কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের জীবনাবসান

বাংলার চলচ্চিত্রে ফের নক্ষত্রের পতন। প্রয়াত হলেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। গতকাল ঘুমের মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়ে ছিল ৭৭। কেবল চিত্রপরিচালনা নয়, সাহিত্য জগতেও সমানভাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের অভিনেতা রইসুল ইসলাম আসাদ ও চম্পা এবং কলকাতার শুভেন্দু চাটার্জি, ইন্দ্রানী হালদারকে নিয়ে নির্মিত ‘লাল দরজা’ সিনেমার জন্য ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। তার ডায়ালাইসিস চলছিল। গতকালও ডায়ালাইসিস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোরবেলা তার স্ত্রী সোহিনী দাশগুপ্ত দেখেন, বুদ্ধদেব বাবুর শরীর ঠা-া হয়ে গিয়েছে। শরীরে আর প্রাণ নেই। ঘুমের মধ্যেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবার সূত্রে খবর, তার দুই মেয়েই মুম্বাইয়ে থাকেন। করোনাবিধির কারণে তারা আসতে পারছেন না। গতকাল তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন তিনি। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে পড়াশোনা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্থনীতির নানান কঠিন তত্ত্ব নিয়ে কাটাছেঁড়া করাই ছিল তার কাজ। অধ্যাপনা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু অধ্যাপনার অবসরে যখন নিজের জন্য সময় বার করতেন তাকে ভাবাত বাস্তবতা, রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপট!

এক্কেবারে রোজনামচার ঘটনাকে অন্য আঙ্গিকে ভাবতে ভালোবাসতেন বুদ্ধদেব দাস গুপ্ত। আর তা থেকেই ছবি বানানোর শখ। মানুষের সামনে অত্যন্ত সাবলীলভাবে পরিবেশন করতেন সমাজের গল্প। তার সহজ উপস্থাপনায় ফুটে উঠত আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের নানা দিক। সবার আগে কবি ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ঘনিষ্টরা বলেন, কবিতাই তার প্রথম প্রেম। সেলুলয়েডে কবিতাই ফুটিয়ে তুলতেন তিনি।

১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র ‘দ্যা কন্টিনেন্ট অব লাভ’ দিয়ে নিজের চলচ্চিত্র কেরিয়ার শুরু করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ‘তাহাদের কথা’ ছবিতে তার অবিস্মরণীয় কাজ দর্শকদের মুগ্ধ করে। ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘ফেরা’, ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘উত্তরা’ তার উল্লেখযোগ্য ছবি। ১৯৮৯ সালে নির্মিত ‘বাঘ বাহাদুর’, ১৯৯৩ সালে নির্মিত ‘চরাচর’, ১৯৯৭ সালে নির্মিত ‘লাল দরজা’ দর্শকদের মনে দাগ কেটেছে।

তার পরিচালিত ৫টি ছবি- বাঘ বাহাদুর, চরাচর, লাল দরজা, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান ও কালপুরুষ জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। পরিচালক হিসেবে তিনি নিজেও দু’বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। দেশের বাইরে বিদেশেও একাধিক সম্মান পেয়েছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব, বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসা পেয়েছে তার ছবি। ২০০৮ সালের ২৭ মে স্পেনের মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে আজীবন কৃতিত্বের সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হন তিনি।

পরিচালকের পাশাপাশি একাধারে কবিও ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। কফিন কিংবা সুটকেস, হিমযোগ, রোবটের গান, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি বহু কবিতা লিখেছেন তিনি।

বিশিষ্ট পরিচালক এ কবির প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে চলচ্চিত্র জগতসহ বিভিন্ন মহলে।

শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১ , ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৯ শাওয়াল ১৪৪২

কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের জীবনাবসান

প্রতিনিধি, কলকাতা

বাংলার চলচ্চিত্রে ফের নক্ষত্রের পতন। প্রয়াত হলেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। গতকাল ঘুমের মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়ে ছিল ৭৭। কেবল চিত্রপরিচালনা নয়, সাহিত্য জগতেও সমানভাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের অভিনেতা রইসুল ইসলাম আসাদ ও চম্পা এবং কলকাতার শুভেন্দু চাটার্জি, ইন্দ্রানী হালদারকে নিয়ে নির্মিত ‘লাল দরজা’ সিনেমার জন্য ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। তার ডায়ালাইসিস চলছিল। গতকালও ডায়ালাইসিস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোরবেলা তার স্ত্রী সোহিনী দাশগুপ্ত দেখেন, বুদ্ধদেব বাবুর শরীর ঠা-া হয়ে গিয়েছে। শরীরে আর প্রাণ নেই। ঘুমের মধ্যেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবার সূত্রে খবর, তার দুই মেয়েই মুম্বাইয়ে থাকেন। করোনাবিধির কারণে তারা আসতে পারছেন না। গতকাল তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন তিনি। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে পড়াশোনা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্থনীতির নানান কঠিন তত্ত্ব নিয়ে কাটাছেঁড়া করাই ছিল তার কাজ। অধ্যাপনা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু অধ্যাপনার অবসরে যখন নিজের জন্য সময় বার করতেন তাকে ভাবাত বাস্তবতা, রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপট!

এক্কেবারে রোজনামচার ঘটনাকে অন্য আঙ্গিকে ভাবতে ভালোবাসতেন বুদ্ধদেব দাস গুপ্ত। আর তা থেকেই ছবি বানানোর শখ। মানুষের সামনে অত্যন্ত সাবলীলভাবে পরিবেশন করতেন সমাজের গল্প। তার সহজ উপস্থাপনায় ফুটে উঠত আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের নানা দিক। সবার আগে কবি ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ঘনিষ্টরা বলেন, কবিতাই তার প্রথম প্রেম। সেলুলয়েডে কবিতাই ফুটিয়ে তুলতেন তিনি।

১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র ‘দ্যা কন্টিনেন্ট অব লাভ’ দিয়ে নিজের চলচ্চিত্র কেরিয়ার শুরু করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ‘তাহাদের কথা’ ছবিতে তার অবিস্মরণীয় কাজ দর্শকদের মুগ্ধ করে। ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘ফেরা’, ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘উত্তরা’ তার উল্লেখযোগ্য ছবি। ১৯৮৯ সালে নির্মিত ‘বাঘ বাহাদুর’, ১৯৯৩ সালে নির্মিত ‘চরাচর’, ১৯৯৭ সালে নির্মিত ‘লাল দরজা’ দর্শকদের মনে দাগ কেটেছে।

তার পরিচালিত ৫টি ছবি- বাঘ বাহাদুর, চরাচর, লাল দরজা, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান ও কালপুরুষ জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। পরিচালক হিসেবে তিনি নিজেও দু’বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। দেশের বাইরে বিদেশেও একাধিক সম্মান পেয়েছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব, বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসা পেয়েছে তার ছবি। ২০০৮ সালের ২৭ মে স্পেনের মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে আজীবন কৃতিত্বের সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হন তিনি।

পরিচালকের পাশাপাশি একাধারে কবিও ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। কফিন কিংবা সুটকেস, হিমযোগ, রোবটের গান, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি বহু কবিতা লিখেছেন তিনি।

বিশিষ্ট পরিচালক এ কবির প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে চলচ্চিত্র জগতসহ বিভিন্ন মহলে।