ব্রিটিশ-মার্কিন সম্পর্কের ধ্বংস নেই : বরিস জনসন

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ককে অবিনশ্বর বা ধ্বংস নেই বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকের পর এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তিনি। বিবিসি

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার অত্যন্ত ভালো আলোচনা হয়েছে। জি-৭ সম্মেলন শুরুর আগে কর্নওয়ালে জনসন এবং বাইডেন প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্রেক্সিট ইস্যু, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের আলাপ হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ-মার্কিন সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ইউরোপসহ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বহুদিন ধরে তারা একসঙ্গে কাজ করছে।

কর্নওয়ালেই ১১ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত চলবে জি ৭ সম্মেলন। সেখানে এবার প্রাধান্য পাবে করোনা ভ্যাকসিন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো। এছাড়া আলোচনায় আসতে পারে গুগল, অ্যাপল ও অ্যামাজনের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ করপোরেট কর পরিশোধের ব্যাপারে চাপ প্রয়োগের বিষয়টি।

করোনা মহামারী শুরুর পর প্রথমবারের মতো কোন বৈশ্বিক সম্মেলনে সশরীরে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ছাড়াও কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও জাপানের নেতারা অংশ নিচ্ছেন।

এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার, সুশৃঙ্খল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা এবং আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পারের মৈত্রী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মতবিনিময় করেছে।

তিনি আরও বলেন, উভয় দেশের মধ্যে অবিনশ্বর সম্পর্ক অথবা গভীর ও অর্থবহ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। বরিস জনসনের মতে, উভয় দেশের মধ্যকার এ চমৎকার সম্পর্ক বহু বছর ধরে বজায় রয়েছে এবং ইউরোপ ও বাকি বিশ্বের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ শিল্পোন্নত ৭ দেশের জোট জি-৭ করোনাভাইরাসের অন্তত ১০০ কোটি ডোজ টিকা বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে সরবরাহ করবে। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ও এর সমাপ্তি টানতে মিত্র দেশগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘোষণা দেন।

বরিস জনসন জানিয়েছেন, ১০০ কোটি ডোজ টিকার অর্ধেক আসবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর ১০ কোটি ডোজ দেবে যুক্তরাজ্য। পরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, যে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা যুক্তরাজ্য বলছে, তার ৫ কোটি ডোজ তারা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেয়া শুরু করবে। বাকি ৫ কোটি ডোজ তারা পরের বছর দেবে।

২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ টিকাদান শেষ করতে টিকা বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিতে জি-৭ জোট নেতাদের প্রতি জনসন আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে একটি পক্ষ এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলছে, এই উদ্যোগ হবে সাগরে কয়েক ফোটা পানি ফেলার মতো ঘটনা। অক্সফামের হিসাবে প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ কোভিডের টিকার জন্য কোভ্যাক্সের ওপর নির্ভর করে আছে, যে কর্মসূচির মাধ্যমে নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে টিকা বিতরণ করা হচ্ছে।

পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮০০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং বেশিরভাগ মানুষের দুই ডোজ টিকা দরকার- এমন বাস্তবতা তুলে ধরে অনেকেই বলছেন, দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে একটা উদ্যোগ শুরু হয়েছে, কিন্তু বিশ্ব নেতাদের এ বিষয়ে আরও অনেক করণীয় আছে এবং আরও দ্রুততার সঙ্গে তা করতে হবে। যুক্তরাজ্যের দান করা ১০ কোটি ডোজের মধ্যে আট কোটিই বিতরণ করা হবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যার নেতৃত্বে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং বাকিগুলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে যেসব দেশের দরকার তাদের দেওয়া হবে।

নিজ দেশের টিকাদান কর্মসূচির জন্য এরইমধ্যে টিকার যে মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে সেখান থেকেই ব্রিটিশ ডোজগুলো বিতরণ করা হবে এবং এগুলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার-বায়োএনটেক, জ্যানসেন, মডার্না ও অন্যান্য সরবরাহ থেকে এসেছে।

শনিবার, ১২ জুন ২০২১ , ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩০ শাওয়াল ১৪৪২

