চার বছর পর বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে পুত্রসহ মুকুল রায়

বেশ কয়েকদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে পালাবদলের যে ইঙ্গিত ছিল অবশেষে সেই জল্পনার আবসান হলো। প্রায় চার বছর পর গতকাল বিকেলে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে এসেছিন পুত্রসহ মুকুল রায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এদিন তৃণমূল ভবনে ছেলে শুভ্রাংশু রায়কে নিয়ে নিজের পুরনো দলে যোগ দেন তিনি। আর বিজেপি পার্টি করা যাচ্ছিল না জানিয়েই তৃণমূলে ফিরেছেন মুকুল। ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল একাধিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত থাকায় নিজের পিঠ বাঁচাতেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল। যদিও বিজেপিতে মুকুল রায়ের অবস্থান কখনই সুখকর ছিল না। বিজেপির আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের বিযয়টি ছিল স্পষ্ট।

তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ১৮ আসন পাওয়ার পেছনে মুকুল রায়ের যে বড় ভূমিকা ছিল, এ কথা সবাই জানে। কিন্তু এরপর বিজেপিতে খুব একটা গুরুত্ব পাননি মুকুল। বিজেপিতে যোগ দেয়ার সময় তাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা তার চেয়েও ভালো অবস্থানে রাখার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তাকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির যে পদ দেয়া হয়েছিল, মুকুল রায়ের ভাষায় তাও ছিল মূলত আলঙ্কারিক।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দলে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন মুকুল। তাকে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে টিকিট দেয় দল। কিন্তু নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল না মুকুলের। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে রাজি হতে হয় তাকে। সেখান থেকে জিতলেও বিধানসভা নির্বাচনের পরও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি মুকুলকে। বস্তুত বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতা দখল করতে না পারায় একরকম দলবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন মুকুল। সম্প্রতি তার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই একরকম স্পষ্ট হয়ে যায় মুকুল রায় ও তার ছেলের তৃণমূলে যোগদানের বিষয়টি।

এদিন তৃণমূল ভবনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন মুকুল রায়। তার সঙ্গে যোগ দিলেন ছেলে শুভ্রাংশু রায়। আবার নিজের পুরনো ঘরেই ফিরলেন মুকুল রায়। তবে কোন পদে তাকে নিয়োগ করা হবে তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। মনে করা হচ্ছে মূলত ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে টার্গেট করেই মুকুল রায়কে ফেরানো হলো। ঘরে ফিরল ঘরের ছেলে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে উত্তরীয় পরেন মুকুল এবং শুভ্রাংশ। তৃণমূল ছাড়ার সময় যে পদ ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায়, সেই পদে এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকদিন আগেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হয়েছে অভিষেককে।

বিজেপিতে গিয়ে ভালো ছিলেন না মুকুল। সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দোপাধ্যায় এই দাবি করে বলেছেন, বিজেপি করা যায় না। সেখানে যারা গেছে তারা বলতে পারবে কী কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে হয় তাদের। মুকুলও থাকতে পারছিল না।

তৃণমূলে যোগ দিয়েই মুকুল রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ঘরে আজকের এই সভায় আমার নিজের খুব ভালো লাগছে। পুরনো মানুষদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিজেপি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন আঙিনায় দেখা হচ্ছে কথা বলতে পারছি। আমার ভালো লাগছে। বাংলা আবার তার নিজের জায়গায় ফিরবে। সামনে থেকে বাংলাকে নেতৃত্ব দেবেন ভারতের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ তবে কেন তিনি বিজেপিতে থাকতে পারলেন না তার ব্যাখ্যা দেননি। সেটা লিখিত আকারে তিনি পরে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফেরার প্রসঙ্গে শুক্রবার ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ বলেন, মুকুল রায় বাংলার আর এক মিরজাফর। উনি যদি রাজনৈতিক চাণক্য হতেন তাহলে ছেলেকে বীজপুর থেকে জেতাতে পারতেন। মিরজাফররা কখনও ভালো হতে পারে না। এই মিরজাফর বাংলার অনেক ক্ষতি করবে।’

এ ব্যাপারে এদিন বিজেপির অন্য রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোন মন্তব্য শোনা যায়নি। তবে সদ্য বিজেপি বিধায়াক মুকুল রায়ের তৃণমূলে যোগ দেয়া বঙ্গ বিজেপিতে অস্বস্তি বেড়েছে।

শনিবার, ১২ জুন ২০২১ , ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩০ শাওয়াল ১৪৪২

