প্রতিকূলতা মাড়িয়ে গলদা চিংড়ির রেনু উৎপাদনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল

রাজশাহীতে সময়ের সঙ্গে বাড়ছে মৎস্য চাষ। গতানুগতিক ধারায় লাগছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। আবার আধুনিক ফার্মিঙের মাধ্যমে মৎস্য চাষে বিনিয়োগও বাড়ছে। আর এক্ষেত্রে লাভজনক মাছ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। এমনিই লাভজনক গলদা চিংড়ি চাষ। কিন্তু রাজশাহীতে গলদা চিংড়ির রেনু উৎপাদন না হওয়ার গত দুই বছর আগেও রাজশাহীর চাষিরা লাভজনক এ মাছ চাষে উদাসীন ছিলেন। তবে বর্তমানে সরকারি উদ্যোগে রাজশাহী সিড ম্যাল্টিপুলেশন ফার্মে গলদা চিংড়ির রেনু উৎপাদনে শতভাগ সাফল্য অর্জনসহ লাভজনক এ মাছ চাষে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। এতে হাতের কাছে কম দামে রেনু পাওয়ায় লাভজনক গলদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে চাষিদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহায়তা বৃদ্ধি করা গেলে চিংড়ি চাষে রাজশাহী রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপিত হবে বলে মনে করছে-মৎস্য বিভাগ।

জানা যায়, গলদা চিংড়ি মিষ্টি ও স্বাদু পানির মাছ। তবে বাচ্চা ফোটাতে আবশ্যিকভাবে লোনা পানির প্রয়োজন। বাকি সময় মিষ্টি ও স্বাদু পানি হলেই চলে। এছাড়া এ সময় নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও বাড়তি পরিচর্যারও প্রয়োজন। এ কারণে গলদা চিৎড়ি চাষে খরচ বেশি। তবে দেশ ও দেশের বাইরে চাহিদা থাকায় চড়া দামেও বিক্রি করা যায়। এ কারণে ২০১৭ সালে দেশব্যাপী স্বাদু পানির গলদা চিংড়ির বীজ উৎপাদনক্ষম অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ১৯টি ক্ষুদ্র হ্যাচারি ও নার্সারি সংস্কারের মাধ্যমে চিংড়ির বীজ উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। এরই আওতায় রাজশাহীর মৎস্য বিভাগের অধীন রাজশাহী সিড ম্যাল্টিপুলেশন ফার্মে গলদার রেনু উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু টানা তিনবছর সাফল্যের মুখ দেখেনি এ কর্মসূচি। এরপর গতবছর প্রথম গলদার রেনু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয় এ ফার্ম। এবার করোনাকালীন বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে এ ফার্ম।

রাজশাহীতে মিশ্র পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষে অপার সম্ভাবনা কথা জানিয়েছেন রাজশাহী মৎস্য অফিসের ফিস সিড ম্যাল্টিপুলেশন ফার্ম ম্যানেজার ড. জিন্নাত আরা রোকেয়া চৌধুরী জানান, গলদা চিংড়ির ডিম সংগ্রহ থেকে শুরু করে পোস্ট লার্ভায় পরিণত হওয়া পর্যন্ত পুরো নার্সিং প্রক্রিয়ায় বায়ো-সুরক্ষা বজায় রাখতে হয়। রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ডিম থেকে লার্ভা পাওয়া যায়। লার্ভা থেকে পোস্ট লার্ভায় পৌঁছাতে ১১টা পর্যায় পার করতে হয়। এ সময় ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য, তাপমাত্রা, বায়ু সঞ্চালনসহ পানির গুণমান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। লার্ভা উৎপাদনে খাবারের ভারসাম্যটাও অত্যন্ত সুরক্ষার সঙ্গে করা হয়। এ সময় লার্ভাকে আর্টিমিয়া খাবার হিসেবে দেয়া হয়। সেটা খুবই দামী একটি খাবার। এ সময় লার্ভাগুলোকে ২৫ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হয়। এ রকম বা বেশি তাপমাত্রা হলেই লার্ভার মৃত্যু হার বাড়ে।

নগরীর মেহেরচন্ডী বুধপাড়া এলাকার চাষি ইব্রাহিম জানান, গলদা চিংড়ির চাষ লাভজনক। কিন্তু পরিচর্যা বেশি লাগে। আবার পুকুর গভীর হলেও এর উৎপাদন ভালো হয় না। পুকুরের গভীরতা ৪ থেকে ৫ ফিটের মধ্যে রাখতে হয়। তিনি প্রায় ১০ কাঠামতো পুকুরে এবার গলদা চাষ করবেন। তিনি সরকারি ফার্ম থেকেই রেনু সংগ্রহ করেন। এখানকার রেনু দাম কিছুটা বেশি হলেও গুণগত মান ভালো।

রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানান, অনেক কৃষক চিংড়ি চাষ করছেন। তারা নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১ , ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৮ শাওয়াল ১৪৪২

