কাদের মির্জার ফের ভাই-ভাবির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার

নোয়াখালীর বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী থেকে রওনা দিয়ে ঢাকা গিয়ে তা বাতিল করে আবার ফেইসবুকে এসে বিষোদ্গার করেছেন ভাই, ভাবি দলীয় নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।

আবদুল কাদের মির্জা সাম্প্রতিক সময়ে দেশ বিদেশেসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নাম। নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার এ মেয়র অবলীলায় সমালোচনা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। কথার ‘বোমা ফাটিয়েছেন’ আপন বড় ভাই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও। ২২ মে ছোট ভাইয়ের চিকিৎসা নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন মির্জা কাদের। এরপর নিজে চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যাওয়ার সীদ্ধান্ত নেন। তারপর থেকে কিছুদিন কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে ‘মিটমাট’ হয়ে গেছে। তবে বুধবার আমেরিকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে ফেইসবুক লাইভে এসে ফের ভাই ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এক সময় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া রাজপথ কাঁপানো নেতা ছিলেন। কিন্তু তার ছেলে ও জামাইয়ের কারণে আজ কোথায়? খবর নেই। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে করুণা করে রেখেছেন। শেখ হাসিনা আপনাকে ছাড়া দল চালাতে পারবেন না, এটা মনে করবেন না।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা করে আমি আমেরিকা যাইনি। এছাড়া তার ভাই ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নোয়াখালী ও ফেনীর দুজন সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় কয়েকজন নেতাসহ আমেরিকাপ্রবাসী কয়েকজন সাবেক নেতারও কঠোর সমালোচনা করেন। কাদের মির্জা ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি বিএনপিকে বলেন মিডিয়াসর্বস্ব রাজনৈতিক দল। আপনি মিডিয়ার বাইরে কী কাজ করেন? আপনি আমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। আপনি এলাকার ২০০ লোকের নাম বলতে পারলে আমি হিজরত করব।

তিনি বলেন, আপনি যেটা হবেন বলে চিন্তা করছেন সেটা আপনি এবং আপনার স্ত্রীর কারণে কঠিন হয়ে গেছে। আপনার মন্ত্রণালয় দেশের সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়। আপনি এলাকার ভোট নিয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। এখন ভুলে গেছেন। এখন আপনার স্ত্রী এখানকার রাজনীতির নিয়ামক শক্তি। আপনার স্ত্রী বাংলাদেশের ১০ জন দুর্নীতিবাজের মধ্যে একজন। মেয়র মির্জা কাদের বলেন, নেত্রী ছাড়া আপনার সঙ্গে কেউ নেই। যদি থাকে তাহলে আমি হিজরত করব। ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনি কী দেশের সবাই জানে। একরাম-নিজাম এদের উত্থান কার মাধ্যমে? আমার কোন আত্মীয় আমার সঙ্গে নেই। আপনার স্ত্রী সবাইকে প্রভাবিত করে নিয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, উপরে আল্লাহ আর নিচে শেখ হাসিনা ছাড়া আমি কাউকে ভয় করি না। এ সময় তিনি তার তিন ভাগিনা মাহবুব রশিদ মঞ্জু, ফখরুল ইসলাম রাহাত ও সিরাজিস সালেকিন রিমনসহ স্থানীয় নেতাদের কট্টর সমালোচনা করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমি আমেরিকা গেলে অপরাজনীতির হোতারা বিএনপির আমলের মতো আমাকে সরিয়ে এখানে অন্যজনকে মেয়র হিসেবে বসাতো। এমন প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন।

কাদের মির্জা বলেন, আমাদের দল ক্ষমতায় আর আমরা মাইর খাচ্ছি। আমার ভাই নাকি মন্ত্রী। হেতেন কীসের মন্ত্রী? হে মিয়ার এলাকায় ৫ মাস ধরে ঝামেলা চলের, হে মিয়া মন্ত্রী, হে মিয়া ক্ষমতাসীন দলের সেক্রেটারি। আগামী ৭ দিনের মধ্যে অপরাজনীতির হোতাদের গ্রেপ্তার না করলে, আমার নিরীহ নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি না দিলে এখানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, হয়তো ওবায়দুল কাদের কোম্পানীগঞ্জের মাটি স্পর্শ করতে পারবেন না। এক সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক করেন, না হয় পরিণতি ভয়াবহ হবে।

কাদের মির্জা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম আগে কেউ শুনেছে বলে মনে হয় না। কপাল ভালো মন্ত্রী হয়েছেন। তার কর্মীরাও বলে আমাদের নেতা মন্ত্রী হবে আমরা ভাবিনি। আপনি মন্ত্রী হয়েছেন ভালো কথা। আমি আপনার কাছে একটি আবেদন দিয়েছি। আজ ৪ মাস হলো এ দরখাস্ত আলোর মুখ দেখেনি। এটা নাকি রাজনীতি। এটা নাকি মন্ত্রিত্ব। যে মন্ত্রীর কথা তার পুলিশ শোনে না। আহারে দেশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনার কর্মীরা বলে আপনি ভালো মানুষ। আমি বলবো, আপনি যেহেতু ভালো মানুষ সুতরাং আপনি নেত্রীকে বলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইমামতি করেন।

শনিবার, ১২ জুন ২০২১ , ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩০ শাওয়াল ১৪৪২

