লালমনিরহাটের চারটি ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ১৭টি পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে জেলার আদিতমারী উপজেলায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীগর্ভে প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, বিভিন্ন স্থাপনা ও আবাদি জমি। সম্পদ রক্ষায় অনেকে বাড়ি-ঘর ভেঙে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছেন। ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলোর কান্নায় তিস্তাপাড়ের আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদরের গোকুন্ডা ও হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন বেড়েই চলেছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, গত কয়েক দিনে তার ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙনে ১৫০টি বসতভিটা, শতাধিক বিঘা আবাদি জমি, একটি সড়কের কিছু অংশ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও একটি মসজিদ নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকিতে রয়েছে আরও অনেক স্থাপনা ও আবাদি জমি। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি উজানের পানিতে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে যায়। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিয়নের ৯টি জায়গায় ভাঙন তীব্র আকার নেয়।’
আদিমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনসুর উদ্দিন জানান, তিনি নিজেও ভাঙন কবলিত কয়েকটি জায়গা পরিদর্শন করেছেন। মনসুর বলেন, ‘ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও সম্পদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ভাঙন কবলিতদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।’
এক সপ্তাহে সদর উপজেলায় তিস্তার ভাঙনে ৫০টি বসতভিটাসহ একাধিক স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৪টি স্থানেও। সেখানেও এক সপ্তাহে অন্তত ৩০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
এদিকে গত বন্যায় তিস্তার ভাঙনে বিভিন্ন বাঁধ, উপবাঁধ ও বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বাম তীর মূল বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এতে বাঁধে আশ্রিত প্রায় ১০ হাজার পরিবারের আবারও আশ্রয়হীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৬টি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। প্রতিবছরই তিস্তার ভাঙনে এসব ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের শিকার এসব এলাকার ১০ সহস্রাধিক পরিবার তিস্তা প্রতিরক্ষা বাম তীরে আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের সবার দাবি অবিলম্বে বামতীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করে তাদের রক্ষা করা হোক।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, জেলার তিস্তার উপকূলের ১৭টি জায়গায় বন্যা আসার আগেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। খুব শীঘ্রই সবচেয়ে নাজুক জায়গাগুলোতে ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু করবেন তারা।
শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১ , ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৯ শাওয়াল ১৪৪২
মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের চারটি ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ১৭টি পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে জেলার আদিতমারী উপজেলায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীগর্ভে প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, বিভিন্ন স্থাপনা ও আবাদি জমি। সম্পদ রক্ষায় অনেকে বাড়ি-ঘর ভেঙে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছেন। ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলোর কান্নায় তিস্তাপাড়ের আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদরের গোকুন্ডা ও হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন বেড়েই চলেছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, গত কয়েক দিনে তার ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙনে ১৫০টি বসতভিটা, শতাধিক বিঘা আবাদি জমি, একটি সড়কের কিছু অংশ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও একটি মসজিদ নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকিতে রয়েছে আরও অনেক স্থাপনা ও আবাদি জমি। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি উজানের পানিতে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে যায়। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিয়নের ৯টি জায়গায় ভাঙন তীব্র আকার নেয়।’
আদিমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনসুর উদ্দিন জানান, তিনি নিজেও ভাঙন কবলিত কয়েকটি জায়গা পরিদর্শন করেছেন। মনসুর বলেন, ‘ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও সম্পদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ভাঙন কবলিতদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।’
এক সপ্তাহে সদর উপজেলায় তিস্তার ভাঙনে ৫০টি বসতভিটাসহ একাধিক স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৪টি স্থানেও। সেখানেও এক সপ্তাহে অন্তত ৩০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
এদিকে গত বন্যায় তিস্তার ভাঙনে বিভিন্ন বাঁধ, উপবাঁধ ও বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বাম তীর মূল বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এতে বাঁধে আশ্রিত প্রায় ১০ হাজার পরিবারের আবারও আশ্রয়হীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৬টি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। প্রতিবছরই তিস্তার ভাঙনে এসব ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের শিকার এসব এলাকার ১০ সহস্রাধিক পরিবার তিস্তা প্রতিরক্ষা বাম তীরে আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের সবার দাবি অবিলম্বে বামতীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করে তাদের রক্ষা করা হোক।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, জেলার তিস্তার উপকূলের ১৭টি জায়গায় বন্যা আসার আগেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। খুব শীঘ্রই সবচেয়ে নাজুক জায়গাগুলোতে ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু করবেন তারা।