তাদের কাজ রোগী ভাগিয়ে নেয়া

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ২৪ দালালকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাদের প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদ- দিয়েছেন অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টার এ অভিযানে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট ও হাসপাতালের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এই দালালরা ঢামেক হাসপাতালে আসা নিরীহ রোগীদের সরকারি হাসপাতালের চেয়েও কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও খ্যাতনামা অধ্যাপকদের দিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সুব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেত। হাতেনাতে গ্রেপ্তারের পর তারা সবাই অভিযোগ স্বীকার করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতাল-১, ২ এবং বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটকে ঘিরে সংঘবদ্ধ দালালচক্র গড়ে উঠেছে। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ দালাল চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ছোট বড় ও নামসর্বস্ব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্ড, স্লিপপ্যাড ইত্যাদি নিয়ে ঢামেকের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ওটি, আইসিইউ, ওয়ার্ড এবং কেবিনের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নিরীহ, দরিদ্র ও অসহায় যাদের বেশিরভাগ গ্রাম থেকে আসেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাদের টার্গেট করে আপনজনের মতো ব্যবহার করে কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অস্ত্রোপচার করিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখায়। অনেক সময় জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায় এসব দালালরা। আবার তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরেও রোগীদের টার্গেট করে। বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষমান রোগীদের কাছে গিয়ে অল্প টাকায় ভালো অধ্যাপক দিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রলোভন দেখায়।

ঢামেক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও নার্স জানান, এসব দালালদের কারণে ঠিকমতো কাজও করা যায় না।

অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা এ দালালচক্রের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষক। অভিযানের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দালালদের সঙ্গে হাসপাতালের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযানকে স্বাগত জানালেও কেউ কেউ বলছেন, দালালচক্রের চুনোপুঁটিরা ধরা পড়েছে। এদের মূল পৃষ্ঠপোষক কেউ ধরা পড়েনি।

এদিকে, ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি অপসোনিনের একজন প্রতিনিধি জানান, তাদের এক সহকর্মীকে দালাল হিসেবে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ছেলেটি নতুন জয়েন্ট করেছে।

অভিযানের সময় তাকে আটক করা হয়। তবে অভিযানে থাকা র‌্যাবের এক সদস্য জানান, ওই ব্যক্তি কোন পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি।

শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১ , ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৯ শাওয়াল ১৪৪২

তাদের কাজ রোগী ভাগিয়ে নেয়া

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ২৪ দালালকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাদের প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদ- দিয়েছেন অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টার এ অভিযানে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট ও হাসপাতালের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এই দালালরা ঢামেক হাসপাতালে আসা নিরীহ রোগীদের সরকারি হাসপাতালের চেয়েও কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও খ্যাতনামা অধ্যাপকদের দিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সুব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেত। হাতেনাতে গ্রেপ্তারের পর তারা সবাই অভিযোগ স্বীকার করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতাল-১, ২ এবং বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটকে ঘিরে সংঘবদ্ধ দালালচক্র গড়ে উঠেছে। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ দালাল চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ছোট বড় ও নামসর্বস্ব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্ড, স্লিপপ্যাড ইত্যাদি নিয়ে ঢামেকের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ওটি, আইসিইউ, ওয়ার্ড এবং কেবিনের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নিরীহ, দরিদ্র ও অসহায় যাদের বেশিরভাগ গ্রাম থেকে আসেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাদের টার্গেট করে আপনজনের মতো ব্যবহার করে কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অস্ত্রোপচার করিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখায়। অনেক সময় জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায় এসব দালালরা। আবার তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরেও রোগীদের টার্গেট করে। বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষমান রোগীদের কাছে গিয়ে অল্প টাকায় ভালো অধ্যাপক দিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রলোভন দেখায়।

ঢামেক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও নার্স জানান, এসব দালালদের কারণে ঠিকমতো কাজও করা যায় না।

অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা এ দালালচক্রের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষক। অভিযানের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দালালদের সঙ্গে হাসপাতালের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযানকে স্বাগত জানালেও কেউ কেউ বলছেন, দালালচক্রের চুনোপুঁটিরা ধরা পড়েছে। এদের মূল পৃষ্ঠপোষক কেউ ধরা পড়েনি।

এদিকে, ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি অপসোনিনের একজন প্রতিনিধি জানান, তাদের এক সহকর্মীকে দালাল হিসেবে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ছেলেটি নতুন জয়েন্ট করেছে।

অভিযানের সময় তাকে আটক করা হয়। তবে অভিযানে থাকা র‌্যাবের এক সদস্য জানান, ওই ব্যক্তি কোন পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি।