করা এবং স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবন-জীবিকার সংস্থান করে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক ‘লকডাউন’ দেয়া এবং সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাসহ নিষেধাজ্ঞার আওতা নির্ধারণ করা উল্লেখযোগ্য।