নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে মাদক নির্মূল করা যাবে না

মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। এ নীতির আলোকে ২০১৮ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ‘চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে বেশ জোরেশোরে কোমর বেঁধেই অভিযানে নেমে পড়ে তারা। তবে অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক বাণিজ্যের রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। চুনোপুঁটিদের ঘিরেই চলেছে তাদের অভিযান। এমনকি নিরীহ অনেক মানুষও পুলিশের মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে রংপুর নগরীর খোর্দ্দ তামফাট এলাকায়।

গত সোমবার রাতে ওই এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে নিরীহ অটোচালক আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গাঁজা পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করেন তাজহাট থানা পুলিশের এসআই আসাদ। মাদক দিয়ে অটোচালককে ফাঁসানোর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা গভীর রাত পর্যন্ত থানা ঘেরাও ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়রের হস্তক্ষেপের কারণে ছাড়া পান ওই অটোচালক। গত বুধবার এ নিয়ে সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।

শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা থাকার পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অভিযানের নামে মাদকসেবী বা খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে লোক দেখানো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার ও মামলা করা এমন কি মেরে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৮ সালের ২৬ মে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে কথিত ক্রসফায়ারে মারা যান টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক। গত সোমবার রংপুরের সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপে আবুল হোসেন রক্ষা পেয়েছে। তবে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অনেক ঘটনাই লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছে।

মাদক দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা বন্ধ করতে হবে। রংপুরের ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য এটা জরুরি। শুধুমাত্র বরখাস্ত বা বিভাগীয় শাস্তির নামে লোক দেখানো ব্যবস্থা নিলে চলবে না।

মাদকের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে গডফাদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য জরুরি হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কারা মাদক বাণিজ্য করে তার একাধিক তালিকা সরকারের কাছে রয়েছে। ব্যবস্থা নিতে হবে তালিকা ধরে। নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে মাদক নির্মূল করা যাবে না।

বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১ , ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৮ শাওয়াল ১৪৪২

নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে মাদক নির্মূল করা যাবে না

মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। এ নীতির আলোকে ২০১৮ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ‘চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে বেশ জোরেশোরে কোমর বেঁধেই অভিযানে নেমে পড়ে তারা। তবে অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক বাণিজ্যের রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। চুনোপুঁটিদের ঘিরেই চলেছে তাদের অভিযান। এমনকি নিরীহ অনেক মানুষও পুলিশের মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে রংপুর নগরীর খোর্দ্দ তামফাট এলাকায়।

গত সোমবার রাতে ওই এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে নিরীহ অটোচালক আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গাঁজা পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করেন তাজহাট থানা পুলিশের এসআই আসাদ। মাদক দিয়ে অটোচালককে ফাঁসানোর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা গভীর রাত পর্যন্ত থানা ঘেরাও ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়রের হস্তক্ষেপের কারণে ছাড়া পান ওই অটোচালক। গত বুধবার এ নিয়ে সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।

শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা থাকার পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অভিযানের নামে মাদকসেবী বা খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে লোক দেখানো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার ও মামলা করা এমন কি মেরে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৮ সালের ২৬ মে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে কথিত ক্রসফায়ারে মারা যান টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক। গত সোমবার রংপুরের সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপে আবুল হোসেন রক্ষা পেয়েছে। তবে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অনেক ঘটনাই লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছে।

মাদক দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা বন্ধ করতে হবে। রংপুরের ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য এটা জরুরি। শুধুমাত্র বরখাস্ত বা বিভাগীয় শাস্তির নামে লোক দেখানো ব্যবস্থা নিলে চলবে না।

মাদকের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে গডফাদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য জরুরি হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কারা মাদক বাণিজ্য করে তার একাধিক তালিকা সরকারের কাছে রয়েছে। ব্যবস্থা নিতে হবে তালিকা ধরে। নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে মাদক নির্মূল করা যাবে না।