কাদের মির্জার ফের ভাই-ভাবির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার

প্রতিনিধি, নোয়াখালী

নোয়াখালীর বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী থেকে রওনা দিয়ে ঢাকা গিয়ে তা বাতিল করে আবার ফেইসবুকে এসে বিষোদ্গার করেছেন ভাই, ভাবি দলীয় নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।

আবদুল কাদের মির্জা সাম্প্রতিক সময়ে দেশ বিদেশেসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নাম। নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার এ মেয়র অবলীলায় সমালোচনা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। কথার ‘বোমা ফাটিয়েছেন’ আপন বড় ভাই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও। ২২ মে ছোট ভাইয়ের চিকিৎসা নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন মির্জা কাদের। এরপর নিজে চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যাওয়ার সীদ্ধান্ত নেন। তারপর থেকে কিছুদিন কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে ‘মিটমাট’ হয়ে গেছে। তবে বুধবার আমেরিকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে ফেইসবুক লাইভে এসে ফের ভাই ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এক সময় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া রাজপথ কাঁপানো নেতা ছিলেন। কিন্তু তার ছেলে ও জামাইয়ের কারণে আজ কোথায়? খবর নেই। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে করুণা করে রেখেছেন। শেখ হাসিনা আপনাকে ছাড়া দল চালাতে পারবেন না, এটা মনে করবেন না।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা করে আমি আমেরিকা যাইনি। এছাড়া তার ভাই ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নোয়াখালী ও ফেনীর দুজন সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় কয়েকজন নেতাসহ আমেরিকাপ্রবাসী কয়েকজন সাবেক নেতারও কঠোর সমালোচনা করেন। কাদের মির্জা ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি বিএনপিকে বলেন মিডিয়াসর্বস্ব রাজনৈতিক দল। আপনি মিডিয়ার বাইরে কী কাজ করেন? আপনি আমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। আপনি এলাকার ২০০ লোকের নাম বলতে পারলে আমি হিজরত করব।

তিনি বলেন, আপনি যেটা হবেন বলে চিন্তা করছেন সেটা আপনি এবং আপনার স্ত্রীর কারণে কঠিন হয়ে গেছে। আপনার মন্ত্রণালয় দেশের সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়। আপনি এলাকার ভোট নিয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। এখন ভুলে গেছেন। এখন আপনার স্ত্রী এখানকার রাজনীতির নিয়ামক শক্তি। আপনার স্ত্রী বাংলাদেশের ১০ জন দুর্নীতিবাজের মধ্যে একজন। মেয়র মির্জা কাদের বলেন, নেত্রী ছাড়া আপনার সঙ্গে কেউ নেই। যদি থাকে তাহলে আমি হিজরত করব। ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনি কী দেশের সবাই জানে। একরাম-নিজাম এদের উত্থান কার মাধ্যমে? আমার কোন আত্মীয় আমার সঙ্গে নেই। আপনার স্ত্রী সবাইকে প্রভাবিত করে নিয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, উপরে আল্লাহ আর নিচে শেখ হাসিনা ছাড়া আমি কাউকে ভয় করি না। এ সময় তিনি তার তিন ভাগিনা মাহবুব রশিদ মঞ্জু, ফখরুল ইসলাম রাহাত ও সিরাজিস সালেকিন রিমনসহ স্থানীয় নেতাদের কট্টর সমালোচনা করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমি আমেরিকা গেলে অপরাজনীতির হোতারা বিএনপির আমলের মতো আমাকে সরিয়ে এখানে অন্যজনকে মেয়র হিসেবে বসাতো। এমন প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন।

কাদের মির্জা বলেন, আমাদের দল ক্ষমতায় আর আমরা মাইর খাচ্ছি। আমার ভাই নাকি মন্ত্রী। হেতেন কীসের মন্ত্রী? হে মিয়ার এলাকায় ৫ মাস ধরে ঝামেলা চলের, হে মিয়া মন্ত্রী, হে মিয়া ক্ষমতাসীন দলের সেক্রেটারি। আগামী ৭ দিনের মধ্যে অপরাজনীতির হোতাদের গ্রেপ্তার না করলে, আমার নিরীহ নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি না দিলে এখানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, হয়তো ওবায়দুল কাদের কোম্পানীগঞ্জের মাটি স্পর্শ করতে পারবেন না। এক সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক করেন, না হয় পরিণতি ভয়াবহ হবে।

কাদের মির্জা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম আগে কেউ শুনেছে বলে মনে হয় না। কপাল ভালো মন্ত্রী হয়েছেন। তার কর্মীরাও বলে আমাদের নেতা মন্ত্রী হবে আমরা ভাবিনি। আপনি মন্ত্রী হয়েছেন ভালো কথা। আমি আপনার কাছে একটি আবেদন দিয়েছি। আজ ৪ মাস হলো এ দরখাস্ত আলোর মুখ দেখেনি। এটা নাকি রাজনীতি। এটা নাকি মন্ত্রিত্ব। যে মন্ত্রীর কথা তার পুলিশ শোনে না। আহারে দেশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনার কর্মীরা বলে আপনি ভালো মানুষ। আমি বলবো, আপনি যেহেতু ভালো মানুষ সুতরাং আপনি নেত্রীকে বলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইমামতি করেন।