একধাপ এগোলেও বাসযোগ্য শহরের তলানিতে ঢাকা

১৪০টি দেশের মধ্যে অবস্থান ১৩৭

বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকায় এক ধাপ এগিয়েছে ঢাকা। সূচকের তেমন পরিবর্তন হয়নি। এগোলেও তালিকার তলানিতেই রয়েছে ঢাকা। ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ২০২১ সালের ১৪০টি বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার নাম রয়েছে ১৩৭ নম্বরে।

মোট ১৪০টি শহর নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড। এরপর রয়েছে যথাক্রমে জাপানের ওসাকা, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড, নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন ও জাপানের রাজধানী টোকিও। শীর্ষ ১০-এ থাকা বাকি শহরগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ও জেনেভা, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও ব্রিসবেন। অর্থাৎ, টপটেনে থাকা ১০টি শহর মূলত পাঁচটি দেশের।

অকল্যান্ড শীর্ষে উঠে এসেছে কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্য। যেভাবে চটজলদি ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করে দেশের প্রশাসন এতদিন নাগরিক জীবন সচল রেখেছে, তাতে তাদের স্কোর অনেকটাই বেড়েছে। ঠিক একই কাজ ইউরোপের দেশগুলো সফলভাবে করতে পারেনি। তাই তারা ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা।

নিচের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। যা গত বছর ছিল তৃতীয় অবস্থানে। সূচক বিবেচনায় নিচের শহরগুলো বাস অযোগ্য শহর হিসেবে গণ্য করা হলো। এ বছর লকডাউনের কারণে কিছুদিন যানবাহন ও কলকারখানা বন্ধ থাকায় পরিবেশ দূষণ কিছু কম হয়েছে। তাই বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা এক ধাপ এগিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এই তালিকায় সবার নিচে রয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। ১৪০টি শহরের তালিকায় এর অবস্থান ১৪০তম। ১৩৯তম অবস্থানে রয়েছে নাইজেরিয়ার লাগোস। ১৩৮তম অবস্থানে পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোরেসবি। এছাড়া ১৩৬তম অবস্থানে আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স, ১৩৫তম অবস্থানে লিবিয়ার ত্রিপোলি ও ১৩৪তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি।

স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছরের ওই তালিকায় ঢাকার নাম ছিল ১৩৮ নম্বরে। তার আগের বছর ছিল ১৩৯ নম্বরে। এ বছর তালিকায় স্থিতিশীলতায় ৫৫ পয়েন্ট পেয়েছে ঢাকা। স্বাস্থ্যসেবায় ১৬ দশমিক ৭, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৩০ দশমিক ৮, শিক্ষায় ৩৩ দশমিক ৩ এবং অবকাঠামোতে পেয়েছে ২৬ দশমিক ৮ পয়েন্ট।

তবে ঢাকার পরিবেশ দূষণ রোধ ও অপরিকল্পিত নগরায়ন বন্ধসহ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই সূচকের পরিবর্তন করা সম্ভব্য বলে মনে করে বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘শহরের বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হলো যানবাহনের ধোয়া। গত বছর লকডাউনের বিধিনিষেধের কারণে বায়ু দূষণ ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। যখন যানবাহন চালু হলো তখন তা আবার বৃদ্ধি পায়। এ বছর একই অবস্থা। লকডাউনের কারণে কিছুদিন কম ছিল। এখন আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ স্থান থাকার কথা। কিন্তু রয়েছে ১০ শতাংশের নিচে। তাই সার্বিকভাবে অযোগ্য শহরের তালিকায় এ বছর ঢাকার অবস্থান এক ধাপ এগিয়েছে। কিন্তু সূচকের তেমন পরিবহন হয়নি।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে বসবাসযোগ্য শহরের ক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ২০১৮ সাল থেকে। কিন্তু এবার শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে স্থান পায়নি ভিয়েনা। ২০১৯ সালে ভিয়েনার সঙ্গে একই পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থান ছিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। সেই মেলবোর্ন এবার আট নম্বরে নেমে এসেছে। যে ১০টি শহর সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়েছে, তার মধ্যে আটটিই ইউরোপের কোন না কোন শহর। এই পতনের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জার্মানির হামবুর্গ। ৩৪ সিঁড়ি বেয়ে ৪৭তম স্থানে নেমে এসেছে শহরটি।

বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১ , ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৮ শাওয়াল ১৪৪২