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি

চার বছর পর বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে পুত্রসহ মুকুল রায়

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

বেশ কয়েকদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে পালাবদলের যে ইঙ্গিত ছিল অবশেষে সেই জল্পনার আবসান হলো। প্রায় চার বছর পর গতকাল বিকেলে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে এসেছিন পুত্রসহ মুকুল রায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এদিন তৃণমূল ভবনে ছেলে শুভ্রাংশু রায়কে নিয়ে নিজের পুরনো দলে যোগ দেন তিনি। আর বিজেপি পার্টি করা যাচ্ছিল না জানিয়েই তৃণমূলে ফিরেছেন মুকুল। ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল একাধিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত থাকায় নিজের পিঠ বাঁচাতেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল। যদিও বিজেপিতে মুকুল রায়ের অবস্থান কখনই সুখকর ছিল না। বিজেপির আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের বিযয়টি ছিল স্পষ্ট।

তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ১৮ আসন পাওয়ার পেছনে মুকুল রায়ের যে বড় ভূমিকা ছিল, এ কথা সবাই জানে। কিন্তু এরপর বিজেপিতে খুব একটা গুরুত্ব পাননি মুকুল। বিজেপিতে যোগ দেয়ার সময় তাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা তার চেয়েও ভালো অবস্থানে রাখার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তাকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির যে পদ দেয়া হয়েছিল, মুকুল রায়ের ভাষায় তাও ছিল মূলত আলঙ্কারিক।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দলে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন মুকুল। তাকে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে টিকিট দেয় দল। কিন্তু নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল না মুকুলের। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে রাজি হতে হয় তাকে। সেখান থেকে জিতলেও বিধানসভা নির্বাচনের পরও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি মুকুলকে। বস্তুত বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতা দখল করতে না পারায় একরকম দলবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন মুকুল। সম্প্রতি তার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই একরকম স্পষ্ট হয়ে যায় মুকুল রায় ও তার ছেলের তৃণমূলে যোগদানের বিষয়টি।

এদিন তৃণমূল ভবনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন মুকুল রায়। তার সঙ্গে যোগ দিলেন ছেলে শুভ্রাংশু রায়। আবার নিজের পুরনো ঘরেই ফিরলেন মুকুল রায়। তবে কোন পদে তাকে নিয়োগ করা হবে তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। মনে করা হচ্ছে মূলত ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে টার্গেট করেই মুকুল রায়কে ফেরানো হলো। ঘরে ফিরল ঘরের ছেলে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে উত্তরীয় পরেন মুকুল এবং শুভ্রাংশ। তৃণমূল ছাড়ার সময় যে পদ ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায়, সেই পদে এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকদিন আগেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হয়েছে অভিষেককে।

বিজেপিতে গিয়ে ভালো ছিলেন না মুকুল। সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দোপাধ্যায় এই দাবি করে বলেছেন, বিজেপি করা যায় না। সেখানে যারা গেছে তারা বলতে পারবে কী কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে হয় তাদের। মুকুলও থাকতে পারছিল না।

তৃণমূলে যোগ দিয়েই মুকুল রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ঘরে আজকের এই সভায় আমার নিজের খুব ভালো লাগছে। পুরনো মানুষদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিজেপি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন আঙিনায় দেখা হচ্ছে কথা বলতে পারছি। আমার ভালো লাগছে। বাংলা আবার তার নিজের জায়গায় ফিরবে। সামনে থেকে বাংলাকে নেতৃত্ব দেবেন ভারতের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ তবে কেন তিনি বিজেপিতে থাকতে পারলেন না তার ব্যাখ্যা দেননি। সেটা লিখিত আকারে তিনি পরে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফেরার প্রসঙ্গে শুক্রবার ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ বলেন, মুকুল রায় বাংলার আর এক মিরজাফর। উনি যদি রাজনৈতিক চাণক্য হতেন তাহলে ছেলেকে বীজপুর থেকে জেতাতে পারতেন। মিরজাফররা কখনও ভালো হতে পারে না। এই মিরজাফর বাংলার অনেক ক্ষতি করবে।’

এ ব্যাপারে এদিন বিজেপির অন্য রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোন মন্তব্য শোনা যায়নি। তবে সদ্য বিজেপি বিধায়াক মুকুল রায়ের তৃণমূলে যোগ দেয়া বঙ্গ বিজেপিতে অস্বস্তি বেড়েছে।