প্রতিকূলতা মাড়িয়ে গলদা চিংড়ির রেনু উৎপাদনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

image

রাজশাহী : হ্যাচারিতে রেণু পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ করছেন বিজ্ঞানীরা -সংবাদ

রাজশাহীতে সময়ের সঙ্গে বাড়ছে মৎস্য চাষ। গতানুগতিক ধারায় লাগছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। আবার আধুনিক ফার্মিঙের মাধ্যমে মৎস্য চাষে বিনিয়োগও বাড়ছে। আর এক্ষেত্রে লাভজনক মাছ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। এমনিই লাভজনক গলদা চিংড়ি চাষ। কিন্তু রাজশাহীতে গলদা চিংড়ির রেনু উৎপাদন না হওয়ার গত দুই বছর আগেও রাজশাহীর চাষিরা লাভজনক এ মাছ চাষে উদাসীন ছিলেন। তবে বর্তমানে সরকারি উদ্যোগে রাজশাহী সিড ম্যাল্টিপুলেশন ফার্মে গলদা চিংড়ির রেনু উৎপাদনে শতভাগ সাফল্য অর্জনসহ লাভজনক এ মাছ চাষে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। এতে হাতের কাছে কম দামে রেনু পাওয়ায় লাভজনক গলদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে চাষিদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহায়তা বৃদ্ধি করা গেলে চিংড়ি চাষে রাজশাহী রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপিত হবে বলে মনে করছে-মৎস্য বিভাগ।

জানা যায়, গলদা চিংড়ি মিষ্টি ও স্বাদু পানির মাছ। তবে বাচ্চা ফোটাতে আবশ্যিকভাবে লোনা পানির প্রয়োজন। বাকি সময় মিষ্টি ও স্বাদু পানি হলেই চলে। এছাড়া এ সময় নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও বাড়তি পরিচর্যারও প্রয়োজন। এ কারণে গলদা চিৎড়ি চাষে খরচ বেশি। তবে দেশ ও দেশের বাইরে চাহিদা থাকায় চড়া দামেও বিক্রি করা যায়। এ কারণে ২০১৭ সালে দেশব্যাপী স্বাদু পানির গলদা চিংড়ির বীজ উৎপাদনক্ষম অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ১৯টি ক্ষুদ্র হ্যাচারি ও নার্সারি সংস্কারের মাধ্যমে চিংড়ির বীজ উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। এরই আওতায় রাজশাহীর মৎস্য বিভাগের অধীন রাজশাহী সিড ম্যাল্টিপুলেশন ফার্মে গলদার রেনু উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু টানা তিনবছর সাফল্যের মুখ দেখেনি এ কর্মসূচি। এরপর গতবছর প্রথম গলদার রেনু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয় এ ফার্ম। এবার করোনাকালীন বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে এ ফার্ম।

রাজশাহীতে মিশ্র পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষে অপার সম্ভাবনা কথা জানিয়েছেন রাজশাহী মৎস্য অফিসের ফিস সিড ম্যাল্টিপুলেশন ফার্ম ম্যানেজার ড. জিন্নাত আরা রোকেয়া চৌধুরী জানান, গলদা চিংড়ির ডিম সংগ্রহ থেকে শুরু করে পোস্ট লার্ভায় পরিণত হওয়া পর্যন্ত পুরো নার্সিং প্রক্রিয়ায় বায়ো-সুরক্ষা বজায় রাখতে হয়। রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ডিম থেকে লার্ভা পাওয়া যায়। লার্ভা থেকে পোস্ট লার্ভায় পৌঁছাতে ১১টা পর্যায় পার করতে হয়। এ সময় ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য, তাপমাত্রা, বায়ু সঞ্চালনসহ পানির গুণমান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। লার্ভা উৎপাদনে খাবারের ভারসাম্যটাও অত্যন্ত সুরক্ষার সঙ্গে করা হয়। এ সময় লার্ভাকে আর্টিমিয়া খাবার হিসেবে দেয়া হয়। সেটা খুবই দামী একটি খাবার। এ সময় লার্ভাগুলোকে ২৫ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হয়। এ রকম বা বেশি তাপমাত্রা হলেই লার্ভার মৃত্যু হার বাড়ে।

নগরীর মেহেরচন্ডী বুধপাড়া এলাকার চাষি ইব্রাহিম জানান, গলদা চিংড়ির চাষ লাভজনক। কিন্তু পরিচর্যা বেশি লাগে। আবার পুকুর গভীর হলেও এর উৎপাদন ভালো হয় না। পুকুরের গভীরতা ৪ থেকে ৫ ফিটের মধ্যে রাখতে হয়। তিনি প্রায় ১০ কাঠামতো পুকুরে এবার গলদা চাষ করবেন। তিনি সরকারি ফার্ম থেকেই রেনু সংগ্রহ করেন। এখানকার রেনু দাম কিছুটা বেশি হলেও গুণগত মান ভালো।

রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানান, অনেক কৃষক চিংড়ি চাষ করছেন। তারা নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।