গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইলেও বাড়ছে সংক্রমণ

১৭ জেলায় সংক্রমণ ২০ শতাংশের বেশি, লকডাউনেও অনেক জায়গায় বাড়ছে

দেশের ১৭টি জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ২০ থেকে ৬০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর ও গাজীপুরসহ দেশের সাতটি জেলায় গতকাল সংক্রমণের হার ছিল ১৫ থেকে ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

তবে গতকাল গোপালগঞ্জে প্রায় ৩৯ শতাংশ ও টাঙ্গাইলে সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ৩১ শতাংশ। এক সপ্তাহ আগেও এই দুই জেলায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে বা কিছুটা বেশি ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও ‘লকডাউন’র মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে। এসব জেলায় ‘উচ্চ’ সংক্রমণ হচ্ছে বলে জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেছেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে আগামী ১৫ দিন পর করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবাইকে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে এবং গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৮২টি নমুনা পরীক্ষায় ১০৮ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

গত শনিবার থেকে জেলায় ‘লকডাউন’ চলছে; কিন্তু পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হচ্ছে না। করোনায় সাতক্ষীরায় এ পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন চারজন। জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজার ৯৭। এ পর্যন্ত উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২৩৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল করোনাবিষয়ক ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেন, ‘জয়পুরহাটে শতকরা হিসেবে শনাক্তের হার ২৫ শতাংশের বেশি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৯ শতাংশের বেশি, রাজশাহীতে ২৩ শতাংশের বেশি।’

এসব জেলায় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এসব জায়গায় লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপ করায় স্থিতি অবস্থা আছে। এটি যদি অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে ঊর্ধ্বগতি থেকে আমরা রেহাই পেতে পারি।’

যেসব জেলায় শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি

গোপালগঞ্জে গত একদিনে ৭৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। টাঙ্গাইলে ১৩০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

নোয়াখালীতে ৩৫০টি নমুনা পরীক্ষায় ৮০ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

রাজশাহীতে এক হাজার ৭৪৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ।

জয়পুরহাটে ১৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

রংপুরে ১১৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৪ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ।

ঠাকুরগাঁওয়ে ৫১টি নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ৫৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।

খুলনায় ৩৩১টি নমুনা পরীক্ষায় ৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।

যশোরে ৩২৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪৩ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।

কুষ্টিয়ায় ২২২টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ১৮ শতাংশ।

নওগাঁয় ৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২৯ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।

সাতক্ষীরায় ১৮২টি নমুনা পরীক্ষায় ১০৮ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় শনাক্তের হার ৩৬.০৫ শতাংশ

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় এক হাজার ৫৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।

গত একদিনে খুলনা বিভাগে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এ বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন চার হাজার ৪০৩ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩১৮ জন।

খুলনা বিভাগে ঈদের পর থেকে শনাক্ত ও মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত ৯ দিনেই তিন হাজার ২২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময় মারা গেছেন ৪৫ জন।

এর আগের গত ২৩ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এক হাজার ৩২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ওই ৯ দিনে মারা যান ৩১ জন।

খুলনা বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীদের মধ্যে খুলনা জেলায় ৮০ জন (নগরে ৫২ জন), শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।

এছাড়া বাগেরহাটে ৬৮ জন, যশোরে ১৪৩, সাতক্ষীরায় ১০৮, নড়াইলে ২৯, মাগুরা ও মেহেরপুরে ১৩, চুয়াডাঙ্গায় ১৯, ঝিনাইদহে ১৭ এবং কুষ্টিয়ায় ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফোকাল পারসন সুহাস রঞ্জন হালদার সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১০০ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি ছিলেন ১৩০ জন। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন ২৯ জন। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউতে ১৮ জন ও এইচডিইউতে ২১ জন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৫৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ওই হাসপাতালে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণের হার ১৪.৫৩ শতাংশ

রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সাতজন মারা গেছেন করোনায়। একই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬৪১ জনের। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

আগের দিন এই বিভাগে ১২ জনের মৃত্যু ও ৬৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। নমুনা শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।

গতকাল রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমা আক্তার স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গত একদিনে শনাক্ত রোগীর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩৫৩ জন। এক দিনে জেলায় এটিই সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে নওগাঁয় ৮৮ জন। অন্য জেলার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬৫ জন, নাটোরে ৪৪ জন, জয়পুরহাটে ৪২ জন, বগুড়ায় ২৩ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ জন ও পাবনায় ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