ব্রিটিশ-মার্কিন সম্পর্কের ধ্বংস নেই : বরিস জনসন

image

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ককে অবিনশ্বর বা ধ্বংস নেই বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকের পর এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তিনি। বিবিসি

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার অত্যন্ত ভালো আলোচনা হয়েছে। জি-৭ সম্মেলন শুরুর আগে কর্নওয়ালে জনসন এবং বাইডেন প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্রেক্সিট ইস্যু, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের আলাপ হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ-মার্কিন সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ইউরোপসহ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বহুদিন ধরে তারা একসঙ্গে কাজ করছে।

কর্নওয়ালেই ১১ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত চলবে জি ৭ সম্মেলন। সেখানে এবার প্রাধান্য পাবে করোনা ভ্যাকসিন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো। এছাড়া আলোচনায় আসতে পারে গুগল, অ্যাপল ও অ্যামাজনের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ করপোরেট কর পরিশোধের ব্যাপারে চাপ প্রয়োগের বিষয়টি।

করোনা মহামারী শুরুর পর প্রথমবারের মতো কোন বৈশ্বিক সম্মেলনে সশরীরে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ছাড়াও কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও জাপানের নেতারা অংশ নিচ্ছেন।

এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার, সুশৃঙ্খল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা এবং আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পারের মৈত্রী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মতবিনিময় করেছে।

তিনি আরও বলেন, উভয় দেশের মধ্যে অবিনশ্বর সম্পর্ক অথবা গভীর ও অর্থবহ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। বরিস জনসনের মতে, উভয় দেশের মধ্যকার এ চমৎকার সম্পর্ক বহু বছর ধরে বজায় রয়েছে এবং ইউরোপ ও বাকি বিশ্বের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ শিল্পোন্নত ৭ দেশের জোট জি-৭ করোনাভাইরাসের অন্তত ১০০ কোটি ডোজ টিকা বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে সরবরাহ করবে। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ও এর সমাপ্তি টানতে মিত্র দেশগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘোষণা দেন।

বরিস জনসন জানিয়েছেন, ১০০ কোটি ডোজ টিকার অর্ধেক আসবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর ১০ কোটি ডোজ দেবে যুক্তরাজ্য। পরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, যে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা যুক্তরাজ্য বলছে, তার ৫ কোটি ডোজ তারা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেয়া শুরু করবে। বাকি ৫ কোটি ডোজ তারা পরের বছর দেবে।

২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ টিকাদান শেষ করতে টিকা বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিতে জি-৭ জোট নেতাদের প্রতি জনসন আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে একটি পক্ষ এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলছে, এই উদ্যোগ হবে সাগরে কয়েক ফোটা পানি ফেলার মতো ঘটনা। অক্সফামের হিসাবে প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ কোভিডের টিকার জন্য কোভ্যাক্সের ওপর নির্ভর করে আছে, যে কর্মসূচির মাধ্যমে নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে টিকা বিতরণ করা হচ্ছে।

পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮০০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং বেশিরভাগ মানুষের দুই ডোজ টিকা দরকার- এমন বাস্তবতা তুলে ধরে অনেকেই বলছেন, দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে একটা উদ্যোগ শুরু হয়েছে, কিন্তু বিশ্ব নেতাদের এ বিষয়ে আরও অনেক করণীয় আছে এবং আরও দ্রুততার সঙ্গে তা করতে হবে। যুক্তরাজ্যের দান করা ১০ কোটি ডোজের মধ্যে আট কোটিই বিতরণ করা হবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যার নেতৃত্বে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং বাকিগুলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে যেসব দেশের দরকার তাদের দেওয়া হবে।

নিজ দেশের টিকাদান কর্মসূচির জন্য এরইমধ্যে টিকার যে মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে সেখান থেকেই ব্রিটিশ ডোজগুলো বিতরণ করা হবে এবং এগুলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার-বায়োএনটেক, জ্যানসেন, মডার্না ও অন্যান্য সরবরাহ থেকে এসেছে।