নোয়াখালী শহরে বাড়ছে করোনা, চরাঞ্চলে ডায়রিয়া

নোয়াখালী জেলার সদর পৌরসভাসহ ইউনিয়ন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪শ জনের করোনা পরীক্ষা করে ৮০ জন শনাক্ত করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে করোনা টেস্ট করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।

জেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট (হ্যালোজিন) সরবরাহ করা হচ্ছে।

নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাছুম ইফতেখার সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, চলতি মাস থেকে নোয়াখালীর সদর পৌরসভা (মাইজি শহর), বিনোদপুর, নোয়াখালী ইউনিয়ন, কাদির হানিফ, নেওয়াজপুরসহ ৬টি ইউনিয়নে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এ কারণে গত ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত লকডাউন দেয়া হয়েছে। এখন স্বাস্থ্য বিভাগের টিম এলাকায় এলাকায় গিয়ে গণটেস্ট করছেন।

আগে নোয়াখালীতে দিনে ১০ থেকে ১৫ জন করোনায় আক্রান্ত হতো। এরপর কখনও কখনও দিনে ২০ জন আক্রান্ত হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এখন দিনে ৮০ জন পর্যন্ত সংক্রমিত হচ্ছে। জেলার মাইজদি শহরসহ আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।

এখন শতকরা ২০ থেকে ২১ ভাগ পর্যন্ত পজেটিভ। গত ঈদুল ফেতরের পর থেকে সংক্রমণ বাড়ছে।

জেলা সিভিল সার্জন মাছুম ইফতেখার বলেন, নোয়াখালীতে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৯ হাজার ২শ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ১২৪ জন মারা গেছেন।

ডায়রিয়া : বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর, হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে ৬শ’র বেশি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত এপ্রিল ও মে মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৪ হাজারেরও বেশি। সুবর্ণচরের প্রতি বাড়িতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আছে।

আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে কমপক্ষে গত এপ্রিল মাস থেকে গতকাল পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জন মারা গেছেন। এ মৌসুমে জেলার বিভিন্ন বাড়ির পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। গভীর ও অগভীর নলকূপের পানির স্তর নেমে গেছে। নলকূপের পানিতে নানা সমস্যা থাকায় তাও ব্যবহার করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির হাহাকার। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া চিকিৎসার ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শায়লা সুলতানা জানান, নানা চেষ্টার পরও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। সেখানে স্যলাইনের অভাব দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ইনচার্জ আনোয়ারা বেগম গতকাল রাতে সংবাদ প্রতিনিধিকে ফোনে জানান, গত ৯ দিনে ৪৮৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। ওয়ার্ডে ওষুধ স্যালাইনের তীব্র সংকট বিরাজ করছে।

এ সম্পর্কে জেলা সির্ভিল সার্জন গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট (হ্যালোজিন) ও স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। যারা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেছেন তারা কেউ মারা যায়নি। অনেকেই হাসপাতাল পর্যন্ত না যাওয়ায় বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিশুদ্ধ পানির অভাবে স্থানীয়রা এখন বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে তা কাজে লাগাচ্ছেন।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে বলেন, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়। তাদের ডায়রিয়াও হতে পারে। তবে নোয়াখালীতে তা নাও হতে পারে। সেখানে পুকুরের পাানি ফুটিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া, অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক জানান, ডায়রিয়া করোনার একটি লক্ষণ। যারা আক্রান্ত তাদের সবাইর করোনা টেস্ট করে যদি পজিটিভ হয় তা হলে আইসোলেশনে রাখতে হবে। নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, সংক্রমণ ঠেকাতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রতিদিন পুলিশ কাজ করছে। অনেকের জরিমানা করা হচ্ছে। লকডাউন পালনের জন্য সবাই কাজ করছেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, নোয়াখালী জেলায় ৩৬ লাখের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে এখন জেলায় সংক্রমণ আতঙ্ক বিরাজ করলেও গ্রাম পর্যায়ে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১ , ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৮ শাওয়াল ১৪৪২