বর্তমানে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন চার হাজার ১২৮ জন। এর মধ্যে ৪১ জন ভর্তি হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।

রাজশাহী বিভাগের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনার ‘পিক’ টাইম যাচ্ছে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ৮ জেলার কোথাও কোথাও কয়েকদিন আগে সংক্রমণের হার ৬০ শতাংশের বেশি ছিল। এখন কিছুটা কমলেও তা যেকোন সময় বাড়তে পারে।

পরিস্থিতি খারাপের আশঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের

দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপের যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে; একই সঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে শিথিলতার পরিচয় দিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল জানান, গত ৪ জুন থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এবং গতকাল (৮ জুন) পর্যন্ত বেড়ে ১২ শতাংশের বেশি হয়েছে।

সীমান্তবর্তী কিছু জেলায় স্বাস্থ্য প্রশাসনের পরামর্শে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করছে-জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, ‘এটা সবার মঙ্গলের জন্য করা হচ্ছে। আমরা জনগণের সহায়তা কামনা করি। কোন জায়গায় শিথিলতার পরিচয় দিলে সেটি আমাদের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না।

দেড় মাস পর দৈনিক শনাক্ত ছাড়ালো আড়াই হাজার

গত এক দিনে দেশে দুই হাজার ৫৩৭ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ হয়েছে, যা দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত ২৮ এপ্রিল এর চেয়ে বেশি দুই হাজার ৯৫৫ জনের সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল আট লাখ ১৭ হাজার ৮১৯ জনে।

করোনায় গত এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। এ নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৯৪৯ জনে। এ পর্যন্ত মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ২৬৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন সাত লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৯ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫১০টি ল্যাবে ২০ হাজার ৬০৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ছয় হাজার ৭৯১টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

গত এক দিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৭ জন এবং নারী ১৯ জন। তাদের ৩৩ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া ১২ হাজার ৯১৩ জনের মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৩১৯ জন এবং নারী তিন হাজার ৬৩০ জন।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৬ জনের মধ্যে ৬ জন ঢাকা বিভাগের, ৬ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৯ জন রাজশাহী বিভাগের, ১০ জন খুলনা বিভাগের, এক জন সিলেট বিভাগের এবং চার জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১ , ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৮ শাওয়াল ১৪৪২

গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইলেও বাড়ছে সংক্রমণ

১৭ জেলায় সংক্রমণ ২০ শতাংশের বেশি, লকডাউনেও অনেক জায়গায় বাড়ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দেশের ১৭টি জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ২০ থেকে ৬০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর ও গাজীপুরসহ দেশের সাতটি জেলায় গতকাল সংক্রমণের হার ছিল ১৫ থেকে ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

তবে গতকাল গোপালগঞ্জে প্রায় ৩৯ শতাংশ ও টাঙ্গাইলে সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ৩১ শতাংশ। এক সপ্তাহ আগেও এই দুই জেলায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে বা কিছুটা বেশি ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও ‘লকডাউন’র মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে। এসব জেলায় ‘উচ্চ’ সংক্রমণ হচ্ছে বলে জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেছেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে আগামী ১৫ দিন পর করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবাইকে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে এবং গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৮২টি নমুনা পরীক্ষায় ১০৮ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

গত শনিবার থেকে জেলায় ‘লকডাউন’ চলছে; কিন্তু পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হচ্ছে না। করোনায় সাতক্ষীরায় এ পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন চারজন। জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজার ৯৭। এ পর্যন্ত উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২৩৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল করোনাবিষয়ক ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেন, ‘জয়পুরহাটে শতকরা হিসেবে শনাক্তের হার ২৫ শতাংশের বেশি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৯ শতাংশের বেশি, রাজশাহীতে ২৩ শতাংশের বেশি।’

এসব জেলায় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এসব জায়গায় লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপ করায় স্থিতি অবস্থা আছে। এটি যদি অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে ঊর্ধ্বগতি থেকে আমরা রেহাই পেতে পারি।’

যেসব জেলায় শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি

গোপালগঞ্জে গত একদিনে ৭৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। টাঙ্গাইলে ১৩০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

নোয়াখালীতে ৩৫০টি নমুনা পরীক্ষায় ৮০ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

রাজশাহীতে এক হাজার ৭৪৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ।

জয়পুরহাটে ১৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

রংপুরে ১১৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৪ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ।

ঠাকুরগাঁওয়ে ৫১টি নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ৫৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।

খুলনায় ৩৩১টি নমুনা পরীক্ষায় ৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।