একধাপ এগোলেও বাসযোগ্য শহরের তলানিতে ঢাকা

১৪০টি দেশের মধ্যে অবস্থান ১৩৭

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

বৃষ্টিতে ডুবে আছে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক। প্রতিবছরই বর্ষায় এই দুর্ভোগের শিকার সাধারণ মানুষ। গতকাল বঙ্গভবনের কাছে ডুবন্ত সড়কের চিত্র -সংবাদ

বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকায় এক ধাপ এগিয়েছে ঢাকা। সূচকের তেমন পরিবর্তন হয়নি। এগোলেও তালিকার তলানিতেই রয়েছে ঢাকা। ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ২০২১ সালের ১৪০টি বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার নাম রয়েছে ১৩৭ নম্বরে।

মোট ১৪০টি শহর নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড। এরপর রয়েছে যথাক্রমে জাপানের ওসাকা, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড, নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন ও জাপানের রাজধানী টোকিও। শীর্ষ ১০-এ থাকা বাকি শহরগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ও জেনেভা, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও ব্রিসবেন। অর্থাৎ, টপটেনে থাকা ১০টি শহর মূলত পাঁচটি দেশের।

অকল্যান্ড শীর্ষে উঠে এসেছে কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্য। যেভাবে চটজলদি ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করে দেশের প্রশাসন এতদিন নাগরিক জীবন সচল রেখেছে, তাতে তাদের স্কোর অনেকটাই বেড়েছে। ঠিক একই কাজ ইউরোপের দেশগুলো সফলভাবে করতে পারেনি। তাই তারা ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা।

নিচের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। যা গত বছর ছিল তৃতীয় অবস্থানে। সূচক বিবেচনায় নিচের শহরগুলো বাস অযোগ্য শহর হিসেবে গণ্য করা হলো। এ বছর লকডাউনের কারণে কিছুদিন যানবাহন ও কলকারখানা বন্ধ থাকায় পরিবেশ দূষণ কিছু কম হয়েছে। তাই বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা এক ধাপ এগিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এই তালিকায় সবার নিচে রয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। ১৪০টি শহরের তালিকায় এর অবস্থান ১৪০তম। ১৩৯তম অবস্থানে রয়েছে নাইজেরিয়ার লাগোস। ১৩৮তম অবস্থানে পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোরেসবি। এছাড়া ১৩৬তম অবস্থানে আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স, ১৩৫তম অবস্থানে লিবিয়ার ত্রিপোলি ও ১৩৪তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি।

স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছরের ওই তালিকায় ঢাকার নাম ছিল ১৩৮ নম্বরে। তার আগের বছর ছিল ১৩৯ নম্বরে। এ বছর তালিকায় স্থিতিশীলতায় ৫৫ পয়েন্ট পেয়েছে ঢাকা। স্বাস্থ্যসেবায় ১৬ দশমিক ৭, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৩০ দশমিক ৮, শিক্ষায় ৩৩ দশমিক ৩ এবং অবকাঠামোতে পেয়েছে ২৬ দশমিক ৮ পয়েন্ট।

তবে ঢাকার পরিবেশ দূষণ রোধ ও অপরিকল্পিত নগরায়ন বন্ধসহ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই সূচকের পরিবর্তন করা সম্ভব্য বলে মনে করে বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘শহরের বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হলো যানবাহনের ধোয়া। গত বছর লকডাউনের বিধিনিষেধের কারণে বায়ু দূষণ ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। যখন যানবাহন চালু হলো তখন তা আবার বৃদ্ধি পায়। এ বছর একই অবস্থা। লকডাউনের কারণে কিছুদিন কম ছিল। এখন আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ স্থান থাকার কথা। কিন্তু রয়েছে ১০ শতাংশের নিচে। তাই সার্বিকভাবে অযোগ্য শহরের তালিকায় এ বছর ঢাকার অবস্থান এক ধাপ এগিয়েছে। কিন্তু সূচকের তেমন পরিবহন হয়নি।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে বসবাসযোগ্য শহরের ক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ২০১৮ সাল থেকে। কিন্তু এবার শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে স্থান পায়নি ভিয়েনা। ২০১৯ সালে ভিয়েনার সঙ্গে একই পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থান ছিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। সেই মেলবোর্ন এবার আট নম্বরে নেমে এসেছে। যে ১০টি শহর সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়েছে, তার মধ্যে আটটিই ইউরোপের কোন না কোন শহর। এই পতনের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জার্মানির হামবুর্গ। ৩৪ সিঁড়ি বেয়ে ৪৭তম স্থানে নেমে এসেছে শহরটি।