নোয়াখালী শহরে বাড়ছে করোনা, চরাঞ্চলে ডায়রিয়া

বাকী বিল্লাহ

নোয়াখালী জেলার সদর পৌরসভাসহ ইউনিয়ন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪শ জনের করোনা পরীক্ষা করে ৮০ জন শনাক্ত করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে করোনা টেস্ট করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।

জেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট (হ্যালোজিন) সরবরাহ করা হচ্ছে।

নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাছুম ইফতেখার সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, চলতি মাস থেকে নোয়াখালীর সদর পৌরসভা (মাইজি শহর), বিনোদপুর, নোয়াখালী ইউনিয়ন, কাদির হানিফ, নেওয়াজপুরসহ ৬টি ইউনিয়নে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এ কারণে গত ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত লকডাউন দেয়া হয়েছে। এখন স্বাস্থ্য বিভাগের টিম এলাকায় এলাকায় গিয়ে গণটেস্ট করছেন।

আগে নোয়াখালীতে দিনে ১০ থেকে ১৫ জন করোনায় আক্রান্ত হতো। এরপর কখনও কখনও দিনে ২০ জন আক্রান্ত হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এখন দিনে ৮০ জন পর্যন্ত সংক্রমিত হচ্ছে। জেলার মাইজদি শহরসহ আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।

এখন শতকরা ২০ থেকে ২১ ভাগ পর্যন্ত পজেটিভ। গত ঈদুল ফেতরের পর থেকে সংক্রমণ বাড়ছে।

জেলা সিভিল সার্জন মাছুম ইফতেখার বলেন, নোয়াখালীতে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৯ হাজার ২শ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ১২৪ জন মারা গেছেন।

ডায়রিয়া : বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর, হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে ৬শ’র বেশি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত এপ্রিল ও মে মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৪ হাজারেরও বেশি। সুবর্ণচরের প্রতি বাড়িতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আছে।

আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে কমপক্ষে গত এপ্রিল মাস থেকে গতকাল পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জন মারা গেছেন। এ মৌসুমে জেলার বিভিন্ন বাড়ির পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। গভীর ও অগভীর নলকূপের পানির স্তর নেমে গেছে। নলকূপের পানিতে নানা সমস্যা থাকায় তাও ব্যবহার করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির হাহাকার। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া চিকিৎসার ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শায়লা সুলতানা জানান, নানা চেষ্টার পরও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। সেখানে স্যলাইনের অভাব দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ইনচার্জ আনোয়ারা বেগম গতকাল রাতে সংবাদ প্রতিনিধিকে ফোনে জানান, গত ৯ দিনে ৪৮৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। ওয়ার্ডে ওষুধ স্যালাইনের তীব্র সংকট বিরাজ করছে।

এ সম্পর্কে জেলা সির্ভিল সার্জন গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট (হ্যালোজিন) ও স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। যারা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেছেন তারা কেউ মারা যায়নি। অনেকেই হাসপাতাল পর্যন্ত না যাওয়ায় বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিশুদ্ধ পানির অভাবে স্থানীয়রা এখন বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে তা কাজে লাগাচ্ছেন।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে বলেন, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়। তাদের ডায়রিয়াও হতে পারে। তবে নোয়াখালীতে তা নাও হতে পারে। সেখানে পুকুরের পাানি ফুটিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া, অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক জানান, ডায়রিয়া করোনার একটি লক্ষণ। যারা আক্রান্ত তাদের সবাইর করোনা টেস্ট করে যদি পজিটিভ হয় তা হলে আইসোলেশনে রাখতে হবে। নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, সংক্রমণ ঠেকাতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রতিদিন পুলিশ কাজ করছে। অনেকের জরিমানা করা হচ্ছে। লকডাউন পালনের জন্য সবাই কাজ করছেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, নোয়াখালী জেলায় ৩৬ লাখের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে এখন জেলায় সংক্রমণ আতঙ্ক বিরাজ করলেও গ্রাম পর্যায়ে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।