যশোরে ৩২৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪৩ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।

কুষ্টিয়ায় ২২২টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ১৮ শতাংশ।

নওগাঁয় ৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২৯ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।

সাতক্ষীরায় ১৮২টি নমুনা পরীক্ষায় ১০৮ জনের করোনা পাওয়া গেছে, শনাক্তের হার ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় শনাক্তের হার ৩৬.০৫ শতাংশ

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় এক হাজার ৫৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।

গত একদিনে খুলনা বিভাগে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এ বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন চার হাজার ৪০৩ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩১৮ জন।

খুলনা বিভাগে ঈদের পর থেকে শনাক্ত ও মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত ৯ দিনেই তিন হাজার ২২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময় মারা গেছেন ৪৫ জন।

এর আগের গত ২৩ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এক হাজার ৩২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ওই ৯ দিনে মারা যান ৩১ জন।

খুলনা বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীদের মধ্যে খুলনা জেলায় ৮০ জন (নগরে ৫২ জন), শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।

এছাড়া বাগেরহাটে ৬৮ জন, যশোরে ১৪৩, সাতক্ষীরায় ১০৮, নড়াইলে ২৯, মাগুরা ও মেহেরপুরে ১৩, চুয়াডাঙ্গায় ১৯, ঝিনাইদহে ১৭ এবং কুষ্টিয়ায় ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফোকাল পারসন সুহাস রঞ্জন হালদার সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১০০ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি ছিলেন ১৩০ জন। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন ২৯ জন। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউতে ১৮ জন ও এইচডিইউতে ২১ জন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৫৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ওই হাসপাতালে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণের হার ১৪.৫৩ শতাংশ

রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সাতজন মারা গেছেন করোনায়। একই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬৪১ জনের। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

আগের দিন এই বিভাগে ১২ জনের মৃত্যু ও ৬৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। নমুনা শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।

গতকাল রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমা আক্তার স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গত একদিনে শনাক্ত রোগীর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩৫৩ জন। এক দিনে জেলায় এটিই সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে নওগাঁয় ৮৮ জন। অন্য জেলার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬৫ জন, নাটোরে ৪৪ জন, জয়পুরহাটে ৪২ জন, বগুড়ায় ২৩ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ জন ও পাবনায় ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

বর্তমানে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন চার হাজার ১২৮ জন। এর মধ্যে ৪১ জন ভর্তি হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।

রাজশাহী বিভাগের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনার ‘পিক’ টাইম যাচ্ছে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ৮ জেলার কোথাও কোথাও কয়েকদিন আগে সংক্রমণের হার ৬০ শতাংশের বেশি ছিল। এখন কিছুটা কমলেও তা যেকোন সময় বাড়তে পারে।

পরিস্থিতি খারাপের আশঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের

দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপের যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে; একই সঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে শিথিলতার পরিচয় দিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল জানান, গত ৪ জুন থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এবং গতকাল (৮ জুন) পর্যন্ত বেড়ে ১২ শতাংশের বেশি হয়েছে।

সীমান্তবর্তী কিছু জেলায় স্বাস্থ্য প্রশাসনের পরামর্শে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করছে-জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, ‘এটা সবার মঙ্গলের জন্য করা হচ্ছে। আমরা জনগণের সহায়তা কামনা করি। কোন জায়গায় শিথিলতার পরিচয় দিলে সেটি আমাদের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না।

দেড় মাস পর দৈনিক শনাক্ত ছাড়ালো আড়াই হাজার

গত এক দিনে দেশে দুই হাজার ৫৩৭ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ হয়েছে, যা দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত ২৮ এপ্রিল এর চেয়ে বেশি দুই হাজার ৯৫৫ জনের সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল আট লাখ ১৭ হাজার ৮১৯ জনে।

করোনায় গত এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। এ নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৯৪৯ জনে। এ পর্যন্ত মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ২৬৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন সাত লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৯ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫১০টি ল্যাবে ২০ হাজার ৬০৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ছয় হাজার ৭৯১টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

গত এক দিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৭ জন এবং নারী ১৯ জন। তাদের ৩৩ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া ১২ হাজার ৯১৩ জনের মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৩১৯ জন এবং নারী তিন হাজার ৬৩০ জন।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৬ জনের মধ্যে ৬ জন ঢাকা বিভাগের, ৬ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৯ জন রাজশাহী বিভাগের, ১০ জন খুলনা বিভাগের, এক জন সিলেট বিভাগের এবং চার জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।